‘ঋণফাঁদে’র গল্প মোকাবেলার মাহাথির-পথ
- গৌতম দাস
- ২৭ এপ্রিল ২০১৯, ২০:৩৬
![](https://www.dailynayadiganta.com/resources/img/article/201904/405878_179.jpg)
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ডাক্তার মাহাথির মোহাম্মদ, বাংলাদেশে তাকে চেনেন না এমন লোক খুব কমই আছে। অবশ্য নিজ স্বার্থে কেউ কেউ তার নাম মুখে নিয়ে নিজের আকামের পক্ষের সাফাই ঢাল হিসেবে তাকে ব্যবহার করে থাকে। মালয়েশিয়ার টানা পাঁচবারের প্রধানমন্ত্রী আর ১৯৮১-২০০৩ সাল, এই ২২ বছরের সক্রিয় রাজনীতিবিদ তিনি। তার শাসনকালে প্রধান সাফল্য মনে করা হয়, মালয়েশিয়ার অর্থনীতিকে তিনি বিপুল উঁচু স্তরে উঠিয়ে দিয়েছিলেন। আবার তিনিই এমন রাজনীতিবিদ যার রাজনৈতিক জীবনের প্রথমপর্যায়ে ষাটের দশকের শেষভাগে তারই লেখা একটা বই- তারই দলের সরকার এর প্রকাশনা ও বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। আর তাকে রাজনীতি ও দল থেকে দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছিল। এগুলো ১৯৭২ সালের আগের ঘটনা। এর পর থেকে তার রাজনৈতিক জীবনের কালো দিন কেটে যায়, তাকে আর পেছন ফিরে দেখতে হয়নি।
এ সময়কালে এক দিকে তার পরিচালিত সরকারের অর্থনৈতিক সাফল্য যেমন সত্য, তেমনি অন্য দিকে তিনিই ১৯৮৭ সালে ‘ইন্টারনাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট’ নামে কালো আইন পাস ও আরোপ করে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার কেড়ে নিয়েছিলেন। আজকের দিনে তিনি আবার তার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের সঙ্গী আনোয়ার ইব্রাহিমকে জোটসঙ্গী করে এখন ক্ষমতায়; কিন্তু সেকালে ওই কালো আইন দিয়েই আনোয়ার ইব্রাহিমসহ বহু বিরোধী নেতা ও অন্যান্য রাজনৈতিক অ্যাক্টিভিস্টকে বন্দী করে রেখেছিলেন। এতে মোট চারটি দৈনিক পত্রিকা বন্ধ এবং মোট প্রায় ১০৬ জন গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতাকে গ্রেফতার করেছিলেন। এ ছাড়া সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের ক্ষমতা খর্ব এবং কাউকে কাউকে পদত্যাগ করতে বাধ্যও তিনিই করেছিলেন। এভাবে মানবাধিকার বেপরোয়া কেড়ে নেয়াতে আমেরিকাসহ দেশী-বিদেশী অনেকের ভাষায় ও চোখে তিনি ‘স্বৈরশাসক ও নিপীড়ক’ হয়ে উঠেছিলেন। তার রাজনৈতিক জীবনের এই বৈপরীত্যের কারণে একালের অনেক স্বৈরশাসক মাহাথির মোহাম্মদের নামের আড়ালে নিজেদের অপকর্ম লুকানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে থাকেন।
২০০৩ সালে মাহাথির রাজনীতি থেকে অবসরে চলে গেলেও তিনি মালয়েশিয়ার নির্বাচনে (গত ২০১৮ সালের মে মাসে) কোয়ালিশন জোটে বিজয়ী হয়ে ফিরে এসেছেন এবং ৯৩ বছর বয়সে এখন আবার প্রধানমন্ত্রী। মাহাথিরসহ তার জোটসঙ্গীদের দাবি, এই জোট গড়ার মূল কারণ নাজিব রাজাকের অপশাসন। এর আগের প্রধানমন্ত্রী রাজাকের আমলে কুশাসন ও ব্যাপক লুটপাট থেকে মালয়েশিয়াকে বাঁচাতে জেলে বন্দী আনোয়ার ইব্রাহিমের সাথেই জোটবদ্ধ হয়ে মাহাথির আবার নির্বাচনে নামেন এবং বিজয়ী হয়ে জোটের বোঝাপড়া অনুসারে, এখন প্রথম দুই-তিন বছরের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় আছেন।
আমাদের আজকের আলোচনার বাকি অর্ধেক অংশের প্রসঙ্গ চীন। এটাকে বলা যেতে পারে বেল্ট-রোড মহাপ্রকল্পের চীন অথবা নতুন করে চলতি চীন-মালয়েশিয়া গভীর সম্পর্ক স্থাপন কেন সম্ভব হলো।
আগের প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের শাসনের বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ হলো, ব্যাপক দুর্নীতি ও লুটপাট। আর এই দুর্নীতির সবচেয়ে বড় অংশ হলো 1MDB প্রকল্প। বলা হয়েছিল, এটা আসলে মালয়েশিয়া সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের মালিকানাধীন প্রকল্প, লক্ষ্য ফান্ড সংগ্রহ; কিন্তু বাস্তবে এটা সাত দেশের বিভিন্ন কোম্পানির সাথে মিলে দুর্নীতি, মানিলন্ডারিং, ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে অর্থ নিয়ে যাওয়াসহ বহু অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারির এক প্রকল্প হিসেবে হাজির হয়। মোট প্রায় সাত বিলিয়ন ডলার এখানে ‘নয়ছয়’ হয়েছে। এ ছাড়া, আমেরিকার ওয়াল স্ট্রিটের শীর্ষ বিনিয়োগ কোম্পানি ‘গোল্ডম্যান স্যাক্স’ এতে জড়িত বলে আমেরিকার আইন বিভাগ অভিযোগ তদন্তে নেমেছে, মামলা করেছে। ওদিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাজাক ও তার স্ত্রীর অ্যাকাউন্টে এই প্রকল্প থেকে প্রায় বিলিয়ন ডলার গেছে, এভাবে এক মহাকেলেঙ্কারির দুর্নীতি মামলায় রাজাক ও তার স্ত্রী এখন জেলে।
এ ছাড়াও 1MDB প্রকল্পের বাইরে চীনের সাথে নেয়া বিভিন্ন ব্যয়বহুল প্রকল্পে মালয়েশিয়াকে জড়িয়ে ফেলা হয়েছে বলে মাহাথির জোটের অভিযোগ। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত অভিযোগটি হলো, চীনের সাথে নেয়া ‘ইস্ট কোস্ট রেল লিঙ্ক প্রকল্প’ (East Coast Rail Link, ECRL)। প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলারের এটা বড় প্রকল্প এবং এটা চীনের বেল্ট-রোড মহাপ্রকল্পের অংশ। মালয়েশিয়ার পূর্ব-পশ্চিম দু’দিকেই সমুদ্রসীমানা। এই প্রকল্প পূর্বের কেলানতান বন্দর থেকে উপকূল বরাবর নেমে পশ্চিমে গিয়ে সেখানকার ক্লাঙ্গ বন্দরের সাথে যুক্ত হবে- এমন রেল যোগাযোগ অবকাঠামো গড়ে তোলার। নাজিব সরকার বিপুল ব্যয় করে এই প্রকল্প নিয়েছিল ‘ভালো কমিশন’ পাওয়ার স্বার্থে। তাই এত বড় বিনিয়োগের ভার জাতীয় অর্থনীতি বইতে পারবে কি না সে দিক উপেক্ষা করেছিল।
এই প্রকল্প নিয়ে মাহাথিরের জনসমক্ষে বলা প্রধান যুক্তি হলো, ‘আমার দেশ এত বড় বিনিয়োগের ভার সইতে পারবে না, অর্থনীতিতে চাপ সৃষ্টি করবে।’ অর্থাৎ তিনি ভুল বা অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প- এমন বলছেন না। এ দিকে চীনা কোম্পানির হাতে প্রকল্পের কাজ অনেক আগেই শুরু হয়ে গিয়েছিল বলে, মাহাথির প্রধানমন্ত্রী হয়েই চীনের সাথে কথা বলে প্রকল্পের কাজ স্থগিত করিয়ে এ নিয়ে আলোচনা শুরু করেছিলেন।
একালে এশিয়ার প্রায় সব দেশেই ব্যাপক হারে অবকাঠামো খাতে চীনা বিনিয়োগে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। এসব প্রকল্পের অনেকগুলোই আবার চীনা ‘বেল্ট-রোড’ মহাপ্রকল্পে যুক্ত হওয়ার কথা। তাই স্বভাবতই এসব প্রকল্পের চরম বিরোধী অবস্থান নিয়েছে ট্রাম্পের আমেরিকা। সাথে কিছু থিংক-ট্যাংক প্রপাগান্ডাও শুরু করেছে। সত্য-মিথ্যা মিলিয়ে এমনই এক প্রপাগান্ডা হলো ‘ঋণের ফাঁদ’।
দাবি হলো, চীন বিভিন্ন দেশকে ‘ঋণের ফাঁদে’ ফেলে নিজের কব্জায় নিচ্ছে।’ এমন অভিযোগ সত্তর দশকের এশিয়ায় বিশ্বব্যাংকের প্রথম আগমনের সময় থেকে বিশ্বব্যাংকের, মানে আমেরিকার বিরুদ্ধেও ছিল। মজার বিষয় হলো, আমেরিকা সেই অভিযোগই এখন চীনের বিরুদ্ধে আনছে। এটা চীনবিরোধী মোক্ষম প্রপাগান্ডা বলে তা ভারতের (বিশেষ করে মিডিয়ার) কাছেও খুবই লোভনীয়। নিয়মিতভাবেই ভারতের মিডিয়া এই ফাঁদের প্রপাগান্ডায় মেতে আছে। তামাশার ব্যাপার হলো, খোদ ভারতেও চীনা বিনিয়োগের অর্থে নেয়া এমন অবকাঠামো প্রকল্প কম নয়। এমনকি চীনা ‘ব্রিকস’ উদ্যোগে নেয়া ‘নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক’ (যা বিশ্বব্যাংকের কাঠামোতে চলে) নামে একটা অবকাঠামো ব্যাংক আছে- যার বিনিয়োগ প্রকল্পের একমাত্র খাতক হলো ভারত; কিন্তু ভারতের জন্য তা ‘ঋণের ফাঁদ’ এমন কোনো অভিযোগ নেই ভারতে এসব চীনা প্রকল্পের বিরুদ্ধে। এর মানে, অন্তত বোঝা গেল যে, চীনা ‘ঋণফাঁদের’ খারাপ স্বভাব চরিত্র ভারতে এলে ভালো হয়ে যায়। হয়তো থমকে যায়, তাই আর কাজ করে না।
তবে লক্ষণীয় হলো, এশিয়ায় শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ বা মালয়েশিয়ায়- যেখানে চীনা অবকাঠামো প্রকল্প নেয়া হয়েছে- সরকার বদলের সাথে সাথে সব দেশেই এর বিরুদ্ধে আপত্তি অভিযোগ এসেছে। এসব আপত্তি নিয়ে নতুন সরকারগুলো চীনা সরকারের সাথে কোনো সঙ্ঘাতের সম্পর্ক ছাড়াই আপস আলাপ আলোচনা সব ক্ষেত্রে করতে পারে। অর্থাৎ সে সুযোগ ছিল এবং তা করা হয়েছে বোঝা গেছে। আর এই আলোচনা শেষ হয়েছে পুনরায় নেগোসিয়েশন ও আগের চুক্তিটা সংশোধিত ও নবায়ন করার ভেতর দিয়ে। কোথাও কোনো প্রকল্প অমীমাংসিত বিতর্কে আটকে যায়নি। এক বছরের মধ্যে নিরসন করা হয়েছে মানে অনির্দিষ্টকালের জন্য ঝুলে যায়নি এবং এটা সব দেশের ক্ষেত্রেই হয়েছে। চীন কোনো ‘আইন’ দেখায় নাই; ক্ষতিপূরণ দাবি, জোরাজুরি বা চাপ দিচ্ছে এমন অভিযোগ কোথাও- এমনকি আমেরিকান প্রপাগান্ডার ভেতরেও নেই। অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, প্রকল্প নেয়ার সময় এশিয়ার সরকারগুলোকে প্রকল্প থেকে বেনামে কমিশন দেয়া হয়েছে। আর একালের বিশ্বব্যাংকের নেয়া প্রকল্পের সাথে তুলনা করলে বলা যায়, এ ব্যাপারে চীনা প্রকল্প অনেক অস্বচ্ছ এবং বিশ্বব্যাংকের স্ট্যান্ডার্ড মেনে চলা যেন ওর লক্ষ্যই নয়।
যা হোক, মাহাথিরের ক্ষেত্রেও এবার তার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার তিন মাসের মধ্যে (আগস্ট ২০১৮) চীন সফরে প্রকল্প নিয়ে তার আপত্তি একইভাবে চীন আমলে নিয়েছিল। সফর থেকে ফিরে তিনি বলেছিলেন, ‘এই প্রকল্পের খরচ বেশি, যা আমাদের বইবার অর্থনৈতিক সামর্থ্য নেই, তাই এখনকার মতো এটা বাতিল করতে হচ্ছে।’ তবে ‘চীনের সাথে আমাদের সম্পর্ক অটুট থাকবে, কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলা ছাড়াই আমরা এই সিদ্ধান্ত নিচ্ছি।’ পরে এ বছর জানুয়ারিতে মন্ত্রিসভা এই প্রকল্প বাতিলের সিদ্ধান্ত নিলে মালয়েশিয়ার অর্থমন্ত্রীর বরাতে রয়টার্স জানাচ্ছে, অর্থমন্ত্রীও একই কারণ জানিয়েছেন। এ ছাড়া প্রকল্প বাতিলের জন্য ক্ষতিপূরণ কত দিতে হবে এ নিয়েও ঠিকাদারের সাথে কথা চলছে বলে জানিয়েছিলেন।
এই সিদ্ধান্তে সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছিল ভারতসহ আমেরিকান প্রপাগান্ডিস্টরা। চীনা প্রকল্প নিয়ে কতগুলো দেশ পরে সরকার বদলের সাথে প্রকল্প বাতিল বা সংশোধিত চুক্তি করেছে, এই উদাহরণের তালিকায় মালয়েশিয়াকে যুক্ত করে আরেকটা দেশ হিসেবে দেখিয়ে কথিত চীনা ‘ঋণের ফাঁদের’ ভয়াবহতা তুলে ধরতে শুরু করেছিল তারা। এর পর থেকে প্রপাগান্ডা জোরে শোরে চলছিল চলতি এপ্রিল মাস পর্যন্ত।
কিন্তু গত ১২ এপ্রিল এই প্রসঙ্গে হংকংয়ের এক মিডিয়া লিখছে, ১২ এপ্রিল মালয়েশিয়া জানিয়েছে যে, বাতিল হয়ে যাওয়া রেল প্রজেক্ট নিয়ে তারা আবার এক নতুন চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। আরো লিখছে, গত কয়েক মাসে কিছু ভুল কথা আর মাহাথিরের দুই ধরনের বক্তব্যের পরে এই চুক্তি আবার স্বাক্ষর হলো।’
বলার অপেক্ষা রাখে না, এবার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার মতো অবস্থা হলো প্রপাগান্ডিস্টদের। কিন্তু কেন এমন ঘটল? কেন বাতিল চীনা রেল প্রকল্প মালয়েশিয়ায় আবার ‘জিন্দা’ হলো?
গরিবের অনাদরে পড়ে থাকা খাদ্য পামবীজ বা তা থেকে পিষে তৈরি করা পামঅয়েলকে মাহাথিরের মালয়েশিয়া দুনিয়াজুড়ে ভোজ্যতেলের প্রধান উৎস হিসেবে হাজির করেছিল। তা আমেরিকান সয়াবিনের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। এর ছাঁকনি টেকনোলজিসহ তেল বের করার পুরা প্রক্রিয়ায় ব্যাপক টেকনিক্যাল অগ্রগতি হলে ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনসহ ওই অঞ্চলই ভোজ্যতেলের প্রধান সরবরাহকারী এলাকা হয়ে দাঁড়ায়। বাংলাদেশেও সয়াবিন নামে যা বিক্রি হয় এর বেশির ভাগই আসলে রিফাইনড পামঅয়েল। এগুলো আমরা কমবেশি সবাই জানি। আমেরিকার সয়াবিনের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সব সময় আন্তর্জাতিক বাজারে উপস্থিত থাকতে হয় মালয়েশিয়াসহ উৎপাদক দেশগুলোকে। এভাবে ইউরোপের বাজারেও একটা বড় মার্কেটশেয়ার তৈরি করে ফেলেছিল মালয়েশিয়া; কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে চলা কানাঘুষা এবার বোঝা গেল সত্যি। ইউরোপীয় ইউনিয়ন আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়, ‘পামঅয়েল চাষাবাদের কারণে ব্যাপকভাবে বনজঙ্গল ধ্বংস ঠেকাতে তারা ২০৩০ সালের মধ্যে পামঅয়েল ব্যবহার একেবারে বন্ধ করে দেবে।’
খবরটা শুনে মাহাথির স্বভাবতই খুবই হতাশ হয়ে পড়েন। তিনি এটাকে ইইউ’র বিবাদ-সঙ্ঘাত লাগিয়ে চলার মনোভাব হিসেবে দেখে বলেন, আমরা পামঅয়েল বিপ্লব ঘটানোতে যেখানে ‘এটা এখন চকোলেট থেকে লিপস্টিকসহ প্রসাধনী ও সাবানের প্রধান কাঁচামাল হয়ে গেছে- তখন ইইউ নিজের পণ্য, রাইসরিষার তেলের বাজার সংরক্ষণের জন্য এই দুশমনি’ শুরু করেছে। তিনি আরো বলেন, ‘বাণিজ্যযুদ্ধ এমন ভালো জিনিস নয় যে, আমরা তা প্রমোট করতে চাই। কিন্তু তা বলে বড়লোকের দেশের গরিব দেশের মানুষকে আরো গরিবি হালে ফেলার চেষ্টা- এটা মারাত্মক অবিচার।’ এই মারাত্মক অবিচারের প্রশ্ন তুলতে পারা- এটাই মাহাথির যে আসল নেতা- এর পরিচয়। তিনি ইইউ’র বাজার দখল করার দিকটাকে সামনে আনলেন।
গত জানুয়ারি মাসে রেল লিঙ্ক প্রকল্প বাতিল করার পর থেকে নানা প্রসঙ্গে মাহাথির চীনের নেতৃত্ব নিয়ে নিজে অনেক সমালোচনামুখর। তবে ইতিবাচক ভাবনাগুলো প্রকাশ করে যাচ্ছিলেন। বিশেষ করে আমেরিকার নেতৃত্বে কথিত ‘ঋণের ফাঁদের’ কথা তোলা অথবা চীন নিজের হুয়াওয়ে ফাইভ-জি মোবাইল টেকনোলজি দিয়ে গোয়েন্দাগিরি করছে ইত্যাদি প্রপাগান্ডা প্রসঙ্গে একপর্যায়ে তিনি পাশ্চাত্যবিরোধী অবস্থান নিয়ে দাঁড়িয়ে যান। তিনি সরাসরি স্পষ্ট করে বলে বসেন, ‘ধূর্ত আমেরিকানদের মোকাবেলা করতে ধনী চীনাদের পক্ষ নেবো।’ শুধু তাই নয়, চীন প্রসঙ্গে তার অবস্থান আরো স্পষ্ট করতে তিনি বলেছেন, ‘উদীয়মান শক্তি চীন থেকে ভয়ে সিঁটিয়ে যাওয়ার চেয়ে ওদের সাথে কাজের সম্পর্ক গড়ে তোলার একটা ভালো উপায় বের করতে হবে আমাকে।’ আবার বলছেন, ‘আমরা যখন থেকে চীনের সাথে সম্পর্ক পাতিয়েছিলাম সে সময়ের গরিব চীনের দিকে আমরা ভীত চোখে তাকাতাম। আজ চীন বড়লোক, এখনো আমরা ভীত। এটা চলবে না। আমার মনে হয়, চীনের সাথে সম্পর্ক পাতানোর একটা ভালো উপায় আমাদের বের করতে হবে।’
মাহাথিরের সে উপায় হলো, চীনের সাথে বাজার শরিক করার সম্পর্ক ও বুঝাবুঝি তৈরি করা। এই ফর্মুলায় সহজেই তিনি বিভিন্ন চুক্তিতে উপনীত হয়ে গেলেন। তাতে এখন থেকে আমেরিকান সয়াবিন নয়, বরং চীন হবে মালয়েশিয়ান পামঅয়েলের একচেটিয়া ভোক্তা। সেই খুশিতে মাহাথির এবার সেই পরিত্যক্ত চীনা রেল লিঙ্ক প্রকল্প- এতে বিভিন্ন জায়গায় সংশোধনী এনে হলেও আবার চীনের সাথেই এ নিয়ে চুক্তি করে ফেলেছেন।
শুধু তাই নয়, গত ২৫ এপ্রিল চীনে দ্বিতীয় বেল্ট-রোড সামিট মানে, বেল্ট-রোড ফোরামের সম্মেলন শুরু হয়েছে। আড়ম্বরের সাথে মাহাথির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ওই সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন। সেখানে তিন-চারজন অতিথি-বক্তার একজনও তিনি।
কারো প্রপাগান্ডায় ভয় পাওয়া কোনো কাজের কথা নয়; বরং নিজ বুদ্ধিতে চীনের সাথে চলার উপায় বের করে আগানো শিখতে চাইলে মাহাথির আমাদের সামনে শিক্ষণীয় হয়ে থাকলেন। আমরা কী এই শিক্ষা চর্চার জন্য যোগ্য হতে পারব না?
লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা