১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

আজাদ কাশ্মিরের ‘বদলা’ নিতে চীনের শত্রুর সাথে ভারতের বন্ধুত্ব বাড়ছে!

আজাদ কাশ্মিরের ‘বদলা’ নিতে চীনের শত্রুর সাথে ভারতের বন্ধুত্ব বাড়ছে! - প্রতীকী ছবি।

শত্রুর শত্রু আমার বন্ধু। প্রাচীন এই প্রবাদকে স্মরণে রেখেই প্রতিবেশী ‘শত্রু’ দেশের বিরুদ্ধে কৌশল সাজাচ্ছে ভারত।

তাইওয়ানের সাথে চীনের সম্পর্ক বরাবরই তিক্ত। স্বশাসিত তাইওয়ানকে চীন নিজেদের অংশ বলেই দাবি করে এসেছে বরাবর।

চীন আর তাইওয়ানের মধ্যে রয়েছে তাইওয়ান প্রণালী। তবে দুই ভূখণ্ডের ভৌগোলিক ব্যবধান যতটা, তার চেয়ে অনেক বেশি রয়েছে রাজনৈতিক ব্যবধান।

চীনকে জব্দ করতে যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই তাইওয়ানের স্বশাসনকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে এসেছে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে তাইওয়ানকে স্বতন্ত্র রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেয়নি ওয়াশিংটন।

বেইজিং বরাবরই মনে করে, তাইওয়ান আদতে চীনের অংশ। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সরকারের আমলেও সেই নীতিতে অটল রয়েছে তারা। তবে তাইওয়ান সেই দাবি অস্বীকার করে এসেছে।

গত শতাব্দীর চল্লিশের দশকে চেয়ারম্যান মাও জে দংয়ের নেতৃত্বে চীনে সশস্ত্র গৃহযুদ্ধের মাধ্যমে কমিউনিস্ট পার্টির ক্ষমতা দখলের পর জাতীয়তাবাদী নেতা চিয়াং কাইশেক এবং তার অনুগামীরা ঘাঁটি গড়েছিলেন তাইওয়ান দ্বীপপুঞ্জে।

তারপর থেকে মূলত যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমি দুনিয়ার আর্থিক ও সামরিক সাহায্যে এখনো টিকে আছে ‘পৃথক’ তাইওয়ান। কিন্তু জিনপিংয়ের জমানায় চীন ক্রমশ আগ্রাসী নীতি অবলম্বন করে তাইওয়ান দখল করতে চাইছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

চীন-তাইওয়ান গোলযোগে ভারত এই কিছু দিন আগে পর্যন্তও কোনো পক্ষ নেয়নি। নেহরুর আমল থেকেই ভারত ‘এক এবং অখণ্ড চীন’ নীতিকে সমর্থন করে এসেছে। ১৯৬২ সালের ভারত-চীন যুদ্ধের পরও এই নীতিতে বদল ঘটেনি। এখনো যে ভারত সরাসরি কোনো একটি পক্ষকে সমর্থন করছে, তেমনটাও নয়। তবে চীন ভারতের নাকের ডগায় পাকিস্তান শাসিত (আজাদ) কাশ্মির দিয়ে বাণিজ্যপথ (বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিসিয়েটিভ) তৈরির উদ্যোগ নেয়ার পরই তাইওয়ানের সাথে বন্ধত্ব বাড়িয়েছে ভারত। বেইজিং-তাইপেই দুই পক্ষের তীক্ত সম্পর্ককে নিজেদের বৈদেশিক নীতির কৌশল নির্ধারণেও কাজে লাগাচ্ছে নয়াদিল্লি।

সম্প্রতি ভারতের ‘ইন্ডিয়া-তাইপেই অ্যাসোসিয়েশন’ এবং ‘তাইপেই ইকোনমিক অ্যান্ড কালচারাল সেন্টার’-এর মধ্যে মউ (সমঝোতাপত্র) স্বাক্ষরিত হয়েছে। তাতে স্থির হয়, তাইওয়ানের শ্রমিক সমস্যা মেটাতে ভারতের দক্ষ কর্মপ্রার্থীরা সেখানে কাজের জন্য আবেদন জানাতে পারবেন।

এও স্থির হয় যে, যোগ্যতার পরিচয় দিতে পারলে ওই কর্মীদের স্থায়ী করা হবে এবং তাদের সুরক্ষার বিষয়টি দেখবে তাইওয়ান সরকার। আর নব্বইয়ের দশক থেকে ভারতের সাথে তাইওয়ানের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্রমোন্নতি হয়েছে।

তবে আনুষ্ঠানিকভাবে নয়াদিল্লি তাইওয়ানকে স্বীকৃতি না-দেয়ায় কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। নয়াদিল্লি বা তাইপেইতে নেই কোনো দূতাবাসও। ‘ইন্ডিয়া-তাইপেই অ্যাসোসিয়েশন’ এবং ‘তাইপেই ইকোনমিক অ্যান্ড কালচারাল সেন্টার’-ই কার্যত দুই জায়গার দূতাবাসের ভূমিকা পালন করে।

গত দু’বছরে একাধিকবার তাইওয়ানের জল এবং আকাশসীমায় ঢুকে পড়ে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করছে বেইজিং। আর ২০২২ সালের অগস্টে চীনের আপত্তি খারিজ করে যুক্তরাষ্ট্রে কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অফ রিপ্রেজ়েনটেটিভসের তৎকালীন স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফরের পরেই নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়।

চীনের বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ, তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেছিল শি জিনপিংয়ের দেশ। তাইওয়ানের মানুষকে নাকি ভোট দিতেই নিষেধ করেছিল বেইজিং। কিন্তু হুঁশিয়ারিতেই শেষ। চীনের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে তাইওয়ানে আবার ক্ষমতায় আসেন চীন-বিরোধী শাসক লাই চিং তে। ডেমোক্রেটিক প্রগ্রেসিভ পার্টির (ডিপিপি) নেতা তিনি।

তাইওয়ানের সাথে সম্পর্ক আরো নিবিড় করার ইঙ্গিত দিয়ে সম্প্রতি তাইওয়ানের প্রবীণ নাগরিক ইয়ুং লিউকে দেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান পদ্মভূষণ দিয়েছে ভারত।

ইয়ুং লিউ বিশ্বের সবচেয়ে বড় চুক্তিভিত্তিক বৈদ্যুতিন সামগ্রী প্রস্তুতকারক সংস্থা ফক্সকনের সিইও। সারা বিশ্বে মোট আইফোনের ব্যবসার ৭০ শতাংশে ফক্সকনের হাত রয়েছে।

কোভিড মহামারীর পরবর্তী সময় থেকে সুকৌশলে ফক্সকন চীনে পণ্য উৎপাদনের পরিমাণ হ্রাস করেছে। সেই সাথে ভারতে বিনিয়োগ বাড়িয়ে দিয়েছে এই সংস্থা। গত কয়েক বছরে ভারতে ফক্সকনের উপস্থিতি আলাদা করে চোখে পড়েছে।

ভারত এখনই চীনের সাথে সরাসরি সঙ্ঘাতের পথে না হাঁটতে চাইলেও তাইওয়ানের সাথে সমান্তরালভাবে সুসম্পর্ক রেখে চলতে চায়। এর মাধ্যমে বেইজিংকেও চাপে রাখতে চায় নয়াদিল্লি।

বর্তমানে প্রায় ৫০০০ ভারতীয় তাইওয়ানের বিভিন্ন সংস্থায় উচ্চপদে কর্মরত। তাছাড়াও রয়েছেন বিভিন্ন পদে কাজ করা আরো কয়েক হাজার ভারতীয়। তাদের সুরক্ষার বিষয়ে সদা সতর্ক নয়াদিল্লি নিবিড় যোগাযোগ রেখে চলেছে তাইপেই প্রশাসনের সাথেও।

অন্যদিকে, শনিবারও তাইওয়ানের জল এবং আকাশসীমার কাছে নতুন করে যুদ্ধ মহড়া শুরু করল চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি। এই পরিস্থিতিতে ভারত চীনের এই ‘বিদ্রোহী’ ভূখণ্ড নিয়ে কী অবস্থান নেয়, সে দিকে নজর থাকবে সবার। সূত্র : আনন্দবাজার

 


আরো সংবাদ



premium cement