২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১, ২০ মহররম ১৪৪৬
`

মোদি কী পেতে ‘ভার্চুয়াল বৈঠক’

নরেন্দ্র মোদি ও শেখ হাসিনার ভার্চুয়াল বৈঠক - ফাইল ছবি

গত ১৭ ডিসেম্বর মোদি-হাসিনা দুই প্রধানমন্ত্রীর এক ‘ভার্চুয়াল বৈঠক’ অনুষ্ঠিত হয়েছে; মানে কার্যত যার যার দেশের অফিস রুমে বসেই ওই বৈঠকটা অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং তারা পরস্পর কথা বলেছেন। যদিও দু’দেশের পাবলিক টিভিতে এই অনুষ্ঠান যেভাবে ও যতটুকু আমাদের সামনে আনা হয়েছে তাতে পুরাটাই কাঠপুতলির শো-এর মতো খুবই আড়ষ্ট আর যান্ত্রিক মনে হয়েছে। এ দিকে ভার্চুয়াল হলেও তা ‘শীর্ষ বৈঠক’ বা সামিট যখন বলা হচ্ছে তখন দু’পক্ষেরই চাওয়া-পাওয়াও অবশ্যই ছিল অন্তত ‘কিছু’।

বাংলাদেশের দিক থেকে বললে, ভারতের প্রতি আমাদের সরকারি অবস্থান ও সময়টা যাচ্ছে এখন ভারতের জন্য খুব ‘করুণ’ এবং ‘দুঃসময়ের’ বলা যায়। এমন অভিমুখের শুরু ২০১৮ সালের শুরুর দিক থেকেই; আমাদের সরকারেরও ‘মন-বাঁধা’ সে সময় থেকেই। আর এর স্পষ্টতা অ্যাকশনে প্রকাশ পেতে থাকে ২০১৮ ডিসেম্বরের সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই। কথাটা এভাবে বলা যায়, শেখ হাসিনা চীনের সাথে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করতে চলতি সরকারের আমলের শুরু থেকেই কখনো পিছপা হননি। সেই ২০১০ সাল থেকেই তিনি লেগে আছেন, চীন সফর করে যাচ্ছেন। সফর বিনিময়ও হচ্ছে। তবে সম্পর্কের মাত্রার দিক বিচারে প্রধানমন্ত্রী এগিয়েছেন ততটুকু যতটুকু ভারত এলাও করেছে অথবা ভারতের কড়া আপত্তি পেরিয়ে তিনি ‘ছাড়’ আনতে পার পেয়েছেন। সেটিই তিনি এবার গত ২০১৯ জানুয়ারির শুরু থেকেই অবাধে করে গেছেন যেন; যতটুকু বাস্তব কাজকর্ম দেখে অনুমান করা যায়- এই অর্থে বলা যায়, বর্তমান সরকার যা কিছু ভারতকে দেয়ার ব্যাপারে সরকারি কমিটমেন্ট দিয়ে রেখেছিলেন কেবল তাই শেষ করা হচ্ছে, কিন্তু নতুন কমিটমেন্টে তেমন আগ্রহ নেই। অবস্থাদৃষ্টে ব্যাপারটা এমনই মনে হচ্ছে। এ ছাড়া ঘটনার ফোকাস আসলে এদিকটায় নয়, বরং উল্টা দিকে। ব্যাপারটা বাজারে আসছে বরং এভাবে যে, সরকার কতটা গভীরভাবে চীন-ঘনিষ্ঠ এর বহি:প্রকাশ থেকে। এ থেকেই এবার অর্থ তৈরি হচ্ছে তাহলে সরকার প্রধান আর আগের মতো ততটা ভারত ঘনিষ্ঠ থাকতে চাইছেন না। তবে এ ছাড়াও আরেকটা বিবেচনা সম্ভবত আমলে নিচ্ছেন। আমরা জানি, মুজিব খুন হয়ে যাওয়ার পরে একসময় শেখ হাসিনা নিরাপত্তার তাগিদে প্রায় পাঁচ বছর ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিলেন। ফলে কৃতজ্ঞতা বা আগামীর দিক বিবেচনা যেমন মানুষের মধ্যে কাজ করে তেমন কিছু একটা হয়তো আছে বলে মনে হয়েছে। ফলে একধরনের সফটনেস এখনো থাকলেও সেটি কোনোভাবেই ২০০৯ সালের মতো হয়তো আর নয়। তবে সর্বোপরি পরিষ্কার থাকা ভালো যে, প্রতিবেশী ভারতের সাথে একটা স্বাভাবিক সম্পর্ক তো থাকবেই যেটা নিয়ে আলোচনার তেমন কিছু নাই। ভারতের সাথে বাড়তি বা বিশেষ সম্পর্ক থাকবে কি না- এটাই কেবল আলোচনার।

একটা নতুন ব্যাপার হলো, ‘ভার্চুয়াল বৈঠকে’ এবার একটা অনুভব সব সময় বজায় থেকেছে যে, ভারত বাংলাদেশের মন পাওয়ার চেষ্টা করছে (দ্য প্রিন্টের জ্যোতি মালহোত্রা নিজেই এটা স্বীকার করে বলেছেন, ভারত তার ‘দেমাগ বা ওভারউয়েনিং ইনফ্লুয়েন্স খুইয়েছে’)- যেটা সব ঘটনার সারফেসে হাজির হচ্ছিল।

এসব দিক বিচারে ভার্চুয়াল বৈঠক থেকে বাংলাদেশের বিরাট কিছু পাওয়ার আশা ছিল তা মনে হয় না। কেবল স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পালনে ভারতের সাথে একটা অনুষ্ঠান। আর আনুষ্ঠানিকভাবে যেটাকে বলা হয়েছে ‘নয়া দিল্লি জাদুঘরের সাথে বঙ্গবন্ধু জাদুঘরের সহযোগিতা’- এ নিয়ে সাতটা সমঝোতা স্মারকগুলোর একটা করা হয়েছে। এরই এক ব্যবহারিক মানের প্রতি সম্ভবত সরকারের যা আগ্রহ ছিল। সেটি হলো, মহাত্মা গান্ধীর সমান্তরালে মরহুম শেখ মুজিবকে নিয়ে একটা ‘জাদুঘর শো’-এর আয়োজন। এ ধরনের কিছু বিষয় ছাড়া ঢাকার পক্ষ থেকে খুব কিছু আশা তার ছিল মনে হয়নি।

সবাই নিশ্চিত থাকতে পারি, তিস্তার পানিতে আমাদের দেশের ভাগ বুঝিয়ে দেয়ার কোনো ইচ্ছা-পরিকল্পনা ভারতের কোনো দিন ছিল না, আজও নাই, আগামীতেও হয়তো হবে না তাদের বাধ্য না করলে।

এর বিপরীতে ভারতের অবস্থা ছিল বেদিশা, অপ্রস্তুত। তারা হয়তো বুঝছেন এই আমলে বাংলাদেশ তাদের ‘হাতের বাইরে’ চলে যাচ্ছে। যেমন মিডিয়ার কথা যদি ধরি, ভারতের নিজের মিডিয়াগুলো একমত হতে পারেনি- কেন এই ভার্চুয়াল বৈঠক। বরং অনেককেই মন্তব্য করতে দেখা গেছে যে, তারা লিখেছেন, গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ভারতের শীর্ষপর্যায়ের সাথে বাংলাদেশের তেমন যোগাযোগ বা সাক্ষাৎ নেই। অন্ততপক্ষে সেটা তো ভেঙেছে, এটাই নাকি ‘অনেক অর্জন’। দ্য হিন্দু লিখেছে, ‘অবকাঠামো ও কানেক্টিভিটি প্রজেক্ট এই ভার্চুয়াল বৈঠকের ফোকাস।’ তারা আসলে দিবাস্বপ্নে আছেন। কারণ এ নিয়ে তেমন কোনো উচ্চবাচ্যই হয়নি। এটা আসামকে রেলওয়ে করিডোর আরো পোক্তভাবে দেয়া, যেটা শেখ হাসিনারই আগের কমিটমেন্ট পূরণ। ভারতের বাকিরা- সরকার ও মিডিয়া- যেমন বানানো কথা ছাড়া কিছু বলতেই পারেন না, তেমনি কিছু একটা যার যার মতো বলেছেন। যেমন মোদির ভারতের ‘পড়শির গুরুত্ব’ নাকি সর্বাগ্রে বা ‘নেইবার ফাস্ট’ মোদির এই নীতির উপরেই নাকি বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক দাঁড়িয়ে আছে। এসব শিরোনাম করেছেন অনেকে। দ্য প্রিন্ট, ওয়াইর বা থিংকট্যাংক ওআরএফ শিরোনাম করেছে নেইবার ফাস্ট এর বাকচাতুরী থেকে। অথচ মোদির এই নীতির ব্যবহারিক কার্যকারিতা কী তা তারা কেউ বলতে পারবেন না। এমনকি এটাও তারা দেখতে পান না যে, তাদের ‘মহান স্বদেশ’ সামান্য কয়েক মাসের জন্য কয়েক টন পেঁয়াজের বাড়তি শুল্কের লোভও ছাড়তে পারে না; আগে থেকে বলতেও পারে না ঠিক কী করতে চায় পেঁয়াজ নিয়ে; একটা নিয়ম বা কমিটমেন্টেও আসতে পারে না। অথচ এই দেশেরই দিকে দেখেন, যে আসামের জন্য বিনা পয়সায় বাংলাদেশের ওপর দিয়ে তেল পাইপলাইন, গ্যাস পৌঁছে দেয়া, বিদ্যুতের করিডোর, সড়ক, নৌ-করিডোর, বিনা পয়সায় বাংলাদেশের তিন বন্দর ব্যবহার করা হবে এবং প্রায়োরিটিসহ। অথচ আসামই আবার ‘মুসলমান খেদাও’ এর আন্দোলন করবে, এনআরসি করবে! কিন্তু মুখে বলবে সবই নাকি ‘পড়শি আগে’ বলে এক নীতি আছে সে অনুযায়ী চলছে। আসলে তামাশার আর শেষ নেই! তারা কি কেবল তামাশাই ভালোবাসেন?

আর এ ব্যাপারে সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে দ্যা প্রিন্ট ওয়েব মিডিয়া। করোনাকালে ভারতে কর্মীদের বেতন দেয়াই কঠিন হয়ে গেছে। তাই যেন তাদের সরকারি মুখপাত্র হওয়া, পেজ বিক্রি বা সরকারি (গোয়েন্দা) খেপ মারার কাজে লেগে পড়েছেন। ‘ভার্চুয়াল বৈঠক’ প্রসঙ্গে এরা কমপক্ষে তিনটা রিপোর্ট করেছেন। এর মধ্যে একটা ভুল এবং না বুঝা তথ্য দিয়ে লিখেছেন জ্যোতি মালহোত্রা।

সাধারণভাবে বললে, ভারতীয় মিডিয়া-কর্মীদের আত্ম-জিজ্ঞাসা নাই। কোনো যাচাই বা জিজ্ঞাসাই নেই যে ভারত কী গ্লোবাল অর্থনৈতিক শক্তি? তা কিভাবে বা কবে থেকে? তাদের ধারণা এটা যেন দাবি করার ব্যাপার। তারা জোরসে দাবি করলে বা ভাব ধরলে যেন তা হয়েই যাবে! অথচ স্বাধীনভাবে যাচাই করলে বা সামান্য একটু চোখ-কান খুলে রাখলেই তাদের না বোঝার কোনো কারণ নাই যে, ভারত নিজেই অবকাঠামো ঋণ-গ্রহণকারী দেশ, এখনো। এই গণ্ডিই পার হয় নাই সে। আর সবচেয়ে বড় এমন ঋণ তারা এখনো পেয়ে চলেছে চীন থেকে। অথচ ভারতের সরকার ও মিডিয়া ভাব করতে চায় ভারত বাংলাদেশের বিরাট ঋণদাতা। যে কারো এটা বুঝতে পারার সহজ উপায়টা হলো, বাংলাদেশে ভারতের প্রকল্প- এর মূল্যের দিকে নজর ফেলা। এমনিতেই গত ১০ বছরে ভারতের এমন প্রকল্পগুলোর ক্ষেত্রে এর (কমিটমেন্ট দেয়া) দশভাগ অর্থও এখনো ছাড় করা হয়নি। এ ছাড়া ভারতের এমন প্রকল্পে দেখা যাবে, প্রকল্পের মূল্য ভারত হিসাব করে থাকে হাজার ডলার। অথচ চীনের কথা বাদই দিলাম পশ্চিমের কম সামর্থ্যরে রাষ্ট্রটাও মিলিয়ন ডলারে ছাড়া প্রকল্পের কোনো মূল্য হিসাব করে না।

জ্যোতি মালহোত্রা পদ্মা ব্রিজ সম্পন্ন করার প্রসঙ্গ তুলেছেন। কথা সত্য, বিশ্বব্যাংকের সাথে প্রথম দিকে দুর্নীতির অভিযোগ (অনেক পরে বিশ্ববাংক নিজেই ঢাকা সরকারের বিরুদ্ধে সব অভিযোগ আদালত থেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে।) তোলার সময় পদ্মা প্রকল্প বাতিল হয়ে গেলে সে সময় ভারত নিজেই আগ বাড়িয়ে এক বিলিয়ন ডলার ঋণ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এ নিয়ে আর পরে কখনো কথা এগোয়নি। কিন্তু জ্যোতি মালহোত্রা নিজে থেকেই তাদের রাজনীতিবিদ সরকারের প্রতি এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। কিন্তু একটা ভুয়া তথ্যসহ। জ্যোতি তার লেখায় শিরোনাম করেছেন, ‘ভারত না, চীন বাংলাদেশে ব্রিজ বানিয়েছে; কিন্তু মোদি সরকার মনে করছে সবকিছু এখনো হাতছাড়া হয় নাই।’

এখানে ‘ব্রিজ’ বলতে তিনি পদ্মা ব্রিজ বুঝিয়েছেন। কিন্তু সত্যটা হলো, চীনা অর্থে বাংলাদেশ মূল ব্রিজটা বানায়নি। এর পুরোটাই বাংলাদেশের নিজের অর্থ। অবশ্য এর নির্মাণ ঠিকাদার চীনা এক কোম্পানি। তারা এই মূল ব্রিজের কেবল ঠিকাদার, কোনো অর্থদাতা নয়। আমরা আশা করব ভারতের বাকি মিডিয়াকর্মীরা ঠিকাদার আর ঋণদাতার ফারাক বুঝতে পারবেন। এ ছাড়া মূল ব্রিজের উপর দিয়ে গাড়ি চললেও এর নিচ তলায় কেবল রেল প্রকল্পের (রেললাইন পাতা) কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু এই অংশের কাজটার জন্য বাড়তি প্রায় তিন বিলিয়ন ডলার চীনা ঋণ নেয়া হয়েছে। এর ঠিকাদার আবার ওই মূল ব্রিজ বানানোর ঠিকাদারই। কাজেই জ্যোতির বক্তব্য সঠিক নয়।

আবার লক্ষণীয় এই যে, ভারতকে চীনের সাথে তুলনা করা আরেক আহাম্মকি। এ নিয়ে ‘সবকিছু এখনো হাতছাড়া হয় নাই’ জ্যোতির লেখার শিরোনামে এমন কথার অর্থ হলো, মোদি সরকার বুঝাতে চায়, সে চাইলে এখনো বাংলাদেশের উপর চীনের মতোই প্রভাব বিস্তার ঘটাতে পারে। অথচ এই কথাটা কোনো রকম স্টাডি বা পড়ালেখা না করার সমস্যা।

প্রথম কথা, এই ‘প্রভাব বিস্তার’ কথার মানে কী? পড়শি রাষ্ট্রকে চাপ দিয়ে যেনতেন একটা চুক্তি করিয়ে নেয়া? ভারত-নেপাল অথবা ভারত-ভুটান চুক্তির মতো? অথচ কথাটা হলো, বড় অর্থনীতির যে রাষ্ট্র চলতি সময়ে সারপ্লাস একুমুলেশন বা উদ্বৃত্ত সঞ্চয় করে চলেছে এমন এখনকার প্রধান রাষ্ট্র নয়। সে কখনো দুনিয়ায় প্রধান প্রভাব-বিস্তারি এবং গ্লোবাল অর্থনীতির নেতারাষ্ট্র হতে পারবে না; হবে না। টানা গত ৭৫ বছর ধরে আমেরিকা এসব শর্ত পূরণ করে তবেই নেতা হয়ে টিকে ছিল। এটা জোর খাটিয়ে নেপাল বা ভুটানের ওপর নেহরুর নয়া শাসক হওয়ার চেষ্টা নয়। সে জন্য পড়াশুনা না করলে ‘প্রভাব বিস্তার’ কথাটার অর্থ বোঝা যাবে না। এরই পরিণতি হলো, একেকটা নেহরুর জন্ম ও তার ‘কলোনি শাসক’ হওয়ার চিন্তা। যে নেহরু মনে করতেন দুইটা রাষ্ট্রের মধ্যে একমাত্র সম্পর্ক হলো, একটা আরেকটার ওপর প্রভাব বিস্তার করে সেটিকে অধীনস্থ করা বা কলোনি বানানো। তুরস্কের নিউজ-এজেন্সি টিআরটি ভারতকে এই ‘কলোনি বুঝ’ ত্যাগ করতে পরামর্শ দিয়ে একটা রিপোর্ট করেছে। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, ভারত কী এখনকার সময়ের সবচেয়ে বড় সারপ্লাস একুমুলেশনের রাষ্ট্র? মোটেও নয়। এটা জানা ভারতের মিডিয়া বা নেতাদের জন্য কোনো কঠিন কাজ নয়। আর এই অর্জনটা ভাব ধরলে বা ভান করলে হয়ে যাওয়া যায় নয়। তাহলে?

এ ছাড়া আরো এক বড় অসঙ্গতি হলো, এ যুগে (হিন্দু) জাতিবাদী রাষ্ট্র হয়ে এটা অর্জন করা যাবে না। কারণ (হিন্দু) জাতিবাদ মানেই হলো, ব্রাহ্মণ্যবাদ ও এর জাতপ্রথায় সক্রিয় থাকা এক সমাজ। কারণ এটা দুনিয়ার চরম বৈষম্যের প্রকাশ। তাই এই সামাজিক রীতি বৈষম্যহীন নাগরিক-সাম্য রাষ্ট্রের সাথে স্ববিরোধী সংঘাতপূর্ণ ধারণা। এ ছাড়া জাতিবাদী চিন্তার বড় অনুষঙ্গ হলো, জাতিরাষ্ট্র বা কথিত ‘ন্যাশনাল ইন্টারেস্টের’ ধারণা। জাতীয় স্বার্থ যে অনুসরণ করে তার পক্ষে সাংবাদিকতা সম্ভব নয়। কারণ সাংবাদিকতায় ফ্যাক্টসের ওপর দাঁড়াতে হবেই। কথিত জাতির (রাষ্ট্রের) স্বার্থকে প্রধান বিবেচ্য বলে গণ্য করে ফ্যাক্টসের ওপর দাঁড়ানো না-ও হতে পারে। সাংবাদিকতা ক্যাডার সার্ভিসের চাকরি নয়। অথচ ভারতে সবচেয়ে বড় করে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েই ‘ন্যাশনাল ইন্টারেস্টের সাংবাদিকতা’ করেন দ্য প্রিন্টের সম্পাদকসহ ওই মিডিয়ার সবাই। খবরের সত্য-মিথ্যা নয়, দেশপ্রেমের নামে মালহোত্রাসহ সবাই সাংবাদিকতা করছেন। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী হিন্দুত্ববাদ যেটাকে জাতির স্বার্থ মনে করবে সেটি প্রকৃত রাষ্ট্রস্বার্থ নাও হতে পারে। কারণ এটা তো আসলে একটা কূপমণ্ডূক দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি। সেটিকে ‘জাতীয় স্বার্থ’ বলে সাংবাদিকরা মানতে বাধ্য হতেই পারেন না।

জ্যোতি মালহোত্রা আরেক কী কারণে আমাদের ডেইলি স্টারের সম্পাদককে পছন্দ করেছেন বলা মুশকিল। তিনি এই সম্পাদকের সাক্ষাৎকার (যেটা আসলে অনধিকার) নিয়েছেন। আমরা এর একটাই কারণ অনুমান করতে পারি, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ইনি বাংলাদেশে আমেরিকার হস্তক্ষেপের পক্ষের সক্রিয় প্রবক্তা ছিলেন। হয়তো সেই সূত্রে। এ ছাড়া এবার পদ্মা সেতুর মূল কাঠামোর কাজ সমাপ্তির দিনে এবার তিনি প্রধানমন্ত্রীকে এক দেবীর আসনে বসিয়ে গত ১১ ডিসেম্বর এক মন্তব্য-কলাম লিখেছিলেন। সেটি যাই হোক, জ্যোতির প্রশ্নে বা সেই উছিলায় দাবি হলো, ভারত বাংলাদেশকে ১৯৭১ সালে স্বাধীন হতে সাহায্য করেছে। কাজেই আমরা ভারতকে ফেলে চীনের প্রভাবে যাচ্ছি কেন বা চীনা ঋণে ঢুকতে যাচ্ছি কেন? সোজা বললে এটা আসলে জ্যোতি মালহোত্রার এক দিকে বোকামি প্রশ্ন। অপর দিকে অনধিকার চর্চা।

‘১৯৭১ সালে সাহায্য’ বলে যে ইঙ্গিত জ্যোতি দিচ্ছেন এর মানে কী? আমরা একাত্তর সালে এতে ভারতের কলোনি হয়ে গেছিলাম? জ্যোতি কি তাই দাবি করছেন? তাহলে তো বলতে হয়, নেহরু আমল থেকেই ভারত আদতে একটা কলোনি দখলদার হতে চাওয়া মনোভাবের ও নীতির রাষ্ট্র। বাংলাদেশ নিজে একটা সার্বভৌম রাষ্ট্র তাই সে কেন কী করবে, এর জবাবদিহিতা কাউকেই করবে না। তার অনধিকার আর গাধামি প্রশ্ন করা বন্ধ রাখা উচিত। ভিয়েতনাম যুদ্ধে আমেরিকা যত ‘এজেন্ট অরেঞ্জ’ বিষ ছিটিয়েছে, এর কোনো তুলনা নেই, যার কারণে এখনো বিকলাঙ্গ শিশু হয় ভিয়েতনামি মা-বাবাদের। অথচ এখনকার ভিয়েতনাম-আমেরিকা সম্পর্ক সে সময়ের চীন-ভিয়েতনামের ঘনিষ্ঠতম সম্পর্কের চেয়েও ভালো। কাজেই আন্তঃরাষ্ট্র সম্পর্ক নিয়ে তাদের উচিত চোখ কান খুলে পড়াশোনা করা।

তাহলে মোদি কেন ভার্চুয়াল বৈঠকে এসেছিলেন?
বাস্তবত এটা আর তার অজানা নয় যে বাংলাদেশ ক্রমেই ভারতের মুঠো থেকে বের হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু মোদি সে কথা তার ভোটার কনস্টিটিউয়েন্সির কাছে স্বীকার করতে পারবেন না। কারণ এর সোজা ফল হবে রাহুল গান্ধীকে সাহায্য করা, তিনি নিজে ভোট হারাবেন। তাই এই ভার্চুয়াল বৈঠক করে তিনি আবার তার ভোটারদের বলে দেবেন যে, না বাংলাদেশ আগের মতোই ভারতের প্রভাবাধীনে আছে। তার লাভ এতটুকুই। তবে ভোটে এর প্রভাব মোদির জন্য অনেক মূল্যবান! সার কথায়, এটা তাই পরস্পরের ‘পিঠ চুলকে দেয়া’র ভার্চুয়াল বৈঠকই বটে!

তাই ‘ফুটানির ভাণ্ডটা ফুটা’ করে দিয়েছেন তৌহিদ হোসেন। বিবিসিকে তিনি বলেছেন, তবে পানি বণ্টন, সীমান্ত সঙ্ঘাতের মতো ইস্যুতে আলোচনা বা সমঝোতা না হলে এসব ইস্যু ততটা গুরুত্ব বহন করে না বলে মনে করছেন বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো: তৌহিদ হোসেন।’

লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com


আরো সংবাদ



premium cement
সেতু ভবন পরিদর্শন করলেন প্রধানমন্ত্রী ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রংপুর মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মিজুসহ গ্রেফতার ১৭ ঢাকায় গুলিবিদ্ধ শিবলুর লাশ ফেনীতে দাফন দেশকে ভিক্ষুকের জাতিতে পরিণত করতেই এমন সহিংসতা : প্রধানমন্ত্রী মার্কিন কংগ্রেসে নেতানিয়াহুর বক্তব্যের জবাবে যা বললেন ইরানের প্রেসিডেন্ট রেমিট্যান্স ও প্রবাসীদের দেশে ফেরা নিয়ে অপপ্রচার হচ্ছে : পলক অস্ত্রবিরতির জন্য হ্যারিসের আহ্বান, সমালোচনায় ইসরাইলি কট্টরপন্থিরা আহতদের দেখতে পঙ্গু হাসপাতালে প্রধানমন্ত্রী ‘ছুরি দিয়ে গলাকেটে হত্যা করার পর হাত-পা বেঁধে ফেলেছি’ নাশকতাকারীদের ছাড় দেয়া হবে না : ডিবিপ্রধান হারুন

সকল