১৯ মে ২০২৪, ০৫ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলকদ ১৪৪৫
`


শালিকার তালিকা

-

ইন্টারনেটের এ যুগে কখন যে কোথায় কিভাবে কী ঘটে যায় তা বলা মুশকিল। ফেসবুক, টুইটার আরো কত কত সোশ্যাল মিডিয়া, অগণিত ওয়েবসাইট। ওগুলোতে যে কে কখন কী সত্য-মিথ্যা ফাঁস করে কার বারটা আর কার একটা বাজিয়ে দেয়, তা একমাত্র উপরওয়ালাই জানে। ইন্টারনেটের যুগে যে এ জগতে কোনো রকমে নতুন বউ সাথে নিয়ে মান-সম্মানের সাথে আজো টিকে আছি আজকাল সেটাকেই অনেক বড় মনে হয়।
বউয়ের কথা তুলতেই আবার আরেক কথা মনে হয়ে গেল। সেটা হলো, এই ইন্টারনেট তথা ফেসবুকের বক্কি-ঝক্কির কারণে কিছু দিন আগে ভালোই এক মুসিবতে পড়েছিলাম। কথায় আছে, আমরা বাঙালিরা নাকি তালে তালে তাল মেলাতে খুব পছন্দ করি। হয়তো এই কথাটারই বাস্তব প্রতিফলন ঘটিয়েছিল আমার এক শালী। সে ঠিক করল, সে তার সাবেক প্রেমিকদের তালিকা প্রকাশ করবে। তবে যাদের সে ছেড়ে দিয়েছে তাদের তালিকা না, তাকে যে যে ফাঁকি দিয়েছে শুধু তাদের তালিকাই প্রকাশ করবে, তা-ও আবার ঠিকানাসহ। শালীর ফেসবুক স্টেটাস পড়ে মনে মনে বেশ খুশি হয়েছিলাম কিন্তু কী জন্য আমার এত আনন্দ হচ্ছিল সেটা চেষ্টা করেও বুঝতে পারছিলাম না।
শালিকা তালিকা প্রকাশ করল। দেখা গেল তালিকার মাঝামাঝি অবস্থানে আমার নামও আছে। এমনকি আমাদের গ্রামের নামসহ! তালিকা দেখেই তো আমার মাথার তাপমাত্রা কয়েক লাখ সেন্টিগ্রেট বেড়ে গেল। এ কী করে সম্ভব! আমি তো বিয়ের আগে আমার শালীকে চিনতামই না। আর ছয় মাস হলো বিয়ে করলাম তার পর থেকেই তো তার সাথে টুকটাক যোগাযোগ হয়। তা-ও আবার মাসে দুই-চার বার, তাহলে প্রেমটাইবা করলাম কখন আর ছ্যাঁকাইবা দিলাম কখন!
আমার হাত-পা বরফ হয়ে যাচ্ছে আর মাথাটাও প্রায় হ্যাং হওয়ার দশা! সংসারটা ঠিকমতো শুরু হওয়ার আগেই বুঝি ভাঙতে চলল...! আরো বড় চিন্তা হচ্ছে, জামানা অনুযায়ী অতি স্বাভাবিকভাবেই আমার স্ত্রী মিষ্টিও আছে তার বোনের ফেসবুক ফ্রেন্ডলিস্টে। যেকোনো সময় সেও এই স্টেটাসটা দেখবে আর আমার সাথে তার তিতা তিতা কথাগুলো গুলির মতো করে ডেলিভারি দিতে থাকবে। আরো কী কী করে কে জানে!
দশ মিনিট হলো স্টেটাস দিয়েছে। এ পর্যন্ত ৫২ জন তাতে রিঅ্যাক্ট দিয়েছে, কমেন্টও করেছে অনেকে। আমার ভেতরে যে কী হচ্ছে তা বলার মতো নয়। যা-ই হোক, হাজার চেষ্টা করে মাথাটা খাটিয়ে একটা বুদ্ধি বের করলাম। তা হলো, শালিকাকে এখনই ফোন করে বলব, স্টেটাসটা যেন আপাতত ডিলিট না করলেও অন্তত ওনলি মি করে রাখে। তালিকায় আমার নাম কেন বিষয়টা ক্লিয়ার করে পরে যেন একটা কিছু করে। কিন্তু না বহুবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করতে পারলাম না। শেষমেশ একটি মেসেজে লিখলাম, সে যেন যত দ্রুত সম্ভব আমার সাথে যোগাযোগ করে। তারপর সেটা পাঠিয়ে চুপ করে বসে রইলাম।
বসে থেকেও কোনোভাবে মনদেহ কোনোটাতেই শান্তি পাচ্ছিলাম না। শুধু মনে হচ্ছিল কখন যেন আমার স্ত্রী মিষ্টি এসে আমার সাথে এক ভয়ঙ্কর বিবাদের সৃষ্টি করে! তখনো আমি শালিকাকে কল দিয়েই যাচ্ছি কোনোভাবেই সংযোগ হচ্ছে না। এর মধ্যেই অগ্নিরূপ ধারণ করে মিষ্টি এসে আমার সামনে হাজির! মুখে কিছু বলছে না বা বলতে পারছে না। তবে চোখ দেখে মনে হচ্ছে যেকোনো সময় চোখ দিয়ে নায়াগ্রা জলপ্রপাতের মতো করে জল পড়বে আর হয়তো সারা দেহটা পারমাণবিক বোমার মতো করে ফাটবে! তা দেখে আমিও কোনো কিছু বলতে বা করতে পারছিলাম না। এভাবে দু’জনই কয়েক মুহূর্তের জন্য একদম চুপ হয়েছিলাম।
এমতাবস্থায় হঠাৎ করে মিষ্টি তার মোবাইলটা আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে তার বোনের স্টেটাসটা দেখিয়ে চিৎকার করে বলল, এসব কী?
কী বলল, বুঝতে পারছিলাম না। মিষ্টি আবার চিৎকার করে প্রশ্ন করল, চুপ করে আছো কেন?
তখন কোনো রকমে বলতে পেরেছিলাম যে, ‘এসব একদম মিথ্যা। আমার আর তোমার ছোট বোনের মধ্যে কখনোই কোনো প্রেমের সম্পর্ক ছিল না। এমনো হতে পারে ওর আইডি কেউ হ্যাক করেছে তারপর এ রকম বাজে একটা ষড়যন্ত্রমূলক কুখ্যাত তালিকা স্টেটাস আকারে ছেড়ে দিয়েছে। ইত্যাদি ইত্যাদি।
নানা কিছু বুঝাচ্ছিলাম। কিন্তু মিষ্টি কিছুতেই কিছু মানছে না। উল্টো আরো ঝড়ের গতিতে কাঁদতে কাঁদতে চিৎকার-চেঁচামেচি করেই যাচ্ছে। একের পর এক এটা-ওটা যা ইচ্ছা তাই বলে যাচ্ছে আর মিথ্যা অপবাদ দিতে দিতে এটা-সেটা প্রশ্ন করেই যাচ্ছে। কোনো উত্তর না দিলেও চেঁচামেচির পরিমাণ বাড়ছে। উত্তর দিতে চাইলে তো যেন ঘূর্ণিঝড় শুরু হয়ে যায় এ রকম অবস্থা! বিভিন্ন রকম হুমকি তো অহরহ আসছেই।
এরই মাঝে মোবাইল টিপতে টিপতে অমাবস্যায় চাঁদের মতো সামনে এসে হাজির হলো সেই শালিকা। এ রকম ভেজাল-বিশৃঙ্খলা দেখে এর কারণ জিজ্ঞেস করল। এবার শুরু হলো আমার পালা। জোরে এক ধমক দিয়ে একবারে তেরোটা বাজিয়ে মোবাইলে ওর ফেসবুক স্টেটাসটা দেখিয়ে উল্টা প্রশ্ন করলাম, এসব কী?
আমার সাথে সাথে মিষ্টিও এর কারণ জানতে চাইল। তারপর শালিকা আমাদের শান্ত হতে বলল আর জানাল যে, প্রথম স্টেটাসটা মজা করার ছলে সে-ই দিয়েছিল। পরে তার ফেসবুক আইডিটা গতকাল হ্যাক হয়ে গেছে এবং পরে তার ক্ষতি করার জন্যই এই বিশ্রী স্টেটাস দেয়া হয়েছে। স্টেটাসে আমার নাম-ঠিকানা থাকায় প্রাথমিকভাবে এটাই প্রমাণ হয় যে, কাজটা তার পরিচিত ও কাছের কোনো শত্রুই করেছে। পরে শত চেষ্টা করেও এখনো পর্যন্ত সে তার আইডিটা নিজের নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না। এ জন্য একটু আগে থানায় একটা জিডিও করেছে। মিষ্টি ওসব কিছু বিশ্বাস করছে না বলে তার বোন ব্যাগ থেকে জিডি কপিটা বের করে দেখানোর সাথে সাথে যেন বিশ্বময় শান্তি ফিরে এলো। হ


আরো সংবাদ



premium cement
অপরাজেয় থেকেই বুন্দেসলিগার শিরোপা বুঝে নিল লেভারকুসেন যুদ্ধের সময় নিখোঁজ হাজার হাজার মানুষের ভাগ্য সম্পর্কে শ্রীলঙ্কাকে স্পষ্ট জানাতে হবে : জাতিসঙ্ঘ অনুমোদন ছাড়া কিভাবে ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংকস বিক্রি করছিল কোম্পানিগুলো সরকারি কেন্দ্রে কৃষকেরা ধান বেচতে পারে না, লাভ খাচ্ছে দালালরা গরুর নাম উড়াল সড়ক, ওজন ৩৫ মণ ইরান ২ সপ্তাহের মধ্যে পরমাণু অস্ত্র বানাতে পারবে! বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ভিক্ষুক, মোট সম্পত্তি ৭.৫ কোটি ভারতের কোভ্যাক্সিনেও রয়েছে দীর্ঘমেয়াদি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ইসরাইল সরকারে ভয়াবহ দ্বন্দ্ব : নেতানিয়াহুকে গাঞ্জের পদত্যাগের আলটিমেটাম রাফায় ইসরাইলি হামলা, সরে যেতে বাধ্য হয়েছে ৮ লাখ ফিলিস্তিনি চেন্নাইকে বিদায় করে বেঙ্গালুরুর ‘অবিশ্বাস্য’ প্লে অফ

সকল