০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`


ঢাকা : আজ ও আগামীর

ঢাকা : আজ ও আগামীর - নয়া দিগন্ত

সপ্তম শতকে যাত্রা শুরু করে ঢাকা বদলেছে ক্রমেই। বদলেছে আকারে, বদলেছে জৌলুশে, আভিজাত্যে, জীবনাচারে। গৌড়ীয় শাসন, বৌদ্ধ সাম্রাজ্যের অংশ হয়ে শৈবশক্তির শাসন পেরিয়ে অনেক জানা-অজানা ঘটনাপঞ্জির মধ্য দিয়ে পাল বংশের শাসন শেষে সেন বংশের শাসন-শোষণে অভিজ্ঞ ঢাকা। প্রতিটি শাসনামলে যেমন ক্ষতবিক্ষত হয়েছে এই নগর; তেমনি নিজেকে সমৃদ্ধও করেছে। আফগান ও তুর্কিরা শাসন করেছে এই নগরকে। শাসন করেছে মোগলরাও। পরবর্তীতে বাংলার নিজস্ব শাসনে কেটেছে দিন। মোগলরা রাজধানীর মর্যাদায় ঢাকাকে অভিষিক্ত করে নগর হিসেবে এর মর্যাদাকে শাণিত করে। ঢাকার চতুর্দিকে নদীপথের সুবিধা থাকায় এটি ধীরে ধীরে একটি প্রসিদ্ধ বাণিজ্যকেন্দ্রে পরিণত হয়। আর্মেনীয়, পর্তুগিজ, ওলন্দাজ, ফরাসি ও ব্রিটিশ বেনিয়াদের বাণিজ্য তরীর উপস্থিতিতে ঢাকা হয়ে ওঠে প্রাচ্যের ভেনিস। ক্রমেই এর বাণিজ্যিক গুরুত্ব ছড়িয়ে পড়ে পৃথিবীতে। অনেক ভিনদেশী বণিক ব্যবসায় করতে এসে বসতি গড়ে এখানে। আরমানিটোলা, মোগলটুলি, ইংলিশ রোড নামগুলো এভাবেই এসেছে। এর অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ভিনদেশী বণিকদের রাজদণ্ড দখলে প্রলুব্ধ করে। আসে ব্রিটিশ শাসনের দুঃসহ যন্ত্রণা। প্রায় ২০০ বছরের ব্রিটিশ শাসনের অবসানে ঢাকা আবার রাজধানীর মর্যাদা পায়; অবশ্য প্রাদেশিক রাজধানী হিসেবে। ১৯৭১ এর স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ হয়ে ওঠে দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশের রাজধানী। গৌরবে, মহিমায়, মর্যাদায় ঢাকা এবার নতুন আবরণে-আভরণে ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হতে থাকে মহানগরীতে।

১৯৪৭ সালে তিন লাখ ৩৫ হাজার অধিবাসী সংবলিত ঢাকা এখন প্রায় দুই কোটি জনসংখ্যার মহানগরী। স্বাভাবিকভাবে এখানে বেড়েছে জনসংখ্যার চাপ, বেড়েছে নাগরিকদের সুযোগ-সুবিধার চাহিদা। পুরো দেশের জিডিপির ৪০ শতাংশেই ঢাকার অবদান। শিক্ষায়, আবাসনে, চিকিৎসায়, যোগাযোগসুবিধায়, বাণিজ্যিক লেনদেনে, জনসংখ্যার ঘনত্বে ঢাকা এখন পৃথিবীর অন্যতম ব্যস্ত মহানগরী। অবশ্য সাথে সাথে এর কপালে জুটেছে সবচেয়ে দূষিত নগরীর খেতাবও; যা অদূর ভবিষ্যতে ঢাকাকে বসবাসের অযোগ্য নগরীতে পরিণত করবে।

৫০টি থানা ও ৯০টি ওয়ার্ড-সংবলিত ঢাকা মহানগরী দুটো সিটি করপোরেশনে বিভাজিত। ঢাকার সাধারণ নাগরিক চাহিদা, আইনশৃঙ্খলার অবনতি, জনজট, যানজট, জলজট দিন দিন বাড়ছেই। ২০৪০ সাল নাগাদ জাতিসঙ্ঘের জনমিতি জরিপ অনুযায়ী, ঢাকার জনসংখ্যা দাঁড়াবে চার কোটিতে। একই জরিপ মতে, আবাসন সঙ্কট নিরসনে প্রয়োজন হবে ২০ কোটি ইউনিট বসতি স্থাপনার। এই বাস্তবতাকে সামনে নিয়ে ভবিষ্যতে এই মহানগরীর পরিবেশ ভারসাম্য রক্ষা করে আবাসিক, শিল্প-বাণিজ্য, শিক্ষা, হাসপাতাল, শিশুদের সুষ্ঠুুভাবে বেড়ে ওঠার জন্য পর্যাপ্ত খেলাধুলার মাঠ, সবুজ অঙ্গন, জলাধার, পার্ক- এসবের জন্য সঠিক ও সময়োপযোগী ভূমি ব্যবস্থাপনা সবচেয়ে জরুরি বিষয়। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সচেতনতার অভাবে ১৯৯৫ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ঢাকার সবুজায়ন ১৩.৪৫ শতাংশ থেকে ৭.০৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। জলাধার ২০.৫৮ থেকে ২.৯১ শতাংশে নেমে এসেছে। ফলে ঢাকা মহানগর গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃসরণে একটি তাপীয় দ্বীপে পরিণত হয়েছে। অপরিকল্পিত নগরায়ণ, কার্বন নিঃসরণের কার্যকর ব্যবস্থার অভাব এবং সর্বস্তরে সচেতনতার অভাবে এটি হয়েছে। একই সাথে সুপেয় পানি, বর্জ্য নিষ্কাশন ও জ্বালানির মতো সমস্যাকে কিভাবে সামাল দেয়া হবে তার পরিকল্পনা গ্রহণের কাজ হাতে নেয়ার সময় এখনই। এটি অত্যন্ত জরুরি। বর্তমানে ঢাকা শহরে দৈনিক ২০৫ কোটি লিটার সুপেয় পানির চাহিদার বিপরীতে ঢাকা ওয়াসার সরবরাহ মাত্র ১৬৫ কোটি লিটার।

ঢাকা শহরের পানি সঙ্কটের এই অবস্থা সামনের দিনগুলোতে আরো প্রকট হবে। যা আবাসন ব্যবস্থা, খাদ্যনিরাপত্তা, স্বাস্থ্যসেবাসহ সব নাগরিক সুবিধাকে সঙ্কুচিত করবে। সবচে গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক সুবিধা নিরাপদ খাদ্য এবং সুপেয় পানির ব্যবস্থাপনা প্রচণ্ড চাপে পড়বে। সাথে সাথে স্বাস্থ্যসেবার পরিধি বিস্তৃত করতে হবে। বাড়াতে হবে দক্ষ চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীর সুবিধা। যা এখনই অপ্রতুল। অবশ্য নিরাপদ খাদ্য ও সুপেয় পানি এবং বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নতির সাথে সাথে স্বাস্থ্যসেবায়ও চাপ কমবে। এ লক্ষ্য সামনে রেখে ভবিষ্যৎ টেকসই ও নাগরিকবান্ধব শহর বিনির্মাণের কাজ শুরু করতে হবে এখন থেকেই। সামগ্রিকভাবে ভবিষ্যৎ স্মার্ট প্রজন্মের প্রয়োজনেই সাইকেলের ব্যাপক প্রচলন ও যানবাহনের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ; সাথে সাথে সবুজ বনায়ন ও নাগরিক হাঁটার ব্যবস্থা অবশ্যই থাকতে হবে ভবিষ্যৎ নগর পরিকল্পনায়। ভারতের পাঞ্জাব ও হরিয়ানা রাজ্যের যৌথ রাজধানী চণ্ডিগড় এ ক্ষেত্রে মডেল হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। বর্তমান বার্লিন নগরীর পরিকল্পনাও সাহায্য করতে পারে এ ব্যাপারে।


মোট কথা, আমাদের যেটুকু ভূমি রয়েছে তার সর্বোত্তম সুবিধা ব্যবহার করে অত্যন্ত বিচক্ষণতা ও দক্ষতার সাথে ভূমি পরিকল্পনার ব্যবস্থা নেয়ার কাজ হাতে নিতে হবে এখন থেকেই। অপর দিকে, অগ্নি দুর্ঘটনা, ভূমিকম্প, বন্যা ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের স্থানিক ব্যবস্থাপনার বিষয়টিকেও যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে নগর পরিকল্পনায় হাত দিতে হবে। মোট কথা, ৩০ বছর পরের ঢাকাকে হতে হবে প্রকৃতিবান্ধব বসবাসযোগ্য শহর। বায়ুদূষণ, শব্দদূষণের মতো অবস্থা যেন জীবনীশক্তিকে ধীরে ধীরে খেয়ে ফেলতে না পারে তার দায়, তার ব্যবস্থা আমাদের নিতে হবে।

লেখক : চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ
Email-shah.b.islam@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement
নারী কর্মীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগ : যা বললেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল মিয়ানমারের পুরুষদের বিদেশে কাজের আবেদন নিষিদ্ধ করল জান্তা সরকার তানজিদ-সাইফুদ্দীনকে নিয়ে মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে ৭ জন আটক ইসরাইলবিরোধী পোস্টের দায়ে নাগরিকদের আটক করছে সৌদি পোরশায় পুলিশ সুপারের বাড়িতে চুরি প্রকৃতিকে প্রতিনিয়ত ধ্বংস করছে সরকারি দলের লুটেরা-ভূমিদস্যুরা : রিজভী টিএইচই এশিয়া ইউনিভার্সিটি র‌্যাঙ্কিংয়ে দেশে ২য় বাকৃবি সৌদি-ইসরাইল সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের দ্বারপ্রান্তে : যুক্তরাষ্ট্র হাটহাজারী উপজেলায় শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত হয়েছেন আবুল বাশার ‘এতে মজা আছে নাকি, সবাই একদল আমরা’

সকল