০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`


তৃতীয় নয়ন

রাজনীতির দু’তত্ত্ব

রাজনীতির দু’তত্ত্ব - নয়া দিগন্ত

বাংলাদশে সব কিছু দ্বিধাবিভক্ত ও দ্বিখণ্ডিত যেন। রাজনীতির প্রভাব পড়েছে সর্বত্রই। এক পাশে আওয়ামী লীগ, আরেক পাশে বিএনপি। কেউ ক্ষমতা আঁকড়ে ধরতে আর কেউ আমৃত্যু ক্ষমতায় থাকতে মরিয়া। আবার কেউ তাদেরকে ক্ষমতা থেকে সরাতে তৎপর। দ্বিদলীয় ব্যবস্থা যেন ‘হিতে বিপরীত’ হচ্ছে বাংলাদেশের জন্য। এ ব্যবস্থা গণতন্ত্রকে বিকশিত করে থাকে। যেমন আমেরিকায় ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ও রিপাবলিকান পার্টি এবং ব্রিটেনে লেবার পার্টি ও কনজারভেটিভ পার্টি দ্বিদলীয় ব্যবস্থা তথা গণতন্ত্র টিকিয়ে রেখেছে এবং সেখানে গণতন্ত্রের বিকাশ ঘটছে। বাংলাদেশে দুই দলের সঙ্ঘাত এবং একগুঁয়েমির মনোভাব গণতন্ত্রকে বিপন্ন করে তুলেছে।

কেউ ক্ষমতায় গেলেই প্রধানত দু’টি তত্ত্বকে আশ্রয় করেন। এই তত্ত্ব দু’টি হলো আবর্জনা তত্ত্ব এবং ষড়যন্ত্র তত্ত্ব। তারা প্রথমেই বলেন, তাদের পূর্বসূরিরা নাকি সব আবর্জনা রেখে গেছে এবং এগুলো পরিষ্কার করতে কয়েক বছর লেগে যাবে। এই আবর্জনা নাকি প্রতিপক্ষের ব্যর্থতা, দুর্নীতি, অনিয়ম, আত্মসাৎ প্রভৃতির যোগফল। একটু পুরনো হলেই ক্ষমতাসীনরা বলতে থাকে ষড়যন্ত্রের কথা। বিরোধীরাও কম যায় না। তারা পাল্টা ষড়যন্ত্রের দাবি করে।

যেমন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় প্রধান ব্যক্তি ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপির নেতৃত্বে বাংলাদেশবিরোধী ষড়যন্ত্র চলছে। এই সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী আরো বলেছেন, ‘বিএনপির নেতৃত্বে স্বাধীনতাবিরোধীরা দেশবিরোধী চক্রান্ত করছে। এখনো বাংলার মাটিতে ষড়যন্ত্রের রাজনীতি আমাদের অর্জন ও উন্নয়নের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। এই ষড়যন্ত্রকারীরা এক হয়ে স্বাধীনতাকে আরেকবার আঘাত করার জন্য চক্রান্ত করছে। এদের বিরুদ্ধে সবাইকে সাবধান থাকতে হবে।’ ওবায়দুল কাদের বলেন, একই ষড়যন্ত্রের ধারণাবাহিকতায় এরা টার্গেট করেছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, ‘জয় বাংলা’ সোগান, স্বাধীনতার আদর্শ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, কারাগারের অভ্যন্তরে জাতীয় চার নেতা এবং বঙ্গবন্ধুকন্যা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। ওবায়দুল কাদেরের ভাষায়, ‘বাংলাদেশ আজও ষড়যন্ত্রের হাত থেকে মুক্তি পায়নি।’

দলের অন্যতম উপদেষ্টা, প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা, ১৪ দলের সমন্বয়কারী ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু এমপি বলেছেন, ‘ষড়যন্ত্রের রাজনীতির শুরু ১৯৭৫ সালেই। আমাদের জাতি ও জাতিসত্তার বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রের নাম ১৫ আগস্ট।’ ওবায়দুল কাদেরের মতো আমুও ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের এক অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন। আমু বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ভয় পায় না। কূটনৈতিক তৎপরতায় সব দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের জবাব দেয়া হবে।’ অপর দিকে, ১৫ আগস্ট বেগম খালেদা জিয়ার ৭৮তম জন্মদিনে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা: শাহাদাৎ হোসেন বলেছেন, ‘বেগম জিয়াকে নিঃশেষ করার জন্য এই সরকার চক্রান্তে লিপ্ত।’

এ সময়ের একটি বহু আলোচিত ঘটনা, একুশে আগস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে শেখ হাসিনার জনসভায় ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা হয়। আওয়ামী লীগেরর জনসভায় ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘বিএনপির নেতা তারেক রহমান এ হামলার মাস্টারমাইন্ড।’ তাদের টার্গেট নাকি শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনাকে ষড়যন্ত্রের টার্গেট কেন করা হবে তা ওবায়দুল কাদের খুলে বলেননি। এর পাল্টা বিএনপির মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার আরো সঠিক তদন্ত চাই। এই ঘটনা আওয়ামী লীগের সাজানো নাটক। তারা যেখানে সভা করতে চেয়েছিল সেখানে করেননি। রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় তারেক রহমানকে জড়ানো হয়েছে।’ যদি আলমগীরের কথা সত্যি হয়, তা হলে এই চক্রান্তের কারণ কী?

এ দিকে, রফতানিমুখী পোশাক শিল্প নিয়ে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ উঠেছে। ১২ জন বিদেশী নাগরিক এ ব্যাপারে চিহ্নিত এবং তিনজনকে ব্যাপক ব্ল্যাক লিস্ট করা হয়েছে। অপর দিকে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার হবে না। যা মন চায় করেন।’ তিনি এ কথা বলেছেন বিএনপির উদ্দেশে। তা হলে তত্ত্বাবধায়ক কার ষড়যন্ত্র? দেশের লাখো কোটি জনতা এখন নির্বাচনকালীন সরকারের পক্ষে।

এ দিকে, বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাকে বিদেশে পাঠানোর দাবি জানানো হয়েছে। বেগম জিয়াকে বিদেশ না পাঠানোর চক্রান্ত কাদের, মির্জা ফখরুল ইসলাম না বললেও তা দেশের জনগণ বুঝে।
গণ-অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নূর বলেছেন, ‘বিএনপিকে ভেঙে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী হতে চান দলের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া; এ ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে তিনি বলেছেন, টাকার লোভে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার ফাঁদে পড়ে দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্নে রেজা কিবরিয়া বিভোর।’

অপর দিকে ক্ষমতাসীন দলের মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, বর্তমান পদ্ধতিতে সুষ্ঠু নির্বাচন কিছুতেই সম্ভব নয়।

যত দিন বাংলাদেশের রাজনীতির প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবে, ততদিন এই কাদা ছোড়াছুড়িও থাকবে। রাজনীতির বাইরের লোক এর সমাধান করতে পারবে না। এটি প্রচলিত রাজনীতির একটি কৌশল।

‘আবর্জনাতত্ত্ব’ ও ‘চক্রান্ততত্ত্ব’ পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। আবর্জনায় কাদা ছোড়াছুড়ি করা হয়। চক্রান্ত তত্ত্বেও এটিই করা হয়। শেষ পর্যন্ত কিছুই হয় না। পরস্পরবিরোধী অভিযোগ আনা হলেও এটি সুরাহা করার কেউ নেই। আবর্জনাতত্ত্ব ও চক্রান্ততত্ত্ব শুনতে যতটা গভীর মনে হয় রাজনীতিকদের কথাবার্তা শুনে ততটা গভীর মনে হয় না। তাই ক্ষমতাসীন জোটের বামপন্থী সঙ্গীরাও একই চক্রান্তের অভিযোগ করেন। অতীত থেকে এ দেশে এটি হয়ে আসছে। ভবিষ্যতেও হবে। কথিত চক্রান্ত চলতে থাকবে; কিন্তু এর সুরাহা হবে না। তাই এই তত্ত্ব থেকে দূরে থাকাই উচিত। এটি আমাদের পরামর্শ। কিন্তু রাজনীতিবিদরা তা গ্রহণ করবেন কি না।


আরো সংবাদ



premium cement
গফরগাঁওয়ে লরিচাকায় পিষ্ট হয়ে নারী নিহত রোহিঙ্গা গণহত্যা : মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলার দ্রুত নিরসনে আশাবাদী বাংলাদেশ-গাম্বিয়া দোয়ারাবাজারে মইন হত্যাকারীদের গ্রেফতার দাবিতে বিক্ষোভ সাংবাদিকদের সুরক্ষায় প্রতিটি দেশের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বান জলবায়ু সঙ্কট মোকাবেলায় অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন জোরদারের আহ্বান এডিবি প্রেসিডেন্টের কেজরিওয়ালের জামিনের সম্ভাবনায় আশা দেখছে বিরোধী জোট ব্যাটে-বলে দারুণ নৈপুণ্যে সহজ জয় বাংলাদেশের কারামুক্ত মামুনুল হকের মামলা সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে চাকরি জাতীয়করণসহ ২ দাবি গ্রাম পুলিশের টেকনাফে চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমাবেশ লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ আবারো বৃষ্টিতে বন্ধ খেলা

সকল