যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম সাবেক প্রেসিডেন্ট হিসেবে ফৌজদারি বিচারের মুখোমুখি ট্রাম্প
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৩১, আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২৪, ১০:০১
ডোনাল্ড ট্রাম্প সোমবার বিচারের মুখোমুখি হতে আদালতে যাবেন। তিনি হলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম সাবেক প্রেসিডেন্ট, যিনি ফৌজদারি অভিযোগের মুখোমুখি হয়েছেন এবং দোষী সাব্যস্ত হলে কারাদণ্ড পাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন।
ট্রাম্পের আইনজীবীরা, প্রসিকিউটর এবং বিচারপতি হুয়ান মার্শান নিউইয়র্কের একটি আদালতে তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের প্রমাণাদি সম্পর্কে শুনানির জন্য জুরি বাছাই শুরু করবেন।
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি একজন পর্ণ তারকা ও একসময়ের প্লেবয় প্লেমেটের সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্ক রেখেছিলেন। পরে তাকে চুপ করানোর জন্য অর্থ প্রদান করেছেন এবং বিষয়টি লুকানোর জন্য ভুয়া ব্যবসায়িক হিসাবের খাতা তৈরি করেছেন।
আগামী নভেম্বরের অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ট্রাম্প। বিচার চলাকালে ট্রাম অভিযুক্ত ব্যক্তিদের জন্য নির্ধারিত টেবিল থেকে বিচার কার্য়ক্রম পর্যবেক্ষণ করবেন। আগামী দেড় মাস সপ্তাহে চার দিন এই বিচার কাজ চলতে থাকবে। আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য ট্রাম্পকে স্বাক্ষীর কাঠগড়ায় ডাকা হতে পারে, আবার নাও হতে পারে। আর এটা নির্ভর করবে ট্রাম্প এবং তার আইনজীবীরা প্রসিকিউটরদের প্রমাণাদিকে কিভাবে গ্রহণ করছেন।
ট্রাম্প ২০১৭ সালের শুরু থেকে ২০২১ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বারবার প্রসিকিউশনকে বিরূপ সমালোচনা করেছেন। গত সপ্তাহে তিনি তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে অভিযোগ করেন, ‘আমাদের দেশে এর আগে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। সোমবার আমাকে একজন অত্যন্ত বিতর্কিত ও দুর্নীতিগ্রস্ত বিচারকের সামনে মুখ বন্ধ করে বসতে বাধ্য করা হবে। আমার প্রতি যার ঘৃণার কোনো পরিসীমা নেই।’
যেহেতু তাকে আদালতে হাজিরা দিতে হবে, তাই এ মামলা প্রায় নিশ্চিতভাবেই ৭৭ বছর বয়সী এই প্রার্থীকে দীর্ঘ সময়ের জন্য প্রচারণা থেকে দূরে রাখবে। তিনি ডেমোক্র্যাটিক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছ থেকে হোয়াইট হাউস পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা করছেন। বাইডেন ট্রাম্পকে ২০২০ সালের নির্বাচনে পরাজিত করেন। তবে ট্রাম্প আজ পর্যন্ত মিথ্যা দাবি করে আসছেন যে তিনি ভোট কারচুপির মাধ্যমে আরো একটি চার বছর মেয়াদের দায়িত্ব পেতে প্রতারিত হয়েছেন।
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের নির্বাচনের ঠিক আগে পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে এক লাখ ৩০ হাজার ডলার ঘুষ দেয়ার বিষয়টি গোপন করা জন্য অভিযুক্ত করা হয়।
স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে এই অর্থ দেয়া হয়েছিল এক দশক আগে একটি সেলিব্রেটি গল্ফ টুর্নামেন্টে এক রাতের ঘনিষ্ঠতা নিয়ে তিনি যে কথা-বার্তা বলছেন, তা নিয়ে যেন আর প্রকাশ্যে আলোচনা না করেন। আর এই ঘটনাটি ঘটেছিল ট্রাম্পের স্ত্রী মেলানিয়া তাদের ছেলে ব্যারনকে জন্ম দেয়ার ঠিক চার মাস পর।
দ্বিতীয় ঘটনার অভিযোগপত্রে দাবি করা হয়েছে, সাবেক প্লেমেট অফ দ্য ইয়ার কারেন ম্যাকডোগাল বলেছেন যে ট্রাম্পের সাথে তার এক মাস ধরে সম্পর্ক চলছিল। আর একজন ট্যাবলয়েড প্রকাশক তাকে এক কোটি ৫০ লাখ ডলার দিয়ে তার গল্পের সত্ত্ব কিনে নেন। কিন্তু ট্রাম্পের অনুরোধে তিনি নিবন্ধটি আর প্রকাশ করেননি।
ট্রাম্প এই দুই অভিযোগসহ নিউইয়র্কের মামলায় তার বিরুদ্ধে আনা ৩৪টি অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এসব অভিযোগের মধ্যে রয়েছে ট্রাম্প তার এক সময়ের রাজনৈতিক সহায়ক, দোষী সাব্যস্ত হওয়া মিথ্যা শপথকারী মাইকেল কোহেনকে, ড্যানিয়েলসকে অর্থ প্রদানের জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন।
এরপর ২০১৭ সালে প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রথম বছর ট্রাম্প মাইকেল কোহেনকে সেই অর্থ পরিশোধ করেন। ট্রাম্প তার ব্যবসায়িক হিসাবে দেখান যে কোহেনকে তিনি আইনি সহায়তার ফি হিসেবে এই অর্থ দিয়েছেন।
প্রতিটি অভিযোগেই চার বছরের কারাদণ্ডের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ট্রাম্প যেকোনো অভিযোগে দোষী সাবস্থ্য হলে সাজা এবং রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবেন।
নিউইয়র্কে মামলা হলো নজিরবিহীন চারটি ফৌজদারি অভিযোগের মধ্যে একটি। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ৮৮টি অভিযোগ রয়েছে, যার সবকটি তিনি অস্বীকার করেছেন।
তিনটি মামলার কোনোটিতেই বিচারের জন্য তারিখ ঠিক করা হয়নি। এর সবগুলোই বিচার পর্বের আগের শুনানি ও আইনি যুক্তি-তর্কের কারণে বিলম্বিত হচ্ছে। ট্রাম্প চাচ্ছেন বিচারের তারিখ নির্বাচনের পরে নিয়ে যেতে। আর যদি তিনি বিচারের তারিখ পেছাতে পারেন এবং নির্বাচনে জয়লাভ করেন; তবে তার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন কালে তাকে আর বিচারের মুখোমুখি হতে হবে না।
কোহেন তার এক সময়ের বসের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। আর ট্রাম্পের বিরুদ্ধে তিনি মূল সাক্ষী হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। কোহেন আর্থিক অভিযোগ ও কংগ্রেসের সামনে মিথ্যা বলা এবং আরো কিছু অভিযোগের বিষয়ে নিজের দোষ স্বীকার করেছেন। তিনি মোট সাড়ে ১৩ মাস কারাবাস করেছেন এবং দেড় বছর গৃহবন্দী ছিলেন।
স্টর্মি ড্যানিয়েলসে প্রদত্ত নাম স্টেফানি ক্লিফোর্ড; তিনি এবং ম্যাকডোগালকে সাক্ষ্য দিতে ডাকা হতে পারে।
সূত্র : ভয়েস অব আমেরিকা
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা