ইউরোপের ‘কুখ্যাত’ মানব পাচারকারী গ্রেফতার
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১৪ মে ২০২৪, ১১:৩২
ইউরোপের কুখ্যাত এক মানবপাচারকারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তার নাম বারজান মাজিদ।
বিবিসির করা একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের সূত্র ধরে রোববার সকালে ইরাকের কুর্দিস্তান এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
দেশটির জ্যেষ্ঠ একজন সরকারি কর্মকর্তা এই খবর জানিয়েছেন।
বেশ কয়েক বছর ধরে মাজিদ ও তার দলের সদস্যরা ইংলিশ চ্যানেল জুড়ে নৌকা এবং লরি ব্যবহার করে ব্যাপকভাবে মানুষ পাচার বাণিজ্য চালিয়ে আসছিল।
সম্প্রতি কুর্দিস্তানের সুলায়মানিয়া শহরে মাজিদের সন্ধান পায় বিবিসি, যেখান থেকে তিনি কয়েক হাজার অভিবাসীকে ইংলিশ চ্যানেল পার করিয়েছেন বলে জানান।
মাজিদ ‘স্করপিয়ন’ নামেও বেশ পরিচিত।
তিনি বলেন, ‘এক হাজারও হতে পারে, আবার ১০ হাজারও হতে পারে। সংখ্যাটা ঠিক জানি না, আমি কখনো গণনা করে দেখিনি।’
কুর্দিস্তানের স্থানীয় সরকারের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেছেন যে মানবপাচারকারী চক্রের ওপর সম্প্রতি বিবিসি যে অনুসন্ধান প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে, সেটির সূত্র ধরেই তারা মাজেদকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘রোববার সকাল ৭টার দিকে মাজেদ নিজের বাড়ি থেকে বের হচ্ছিলেন। তখন আমরা তাকে গ্রেফতার করি। এক্ষেত্রে আমাদেরকে তেমন বড় কোনো ঝক্কি পোহাতে হয়নি।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা এখন তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো তদন্ত করে দেখছি। এরপর আমরা ইউরোপীয় পুলিশ এবং আইনজীবীদের সাথে এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করব, যারা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায়।’
যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম অ্যাজেন্সিও (এনসিএ) মাজেদের ধরা পড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
এ বিষয়ে প্রকাশিত একটি বিবৃতিতে সংস্থাটি বলেছে, ‘প্রতিবেদনের মাধ্যমে তার (মাজেদের) মানব পাচারের বিষয়টি প্রকাশ করার জন্য আমরা বিবিসির কাছে কৃতজ্ঞ।’
এতে আরো বলা হয়েছে, ‘যুক্তরাজ্যে যারা মানুষদের পাচার করছেন, তারা যেখানেই অবস্থান করুক না কেন, আইনের আওতায় এনে ওইসব চক্রকে নির্মূল করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি এবং এক ব্যাপারে আমরা দৃঢ়ভাবে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।’
২০১৬ সাল থেকে ২০২১ সালের মধ্যে যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপের মধ্যে যত মানুষ পাচার হয়েছে, সেটির বেশিরভাগই ‘স্কর্পিয়নস’ এর চক্র নিয়ন্ত্রণ করেছে বলে জানা যাচ্ছে।
দুই বছর ধরে অভিযান চালিয়ে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং বেলজিয়ামের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সদস্যরা চক্রটির অন্তত ২৬ জন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে, যারা পরবর্তীতে আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন।
কিন্তু চক্রটির মূল হোতা মাজেদ, যাকে ‘স্করপিয়ন’ ডাকা হয়, তিনি নিজেই এতদিন গ্রেফতার এড়িয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন।
যদিও গ্রেফতারের আগেই বেলজিয়ামের একটি আদালতে তার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয় এবং ১২১টি মানব-পাচারের ঘটনায় তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।
২০২২ সালের অক্টোবরে মাজেদকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয় দেশটির আদালত। একইসাথে, নয় লাখ ৬৮ হাজার ইউরো জরিমানাও করা হয়।
কিন্তু বিবিসি খুঁজে বের করার আগ পর্যন্ত তার কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছিল না।
গত এপ্রিলে লোহিত সাগরে নৌকা ডুবির ঘটনায় বেশ কয়েকজন অভিবাসীর মৃত্যু হয়।
তখন একটি ফোনালাপকালে মাজেদ ডুবে যাওয়া ব্যক্তিদের প্রতি সামান্য সহানুভূতি দেখান বলে মনে হয়েছে।
‘সৃষ্টিকর্তা (এটি নির্ধারণ করে রেখেছেন যে) কখন আপনার মৃত্যু হবে। তবে কখনো কখনো নিজেদের দোষেই আপনার মারা পড়েন,’ ওই ফোনালাপে বলেন মাজেদ।
তিনি আরো বলেন, ‘সৃষ্টিকর্তা কখনো আপনাকে বলেননি যে, তুমি নৌকায় যাও।’
খোঁজ পাওয়ার পর মাজেদের সাথে দেখা করার চেষ্টা করে বিবিসি। বেশ কয়েকবার চেষ্টার পর অবশেষে তিনি সুলায়মানিয়ার একটি শপিংমলে দেখা করতে রাজি হন।
তিনি যে একটি অপরাধমূলক সংগঠনের একজন শীর্ষ ব্যক্তি, সেটি তখন তিনি অস্বীকার করেন।
তিনি বলেন যে অন্য চক্রের সদস্যরা তাকে বিভিন্ন সময় ফাঁসানোর চেষ্টা করেছে।
‘গ্রেফতার হওয়া বেশ কয়েকজন লোক বলেছে যে, আমরা তার জন্য কাজ করছি। তারা কম সাজা পেতে চায়,’ বলেন মাজেদ।
এরপর তিনি রব লরি নামের সাবেক এক সৈনিককে সেখানে ডাকেন। লরি অবশ্য বিবিসির অনুসন্ধানী দলের হয়েই কাজ করছিলেন।
‘কেউ তাদের জোর করেনি। তারাই এটি চেয়েছিল,’ বলেছিলেন মাজেদ।
তিনি আরো বলেন, ‘তারা নিজেরাই মানবপাচারকারীদের অনুরোধ বলেছিল যে দয়া করে আমাদের জন্য এটি করুন।’
‘কখনো কখনো চোরাকারবারিরা বলে, শুধু সৃষ্টিকর্তার কথা ভেবে আমি তাদের সাহায্য করব।...না, এটি (জোর করে নেয়ার অভিযোগ) সত্য নয়,’ বলেন মাজেদ।
বেলজিয়াম সরকারের কৌসুলির কার্যালয় থেকে মাজেদের গ্রেফতারের খবরকে স্বাগত জানানো হয়েছে।
‘অবশেষে আমাদের এই মামলায় ন্যায়বিচার দেখার সুযোগ হয়েছে,’ বলেন বেলজিয়াম সরকারের কৌসুলির কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা অ্যান লুকোভিয়াক।
তিনি আরো বলেন, ‘এখন তাকে তার অপরাধ কর্মকাণ্ডের মুখোমুখি করার এবং সেগুলোর বিষয়ে জবাব জানতে চাওয়ার সময় হয়েছে।’
সূত্র : বিবিসি