১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

২০১৪ : ৪! ২০১৯: ৪! ২০২৪: ১১! শরিকদের কয়জনকে মন্ত্রিত্ব দিলেন মোদি

২০১৪ : ৪! ২০১৯: ৪! ২০২৪: ১১! শরিকদের কয়জনকে মন্ত্রিত্ব দিলেন মোদি - ফাইল ছবি

জোট রাজনীতির বাধ্যবাধকতার ছাপ দেখা গেল ভারতের প্রধানমন্ত্রী পদে নরেন্দ্র মোদির তৃতীয় ‘ইনিংসের’ গোড়াতেই। রোববার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি ভবনের প্রাঙ্গণে মোদির সাথে আর যে ৭১ জন মন্ত্রী (৩০ জন পূর্ণমন্ত্রী এবং পাঁচ জন স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্তসহ ৪১ জন প্রতিমন্ত্রী) শপথ নিলেন তার মধ্যে ১১ জন এনডিএর অ-বিজেপি সহযোগী দলের। এদের মধ্যে পাঁচজন পূর্ণমন্ত্রী। ছয়জন প্রতিমন্ত্রী।

বিজেপির সহযোগী দলগুলোর মধ্যে টিডিপি এবং জেডিইউ একটি পূর্ণমন্ত্রী ও একটি প্রতিমন্ত্রী পদ পেয়েছে। ‘হাম’ প্রধান জিতনরাম মাঝিঁ, জেডিএস নেতা এইচডি কুমারস্বামী, এলজেপিআর সভাপতি চিরাগ পাসোয়ান পূর্ণমন্ত্রী হয়েছেন। আরএলডি, আরপিআই(এ), শিবসেনা, আপনা দল (এস) একটি করে প্রতিমন্ত্রীর পদ পেয়েছে। তাৎপর্যপূর্ণভাবে অজিত পওয়ারের এনসিপি থেকে কেউ মন্ত্রী হননি রোববার।

২০১৪ সালে মোদির সাথে শপথ নিয়েছিলেন সহযোগী দলের চার পূর্ণ এবং একজন প্রতিমন্ত্রী। ২০১৯-এ তিন পূর্ণমন্ত্রী এবং একজন প্রতিমন্ত্রী। ঘটনাচক্রে, প্রথম দু’বারই লোকসভায় নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল বিজেপির। যা এবার অনুপস্থিত। এই পরিসংখ্যান দেখে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ বলছেন, বিজেপি এককভাবে লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজনীয় ২৭২ না পাওয়াতেই তৃতীয় এনডিএ মন্ত্রিসভার কলেবর হলো ৭২।

২০১৯ সালের ৩০ নভেম্বর দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নিয়েছিলেন মোদি। ওই সময় তার সঙ্গে ২৪ জন পূর্ণমন্ত্রী, ৯ জন স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী এবং ২৪ জন প্রতিমন্ত্রী শপথ নিয়েছিলেন। পূর্ণমন্ত্রীদের তালিকায় ছিলেন সহযোগী দলগুলোর তিনজন- শিবসেনার অরবিন্দ সাওয়ন্ত লোক জনশক্তি পার্টি (এলজেপি)-র রামবিলাস পাসোয়ান এবং শিরোমণি অকালি দলের হরসিমরত কউর বাদল। যদিও শেষ পর্যন্ত তারা কেউই থাকেননি। শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে এনডিএ ছাড়ায় ২০১৯-এরই নভেম্বরে মোদির মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন অরবিন্দ। ২০২০-এর অক্টোবরে প্রয়াত হয়েছিলেন রামবিলাস। তার এক মাস আগে বিতর্কিত তিন কৃষি আইন নিয়ে অকালি দল এনডিএ ছেড়েছিল। মন্ত্রিত্ব ছেড়েছিলেন হরসিমরত।

মোদির দ্বিতীয় মন্ত্রিসভায় গোড়ায় প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন মহারাষ্ট্রের দলিত নেতা তথা আরপিআই(এ) প্রধান রামদাস অঠওয়ালে। পরবর্তী সময়ে আপনা দল (এস)-এর নেত্রী অনুপ্রিয়া পটেল এবং পরলোকগত রামবিলাসের ভাই তথা রাষ্ট্রীয় লোক জনশক্তি পার্টি (আরএলজেপি)-র প্রধান পশুপতি পারস মোদি মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পেয়েছিলেন।

২০১৪ সালে ২৬ মে প্রথমবার মোদি প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেয়ার সময় তার সাথে ২১ জন পূর্ণমন্ত্রী, পাঁচজন স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী এবং ১৮ জন প্রতিমন্ত্রী শপথ পাঠ করেন। পূর্ণমন্ত্রীদের মধ্যে রামবিলাস এবং হরসিমরত ছাড়া শিবসেনার অনন্ত গীতে এবং তেলুগু দেশম পার্টি (টিডিপি)-র অশোক গজপতি রাজু ছিলেন। প্রতিমন্ত্রীদের তালিকায় ছিলেন রাষ্ট্রীয় লোক সমতা পার্টি (আরএলএসপি) প্রধান উপেন্দ্র কুশওয়াহা।

অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল বলছে, এবার কেন্দ্রে শরিক-নির্ভর হতে হবে মোদিকে। ৫৪৫ আসনের (দু’টি মনোনীত আসনসহ) লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ২৭৩টি। বিজেপি এককভাবে জিতেছে ২৪০টিতে। তাদের নেতৃত্বাধীন জোট এনডিএ ২৯৩টি আসনে জিতেছে। ১৬ এবং ১২টি আসনে জিতে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ হয়ে উঠেছেন এনডিএ-র দুই সহযোগী নেতা তেলুগু দেশম পার্টি (টিডিপি)-র প্রধান চন্দ্রবাবু নায়ডু এবং জনতা দল ইউনাইটেড (জেডিইউ)-এর সভাপতি নীতীশ কুমার। শপথের আগেই তারা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দফতরের দাবিতে বিজেপির উপর চাপ বাড়িয়েছিলেন বলে ‘খবর’।

রোববার তৃতীয় মোদি মন্ত্রিসভার শপথের পর ওই চাপের প্রতিফলন দেখছেন রাজনীতির কারবারিদের একাংশ। এর ফলে আগামী দিনে কেন্দ্রীয় সরকারে প্রধামন্ত্রীর দফতরের (পিএমও)-র ‘একাধিপত্য’ খর্ব হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। তবে দলেরই আর এক অংশের দাবি, এক দশকের ‘প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়া’ প্রতিহত করে নেহরুর পরে দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তৃতীয় ‘ইনিংস’ শুরু করতে চলেছেন মোদি। দল এবং সহযোগীদের মধ্যে তার উচ্চতার সঙ্গে তুলনীয় কোনো নেতাও নেই। ফলে চাপের মুখেও অটল থাকবেন মোদি।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা


আরো সংবাদ



premium cement