০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`


শান্তির সুবাতাস কত দূরে?

শান্তির সুবাতাস কত দূরে? - নয়া দিগন্ত

নিরাশ হতে হলো পৃথিবীর শান্তিকামী মানুষকে। আশাহত হতে হলো ফিলিস্তিনির লাখ লাখ বিপদগ্রস্ত মানুষকে। অসহায়ভাবে পরাজিত হলো মানবিকতা, মানবাধিকার, আইনের শাসন, আন্তর্জাতিক আইন নামক চটকদার শব্দগুলো। সারা বিশ্বের তীব্র গণরোষ আর লাতিন আমেরিকার কয়েকটি দেশের ইসরাইলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছেদের উদ্যোগ, এর সাথে জোড়াতালি দিয়ে কোনোমতে কাজ চালিয়ে যাওয়া গাজার একমাত্র টিকে থাকা হাসপাতাল আল-শিফার অক্সিজেন এবং জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করায় ইনকিউবেটরের ৩৯ জন নবজাতকের মৃত্যুর পরে আড়মোরা ভেঙে তন্দ্রালু চোখে জেগেছেন আরব নেতারা। ডেকেছেন আরব লিগ, পরবর্তীতে ওআইসির জরুরি বৈঠক। দুই বিলিয়ন মুসলিম জনগোষ্ঠীর তথাকথিত নেতারা একত্রিত হয়েছিলেন। শুধু মুসলিম বিশ্ব নয়, সারা বিশ্বের শান্তিকামী মানুষ তাকিয়ে ছিল প্রচণ্ড আগ্রহে এই বৈঠকের দিকে। সবাইকেই, সারা বিশ্বের শান্তিকামী মানুষের মুখে চপেটাঘাত করে কোনো কার্যকর সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়েছে প্রহসনের এই আয়োজন। তাদের এই ব্যর্থতা নেতানিয়াহুকে আরো প্রেরণা জোগাবে ফিলিস্তিনিদের নির্বিচার হত্যা করতে।

১৯৪০-৪৫ সালের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে এই পাঁচ বছরে নিহত হয়েছিল দুই লাখ শিশু। আর যারা সবাই ছিল ইহুদি। আর গত ৭ অক্টোবর ২০২৩ থেকে শুরু করে ৫ নভেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত এক মাসেরও কম সময়ে গাজায় নিহত হয়েছে পাঁচ সহস্রাধিক শিশু। ইসরাইলি হামলায় প্রতি ১০ মিনিটে গাজায় নিহত হচ্ছে একজন শিশু। গাজার এই শিশু মৃত্যুহার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, উপসাগরীয় যুদ্ধ, ইরাক যুদ্ধ, সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ, আলজেরিয়ার গৃহযুদ্ধ, আফগানিস্তানে মার্কিন আগ্রাসনে শিশু মৃত্যুহারের চেয়েও বেশি। হাসপাতালে বোমা ফেলা, শরণার্থী শিবিরে নির্বিচারে বোমাবর্ষণের ঘটনা এটাই প্রথম। অথচ এর পরেও একে যুদ্ধাপরাধ বলতে নারাজ পৃথিবীর মোড়লেরা। এদের পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের কারণেই জাতিসঙ্ঘ ব্যর্থ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছিল। তার পবিত্র অঙ্গনের দোহাই দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকে বৈধতা দেয়া হয়েছিল। আজও একই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি দেখা যাচ্ছে জাতিসঙ্ঘের আঙিনায়। পাঁচ পরাশক্তির মদমত্ততার কাছে, অহংবোধের কাছে, পরাজিত হয়েছে মানবিক মূল্যবোধ, মানবিকতা। সভ্যতার সংজ্ঞা আজ বদলে গেছে। যে যত নৃশংস গণহত্যা করতে পারবে সে তত সভ্য।

নিরীহ মানুষের খাবার, পানি, ওষুধ, জ্বালানি বন্ধ করে অসহায়ভাবে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া সন্ত্রাসবাদ নয়। সন্ত্রাসী হচ্ছে স্বাধীনতা স্বাধিকারের জন্য যারা লড়াই করছে তারাই! না হলে ২৬ অক্টোবর জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদে ১১০টি দেশের ভোটে মানবিক যুদ্ধবিরোধী বিষয়ক প্রস্তাব পাস হলেও তা যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের চারটি দেশের আপত্তির কারণে ভেস্তে যায়। এরাই আবার পৃথিবীকে গণতন্ত্রের উপদেশ দিয়ে থাকে! মানবাধিকারের সবক দেয়! জাতিসঙ্ঘের এ অবস্থা দেখে মনে হয় পাঁচ পরাশক্তি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান, অস্ট্রেলিয়া এবং কানাডা নিজেদের জি-২০ এর বলয়ে বাকি বিশ্বের ওপর তাদের ইচ্ছা অনিচ্ছা চাপিয়ে দিতে চাইছে। তাদের শৈল্পিক অগ্রগতি বৈজ্ঞানিক আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে গড় মাথাপিছু আয় আর সামরিক শক্তির বদৌলতে তারা আজ নিয়ন্ত্রণ নিতে চাইতে বিশ্ব সমাজব্যবস্থার। জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের অসহায় অবস্থা শুধু করুণারই উদ্রেক করছে। তার নিষ্ফল আর্তচিৎকার জাতিসঙ্ঘের সুউচ্চ ভবনের দেয়াল পেরিয়ে বিশ্ব মোড়লদের কানে পৌঁছাতে পারছে না।

আর কত শিশুকে জীবন দিতে হবে? কত শিশুকে এতিম হতে হবে? কত লাশ বেওয়ারিশ হয়ে ধ্বংসস্তূপের তলায় গলে পচে যাবে? ইনকিউবেটরে কত নবজাতকের মৃত্যুর প্রয়োজন হবে? কতজন নারীর স্বামী-স্বজন হারানোর আর্তনাদ বিশ্ববাসীকে শুনতে হবে? আর কত ধ্বংসলীলার প্রয়োজন হবে বিশ্ব মোড়লদের মানবিক মূল্যবোধের জাগৃতির জন্য? অথচ একই সাথে পূর্বতিমুরে, দারফুরে, দক্ষিণ সুদানের ক্ষেত্রে দেখেছি এর উল্টোটা। সেখানে কত শিশু এতিম হয়েছিল, কত শিশু নিহত হয়েছিল, কত বাড়িঘর বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়া হয়েছিল, কত নারী স্বামী স্বজন হারিয়েছিল তার সাথে গাজার বর্তমান সহিংসতার কোনো তুলনা আছে কি? এসব ক্ষেত্রে মানবতা, মানবাধিকার, গণহত্যার অভিযোগ তুলে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল পরাশক্তি মোড়লরা। অথচ গাজার এই মৃত্যুপুরী, ধ্বংসযজ্ঞ সম্পর্কে তারা নীরব থেকে ইসরাইলকে সমর্থন জোগাচ্ছেন জাতিগত নিধনযজ্ঞ চালিয়ে যাওয়ার জন্য। ইসরাইলি মন্ত্রিসভার একজন প্রাক্তন মন্ত্রী প্রকাশ্যে পারমাণবিক বোমা হামলার কথা বললেও এ ব্যাপারে নিশ্চুপ বিশ্বের শক্তিধর মোড়লরা।

আর কত ধ্বংস, কত মৃত্যুর পর বোধোদয় হবে বিশ্ব মোড়লদের? তারা চোখ তুলে তাকাবেন? মুসলিম বিশ্বের নেতাদের মনোবৈকিল্য কবে শেষ হবে? কবে তারা এক হতে পারবেন মুসলিম বিশ্বের বৃহত্তর কল্যাণে? সমস্ত পৃথিবীকে শান্তির, সহাবস্থানের, সুবিচারের জন্য নিয়োগ করবেন তাদের চিন্তাচেতনা ও চেষ্টার?

লেখক : চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ
Email-shah.b.islam@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement
জিম্বাবুয়েকে লজ্জার রেকর্ডের দিকে ঠেলে দিচ্ছে টাইগাররা জনগণের কাছে হেরে যাওয়ার আগে ক্ষমতা ছেড়ে দিন : ফারুক আলমডাঙ্গায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড নয়টি বাড়ি পুড়ে ছাই গৌরনদীতে আ’লীগের ২ পক্ষের সংঘর্ষ, ইউপি চেয়ারম্যানসহ রক্তাক্ত জখম ৫ টাঙ্গাইলে তৃষ্ণার্ত মানুষের পাশে সোনালি সূর্য শুরুতেই উইকেটের দেখা পেল বাংলাদেশ নারী কর্মীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগ : যা বললেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল মিয়ানমারের পুরুষদের বিদেশে কাজের আবেদন নিষিদ্ধ করল জান্তা সরকার তানজিদ-সাইফুদ্দীনকে নিয়ে মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে ৭ জন আটক ইসরাইলবিরোধী পোস্টের দায়ে নাগরিকদের আটক করছে সৌদি

সকল