২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও একটি বিতর্ক

-

বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট সৃষ্টিতে ছাত্ররাই অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন। বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে রাজনীতিবিদদের মধ্যে সশস্ত্র যুদ্ধে স্বাধীনতার সম্ভাবনা নিয়ে টানাপড়েন থাকলেও ছাত্রদের দৃঢ় প্রত্যয় ও ঐকান্তিক উদ্যমই স্বাধীনতার যাত্রাপথের পাথেয় হিসেবে উদ্ভাসিত। এ ছাড়া স্বাধীনতার পক্ষে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ভ্যানগার্ড হিসেবে তারাই অতন্দ্র প্রহরীর মতো কাজ করেছেন। তখন রাজনৈতিক ছয় দফা এবং ছাত্রদের ১১ দফা বাস্তবায়নের কর্মসূচি থেকে স্বাধীনতা আন্দোলন পরিচালনার হেড কোয়ার্টার হিসেবে ভূমিকা পালন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ‘এশিয়ার অক্সফোর্ড’ হিসেবে খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও স্বাধীনতা আন্দোলন একে অপরের অবিচ্ছেদ্য অংশ। বাংলার কৃষ্টি ও সংস্কৃতি লালনের এক অপরিহার্য নাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার ইতিহাস, জন্মের বেদনা, আনন্দ উৎসব নিয়ে অনেক আলোচনা, তর্ক ও বিতর্ক রয়েছে। নিরপেক্ষ গবেষণার মাধ্যমে ‘সত্য’ নিরূপণ করা দরকার, অন্যথায় এ ‘বিতর্ক’ ছড়াতেই থাকবে। ‘বিতর্ক’ তিনি স্বয়ং কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যিনি নোভেল বিজয়ী বিশ্বকবি হিসেবেও পরিচিত, তাকে নিয়েও দীর্ঘ দিন ধরেই শুনে আসছি যে, রবীন্দ্রনাথ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিলেন, কলকাতার গড়ের মাঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধী সভায় তিনি সভাপতিত্ব করাসহ বড় লাটের কাছে স্মারকলিপি প্রদানে তিনি নাকি নেতৃত্ব দিয়েছেন। তবে রবীন্দ্র ভক্তরা এ কথাগুলো অস্বীকার করে বলেছেন, যে সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়বিরোধী সমাবেশ কলকাতায় চলছিল তখন রবীন্দ্রনাথ ছিলেন পূর্ববঙ্গে। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সমর্থন বা অনুকূলে বাংলা ভাষার এত বড় ধারক-বাহক হিসেবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভূমিকা সম্পর্কে প্রামাণ্য তথ্য পাওয়া যায়নি, বিতর্কটি অবসানের লক্ষ্যে যা অত্যন্ত প্রয়োজন। বিতর্কটির অবসান হওয়া জরুরি।

০১/০৭/২০১৮ তারিখে বিবিসি বাংলা, ঢাকার প্রতিনিধি ফারহান পারভীন প্রদত্ত প্রতিবেদনে প্রকাশ পায় যে, ‘ভারতবর্ষে উচ্চশিক্ষার শুরু ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহের পর। ১৮৫৭ সালে ভারতের বড় লাট লর্ড ক্যানিং ‘দ্য অ্যাক্ট অব ইনকরপোরেশন’ পাস করে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো কলকাতা, বোম্বে এবং মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়। এর আগে থেকেই ভারতবর্ষে উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা ছিল, কিন্তু এই তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয় ইউরোপীয় মডেলে। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মান ছিল উঁচু। আর এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ছিলেন মূলত পশ্চিম বঙ্গের উঁচুতলার হিন্দু সন্তানরা। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের আগে অবিভক্ত বাংলায় ১৯টি কলেজ ছিল। তার মধ্যে পূর্ব বাংলায় ৯টি। তবে সেটা পর্যাপ্ত ছিল বলে মনে করেননি তখনকার পূর্ব বাংলার মানুষ। ১৯০৫ সালে বাংলা প্রেসিডেন্সি ভাগ করে পূর্ববঙ্গ ও আসাম নামে নতুন এক প্রদেশ গঠন করা হয়। এ ঘটনার প্রচলিত নাম বঙ্গভঙ্গ। পূর্ববঙ্গে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী বিশেষ করে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের এগিয়ে নিয়ে আসা ছিল এই উদ্যোগের একটি উদ্দেশ্য। বঙ্গভঙ্গের এই সময়টা ছিল খুব অল্প সময়ের জন্য, মাত্র ছয় বছর। কারণ এর মধ্যেই পশ্চিম বঙ্গের হিন্দু নেতারা প্রবল আন্দোলন করেছিলেন এই বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে।’

প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ রয়েছে, ‘এ দিকে মুসলমান নেতারা নতুন প্রদেশ হওয়াতে শিক্ষাসহ নানা সুবিধা পাবেন এই আশায় উজ্জীবিত হন। কিন্তু গোটা ভারতবর্ষে হিন্দুরা সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং তাদের বিরোধিতার মুখে ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ করা হয়। ফলে মুসলমানদের ক্ষোভ আরো পুঞ্জীভূত হতে থাকে। তারা মনে করে, অর্থনৈতিক বৈষম্যের সাথে সাথে শিক্ষা ক্ষেত্রেও তারা বৈষম্যের শিকার। লেখক এবং গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ তার ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা’ বইয়ে লিখেছেন ‘কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর বাঙালি মুসলমানদের ক্ষোভ ছিল ১৯০৫ সালে পূর্ব বাংলা এবং আসাম প্রদেশ গঠনের অনেক আগে থেকেই। ... ক্ষোভের কারণ শুধু হিন্দু প্রাধান্য নয়, শিক্ষাক্রমে হিন্দুধর্ম প্রাধান্য পাওয়ায় মুসলমানদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সবচেয়ে বিরোধী হিসেবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় আর রাজনীতিক সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জীর নাম আবুল মকসুদের ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা’ বইতে উঠে এসেছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের কিছু লোকজনও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়। ভারতের ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ ১৯১২ সালে ঢাকা সফর শেষে কলকাতা প্রত্যাবর্তন করলে ১৯১২ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি ড. রাসবিহারী ঘোষের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল তার সাথে সাক্ষাৎ এবং ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বিরোধিতামূলক একটি স্মারকলিপি পেশ করেন। এ সংক্রান্ত বিভিন্ন বইতে উঠে এসেছে, লর্ড হার্ডিঞ্জ স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, কী মূল্যে অর্থাৎ কিসের বিনিময়ে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বিরোধিতা থেকে বিরত থাকবেন? শেষ পর্যন্ত আশুতোষ মুখোপাধ্যায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য চারটি নতুন অধ্যাপক পদ সৃষ্টির বিনিময়ে তার বিরোধিতার অবসান করেছিলেন। পরবর্তীতে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য শিক্ষক নিয়োগে সহযোগিতা করেন (বিবিসি বাংলা প্রতিবেদন, তাং- ০১/০৭/২০১৮ ইং)।’

সরকার শাহবুদ্দীন আহমেদ তার ‘ইতিহাসের নিরিখে রবীন্দ্র-নজরুল চরিত’ বইতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা সংক্রান্ত বিষয়ে যে তথ্য উপস্থাপন করেছেন তা উল্লেখ করা হলো- ‘১৯০৬ সালের ১ অক্টোবর আগা খানের নেতৃত্বে ভারতের ৩৫ জন মুসলিম নেতা সিমলায় ভাইসরয় মিন্টোর সাথে দেখা করে মুসলমানদের পক্ষ থেকে কিছু সুনির্দিষ্ট দাবি পেশ করেন। অন্যতম দাবি ছিল ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা। হিন্দুদের চক্রান্তে বঙ্গভঙ্গ রদের পর ১৯১২ সালের ৩১ জানুয়ারি ভারতের বড় লাট নবাবকে সান্ত্বনা দেয়ার জন্য ঢাকায় আসেন এবং বঙ্গভঙ্গ রদের ক্ষতিপূরণস্বরূপ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আশ্বাস দেন। কিন্তু অন্যান্য হিন্দু নেতার সাথে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এ আশ্বাসেরও বিরোধিতা করেন। ১৯১২ সালের ২৮ মার্চ গড়ের মাঠে ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে হিন্দুরা প্রতিবাদ সভা ডাকে। সভায় সভাপতিত্ব করেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কারণ তিনি ছিলেন জমিদার।’

ওই বইতে আরো উল্লেখ রয়েছে যে, ‘আশ্চর্যের বিষয়, এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতার মিছিলে শরিক হয়েছিলেন মানবতার কবি দাবিদার রবীন্দ্রনাথ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দীর্ঘদিন পরও হিন্দুরা এটিকে ‘মক্কা বিশ্ববিদ্যালয়’ বলে ব্যঙ্গোক্তি করত। এই সূত্রে পশ্চিম বাংলার হিন্দু বুদ্ধিজীবীদের আরো একটি কথা স্মরণযোগ্য, তা হলো- ‘পূর্ব বাংলার মুসলমানদের কালচার নেই। এদের কালচার হচ্ছে এগ্রিকালচার। এমনি পটভূমিতে ১৯১২ সালের ৩ ও ৪ মার্চ নবাব সলিমুল্লাহের সভাপতিত্বে কলকাতায় অনুষ্ঠিত হয় নিখিল ভারত মুসলিম লীগের অধিবেশন। এ অধিবেশনে সভাপতির ভাষণে নবাব সলিমুল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতাকারীদের উদ্দেশে চূড়ান্ত সতর্কবাণী উচ্চারণ করেন। অনেকের মতো নবাবের অকাল মৃত্যুর কারণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি এবং ওই সতর্কবাণী। মৃত্যু সম্পর্কে নবাবের দুধমাতা (নবাবের মৃত্যুর পরও অনেক দিন বেঁচে ছিলেন) এবং পুরনো ঢাকার কাদের সর্দারের উদ্ধৃতি দিয়ে ইতিহাসবিদ ও গবেষক কবি ফারুক মাহমুদ এ গ্রন্থাকারকে বলেছিলেন, ‘চক্রান্তের ফলে ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা নিয়ে বড় লাটের সাথে নবাবের মতবিরোধ দেখা দেয় এবং উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। একপর্যায়ে বড়লাট নবাবকে ধমক দেন। নবাবের সাথে সব সময় একটি ছড়ি থাকত। সে ছড়ি দিয়ে নবাব বড় লাটের টেবিলে আঘাত করেন। এ নিয়ে চরম বাদানুবাদ শুরু হয়। একপর্যায়ে বড় লাটের ইঙ্গিতে তার দেহরক্ষী নবাবকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন এবং গুরুতর আহত অবস্থায় নিশ্ছিদ্র প্রহরায় হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানেই তিনি প্রাণ হারান। বড় লাট জনসাধারণের কাছে নবাবের ‘স্বাভাবিক মৃত্যু’ প্রমাণ করার জন্য কড়া সামরিক প্রহরায় নবাবের লাশ তার কলকাতার বাসভবনে নিয়ে যান এবং প্রচার করেন ‘হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে নবাবের মৃত্যু হয়েছে।’ পরবর্তীতে কড়া সামরিক প্রহরায় নবাবের লাশ ঢাকায় আনা হয়। তার আত্মীয়-স্বজনকেও লাশ দেখতে দেয়া হয়নি। সামরিক প্রহরায় বেগমবাজারে তাকে দাফন করা হয়। শোনা যায়, দাফন করার পরও বহুদিন নবাবের কবরস্থানে সামরিক প্রহরা বিদ্যমান ছিল (ইতিহাসের নিরিখে রবীন্দ্র-নজরুল চরিত, পৃষ্ঠা ২৩০-২৩২)।’

পূর্ববঙ্গের উন্নয়ন তথা বঙ্গভঙ্গ সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের ভূমিকা নিয়ে ড. নুরুল ইসলাম মঞ্জুর প্রণীত ‘শতবর্ষ পরে ফিরে দেখা ইতিহাস : বঙ্গভঙ্গ ও মুসলীম লীগ’ বইতে উল্লেখ করেন যে, ‘১৯০৫ সালের ১৬ অক্টোবর কার্যকর হওয়ার দিন থেকে কলকাতায় হিন্দু উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণী বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে নানামুখী কর্মসূচি গ্রহণ করে। এই সময়ে এই আন্দোলনের পুরোভাগে এসে দাঁড়ান কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। রবীন্দ্রনাথ তখন কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। সামাজিক মর্যাদায় জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবার কলকাতা তথা বাংলার হিন্দু উচ্চ ও মধ্যবিত্তের সংস্কৃতির জগতের প্রধান পাদপীঠ। অর্থনৈতিকভাবে এই পরিবার জমিদারকুলের শিরোমণি। ফলে খুবই স্বাভাবিকভাবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবস্থান ছিল কলকাতাকেন্দ্রিক হিন্দু সংস্কৃতির নেতৃত্বের আসনে। সামাজিক শ্রেণিগত অবস্থানের কারণেই রবীন্দ্রনাথ ঝাঁপিয়ে পড়েন বঙ্গভঙ্গবিরোধী তথা বাঙালি মুসলিমবিরোধী আন্দোলনে। এরই চরম বহিঃপ্রকাশ ‘শিবাজী উৎসব’ কবিতা রচনা ও প্রকাশ পৃষ্ঠা-৫২)।’

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ পারিবারিক সূত্রে ছিলেন পূর্ববঙ্গের বর্তমান কুষ্টিয়া জেলার জমিদার। খাজনা আদায়ে প্রজাদের প্রতি নিষ্ঠুর না হওয়াসহ খাজনার পরিমাণ সহনীয় রাখা এবং বৃদ্ধি না করার জন্য সাহিত্যিক মীর মশাররফ হোসেন এবং লালন শাহ রবীন্দ্রনাথের পিতাকে অনুরোধ করেছিলেন বলেও ইতিহাসে সাক্ষ্যপ্রমাণাদি পাওয়া যায়। বাংলাদেশের জন্য রবীন্দ্রনাথ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। কারণ বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত তার রচিত। জাতীয় সঙ্গীতে ঐতিহ্যবাহী ভাষা আন্দোলন, পাকিস্তানিদের অর্থনৈতিক বৈষম্য এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রতিফলন সংযোজিত হলে তা আরো আবেগপূর্ণ হতো, এটা আমার একান্তই নিজস্ব মতামত। প্রতি বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বাংলাদেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন সংগঠন রবীন্দ্রনাথের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী যথাযথ মর্যাদার সাথে পালন করে আসছে। ‘রবীন্দ্র ভবন’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন। এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পেছনে একদিকে ধনবাড়ির জমিদার নওয়াব আলী চৌধুরী এবং করটিয়ার ওয়াজেদ আলী খান পন্নীর (চাঁদ মিয়া) অর্থ, অন্য দিকে নবাব সলিমুল্লাহর জমি এবং শেরে বাংলা এ কে এম ফজলুল হকের রাজনৈতিক প্রভাব ছিল মূল শক্তি। কিন্তু তাদের স্মরণে কোনো অনুষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় না। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তা নবীন প্রজন্ম জানে না বা জানানো হচ্ছে না।

রবীন্দ্রনাথ একজন অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সৃষ্টির ব্যাপারে তার নামে কোনো বিতর্ক হোক তা কোনো কারণেই মেনে নেয়া যায় না। কিন্তু এ বিতর্ক নিরসন করা যাদের দায়িত্ব তারাও এ মর্মে সুনির্দিষ্ট ও অকাট্য তথ্য জাতির সামনে উপস্থাপন করতে পারেনি। তবে এ বিতর্কের অবসান হওয়া দরকার।

অন্য দিকে বাংলা একাডেমির মতো জাতীয় প্রতিষ্ঠান সর্বজন গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে। কারণ এটা আর সার্বজনীন মুক্তচিন্তার ধারক নয়, বরং সরকারের করায়ত্ত অনির্বাচিত কমিটি দ্বারা পরিচালিত। এ কারণেই অবাঞ্ছিত প্রভাবমুক্ত হয়ে মুক্তচিন্তার কাজ করা একাডেমির পক্ষে সম্ভব নয়। যা হোক, বিতর্কটির অবসানের জন্য ইতিহাসবিদ গবেষকসহ বিভিন্ন উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এগিয়ে আসা জরুরি। ঐতিহ্যবাহী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এগিয়ে আসা দরকার। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিজেরাই মহলবিশেষে মদদপুষ্ট, ফলে তাদের পক্ষে এ দায়িত্ব নেয়া সম্ভব হবে কি?

লেখক : রাজনীতিক, কলামিস্ট ও আইনজীবী (অ্যাপিলেট ডিভিশন)
E-mail: taimuralamkhandaker@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement
ঢাবির কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটে প্রথম হয়েছেন যারা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর আশ্বাসে আন্দোলন স্থগিত ইন্টার্ন চিকিৎসকদের নিজ দেশে ৫ বছর পর ফিরল দিপক চট্টগ্রামে ৬ কিশোর গ্যাংয়ের ৩৩ সদস্য আটক শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের জন্য সংগঠন মজবুত করতে হবে : শামসুল ইসলাম ইউরো ২০২৪’কে সামনে রেখে দল নির্বাচনে বিপাকে সাউথগেট ভারতীয় পণ্য বর্জনকে যে কারণে ন্যায়সঙ্গত বললেন রিজভী মাকে ভরণ-পোষণ না দেয়ায় শিক্ষক ছেলে গ্রেফতার প্রথম বাংলাদেশী আম্পায়ার হিসেবে আইসিসির এলিট প্যানেলে সৈকত ঢাবির সব ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ নিরাপত্তা-বিষয়ক আলোচনা করতে উত্তর কোরিয়ায় রুশ গোয়েন্দা প্রধান

সকল