মনের মিনার ভেঙে পড়েনি
- সালাহউদ্দিন বাবর
- ১৯ মে ২০২৪, ০৫:৫৭
সমালোচনা যদি শুধু সমালোচনার জন্যই হয় তবে অবশ্যই সেটি হবে নেতিবাচকতা। আর সমালোচনার উদ্দেশ্য যদি কাউকে সংশোধনের লক্ষ্যে হয়, ভুল পথে চলা থেকে বিরত রাখা এবং শুদ্ধ পথে চলার পরামর্শভিত্তিক হয়; অবশ্যই সেটি হবে ইতিবাচকতা। তবে জানতে হবে সেই সৎ পরামর্শ গ্রহণ করা হলো কি না। না উপেক্ষিত হলো। উপেক্ষিত হলে বুঝতে হবে এরা অহমিকায় নিমজ্জিত। গ্রহণ করা হলে মনে করতে হবে বহু মতের সমন্বয়ের মধ্য দিয়ে সঠিক পথ বের করে নেয়ার প্রয়াসী তারা। সঠিক সোপানে পৌঁছতে সদিচ্ছার কোনো ঘাটতি নেই। কিন্তু এখন কি এ জনপদে সব ক্ষেত্রে এমন খোলা মন নিয়ে পক্ষ শক্তি আদৌ পরামর্শের জন্য অপেক্ষা করছে? এমন অপেক্ষমাণ না থাকার অর্থ হচ্ছে অধঃগতিকে রোখা যাবে না। সেটি অনিবার্য। বোদ্ধাশ্রেণীর মানুষ, যারা চিন্তা চেতনায় অগ্রসর। তারা ত্রিকালদর্শী না হলেও বর্তমানকে তারা গভীর অভিনিবেশ সহকারে এবং সতর্কতার সাথে পর্যবেক্ষণ করেন। তাদের সেই অভিজ্ঞান সঞ্জাত কথা বা লেখনীতে যে স্ফুরণ তার মূল্য কম নয়। যেখানে দেশের বর্তমান হাল অবস্থা নিয়ে তাদের যে মতামত সেখানে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার পাশাপাশি সেখান থেকে বেরিয়ে আসার পথনির্দেশনাও। সেই কথার সারনির্যাস হচ্ছে দেশ ও জাতিকে আজ গভীর অন্ধকার এক খাদের পাশে এনে দাঁড় করানো হয়েছে বটে। এখান থেকে ইউটার্ন করানো পদক্ষেপ নেয়া ক্ষমতাসীনদের পক্ষে একেবারেই অসম্ভব। কেননা এক দিন নয় দু’দিন নয়। গত দেড় দশক সময় ধরে তারা রাষ্ট্রযন্ত্রের হালটা তাদের হাতে। এ সময়ে তাদের যত অদক্ষতা, অক্ষমতা, স্বজনপ্রীতি, ন্যায়-অন্যায়ের বিভেদ বুঝতে না পারা, দুর্নীতি, নীতি-নৈতিকতার অবক্ষয়, সর্বোপরি দেশ ও দশের কল্যাণচিন্তা প্রশাসনের যতটুকু দায়বদ্ধতা থাকা জরুরি ছিল সেই বোধ তাদের ভেতর আছে বলে তাদের ভূমিকা ও কার্যক্রম থেকে বোঝার উপায় নেই। তবে প্রশাসনের আস্ফালন বাগাড়ম্বের পুরো মাত্রায় বিরতিহীনভাবে চলেছে। এমন অন্তঃসারশূন্য সব কথা। মানুষের কাছে তা স্বচ্ছ। মানুষ তাতে শুধু হতাশই নয় ক্ষিপ্ত। এরপরও প্রশাসনের কোনো কর্মস্পৃহা সৃষ্টি হয়নি। একান্ত ঠেকে যা কিছু করেছে তাতে আছে অবহেলা আর অদক্ষতা। এর পরিণতি হচ্ছে জাতির জীবনে চরম ভোগান্তি। এ কথা সবারই মনে রাখা দরকার ইতিহাস কিন্তু কাউকে ছেড়ে কথা বলে না। আজ না হয় কাল ইতিহাস উচ্চকণ্ঠেই সব কথা বলবে। এখন এতটুকু বলা ভালো। প্রতিটি কাজ বা ভূমিকা তা ভালো বা মন্দ যাই হোক। তার বিপরীত প্রতিক্রিয়া হওয়াটা অনিবার্য। সেই প্রতিক্রিয়া দেখতে মানুষ এখন প্রতীক্ষায় থাকছে।
এই অধ্যায়ের বিষয় আসয় নিয়ে কথা বলা আপাতত থাক। দেখা যেতে পারে জাতি এখন চোখ বাঁধা কোনো উটের ওপর সওয়ার হয়ে কোন অজানা গন্তব্যের দিকে চলছে। দেশের বর্তমান রাজনীতি, অর্থনীতি, কূটনীতি, গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা ও বিভিন্ন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠানগুলোর হালহকিকত দেখাসহ অন্যান্য বিষয়ের ওপর নজর দেয়া যেতে পারে। প্রথমেই রাজনীতি নিয়ে কথা হতে পারে। সম্প্রতি বিশিষ্ট একজন শিক্ষাবিদ টেলিভিশনের পর্দায় এক টকশোতে প্রথমেই প্রশ্ন তুলেছিলেন দেশে আদৌ কি কোনো রাজনীতির অস্তিত্ব বর্তমান? হাততালি দিতে যেমন দুই করতল একসাথে করতে হয়, তবেই শব্দ হবে। এক হাতে যেমন তালি বাজে না তেমন একদল নিয়ে রাজনীতিও হতে পারে না। ক্ষমতায় থাকা দলের ক্ষমতার দাপটে প্রতিপক্ষকে রাজনীতির ময়দান ছাড়া করা হয়েছে। এরপর সুষ্ঠু রাজনীতির স্বপ্ন দেখার অর্থ দুঃস্বপ্ন দেখা নয় কি? কথার পিঠে যদি কথাই না হয় তাকে আর সংলাপ বলা যায় না। আজকে দেশের রাজনীতি ঠিক সেখানে গিয়ে পৌঁছেছে। সরকার ও তাদের দোসর-সহযোগীরা অনবরত কথা বলছে। তাদের প্রতিপক্ষ যদি ছিটেফোঁটা দু’চার কথা বলার চেষ্টা করে তবে তার অপব্যাখ্যা করতে ছুটে আসেন হাজারো জন লাখো কথা নিয়ে। তখন কথা বলা যেমন বিপদ; আবার নীরব থাকলে বলে ‘তলে তলে ষড়যন্ত্র আঁটছে।’ প্রতিপক্ষ যখন কোনো যুৎসই কথা বলে তখন তার প্রতি-উত্তর দিতে না পেরে নিছক বাগাড়ম্বর করা হয়। এই হচ্ছে দেশের বর্তমান রাজনীতির হালচাল। সব দেশে রাজনীতির একটা স্বতন্ত্র শৈলী অনুসরণ করা হয়। তবে শর্ত হচ্ছে সেখানে গণতন্ত্রের এসেন্সটা পুরোপুরি থাকতে হয়। সেই শৈলী বা সংস্কৃতি হচ্ছে দলগুলোর সহাবস্থানের নীতিতে আত্মস্থ থাকা। প্রতিপক্ষের প্রতি ধৈর্য ধারণ, সহিষ্ণুতা প্রদর্শন, তাদের সৎ সমালোচনাকে স্বাগত জানানো; কিন্তু এমন শৈলীর অনুপস্থিতি এখানে প্রকট। আর এ বিষয়ও এখানে স্মরণ করা দরকার। একদা রাজনীতি ছিল জনাশ্রয়ী। লক্ষ্য ছিল সামষ্টিক কল্যাণ, সবার প্রতি শুভেচ্ছা আর সমভাবে উন্নয়নের সুফল বণ্টন। কিন্তু রাজনীতি এখন হয়ে উঠেছে ব্যক্তির বা ব্যক্তি সমষ্টির অর্থবৈভব অর্জনের লক্ষ্য। এ জন্যই দিন দিন তৈরি হচ্ছে বৈষম্যের পাহাড়। ভোটের সাথে অবশ্যই রাজনীতির নৈকট্য অত্যন্ত গভীর। গত দ্বাদশ সংসদ এবং এখন যে উপজেলা পরিষদের নির্বাচন হচ্ছে সেখানে প্রার্থীদের সম্পদের যে হিসাব পাওয়া (অবশ্য সে হিসাবে ষোলো আনা সঠিক হয়তো নয়) গেছে তাতে দেখা গেছে সব প্রার্থীর সম্পদ মাত্র কয়েক বছরে তিল থেকে তাল হয়ে উঠেছে। রাজনীতি এখন যেন টাকা তৈরির যন্ত্রে পরিণত হয়েছে। স্মরণ করা যেতে পারে নব্বই দশকের সাথে তুলনা করলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংগঠনগুলোর ক্ষমতার ভারসাম্য এখন নষ্ট হয়েছে। গণতন্ত্রের ঘাটতির কারণেই ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হয়েছে। আর এর অনিবার্য ফল হিসেবে ব্যাংকিং খাত, শেয়ারবাজার ধ্বংসের পথে। আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সঙ্কট ঘনীভূত হয়েছে।
রাজনীতির মতো অর্থনীতিও গোল্লায় গিয়ে পৌঁছেছে। সেটি বোঝার জন্য এখন কোনো বিশেষজ্ঞ প্রয়োজন হয় না। যারা মাঝে মধ্যে সঙ্গতি হলে বাজারে যান কেনাকাটার দুর্লভ সুযোগ হয়, তারা পরিষ্কার আঁচ করতে পারেন অর্থনীতির চাকাটা কতটা নিশ্চল হয়ে গেছে। গত জানুয়ারিতে নতুনভাবে ক্ষমতা নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার প্রত্যয়ের সাথে বলেছিল মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে তারা অগ্রাধিকার দেবে। জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত আসতেই স্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা দূরের কথা এখন খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের উপরে গিয়ে পৌঁছেছে। কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ বলছেন মূলস্ফীতি আসলে ১০ নয় ১৫ শতাংশের কাছাকাছি। পণ্যমূল্যসহ আরো অনেক কিছুই অর্থনৈতিক সঙ্কটের কারণ হচ্ছে গোষ্ঠীবিশেষের কারসাজি। বলা হচ্ছে, এরা ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় বর্ধিত হয়ে সরকারের চেয়ে শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। দেশের ব্যাংক-ব্যবস্থা বর্তমান অস্থিরতার ইঙ্গিত করে অর্থনীতি কোন তলানিতে পৌঁছেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশ করা নিয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এই আদেশ থেকে এটা পরিষ্কার হয়ে গেছে সেখানে বড় ধরনের কোনো সমস্যা তৈরি হয়েছে। ঝোলা থেকে কালো বেড়াল বেরিয়ে পড়েছে। এমন খবরও ভারতীয় মিডিয়ায় এসেছে যে, ওই দেশে হ্যাকাররা বাংলাদেশ ব্যাংকের বিপুল অর্থ লোপাট করে। আল্লাহ মালুম কথাটা কতটা সত্য। অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে এটা ঠিক নয়। যাই হোক দেশ যেন লুটপাটের এক অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে।
এ দিকে খোদ সরকার এখন ঋণখেলাপি। বৈদেশিক ঋণের সুদ-আসল দিতে পারছে না সরকার। জানা গেছে, আসল নয় কেবল ঋণের সুদ দিতেই আবার করা হয়েছে ঋণ। মনে রাখতে হবে, এখন লাখ টাকার ওপর মাথাপিছু ঋণের ভার। রাজনৈতিক নির্বাহীদের অক্ষমতার কারণে রাজনীতিতে যেমন নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছে ঠিক একই কারণে দেশের অর্থনীতিও ধসে পড়েছে। এসবই নষ্ট রাজনীতির অনুষঙ্গ।
অপর দিকে কূটনীতির ক্ষেত্রে যে চরম দেউলিয়াত্ব লক্ষ করা যায় ইতঃপূর্বে আর কোনো সময়ই এটা লক্ষ করা যায়নি। আমাদের কূটনীতি এখন কেবল একমুখী। দেশের প্রধান বিরোধী দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন ভারতকে খুশি রাখাই যেন ভোটারবিহীন আওয়ামী সরকারের পররাষ্ট্রনীতি। বিএনপির অপর শীর্ষ নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগের রিমোট কন্ট্রোল ভারতে। এসব অভিযোগের সত্যতা মিলেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক শীর্ষ প্রতিনিধির কাছে প্রশ্ন ছিল প্রধানমন্ত্রী প্রথমে চীন না ভারত যাবেন। সেই মুখপাত্রের কৌশলী জবাব ছিল ভারত আমাদের কাছে বেইজিং একটু দূরে। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফরের মধ্য দিয়ে আরো স্পষ্ট হয়েছে প্রধানমন্ত্রী চীন নয় ভারত যাবেন। অথচ বাংলাদেশের স্বার্থেই চীন সফরটাই ছিল গুরুত্ববহ। তবে প্রধানমন্ত্রীর স্বার্থের বিবেচনাই সেখানে প্রাধান্য পেয়েছে। ভারত বাংলাদেশ থেকে শুধু উপার্জন করে বিনিময়ে কিছুই দেয় না অথচ চীন বিপুল অঙ্কের ঋণ দিয়েছে। ভারত দিয়েছে কেবল প্রতিশ্রুতি। সেটি হয়তো শুধু বাত কি বাত। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের বক্তব্য প্রকৃতপক্ষে বিএনপি নেতৃবৃন্দের অভিযোগকে প্রকারান্তরে স্বীকৃতি দেয়া হলো।
বাংলাদেশে গণতন্ত্রের এখন যে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় রয়েছে। সেটি আর দেশের মানুষকে বলে কয়ে বোঝানোর দরকার নেই। গণতন্ত্রের প্রথম ও মৌলিক বিষয়টি হচ্ছে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং জনগণ যাতে মুক্তচিত্তে, ভয়ভীতিহীন পরিবেশে ভোট দিতে সক্ষম হবে। ২০১৪ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত তিনটি সংসদের নির্বাচনের তারিখ যথারীতি ঘোষণা হয়। তারিখ ঘোষিত হলেও সেখানে প্রকৃতপক্ষে কোনো ভোটই হয়নি। তখন সেটিকে আর নির্বাচন বলে অভিহিত করা যায় না। জনগণের পক্ষে ভোট প্রদানের কোনো সুযোগ সেখানে হয়নি, এ প্রশ্ন উঠতেই পারে। নির্বাচনের অর্থ ও ব্যাখ্যাটা খুব পরিষ্কার। নির্বাচন হতে হবে অনেক দলকে নিয়ে। কিন্তু গত তিনটি জাতীয় নির্বাচনের কোনোটিতেই কোনো প্রকৃত বিরোধী দলের অংশ ছিল না। বিকল্প প্রার্থী না থাকা, আর নাগরিকদের ভোট দানের ক্ষেত্রে হতাশাজনক অভিজ্ঞতা; সব মিলেমিশে বাংলাদেশে গত দেড় দশকের বেশি সময় ধরে গণতন্ত্র ধসে গেছে। আর এসব কারণে প্রায় ১৬ বছর থেকে বাংলাদেশে মৃতপ্রায় গণতন্ত্রের নাভিশ্বাস উঠেছে। এখন রাজনীতি আসলে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে কৃত্রিমভাবে বাঁচিয়ে রাখা হচ্ছে। ইতোমধ্যে এটাই লক্ষ করা গেছে, সংসদ ঠিক যে প্রক্রিয়ায় গঠিত হয়েছে শুধু ক্ষমতাসীনদের দিয়েই। এখন উপজেলা পরিষদের প্রহসনের যে নির্বাচন হচ্ছে সেখানেও একপক্ষীয় প্রার্থীদের মধ্যে লড়াই। সর্বত্রই একদলের প্রার্থী, তারপরও সঙ্ঘাত-সংঘর্ষের কোনো শেষ নেই। গণতন্ত্রের প্রধান অনুশীলন হচ্ছে নির্বাচন, সেটি এখন কতটা নিচে নামিয়ে আনা হয়েছে তার ভূত-ভবিষ্যৎ নিয়ে বোদ্ধাসমাজের শঙ্কার কোনো শেষ নেই।
একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সেখানে মুক্ত স্বাধীন ও জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার বা চেতনার প্রতিফলন ঘটবে সমাজের গণমাধ্যমে। যাকে অধুনা রাষ্ট্রে চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে পরিগণিত হয়। রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে সংবাদমাধ্যমকে অভিহিত করার সাথে সাথে এর গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়। কেবল সেটিই নয়, তার দায়িত্ব কর্তব্য জনগণের প্রতি পেশাদার সাংবাদিকের প্রতিশ্রুতিবদ্ধতার জন্য গভীর দৃষ্টি রাখতে হয়। কিন্তু আজ যেখানে গণতন্ত্রের শুদ্ধতা নিয়ে হাজারো প্রশ্ন আছে, গণতন্ত্রের অস্তিত্ব বজায় রাখা ঘরে-বাইরে সংশয়ের সীমা নেই, সেখানে সংবাদমাধ্যমের স্বকীয়তা এবং তাদের কাছে জাতির প্রত্যাশা রাষ্ট্রের এই চতুর্থ স্তম্ভ কিভাবে পূরণ করবে। যাই হোক, মতপ্রকাশের জন্য এবং গণতন্ত্রের জন্য মুক্ত গণমাধ্যম জরুরি। দুর্ভাগ্য হচ্ছে সাংবাদিকরা শত ভাগ মুক্ত নয়।
সম্প্রতি একটি দুঃসংবাদ জাতিকে গভীর হতাশায় নিমজ্জিত করেছে। সেই দুঃসংবাদটি সম্প্রতি দেশের মানুষ অবহিত হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘গণমাধ্যম সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান আরো অবনমন ঘটেছে। এমন তথ্য দিয়েছে আন্তর্জাতিক সংস্থা রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা যাদের নিশ্চিত করার কথা তা সেই রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষ দ্বারাই বেশি হুমকির মুখে পড়েছে। এই সূচকে বাংলাদশের অবস্থান ছিল ১৬৩তম স্থানে। এবার সেই অবস্থান থেকে আরো দুই ধাপ পিছিয়ে গেছে। এর ফলে এই সংস্থার মূল্যায়নে বাংলাদেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতার অবস্থান আফগানিস্তান ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার বাকি সব দেশের নিচে। এমন অবনমন হওয়াই স্বাভাবিক এবং কর্তৃপক্ষের এ জন্য শরমিন্দা হওয়ার পরিবর্তে তাদের মধ্যে সন্তোষই সৃষ্টি হবে। কেননা তারা মুক্ত স্বাধীন সংবাদপ্রবাহে বিশ্বাসী নয়। এটা বোঝাই যায় যে, কর্তৃপক্ষ কোনো জবাবদিহিতার আওতায় আসাটাকেই তাদের জন্য বিপজ্জনক বলে মনে করে। স্বাধীন মুক্ত সংবাদপত্র বহু ক্ষেত্রে এই কাজটাই করতে চায়। এই অধ্যায় শেষ করতে বিশেষজ্ঞ ও বোদ্ধাসমাজের একটি বাক্য এখানে সংযোজিত করা যায়। তারা বলেছেন, নানা ধরনের নিবর্তনমূলক আইন, নির্যাতন, ভয়ভীতি প্রদর্শন, বহু জায়গায় সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার সঙ্কুচিত করা সাংবাদিকদের জন্য কাজ করার পরিধি ও পরিবেশ প্রতিকূল হয়ে পড়ায় তাদের কলমে ঘুণ ধরতে বসেছে।
বক্ষ্যমাণ নিবন্ধে, সরকারের কার্যক্রম নিয়ে কিছু কথা বলা হয়ে গেছে। তারপর আর বলা বোঝার অবশিষ্ট কিছু নেই। সরকার তথা শাসন বিভাগকে বখে যাওয়া, ধসে পড়া ভিন্ন আর কোনো বচন উচ্চারণ করার অবকাশ নেই। রাষ্ট্রের আরেক স্তম্ভ আইন বিভাগ। আইন বিভাগ তথা সংসদ। এই রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা তখনই সমুজ্জ্বল হয়ে উঠতে পারে; প্রথমত তার গঠন প্রক্রিয়ায় যদি কোনো ত্রুটি না থাকে। কিন্তু বর্তমান দ্বাদশ সংসদের নির্বাচন ছিল মাত্র একটি দলের মধ্যে ভোটাভুটির খেলা। তাকে কিভাবে ভোট বা নির্বাচন বলা যাবে। এই সংসদ আসলে মামা-ভাগনের সংসদ। তাহলে কিভাবে বলা যাবে এই রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটি তার উপযুক্ত সম্মান মর্যাদা পেতে পারে। সেখানে কেবল পাতানো আলোচনা, আপস-আলোচনা ভিন্ন জাতির কল্যাণের লক্ষ্যে কোনো আলোচনা পর্যালোচনা হয় না। যেমন কার্যকর সংসদের স্বপ্ন দেখত জনগণ, যা কিনা তাদের ভোটেই গঠিত হবে। সে সংসদে মানুষের চাওয়া পাওয়া আলোচনা, সমস্যা সঙ্কট নিয়ে কথা বলা, আর তর্ক-বিতর্কের মধ্য অগ্রসর সঠিক পথটি বের করে আনা।
যেখানে থাকবে জাতীয় স্বাধীন সুরক্ষার আলোচনা। তাই এ কথা বলার অবকাশ রয়েছে এই রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটিকে বলতে হয় ঘুণে ধরা একটি নির্জীব নিষ্ক্রিয় সংগঠন। জাতিকে কিছু দেয়ার সক্ষমতা আছে বলে মনে করার কোনো কারণ নেই। রাষ্ট্রের আরেক প্রতিষ্ঠান বিচার বিভাগ। বিচার বিভাগ নিয়ে কথা বলার স্কোপ নেই। বিচার বিভাগকে স্পর্শ করা আইনসিদ্ধ নয়; শুধু এতটুকু বলব শাসন বিভাগে যারা রয়েছেন তাদের আচরণ বৈষম্যমূলক, তারা প্রতিহিংসাপরায়ণ। প্রতিপক্ষকের প্রতি কোনো ধৈর্য ধরা বা সহনশীলতা ন্যূনতম স্থান এখন নেই। সহ-অবস্থানে সর্বজনীন নীতিকে পরিহার করা হয়েছে। এর স্বাভাবিক পরিণতি কি, সেটি আদালতপাড়ায় গেলে দেখা যাবে। প্রতিদিন সেখান থেকে শত শত সরকারের প্রতিপক্ষের নেতাকর্মীকে কারাগারে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। সরকার চাইলেই সেটি হয়ে যায়।
মানুষ দেখছে একে একে সব মিনারগুলো ভেঙে পড়ছে। তবে দৃঢ় বিশ্বাস রাখতে হবে। সবার মনের ভেতর যে মিনার আঁকা আছে সেটি কেউ মুছতে বা ভাঙতে পারবেন না। সবাই মাটিতে কান পেতে শুনুন সুর উঠেছে- ভাঙ্গা কেল্লায় ওড়ে নিশান। তাই ভীতসন্ত্রস্ত হওয়ার কোনো কারণ নেই; প্রকাশ্যে নেপথ্যে এই বোধ এখন তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে, জাগতে হবে লড়তে হবে। আর কোনো পরাভয় নয়। দেশের ১৮ কোটি মানুষের ৩৬ কোটি হাত বিপদে কখনোই পকেটে গোঁজা থাকবে না।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা