১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

হিমালয়ে কৃত্রিম হিমবাহ তৈরি করছেন লাদাখের ‘আইসম্যান’

হিমালয়ে কৃত্রিম হিমবাহ তৈরি করছেন লাদাখের ‘আইসম্যান’ - সংগৃহীত

ভারতের লাদাখের কৃষকদের সেচের জন্য পানির যোগান দিতে কৃত্রিম হিমবাহ বানিয়েছেন এক স্থানীয় প্রকৌশলী। হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চলে অবস্থিত ওই এলাকায় তুষারপাত এবং বৃষ্টির পরিমাণ কমে গেছে।

ভারতের উত্তরে অবস্থিত লাদাখের থিকসে গ্রামের বাসিন্দা ডোলকর। তার পরিবারের সদস্যরা কয়েক প্রজন্ম ধরে একই পেশায় রয়েছেন।

‘আমার মনে আছে ছেলেবেলায় এখানে প্রচুর বরফ পড়ত। প্রায় আমার হাঁটুর সমান উঁচু হয়ে যেত। কিন্তু এখন আর তেমন বৃষ্টি বা তুষারপাত হয় না,’ বলেছেন পেশায় আলু চাষি ৫৮ বছরের ‘ডোলকর’।

বছরের পর বছর ধরে তার পরিবারের আয় ক্রমশ কমতে দেখেছেন, ডোলকর ঠিক যেমনভাবে তার গ্রামকে ঘিরে থাকা পাহাড়ে বরফের টুপির মতো অংশকে চোখের সামনে একটু একটু করে গলতে দেখেছেন।

লাদাখের (ভারতীয় অংশের) রাজধানী লেহ থেকে ১৯ কিলোমিটার (১১.৮ মাইল) পূর্বে অবস্থিত থিকসে।

‘আলু চাষ করে আমরা প্রতি মাসে ৭০ হাজার টাকা আয় করতাম। কিন্তু এখন ২০ হাজার টাকার কাছাকাছি আয় করি।’

ক্রমহ্রাসমান হিমবাহ
হিমালয় পর্বতমালার প্রায় ৩০ লাখ হেক্টর জুড়ে আছে ৫৫ হাজার হিমবাহ যা পৃথিবীর বৃহত্তর (মেরু ক্যাপের বাইরে) বরফে ঢাকা অংশের প্রতিনিধিত্ব করে। তবে জলবায়ু পরিবর্তন কিন্তু হিমালয় পর্বতমালার বাস্তুতন্ত্রের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। এর ফলে প্রভাবিত হচ্ছে এই অঞ্চলের অর্থনীতি, বাস্তুসংস্থান ও পরিবেশ।

এভাবে চলতে থাকলে আগামী শতাব্দীর শেষ নাগাদ হিমালয়ের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ হিমবাহ বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে।

এর তীব্র প্রভাব পড়বে এশিয়ার নদী ব্যবস্থার উপর যা প্রায় ১৫০ কোটি মানুষের জন্য পানি সরবরাহ করে। প্রভাব পড়বে ফসল উৎপাদন ও জীবিকার উপরও। হিমবাহের বরফ গলা পানির উপর ওপর নির্ভরশীল প্রায় ১২ কোটি ৯০ লাখ কৃষক।

তেমনই একটা অঞ্চল হলো ভারতের উত্তরাংশে অবস্থিত লাদাখ যেখানে ডোলকরের বাড়ি।

ঠান্ডা এবং শুষ্ক জলবায়ু যুক্ত লাদাখে বছরে ন্যূনতম বৃষ্টিপাতের পরিমাণ আনুমানিক ৮৬.৮ মিমি (৩.৪ ইঞ্চি)। এই অঞ্চলের ৮০ শতাংশ কৃষক সেচের জন্য হিমবাহের বরফ গলা পানির উপর নির্ভর করে।

এদিকে, গত ৩০ বছরে তুষারপাতের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। ফলে তুষার আচ্ছাদন কমে হিমবাহ পিছিয়ে গেছে, প্রবাহে পানির পরিমাণ অপর্যাপ্ত হয়েছে এবং হিমালয় অঞ্চলের গ্রামগুলোতে দেখা দিয়েছে তীব্র পানির ঘাটতি।

কিন্তু ডোলকরের গ্রামে এই সঙ্কট মোকাবেলা করার জন্য একটা উদ্ভাবনী কৌশল বের করেছেন একজন স্থানীয় প্রকৌশলী। থিকসের কাছেই নাং নামের এক গ্রামে কৃত্রিম হিমবাহ নির্মাণ করেছেন তিনি। তার নাম ছেওয়াং নোরফেল। তিনি অবশ্য লাদাখের ‘আইসম্যান’ বলেই পরিচিত।

তার পেশাগত কাজের অংশ হিসেবে স্থানীয় বাসিন্দাদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের জন্য গ্রামে গ্রামে ঘুরতে হতো তাকে। সেই সময় নোরফেল আবিষ্কার করেন ৮০ শতাংশ কৃষক চাষের জন্য পানির উপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।

হিমবাহের বরফ গলা পানি চাষের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তা জুন মাসের মাঝামাঝি থেকে প্রবাহিত হতে শুরু করে যদিও বীজ বপণের মৌসুম শুরু হয় এপ্রিল মাসে। দীর্ঘ শীতের কারণে অব্যবহৃত হিমবাহের বরফ গলা পানি স্থানীয় ‘ঝোরা’তে বয়ে যেতে থাকে।

ওই পানি স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য অত্যাবশ্যক সম্পদ, তা সংরক্ষণের জন্য একটা কৃত্রিম হিমবাহ তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেন নোরফেল। ধীরে ধীরে লাদাখের আরো ১০টা গ্রামে কৃত্রিম হিমবাহ তৈরী করে ফেলেন তিনি। নাং ওই গ্রামগুলোর মধ্যে একটা।

লাদাখ অঞ্চলের লেহ শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার (১৮.৬ মাইল) দূরে নাং গ্রামটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩ হাজার ৭৮০ মিটার (১২ হাজার ৪০২ ফুট) উঁচুতে অবস্থিত।

এই গ্রামে বাস করেন মাত্র ৩৩৪ জন যাদের প্রাথমিক জীবিকা হলো কৃষি। মূলত, আলু ও গম চাষ করেন তারা।

এই অঞ্চলের অন্য গ্রামের মতোই নাংয়ে কোনো স্থায়ী হিমবাহ নেই এবং পানি সরবরাহের উৎস প্রাকৃতিক ঝর্ণা এবং স্থানীয় ‘ঝোরা’। তবে তা পানি চাষের জন্য যথেষ্ট নয়। বীজ বপণের মৌসুমে বিশেষত এপ্রিল এবং মে মাসে কৃষি কাজের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ পানির যোগান দরকার হয়।

চাষের জন্য বিশেষত বসন্তকালে গম, আলু ও অন্যান্য ফসলের সেচের ক্ষেত্রে এটা একটা বড় ঝুকি তৈরি করে। কারণ গ্রীষ্মকাল পর্যন্ত হিমবাহের বরফ গলে না।

অনিশ্চিত আবহাওয়ার কারণে স্থানীয় কৃষকরা পরের বছরের জন্য তাদের কৃষিকাজের পরিকল্পনা নিয়ে দ্বিধায় ভুগছিলেন। অনিশ্চয়তা তাদের ভাবতে বাধ্য করেছিল আগামী মৌসুমের জন্য আদৌ বীজ বপণ করবেন কি-না।

এতে একদিকে যেমন অনিশ্চয়তার কারণে বপণ না করলে সম্ভাব্য আয় হ্রাসের ঝুঁকি থাকে, তেমনই বীজ বপণ করার পর পর্যাপ্ত পানি না পাওয়ার আশঙ্কাও থেকে যায়।

তার সম্প্রদায়ের মানুষদের উপর যে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়ছে তা নজর এড়ায়নি ৮৭ বছরের ছেওয়াং নোরফেলের।

পেশায় প্রকৌশলী এবং সাবেক গ্রামোন্নয়ন কর্মকর্তা একটা অভিনব কৌশল বের করেন যাতে ফলনে ঘাটতি না হয়, কৃষকেরা ক্ষতির শিকার না হন আর একইসাথে হিমবাহকে তাদের গ্রামের ‘কাছাকাছি নিয়ে আসা যায়’।

তিনি বলেন, ‘মূল হিমবাহ থেকে পানি পাওয়া শুরু হয় জুন মাস থেকে।’

‘আমরা পানি বানাতে পারব না। সুতরাং আমাদের কাছে থাকা উৎসকে ব্যবহার করাটাই হলো একমাত্র বিকল্প পথ।’

নোরফেল জানিয়েছেন যে- হিমবাহের পানিকে সম্পদ হিসেবে ব্যবহার করার চিন্তাটা মাথায় এসেছিল এমন একটা জায়গা থেকে যেখানে এমন একটা ভাবনা আসার কথা তিনি একেবারেই কল্পণা করেননি।

বাড়ির পেছনের বাগানের একটা কল দেখে এই অভিনব কৌশল মাথায় আসে তার।

তিনি বলেন, ‘শীতকালে প্রবাহ ঠিক রাখতে আমরা কল চালু রাখি। নয়তো পাইপে পানি জমে সেটা ফেটে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।’

তবে এই পানি থাকে না। নোরফেল চালু করা কলের নিচে তৈরি হওয়া পাতলা বরফের একটি ছোট চাদর লক্ষ্য করেন। কলের নিচে ছায়ায় ঢাকা জায়গায় পানি জমে জমে বরফ হয়ে গেছে, কারণ ওই অংশে সরাসরি রোদ পড়েনি।

ছেওয়াং নোরফেল বুঝতে পারেন তিনি যদি নষ্ট হওয়া পানি ধরে রাখতে এবং জমাতে সক্ষম হন তা হলে পুরো গ্রামের জন্য কৃত্রিম হিমবাহ তৈরি করা যাবে।

গ্রামবাসীদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে সুকৌশলে বিভিন্ন উচ্চতায় কৃত্রিম হিমবাহ তৈরি করেন তিনি।

তার পরিকল্পনা অনুযায়ী, গ্রামের সবচেয়ে কাছের হিমবাহ যা সর্বনিম্ন উচ্চতায় অবস্থিত তার বরফ প্রথমে গলবে। বসন্তেকালে প্রাথমিক বপণের সময় প্রয়োজনীয় সেচের পানি সরবরাহ করে এই কৃত্রিম হিমবাহের বরফ গলা পানিই।

তাপমাত্রা বাড়ার সাথে সাথে আরো বেশি উচ্চতায় থাকা পরবর্তী কৃত্রিম হিমবাহ গলতে শুরু করলে তা নিচের জমিতে সেচের পানির অবিচ্ছিন্ন ও সময়মতো সরবরাহ নিশ্চিত করবে।

অভিনব পন্থা
উঁচু পর্বতমালার নিচে অবস্থিত নাং। এই গ্রামে আসা পর্যটকদের স্বাগত জানাতে যে- বোর্ড টাঙানো রয়েছে সেখানে নাংয়ের বিখ্যাত কৃত্রিম হিমবাহের দিকনির্দেশ দেয়া আছে।

ওই হিমবাহে ৩০ মিনিটের সফর শেষে পৌঁছানো যায়। ওই অঞ্চল বৈশিষ্ট্যযুক্ত পর্বতমালার কাছে। প্রথম ১০ মিনিট সফরের পরেই বরফের প্যাচগুলো একেএকে আসতে থাকে।

সূর্যনারায়ণন বালাসুব্রহ্মণ্যম কৃত্রিম হিমবাহসহ পানি ব্যবস্থাপনার সমাধান সরবরাহকারী সংস্থা ‘একরস অফ আইস’-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা। তিনি সুইজারল্যান্ডের ফ্রাইবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃত্রিম বরফের জলাধারের উপর পিএইচডি করছেন এবং হিমবাহ কিভাবে পানি সংরক্ষণ বাড়িয়ে তুলতে পারে তা নিয়ে বর্তমানে গবেষণা করছেন।

নাং গ্রামে সময় কাটিয়ে আসা এই গবেষক বলেন, ‘এই গ্রামে পানি সংরক্ষণের জন্য এক অভিনব কাঠামো আছে যার অন্তর্গত হলো পাহাড়ের উপরে থাকা একটা হিমায়িত খাল, যা উপত্যকা পর্যন্ত বিস্তৃত। খালের পাশে বিশেষ কৌশলে রাখা পাথরের দেয়াল পানির গতি কমিয়ে দেয়, যার ফলে পানি হিমায়িত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এই শিলা প্রাচীরের উদ্দেশ্য হিমাঙ্কের হার বাড়ানো, যাতে উপত্যকা জুড়ে বরফের চাদর তৈরি হয়।’

বালাসুব্রহ্মণ্যম জানিয়েছেন, এই অভিনব পদ্ধতি কাজে দিয়েছে। তার মতে, ‘গ্রামের পানি সরবরাহ ২০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে গেছে। এখনো পর্যন্ত এই হিমবাহ এপ্রিল মাসের গুরুত্বপূর্ণ মাসগুলোতে প্রায় ১০টি গ্রামকে পানি সরবরাহ করে। আমরা আরো দুটি (কৃত্রিম হিমবাহ) তৈরী করব বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

‘লাদাখে বহুল পরিমাণ পর্যটনের কারণে দ্রুত নেমে যাওয়া ভূগর্ভস্থ পানি পুনরুজ্জীবিত করার জন্যও এটা একটা ভালো সমাধান,’ বলেছেন নরফেল।

নাংয়ের কৃষকরা এই কৃত্রিম হিমবাহ পেয়ে কৃতজ্ঞ
‘কৃত্রিম হিমবাহ তৈরির আগে পর্যাপ্ত পানি পাওয়া আমাদের পক্ষে কঠিন ছিল,’ বলেছেন নাং গ্রামের কৃষক রিংজেন ওয়াংগিয়াল। তিনি এখানে বাস করেন ৪৪ বছর।

তিনি বলেন, ‘প্রচুর তুষারপাত হলেও তা আমাদের এলাকা থেকে অনেক দূরে হয়েছিল। ওই বরফ গলতে অনেকটা সময় লেগেছিল। সেই পানি আমাদের কাছে এসে পৌঁছতে আরো বেশি সময় লেগেছে। এই বিলম্বের অর্থ হলো আমাদের ফসল কাটাতে দেরি হবে এবং কখনো কখনো পর্যাপ্ত পানি না থাকার কারণে জমি শুষ্ক হয়ে যায়।’

লাদাখের গ্রামগুলোতে এই কৃত্রিম হিমবাহ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা স্থানীয় এনজিও লেহ নিউট্রিশন প্রোগ্রাম (এলএনপি) ২০১৩ সালে প্রাথমিকভাবে যে দল তৈরী করেছিল ওয়াংগিয়াল তার সদস্য ছিলেন।

ওই সময়ে কাজের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন তিনি। ওয়াংগিয়ালের বলেন, ‘আমরা শুধু একটা বেলচা নিয়ে শূন্যের নিচে তাপমাত্রায় কাজ করেছি যাতে পানির প্রবাহকে অন্য দিকে ঘুরিয়ে দেয়া যায়।’

‘ওই সময় আমার কাছে পা গরম রাখার মতো জুতোও ছিল না। কিন্তু আমার সম্প্রদায়ের জন্য আমি কাজ করেছি। এখন এই কৃত্রিম হিমবাহই আমাদের পানির প্রাথমিক উৎস।’

কৃত্রিম হিমবাহ তৈরির এই কাজ আরো দক্ষতার সাথে প্রসারিত করতে ১৯৯৫ সালে এনজিওর সাথে হাত মেলান নোরফেল। তার কৃতিত্বের জন্য প্রশংসাও অর্জন করেছেন। এই তালিকায় রয়েছে পদ্মশ্রী যা ভারতের অন্যতম বৃহত্তম বেসামরিক পুরস্কার।

তার উদ্ভাবনী ধারণা সোনম ওয়াংচুকের মতো অনেককে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। সোনম ওয়াংচুক ‘আইস স্তূপ’ বা বরফের স্তূপ প্রজেক্টে হিমায়িত পানি গলানোর আগে একটি শঙ্কুর মতো স্তূপের আকার ধারণ করে। পরে তা চাষের মৌসুমে বিতরণ করা হয়।

যদিও ওয়াংচুকের এই সৃষ্টিকে কিছুটা সংশয়ের চোখে দেখেন ছেওয়াং নোরফেল।

তার মতে, ‘বরফের স্তূপও একটা সমাধান বটে আর এক্ষেত্রে কাজের জন্য নির্দিষ্ট সাইট বেছে নিতে হবে না (যেমনটা কৃত্রিম হিমবাহের ক্ষেত্রে করা হয়)। তবে এটা কৃত্রিম হিমবাহের তুলনায় অনেকটাই ব্যয়বহুল এবং জটিল। কৃত্রিম হিমবাহ নির্মাণ করা সহজ এবং এটা কম খরচে করা যায়।’

বৈশ্বিক সমস্যার স্থানীয় সমাধান
বিশেষজ্ঞদের মতে পানিসম্পদ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে কৃত্রিম হিমবাহ অত্যন্ত শক্তিশালী কৌশল। এই কৌশলের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী হিমবাহ গলনের সমস্যার সমাধান হয়তো হবে না কিন্তু পৃথিবীর অসংখ্য মানুষ যারা হিমবাহের উপর নির্ভর করেন তাদের সমস্যার মোকাবেলা করতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ার কার্নেগি মেলন ইউনিভার্সিটির সিভিল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডেভিড রাউন্সের গবেষণা অনুযায়ী, একবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে বিশ্বের সমগ্র হিমবাহের ২৫ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশ ভর লুপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এই গবেষক মনে করেন, কৃত্রিম হিমবাহ তৈরির কৌশল ‘অত্যন্ত বুদ্ধিদীপ্ত পরিকল্পনা।’

‘এই অঞ্চলে বরফের স্তূপ এবং (কৃত্রিম) হিমবাহ তৈরির মতো পদ্ধতি ভালো কাজ করছে বলে মনে হচ্ছে,’ বলেছেন ডেভিড রাউন্স।

‘এই পদ্ধতিতে প্রচুর পরিমাণে পানি সঞ্চয় হয়, যার ফলে উঁচু পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসকারী সম্প্রদায়ের মানুষকে পানি সরবরাহ করা যায়।’

এই প্রসঙ্গে একটি উল্লেখযোগ্য বিষয়েরও উল্লেখ করেছেন তিনি। তার কথায়, ‘আমরা যদি সমস্যাটাকে দেখি তাহলে বুঝব তাপমাত্রা কিন্তু বাড়তেই থাকবে যদি না আমরা সবাই মিলে বিশ্বব্যাপী এক সমাজ হিসাবে কোনো পদক্ষেপ নেই।’

হিমালয়ে জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা নিয়ে কাজ করা নেপালের ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেটেড মাউন্টেন ডেভেলপমেন্ট (আইসিআইএমওডি) সম্প্রতি একটা প্রতিবেদন প্রকাশ করে নীতিনির্ধারকদের জানিয়েছে, ওই অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের সাথে লড়ার জন্য তাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।

মানব জীবন ও প্রকৃতির উপর এর ‘মারাত্মক প্রভাব’ পড়বে বলেও ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

আইসিআইএমওডির ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল ইজাবেলা কোজিয়েল বলেন, ‘এশিয়ার ২০০ কোটি মানুষ যে পানির উপর নির্ভর করে তা ধারণ করে এখানকার হিমবাহ ও তুষার। সেই ক্রায়োস্ফিয়ারকে হারানোর পরিণতি কিন্তু ব্যাপক।’

রাউন্সের ২০২৩ সালের সমীক্ষা পানি সরবরাহ এবং লাখ লাখ মানুষের জীবনধারণের ক্ষেত্রে ছোট হিমবাহের গুরুত্বের ওপর জোর দেয়, বিশেষত মধ্য ইউরোপ এবং উচ্চ-পর্বত এশিয়ার মতো অঞ্চলগুলোতে। এই ছোট হিমবাহগুলো পাহাড়ে বসবাসকারী মানুষের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক দু’দিক থেকেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ থিকসে বা নাংয়ের মতো গ্রামের কথা বলেছে রাউন্স।

‘বিশ্বব্যাপী স্তরে এই কৌশল (ছেওয়াং নোরেফেলের কৃত্রিম হিমবাহের) বিবেচনা করা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ চিলি এবং মধ্য ইউরোপে বসবাসকারীসহ পৃথিবীর বহু সম্প্রদায় এই পানি সম্পদের উপর নির্ভর করে। তাই, পানি-সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন বিশ্বের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের জন্য এটা একটা কার্যকর স্থানীয় সমাধান হতে পারে,’ বলেছেন রাউন্স।

তবে, রাউন্সের উল্লেখ করেছেন যে- এই ছোট আকারের প্রকল্পগুলো জলবায়ু সমাধানের পরিবর্তনের মতো সমস্যার সমাধান করে না। তার কথায়, যদি আমরা ভেবে থাকি এটা বিশ্বব্যাপী হিমবাহের ক্ষয় ঠেকাবে, তাহলে সেটা কিন্তু হবে না।’

লাদাখের ‘আইস ম্যান’ নোরফেল বিশ্বাস করেন যে- তার সহজ, স্বল্প ব্যয়ের কৌশল একটা দীর্ঘস্থায়ী পদ্ধতি।

তিনি বলেছেন, ‘আমরা পানি তৈরি করতে পারি না, তবে আমরা আমাদের হাতের কাছে থাকা উৎস ব্যবহার করতে পারি। গ্রামের মানুষকে এই কাজে সামিল করে তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে এই কৃত্রিম হিমবাহের রক্ষণাবেক্ষণ আমরাই করতে পারি।’

‘এই কৃত্রিম হিমবাহ গ্রামের আশপাশের ঝোরাগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করে তুলতে সাহায্য করে করে, যেগুলো পানির গৌণ কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ উৎস হয়ে ওঠে।’
সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement
ফেনীতে মুক্তিপণ না দেয়ায় শিশু খুন, গ্রেফতার ৩ কিশোর ড. ইউনূসের সাথে এসএফও প্রতিনিধিদলের বৈঠক সিরিজ নিশ্চিত করতে চায় দক্ষিণ আফ্রিকা, সমতা লক্ষ্য পাকিস্তানের হালাল পণ্যের বাজার প্রসারে বাংলাদেশের সাথে কাজ করবে মালয়েশিয়া শমী কায়সারের জামিন স্থগিত দেড় যুগ পর সিলেটে জামায়াতের কর্মী সম্মেলন কাল হালাল পণ্যের বাজার প্রসারে একসাথে কাজ করবে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া ৫ বছর পর আফগানিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি জিতল জিম্বাবুয়ে জাহিদ-পলক-আজমসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলা দেশে এলো ইউক্রেন থেকে আমদানি করা গম চঞ্চলকে ‘গৃহবন্দী’ করার খবরে তোলপাড় ভারতে, অভিনেতা জানালেন ‘পুরোটাই মিথ্যা’

সকল