১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

বন্যায় ডুবেছে সিলেটের সব উপজেলা, ৪ লাখ মানুষ পানিবন্দি

- ছবি - ইউএনবি

উজানের ঢল আর দুই দিনের টানা বৃষ্টি সিলেটে চলমান দ্বিতীয় দফা বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। মহানগর ও জেলাজুড়ে প্রায় চার লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে বন্যাকবলিত হয়ে আছে মহানগরের ১৫টি এলাকার ১০ হাজার মানুষ।

গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে সিলেট জেলা প্রশাসন সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।

২০ দিনের মাথায় দ্বিতীয় দফা বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে সিলেট। গত ২৭ মে সিলেটে আগাম বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এতে জেলার সব উপজেলার সাড়ে সাত লাখ মানুষ আক্রান্ত হন। সেই বন্যার পানি পুরোপুরি নামার আগেই গত শনিবার (১৫ জুন) আবার বন্যাকবলিত হয় সিলেট।

ঈদের দিন (১৭ জুন) ভোর থেকে সিলেটে শুরু হয় ভারী বর্ষণ, সাথে নামে পাহাড়ি ঢল। সকাল হতে না হতেই তলিয়ে যায় মহানগরের অনেক এলাকা। জেলার বিভিন্ন স্থানেও সৃস্টি হয় বন্যা পরিস্থিতি। সোমবার বিকেলে বৃষ্টি থামলে ধীরে ধীরে পানি কিছুটা কমে। কিন্তু মঙ্গলবার ভোর থেকে আবারো শুরু হয় বৃষ্টি, উজানেও প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। ফলে হু হু করে বাড়তে থাকে সিলেটের সব নদ-নদীর পানি। ঈদের দিন দু’টি নদীর পানি দু’টি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপরে থাকলেও মঙ্গলবার সকালে চারটি নদীর পানি ছয় পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। বিকেলে এসব জায়গায় পানি আরো বেড়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেট কার্যালয় সূত্র মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় জানায়, এসময় কানাইঘাট পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৩৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে; একই নদীর সিলেট পয়েন্টে পানি বইছে বিপৎসীমার ২৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে। কুশিয়ারা নদীর পানি আমলশীদ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে; একই নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানি বইছে বিপৎসীমার ৮৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে। এছাড়া সারি নদীর সারিঘাট পয়েন্টে পানি বইছে বিপৎসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে। আর সারি-গোয়াইন নদীর সারিঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ০.২৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, মঙ্গলবার পর্যন্ত সিলেটজুড়ে ৮৬৪টি গ্রাম ও এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এসব গ্রাম ও এলাকার তিন লাখ ৭১ হাজার ৫০৭ জন মানুষ বন্যায় আক্রান্ত। এর মধ্যে সিলেট মহানগরের চারটি ওয়ার্ডের ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি।

বন্যা মোকাবিলায় জেলা ও মহানগর মিলিয়ে ৬১৯টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এর মধ্যে মহানগরেই রয়েছে ৮০টি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহানগরের সব নিচু এলাকা পানিতে নিমজ্জিত। বিশেষ করে শাহজালাল উপশহর প্রায় পুরোটাই পানির নিচে। অনেকের বাসার নিচতলায় গলা পর্যন্ত পানি। এছাড়া যতরপুর, মেন্দিবাগ, শিবগঞ্জ, রায়নগর, সোবহানীঘাট, কালিঘাট, কামালগড়, মাছিমপুর, তালতলা, জামতলা, কাজিরবাজার, মাদিনা মার্কেট, আখালিয়া ও মেজরটিলাসহ মহানগরের অধিকাংশ এলাকা বন্যার পানির নিচে।

মহানগরের মধ্যে অনেক প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ সড়কে পানি রয়েছে। এর মধ্যে এয়ারপোর্ট সড়ক, সিলেট-তামাবিল সড়ক, দক্ষিণ সুরমার বঙ্গবীর রোডসহ বিভিন্ন সড়কের বেশ কয়েকটি স্থান পানির নিচে তলিয়ে গেছে।

এদিকে, মহানগরের আংশিক এবং জেলার সব উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

জানা গেছে, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জসহ কয়েকটি উপজেলার গ্রামীণ অনেক রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। অনেক কৃষিজমির ফসল তলিয়ে গেছে, ভেসে গেছে পুকুরের মাছ।

সিলেট আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সিলেটে সোমবার সকাল ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় ১৫৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে এবং ওইদিন সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বৃষ্টি ৭৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আগামী তিন দিন সিলেটে টানা বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে সংস্থাটি।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় পানিবন্দি লোকদের উদ্ধারের লক্ষ্যে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় তৎপরতা চালানো হচ্ছে। বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) কার্যালয়গুলোতে কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় ডেডিকেটেড অফিসার নিয়োগের পাশাপাশি প্রতিটি ইউনিয়নে ট্যাগ অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে। বন্যার্তদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য ইউনিয়নভিত্তিক মেডিকেল টিম গঠন করে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।

আগামী তিন দিন সিলেট অঞ্চলে ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস রয়েছে। এ অবস্থা চলমান থাকলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে।

সূত্র : ইউএনবি


আরো সংবাদ



premium cement