১৯ মে ২০২৪, ০৫ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলকদ ১৪৪৫
`


জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে ইসলামের শিক্ষা

জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে ইসলামের শিক্ষা। - ছবি : সংগৃহীত

দেশে দেশে নানা উদ্দেশ্যে এবং বিভিন্নভাবে সন্ত্রাসী তৎপরতা চলছে। কোথাও স্বাধীনতা অর্জনে, কোথাও বা আর্থ-রাজনৈতিক বা ধর্মীয় মতাদর্শ প্রতিষ্ঠায়, আবার কোথাও আঞ্চলিক, গোষ্ঠীগত বা জাতিগত অধিকার আদায়ে বা প্রাধান্য বিস্তারে সন্ত্রাস চালানো হচ্ছে। নিরীহ ব্যক্তি থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় কাঠামো পর্যন্ত আক্রান্ত হচ্ছে সন্ত্রাসের হিংস্র থাবায়। গ্লোবাল ভিলেজের অংশ হিসেবে বাংলাদেশও রক্তাক্ত হয়েছে সন্ত্রাসী নখের আঁচড়ে। বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থান সব ধর্মপ্রাণ মুসলমানের বিবেককে আহত করেছে।

জঙ্গিবাদ- একটি পর্যালোচনা
সংজ্ঞা : ‘জঙ্গ’ ফারসি শব্দ। এর অর্থ যুদ্ধ। সে অর্থে যোদ্ধাকে জঙ্গি বলা যেতে পারে। তবে বাংলা ভাষায় এর অনুপ্রবেশ ঘটে সাহিত্যের মাধ্যমে। মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যে মুসলিম ঐতিহ্যভিত্তিক যুদ্ধবিষয়ক কাব্যচর্চার প্রচলন ছিল। এ সব কাব্যকে ‘জঙ্গনামা’ বলা হতো। তবে বিশেষভাবে কারবালার যুদ্ধ ও তার মর্মান্তিক বিষয় নিয়ে রচিত কাব্য ‘জঙ্গনামা’ নামে পরিচিত। কাজে পরোক্ষভাবে ‘জঙ্গ’ শব্দের সাথে ইসলামের ইতিহাসের একটি সাহিত্যিক যোগসূত্র স্থাপিত হয়ে গেছে। সেই সূত্রে সম্ভবত ইসলামের নামে কেউ সশস্ত্র তৎপরতায় অবতীর্ণ হলে তাকে জঙ্গি আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। তবে এখন ‘জঙ্গিবাদ’ বলতে বিপথগামী কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সশস্ত্র তৎপরতাকে বোঝায়। মূলত জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ সমার্থক। পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহয় সন্ত্রাসবাদ বলতে যা বোঝায় তা প্রকাশে ‘ফিতনা’ এবং ‘ফাসাদ’ শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। আল কুরআন গভীরভাবে অধ্যয়ন করলে এ কথা সু¯পষ্ট হয়ে ওঠে, মানুষের জান-মাল, ইজ্জত, আব্রু, ঈমান, কায়-কারবার ইত্যাদি যে কারণে হুমকি ও বিপর্যয়ের মুখে পতিত হয় তা হলো ‘ফিতনা’ এবং যার কারণে মানুষের জীবনের স্বাভাবিক যাত্রা ব্যাহত হয় তা হলো ‘ফাসাদ’ (ড. মো: ময়নুল হক, সন্ত্রাস, সন্ত্রাসবাদ ও এর প্রতিকার, ইসলামী দৃষ্টিকোণ, নুরুল ইসলাম মানিক সম্পাদিত সন্ত্রাস প্রতিরোধে ইসলাম, ঢাকা : ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, এপ্রিল ২০০৫, পৃষ্ঠা-১৪২) বর্তমান সময়ের সামাজিক, রাষ্ট্রীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ বলতে যা বোঝায় তা পবিত্র কুরআনের আয়াতসমূহে বিধৃত হয়েছে ‘ফিতনা’ ও ‘ফাসাদ’ হিসেবে। (প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা-১৪৫)

উৎপত্তি : ব্যক্তিগত সন্ত্রাস দিয়ে পৃথিবীতে সন্ত্রাসের শুরু। পৃথিবীর প্রথম মানব হজরত আদম আ:-এর পুত্র কাবিল তার ভাই হাবিলকে হত্যার মাধ্যমে প্রথম সন্ত্রাস সংঘটিত করে। পরবর্তীতে কালের আবর্তনে গোষ্ঠীগত ও জাতিগত সন্ত্রাস বিভিন্ন যুদ্ধ-বিগ্রহ এবং মহাযুদ্ধের সৃষ্টি করে। তবে আমাদের দেশে তথা ভারত উপমহাদেশে জঙ্গিবাদের সূচনা হয় বিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকে, যার নাম ছিল ‘বিপ্লবী সন্ত্রাস’। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ ঘিরে সহিংস রাজনৈতিক মতাদর্শের মাধ্যমে উপমহাদেশে ‘বিপ্লবী সন্ত্রাস’-এর সূচনা । কলকাতায় ‘যুগান্তর’ এবং ঢাকায় ‘অনুশীলন সমিতি’ নামের দু’টি দলে বিপ্লবীরা সংগঠিত ছিল। তারা দৈত্যদের (বিদেশী শাসকরা) বধ করতে এবং সনাতন ব্রাহ্মণ্য পবিত্রতার ওপর ভিত্তি করে হিন্দু সভ্যতার উপযোগী রাজ্যসৃষ্টির শপথ গ্রহণ করে। (সিরাজুল ইসলাম, বাংলা পিডিয়া, ঢাকা, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, মার্চ ২০০৩, খণ্ড-৭, পৃষ্ঠা-১০৬) ১৯৩৬ সালে এর পরিসমাপ্তি ঘটে। পরবর্তীতে ইতিহাসের বিভিন্ন পট পরিবর্তনের মাধামে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর পুনরায় জঙ্গিবাদ শুরু হয় ‘স্বাধীন বঙ্গভূমি আন্দোলন’-এর মাধ্যমে। বঙ্গসেনা, সর্বহারা পার্টি, বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টি ইত্যাদি বিভিন্ন চরমপন্থী সংগঠন আবির্ভূত হয়ে নিজেদের মতাদর্শ প্রতিষ্ঠায় দেশের উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সন্ত্রাসী কর্মসূচি চালিয়েছে।

বাংলাদেশে বর্তমান জঙ্গিবাদের স্বরূপ : ১৯৯৯ সালের ৬ মার্চে যশোরে উদীচীর অনুষ্ঠানে ভয়াবহ বোমা হামলার মাধ্যমে বর্তমান জঙ্গিবাদের ঘৃণ্য সন্ত্রাস শুরু হয়েছিল। এরপর খুলনায় কাদিয়ানি ধর্মশালায়, রমনা বটমূল, নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগ অফিস ও ময়মনসিংহে সিনেমা হলে একইভাবে করা হয় সন্ত্রাসী হামলা। পরবর্তীতে ১৭ আগস্ট ২০০৫ সালে দেশের ৬৩টি জেলায় একযোগে ৫০০ হালকা বোমা ফাটানো হয়। দেশের বেশ কয়েকটি স্থানে আত্মঘাতী বোমা হামলার মাধ্যমে সরকারি-বেসরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাসহ বেশ কিছু নিরীহ মানুষকে হত্যা করে। বিভিন্ন পত্রপত্রিকা এবং ইলেকট্র্রনিক মিডিয়ার সংবাদ ও প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, তারা তাদের ভাষায় জিহাদে অবতীর্ণ হয়েছিল ইসলামী আইন প্রতিষ্ঠায়। তবে ২০১৬ সালের ১ জুলাইয়ের আক্রমণটি ছিল দেশের ইতিহাসের ভয়াবহতম উগ্রবাসী হামলা।

জিহাদের প্রকৃত চিত্র
সংজ্ঞা : ‘জিহাদ’ আরবি শব্দ যা মূল ধাতু ‘জুহদুন’ থেকে উদ্ভূত। ‘জুহদুন’ অর্থ চূড়ান্ত বা প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালানো, তৎপরতা চালানো, সংগ্রাম করা বা আন্দোলন করা। অর্থাৎ কোনো উদ্দেশ্য সফলের জন্য সব ধরনের প্রচেষ্টা বা সর্বাত্মক প্রচেষ্টাকেই জিহাদ বলে। সাধারণভাবে জিহাদের ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো ‘এফোর্ট’। উদ্দেশ্য সফলে কথা বলা, লেখা, বক্তৃতা দেয়া, দাওয়াত দেয়া বা আহ্বান করা থেকে শুরু করে সব প্রকার প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ তৎপরতা এমনকি চূড়ান্তভাবে যুদ্ধের ময়দানে অবতীর্ণ হওয়া ইত্যাদি সব জিহাদের অন্তর্ভুক্ত। তবে ইসলামের পরিভাষায় ইসলাম বা শান্তি বা ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশে পরিচালিত সব তৎপরতাকে জিহাদ বলা হয়। আর যুদ্ধ হলো জিহাদের চূড়ান্ত পর্যায়। কিন্তু এ যুদ্ধ হতে হবে সম্পূর্ণ আল্লাহর পথে। এখানে আল্লাহর পথে কথাটি অত্যন্ত ব্যাপক। অর্থাৎ সব তৎপরতার কেন্দ্রবিন্দু ও একমাত্র উদ্দেশ্য যখন থাকবে একমাত্র মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন তখন বলা যাবে আল্লাহর পথে জিহাদ বা ‘জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ’। এ ক্ষেত্রে অন্য কোনো ব্যক্তি বা নিজের সন্তুষ্টি অথবা কোনো পার্থিব সুযোগ-সুবিধা, স্বার্থ ইত্যাদির লেশমাত্র থাকলেও সেটি আর আল্লাহর পথে থাকবে না। পবিত্র কুরআনের ভাষায় আল্লাহর পথে যুদ্ধ মানে হলো- ‘জালেম ও নৈরাজ্যবাদীদের মোকাবেলায় নিজের আত্মরক্ষা এবং দুর্বল, অসহায় ও নির্যাতিতদের সাহায্যের জন্য যুদ্ধ করা’ (আকরাম ফারুক, আল-জিহাদ, ঢাকা : বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার, জুন-১৯৮১,পৃষ্ঠা-২৩)। কুরআনের সূরা হজের ৩৯ নম্বর আয়াত এবং সূরা নিসার ৭৫ নম্বর আয়াত থেকে জিহাদ সম্পর্কে এ সংজ্ঞা পাওয়া যায়। মুসলিম বিশেষজ্ঞদের মতে, মোট চার প্রকার জিহাদ রয়েছে। প্রথমত, অন্তরের জিহাদ যা মনের খারাপ প্রবণতার বিরুদ্ধে করতে হয়। দ্বিতীয়ত, জিহ্বার সাহায্যে জিহাদ, অর্থাৎ মানুষকে ইসলামের দিকে আহ্বান করা। তৃতীয় প্রকার জিহাদ হলো, হাতের সাহায্যে জিহাদ অর্থাৎ লেখনীর মাধ্যমে জিহাদ। চতুর্থ প্রকার বা চূড়ান্ত পর্যায়ের জিহাদ হলো, সশস্ত্র জিহাদ যা করা হয় নিজেরা আক্রান্ত হলে অথবা মুসলিম উম্মাহর এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে।

কুরআনের নীতিমালা : সশস্ত্র জিহাদ সম্পর্কে কুরআনে সুস্পষ্ট নীতিমালা দেয়া হয়েছে :
ক. যাদের ওপর যুদ্ধাবস্থা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে, তাদের পাল্টা আক্রমণ চালানোর অনুমতি দেয়া হলো। কেননা, তারা নির্যাতিত এবং আল্লাহ তাদের সাহায্য করতে সক্ষম। তারা হচ্ছে সেই সব মজলুম, যাদের শুধু আল্লাহকে মনিব মেনে নেয়ার কারণে অবৈধভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে (সূরা আল হাজ : ৩৯-৪০)।

খ. যারা তোমাদের ওপর যুদ্ধাবস্থা চাপিয়ে দেয় তাদের সাথে আল্লাহর পথে যুদ্ধ করো কিন্তু সীমালঙ্ঘন করো না। আল্লাহ বাড়াবাড়ি ও সীমালঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না। তাদের সাথে লড়াই করো, যেখানে তাদের সাথে তোমাদের মোকাবেলা হয়; তাদের সেই সব স্থান থেকে বের করে দাও যেখান থেকে তারা তোমাদের বের করে দিয়েছে। কেননা, হত্যার চেয়েও অরাজকতা খারাপ জিনিস’ (সূরা বাকারা : ১৯০-১৯১)।

যুদ্ধের অনুমোদন বা আদেশ দানের সাথে সাথে ইসলাম জিহাদের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণও আরোপ করেছে : ক. যুদ্ধ করতে গিয়ে সীমালঙ্ঘন করা যাবে না (সূরা বাকারা-১৯০)। খ. শত্রুর সাথে ন্যায়সঙ্গত আচরণ করতে হবে (সূরা মায়িদা-২)। গ. কোনো নিরীহ লোককে হত্যা করা পুরো বিশ্বমানবতাকে হত্যার শামিল। (সূরা মায়িদা- ৩২)। ঘ. ধর্ম কারো ওপর চাপিয়ে দেয়া যাবে না (সূরা বাকারা-২৫৬)। ঙ. জোরপূর্বক কোনো ভূখণ্ড দখল করা যাবে না। (আল হাদিস)। চ. চুক্তিবদ্ধ কোনো ব্যক্তিকে হত্যা করা যাবে না (আল হাদিস)। ছ. কোনো অমুসলিমকে আশ্রয় দেয়ার পর তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা যাবে না (আল হাদিস)।

রাসূলুল্লাহ সা:-এর আদর্শ : রাসূল সা: সর্মমোট প্রায় ৮১টি ছোট-বড় সামরিক অভিযান পরিচালনা করেছেন; তার মধ্যে ২৭টিতে তিনি সরাসরি নেতৃত্ব দিয়েছেন। প্রতিটি যুদ্ধে তিনি কুরআনের নীতিমালা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন। বিশ্বমানবতার জন্য যুদ্ধের ময়দানে নৈতিকতার চমকপ্রদ আদর্শ স্থাপন করে গেছেন। রাসূল সা:-এর যুদ্ধের বৈশিষ্ট হলো‘...the battles fought by the prophet illustrate the particular nature of Islamic war: it is just in its causes, defensive in its initiative, decent in proceedings, pacific in its end, and humanitarian in its treatment of the conquered enemy (Marcel A. Boisard, Jihad: A Commitnent to Universal peace, Washington : American Trust Publications, 1988, P. 36).

সশস্ত্র জিহাদে রাসূল সা:-এর অনুকরণীয় আদর্শ নিম্নরূপ : ক. প্রকাশ্য যুদ্ধ ঘোষণা না দিয়ে মধ্যরাতে কোনো ঘুমন্ত জনগোষ্ঠীকে আক্রমণ করা যাবে না। খ. কাউকে পুড়িয়ে মারা যাবে না। গ. কাউকে নির্যাতন করে তিলে তিলে হত্যা করা যাবে না। ঘ. লুটতরাজ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। ঙ. নির্বিচারে সহায়-সম্পদ ধ্বংস করা নিষিদ্ধ। চ. লাশ বিকৃত করা নিষিদ্ধ। ছ. যুদ্ধবন্দী, আহত ও অনুতপ্ত শত্রুসেনাকে হত্যা করা যাবে না। জ. দূত হত্যা করা যাবে না। ঝ. নিজ থেকে চুক্তি লঙ্ঘন করা যাবে না। ঞ. উচ্ছৃঙ্খলতা, দুর্বৃত্তায়ন ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করা এবং সন্ত্রাসী তৎপরতা নিষিদ্ধ।

জঙ্গিবাদ বনাম জিহাদ
উপরের আলোচনায় এটি পরিষ্কার যে, তথাকথিত জঙ্গিবাদের সাথে জিহাদের দূরতম সম্পর্কও নেই । নিম্নে এর একটি তুলনামূলক আলোচনা তুলে ধরা হলো : ক. রাসূলুল্লাহ সা: মানুষকে ইসলামের দাওয়াত দিয়েছেন, চরম অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করেছেন। কিন্তু আল্লাহ তাঁকে জানিয়েছেন- ‘অতত্রব তুমি অস্বীকারকারীদের কথা কস্মিনকালেও মেনে নেবে না, আর এ কুরআনের সাহায্যে তাদের সাথে বড় জিহাদ করো’ (সূরা আল ফুরকান-৫২)। কুরআনের মাধ্যমে জিহাদ করার অর্থ তার বিধি-বিধান প্রচার করা এবং কুরআনের দিকে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো; মুখে হোক, কলমের সাহায্যে হোক কিংবা অন্য কোনো পন্থায় হোক- এখানে সবগুলো বড় জিহাদ বলা হয়েছে (পবিত্র কুরআনুল কারিম, সৌদি আরব : কুরআন মুদ্রণ প্রকল্প, মদিনা মোনোয়ারা, পৃষ্ঠা-৯৬৩)। কিন্তু কুরআনের এ দাওয়াত না মেনে কাফেররা অন্যায়ভাবে মুসলমানদের সব সহায়-সম্পদ কেড়ে নিয়ে তাদের মক্কা থেকে বের করে দেয় এবং নবীজী সা:-কে হত্যার ষড়যন্ত্র করে। রাসূল সা: তখন প্রিয় জন্মভূমি মক্কা থেকে বিতাড়িত হয়ে হিজরত করে মদিনা আশ্রয় নিলে মক্কার কাফেররা মদিনা আক্রমণ করে মুসলমানদের ধ্বংস করার সঙ্কল্প করে। এমতাবস্থায়, মুসলমানদের আত্মরক্ষামূলক যুদ্ধের অনুমতি দেয়া হয়েছিল। এ পরিস্থিতির নিরিখে জঙ্গিবাদ সম্পূর্ণ অযৌক্তিক, ভ্রান্ত ও কুরআন-সুন্নাহর পরিপন্থী।

খ. সশস্ত্র জিহাদের ডাক যে কেউ দিতে পারেন না। এর জন্য দরকার যথোপযুক্ত খেলাফত কাঠামো বা রাষ্ট্রক্ষমতা ও জনসমর্থন। আল্লাহর রাসূল সা: প্রায় ৯৫ শতাংশ জনসমর্থন নিয়ে মদিনায় খেলাফত বা সরকার প্রতিষ্ঠা করেন। একটি সুশৃঙ্খল সেনাবাহিনী গঠন করেন। এরপর তিনি সশস্ত্র জিহাদে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। কাজে ইসলাম প্রতিষ্ঠার নামে পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতা দখল অথবা চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে নিরস্ত্র মানুষ হত্যা কুরআন-সুন্নাহর পরিপন্থী প্রক্রিয়া কখনো জিহাদ হতে পারে না।

গ. ইসলামে শুধু রাসূল সা:-এর আনুগত্য শর্তহীন। অন্য যেকোনো নেতার আনুগত্য আল্লাহ ও রাসূল সা:-এর আদেশ-নিষেধের আলোকে শর্তসাপেক্ষ। এমতাবস্থায় যেকোনো ব্যক্তির ডাকে জিহাদে ঝাঁপিয়ে পড়ার আগে যাচাই করে নিতে হবে- এ ধরনের নেতৃত্ব রাসূলুল্লাহ সা:-এর আদর্শ মাফিক কি না।

ঘ. ইসলামে আত্মহত্যা মহাপাপ। অতত্রব, কোনো যুদ্ধ ঘোষণা ছাড়াই নিরীহ মানুষকে হত্যার উদ্দেশ্যে আত্মঘাতী বোমা হামলা ইসলামসম্মত হতে পারে না। আল্লাহ পাক বলেন- ‘তোমরা নিজ হাতে নিজেদের ধ্বংসের দিকে নিক্ষেপ করো না’ (সূরা বাকারা-১৯৫)। ‘তোমরা নিজেদের হত্যা করো না’ (সূরা নিসা-২৯)।

ঙ. পবিত্র কুরআনে সূরা মায়িদার ৩২ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে- ‘কোনো নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা পুরো বিশ্বমানবতাকে হত্যা করার শামিল।’ এ ছাড়া জিহাদের ময়দানে কোনো অযোদ্ধা নারী, পুরুষ, বৃদ্ধ, শিশু, পশু ইত্যাদি হত্যা করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

চ. জিহাদের একমাত্র উদ্দেশ্য হলো মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। কুরআনের বাতলে দেয়া এবং রাসূল সা:-এর দেখানো উপায়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তা করতে হবে। কিন্তু যেকোনো প্রক্রিয়ায় খুন-খারাবির মাধ্যমে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে জোরপূর্বক ইসলামী আইন প্রতিষ্ঠা করা বা জনগণের ওপর তা চাপিয়ে দেয়া কখনো আল্লাহর সন্তুষ্টিমূলক হতে পারে না। কুরআনে বলা হয়েছে-‘সত্য এসেছে তোমার প্রভুর কাছ থেকে। যার ইচ্ছা হবে বিশ্বাস করবে এবং যার ইচ্ছা হবে অবিশ্বাস করবে’ (সূরা আল কাহাফ-২৯)। কাজেই বল প্রয়োগ করে ইসলাম প্রতিষ্ঠার নীতি সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ও ইসলামবিরোধী।

মূলত জঙ্গিবাদ একটি জাতীয়, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সমস্যা। এর বিরুদ্ধে ধর্মীয় ও সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার মাধমে একে প্রতিরোধ বা দমন করা সম্ভব।

লেখক : নিরাপত্তা বিশ্লেষক
E-mail: maksud2648@yahoo.com


আরো সংবাদ



premium cement
যুদ্ধের সময় নিখোঁজ হাজার হাজার মানুষের ভাগ্য সম্পর্কে শ্রীলঙ্কাকে স্পষ্ট জানাতে হবে : জাতিসঙ্ঘ অনুমোদন ছাড়া কিভাবে ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংকস বিক্রি করছিল কোম্পানিগুলো সরকারি কেন্দ্রে কৃষকেরা ধান বেচতে পারে না, লাভ খাচ্ছে দালালরা গরুর নাম উড়াল সড়ক, ওজন ৩৫ মণ ইরান ২ সপ্তাহের মধ্যে পরমাণু অস্ত্র বানাতে পারবে! বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ভিক্ষুক, মোট সম্পত্তি ৭.৫ কোটি ভারতের কোভ্যাক্সিনেও রয়েছে দীর্ঘমেয়াদি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ইসরাইল সরকারে ভয়াবহ দ্বন্দ্ব : নেতানিয়াহুকে গাঞ্জের পদত্যাগের আলটিমেটাম রাফায় ইসরাইলি হামলা, সরে যেতে বাধ্য হয়েছে ৮ লাখ ফিলিস্তিনি চেন্নাইকে বিদায় করে বেঙ্গালুরুর ‘অবিশ্বাস্য’ প্লে অফ মনের মিনার ভেঙে পড়েনি

সকল