১৯ মে ২০২৪, ০৫ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলকদ ১৪৪৫
`


যে গ্রামে দিনের বেলায় মেয়েদের নাইটি পরা নিষিদ্ধ

- সংগৃহীত

ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের একটি গ্রামের বয়স্কদের একটি কমিটি দিনের বেলায় নারীদের নাইটি পরার উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। পোশাকটির নাম নাইটি, যা কোথাও কোথাও ম্যাক্সি হিসেবে পরিচিত। এটি ঢিলেঢালা যেটি আসলে ঘুমের সময় পরিধানের জন্য ব্যবহৃত হয়।

কিন্তু গত কয়েক বছরে লক্ষ লক্ষ মেয়েদের কাছে দিনের বেলায় পরার জন্যও এটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলো আরামদায়ক বলে।

বিশেষ করে ভারতের শহর, বন্দর, গ্রামে গৃহবধূদের কাছে এটি বেশ জনপ্রিয় এবং তাতে কারও কোনো আপত্তিও ছিলোনা।

কিন্তু চার মাস আগে অন্ধ্রপ্রদেশের তোকালাপল্লী গ্রামের নয় সদস্যের একটি কাউন্সিল নারীদের সকাল সাতটা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত সময়ে নাইটি না পরার নির্দেশ দিয়েছে। বিস্ময়করভাবে এ কাউন্সিলের নেতৃত্বে আছেন একজন বয়স্ক নারী।

তারা জানিয়েছেন তাদের নির্দেশনা অমান্য করলে ২০০০ রুপি পর্যন্ত জরিমানা করা হবে।

নির্দেশ পাওয়ার পর সেটি অক্ষরে অক্ষরে পালনের খবর পাওয়া গেছে এবং এখন পর্যন্ত কারও বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেনি।

গ্রামের বাল্লে ভিষ্ণু মুর্থি বলেন, "নাইটি বাড়িতে পরা পর্যন্ত ঠিক ছিলো কিন্তু বাইরে পরলে লোকের চোখে পড়ে এবং যিনি পরিধান করেন তিনি ঝামেলায় পড়তে পারেন।"

গ্রামটির কিছু অধিবাসী অবশ্য বলছেন তারা আদেশের বিরোধিতা করেছিলেন কিন্তু ব্যর্থ হয়েছেন কারণ জরিমানার পরিমাণ অনেক বেশি। তবে নাইটি নিয়ে এমন বিপাকে পড়ার ঘটনা এবারই প্রথম নয়।

২০১৪ সালে মুম্বাইতে নারীদের একটি গ্রুপ দিনের বেলায় নাইটি পরাকে 'অশালীন চর্চা' হিসেবে আখ্যায়িত করে একই ধরণের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলো।

তবে সেবার নিষেধাজ্ঞা অমান্যের শাস্তি ছিলো ৫০০ রুপি। যদিও তারপরেও নারীদের অনেকেই ওই নিষেধাজ্ঞা মানতে অস্বীকার করে। তবে এসবে এ পোশাকটির জনপ্রিয়তা মোটেও কমছেনা।

নাইটি আসলে লাখ লাখ ডলারের ব্যবসা। বিশেষ করে সূতী কাপড়ের নাইটি ব্যাপক জনপ্রিয় এবং যার দামও হাতে নাগালে।

ডিজাইনার রিমঝিম ডাডু বলছেন শাড়ী পড়ে ঘরের কাজ করার চেয়ে নাইটি পরে অনেক বেশি সুবিধা হয়। এটি পড়ে মেয়েরা মুক্তভাবে কাজ করতে পারে।

ডিজাইনার ডেভিড আব্রাহাম বলছেন এটি খুব অভিজাত পোশাক নয় কিন্তু সহজে পরা যায় বলেই এটি অনন্য।

ভারতে নাইটি প্রথম এসেছিলো ব্রিটিশ শাসনামলে। মূলত তখন ইংরেজ নারীরাই পরিধান করতো। কিন্তু কবে নাগাদ এটি ভারতীয়দের বেডরুমে ঢুকে যায় তা অবশ্য জানা যায়নি।

শেফালি ভাসুদেব নামে একজন বলছেন সত্তরের দশকে গুজরাটে মা-খালাদের তিনি এটা দিনের বেলাতেও পরতে দেখেছেন। এমনকি এটা পরে তারা স্থানীয় বাজারেও গিয়েছেন। পরে নব্বইয়ের দশকে দিল্লীতে তরুণী মায়েদের প্রায় সবাইকে এটি পরতে দেখেন তিনি।

তার মতে মধ্যবিত্ত নারীর জীবনে নাইটি আসলে 'পোশাকের স্বাধীনতা' নিশ্চিত করেছে। তিনি বলেন এটাকে কোনোভাবেই যৌনাবেদনময়ী বলা যায়না।

ডেভিড আব্রাহাম বলেন অশালীন বিষয়টি আসলে যিনি দেখেন তার দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়।

তার মতে এটি আসলে পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি কারণ কোনো গ্রাম্য পরিষদ কখনো পুরুষের কোনো বিষয় মন্তব্য করেছে?


আরো সংবাদ



premium cement

সকল