১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১ পৌষ ১৪৩০, ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

রেমালে থেমে গেল কলকাতার ভোট-প্রচার, বন্ধ মেট্রোরেলও

কলকাতার অনেক রাস্তা জলমগ্ন, ভোটের প্রচার বন্ধ - ছবি : সংগৃহীত

রেমালের ফলে প্রবল ঝড়-বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকায় কলকাতায় রোববার কোনো প্রচার হয়নি। সোমবারও কার্যত হচ্ছে না।

কলকাতায় ভোট ১ জুন। তার ৪৮ ঘণ্টা আগে প্রচার বন্ধ হয়ে যাবে। তার আগে শেষ রোববার কোনো দলই প্রচার করতে পারেনি।

অবশ্য এই দুর্যোগের মধ্যে এখন সব প্রধান রাজনৈতিক দলই মানুষের পাশে থাকার বার্তা দিতে চাইছে। কলকাতায় যেসব জায়গায় গাছ পড়েছে, সেখানে তৃণমূলের কর্মকর্তারা পৌরসভার কর্মীদের নিয়ে দ্রুত তা কাটার ব্যবস্থা করার জন্য তৎপর হয়েছে।

ভিআইপি রোডে হলদিরামের কাছের একটি আবাসনের বাসিন্দা রোহিত জানিয়েছেন, তাদের এলাকায় চারটি গাছ পড়ে গিয়েছিল। সকালেই তৃণমূলের ছেলেরা এসে দ্রুত তা কেটে সরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করেছে। রেমালের আঁচ তারা ভোটে পড়তে দিতে চায় না।

সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক মহম্মদ সেলিম আগেই ঘোষণা করেছিলেন, তারা মানুষের পাশে থাকবেন। সিপিএমের প্রবীণ নেতা কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় দক্ষিণ ২৪ পরগনায় দুর্গত এলাকায় চলে গেছেন। তিনি একটি স্কুল মানুষের থাকার জন্য খুলে দিয়েছেন। বাঁধের অবস্থা দেখেছেন। কান্তি বলেছেন, 'এই সময় ভেদাভেদ ভুলে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে।

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী উপকূলের এলাকার মানুষের জন্য একটি হেলপলাইন খুলেছেন। উপকূলে ৫০ জন কংগ্রেস কর্মীকে পাঠিয়েছেন মানুষকে সাহায্য করার জন্য। কলকাতাতেও বাইক-সহ কংগ্রেস কর্মীদের প্রস্তুত রেখেছেন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য।

মঙ্গলবার কলকাতায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির রোড শো আছে। সেই কর্মসূচি হবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় এখনো আছে। সোমবারও কলকাতায় বৃষ্টি হচ্ছে। বিভিন্ন জেলা থেকে রেমালের ফলে হওয়া ক্ষয়ক্ষতির খবর আসছে।

বিজেপি নেতা সৌরভ শিকদার জানিয়েছেন, আবহাওয়ার দিকে তারা নজর রাখছেন।

ফলে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর রোড শো নিয়েও একটা অনিশ্চয়তা আছে।

কলকতার অবস্থা
রোববার কলকাতায় ঝড়ের দাপট ও প্রবূল বৃষ্টি শুরু হয় রাত ৯টা থেকে। ১০টা নাগাদ তীরের ফলার মতো বৃষ্টি ধেয়ে এসে গাড়ির উইন্ড স্ক্রিনের ওপর আছড়ে পড়ছেল। সাথে প্রবল ঝড়। কলকাতার ইস্টার্ন বাইপাস দিয়ে গাড়ি যাচ্ছিল। মাঝেমধ্যে উইন্ড স্ক্রিন ঝাপসা হয়ে যাচ্ছিল বৃষ্টির তোড়ে। রাস্তার দুইপাশে গাছগুলো ঝড়ের জন্য প্রচণ্ডভাবে দুলছে। বৃষ্টির জন্য সামনে খুব ভালোভাবে দেখা যাচ্ছিল না। ঝাপসা লাগছিল। আর যখন ঝড়ের ঝাপটা লাগছিল, তখন মনে হচ্ছিল গাড়ির কাচও ভেঙে যেতে পারে।

রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা কম। যা রয়েছে, তা দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে। যত সময় বাড়তে লাগলো, ততই ঝড় ও বৃষ্টির বেগ বাড়তে শুরু করলো। সেই অবস্থা চলতে থাকলো গভীর রাত পর্যন্ত। রাতে জানালা দিয়ে দেখা যাচ্ছিল, চারপাশ সাদা করে বৃষ্টি নেমেছে। আর ঝড়ের বেগ প্রচণ্ড। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, কলকাতায় ঝড়ের বেগ ছিল ঘণ্টায় ৭৪ কিলোমিটার।

ভোরে উঠতেই দেখা গেল, আকাশ রোববারের মতোই কালো। বৃষ্টি পড়ছে, তবে তার তেজ কমেছে। পরিস্থিতিটা বোঝা গেলো বাইরে বের হওয়ার পর।

কলকাতার আধুনিক উপনগরী সল্টলেকের প্রতিটি ব্লকেই অন্তত একটা করে পার্ক আছে। অনেকগুলো ব্লকে গাছ পড়েছে রোববার রাতে। গাছ পড়েছে লেক টাউনেও। এমনকি কলকাতা পৌরসভার অফিসের কাছেও গাছ পড়েছে।

কলকাতার ভেতরে রাস্তায় কোথাও গোড়ালি, কোথাও হাঁটুজল জমে। ক্যামাক স্ট্রিটের মতো এলাকায় হাঁটুজল। সেখানে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের অফিসের সামনে জল। আমহার্স্ট স্ট্রিট, কলেজ স্ট্রিটে ঢোকা গেল না। পরিচিত মানুষ জানালেন, ঠনঠনে কালীবাড়ির সামনে মনে হচ্ছে যেন নদী বইছে।

সপ্তাহের প্রথম কাজের দিন। কিন্তু সকাল থেকে শহরতলির ট্রেন চলাচব বন্ধ। শিয়ালদহে সকাল ৬টা থেকে ট্রেনের অপেক্ষায় মানুষ বসে আছেন। পার্ক স্ট্রিট মোট্রো লাইনে পানিতে ভরে যাওয়ায় সেখানে মেট্রোরেল চলছে না। রাস্তায় বাস খুবই কম। ওলা, উবারের মতো পরিষেবাও চাহিদা সামাল দিতে পারছে না।

সোমবার সকালেও কলকাতার আকাশে কালো মেঘ। ভোরের দিকে বৃষ্টি একটু কমেছিল। ৮টা থেকে আবার শুরু হলো বৃষ্টি। খুব জোরে নয়। কিন্তু সমানে বৃষ্টি পড়ছে। সূত্র : ডয়চে ভেলে

 


আরো সংবাদ



premium cement