তারুণ্যের হাত ধরে দ্বিতীয় পর্বে
- জসিম উদ্দিন রানা
- ২০ জুন ২০২৪, ০০:০৬
নতুন ক্যাপ্টেন, তারুণ্যনির্ভর দল। সেই সাথে নির্বাচক প্যানেলও পরিবর্তিত। সব মিলিয়ে যেন নতুন এক বাংলাদেশকে দেখার অপেক্ষায় ছিল ভক্ত-সমর্থকরা। কিন্তু শ্রীলঙ্কার পর জিম্বাবুয়ের সাথে বাজে পারফরম্যান্স এবং অভিবাসীদের নিয়ে গড়া দল আনকোরা যুক্তরাষ্ট্রের সাথেও সিরিজ হারে মুখ থুবড়ে পড়ে টাইগাররা। আর বিশ্ব ক্রিকেটের এমন একটি বড় টুর্নামেন্টের আগে টাইগারদের এমন পারফরম্যান্স যেন শঙ্কায় ফেলে দিয়েছিল ভক্ত-সমর্থকদের। অনেকে এটাও ভেবে নিয়েছিলেন যে, এবারো আগের মতোই গ্রুপ পর্ব থেকেই বাদ পড়বে বাংলাদেশ। কিন্তু সেটি হতে দেয়নি তরুণ প্রজন্ম। সাথে অভিজ্ঞ সাকিব আল হাসান ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদে অবশেষে দ্বিতীয় রাউন্ডে বাংলাদেশ।
৪ ম্যাচে ৩ জয় ও ১ হারে ৬ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে থেকে সুপার এইটে খেলবে বাংলাদেশ। নেপাল ছাড়াও গ্রুপ পর্বে শ্রীলঙ্কা ও নেদারল্যান্ডসকে হারিয়েছিলো টাইগাররা। এই প্রথম টি-২০ বিশ্বকাপের এক আসরে সর্বোচ্চ তিন ম্যাচ জয়ের নজির গড়ল বাংলাদেশ। সুপার এইটে অস্ট্রেলিয়া (আগামীকাল ২১ জুন), ভারত (২২ জুন) ও আফগানিস্তানের (২৫ জুন) বিপক্ষে খেলবে বাংলাদেশ।
একটা লম্বা সময় ধরে টি-২০তে বাংলাদেশের সাফল্য বলতে যেন কিছুই ছিল না। সেই ২০০৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত সব ক’টি টি-২০ বিশ্বকাপের আসরে বাংলাদেশ অংশ নিলেও কোনোটিতেই উঠতে পারেনি দ্বিতীয় রাউন্ডে। গত আট আসরের প্রতিটিতেই টাইগাররা বাদ পড়েছে গ্রুপ পর্ব থেকেই। বছর ঘুরে আবার সামনে এলো আরো একটি বিশ্বকাপ। যেখানে অংশ নিতে বেশ আটঘাট বেঁধেই চলতি বছরে প্রস্তুতিস্বরূপ শ্রীলঙ্কা সিরিজের মধ্য দিয়ে মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশ। তবে সেখানেও ধরাশায়ী টাইগাররা।
তবে একের পর এক বাজে পারফরম্যান্সের পরও দলের ওপর ভক্ত-সমর্থকদের আস্থা রাখতে বলেছিলেন টাইগার অধিনায়ক নাজমুল হাসান শান্ত। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সিরিজ হারের পরও শান্ত বলেছিলেন, বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ভালো করবে। আপনারা আস্থা রাখুন। একটি ব্যাপার লক্ষণীয় যে, শান্ত ব্যাট হাতে বাজে পারফর্ম করলেও অধিনায়ক হিসেবে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়েই নিজেদের বিশ্বকাপ মিশন শুরু করেছিল বাংলাদেশ। যেখানে সব আলোচনা-সমালোচনা পেরিয়ে লঙ্কানদের নাস্তানাবুদ করে দাপুটে জয় তুলে নিয়েছিল টাইগাররা। আর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এই জয়ের মধ্য দিয়ে টাইগাররা এক দিকে যেমন নিজেদের সামর্থ্যরে জানান দিয়েছিল, ঠিক অন্য দিকে ভক্ত-সমর্থকরা নতুন করে আশায় বুক বেঁধেছিল। তবে ভাগ্যের ফেরে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে আবারো যেন ব্যাকফুটে চলে গেছিল বাংলাদেশ। বিতর্কিত আম্পায়ারিংয়ের কারণে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশকে চার রানে হারতে হয়েছিল এই ম্যাচে।
এত কিছুর পরও হাল ছাড়েনি বাংলাদেশ। নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে আগে ব্যাট করে ১৫৯ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়ে তুলেছিল টাইগার ব্যাটাররা। জবাবে ব্যাট করতে নেমে শুরুতে বেশ ভালোভাবেই এগোচ্ছিল ডাচরা। তরুণ লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেনের এক ওভারে মোড় ঘুরে যায় ম্যাচের। পরপর দুই উইকেট নিয়ে ডাচদের ব্যাটিং লাইনআপ চুরমার করে দেয়। সে ধারাবাহিকতায় ২৫ রানের জয় পায় টাইগাররা।
এরপর শেষ ম্যাচে নেপালের বিপক্ষে প্রথমে ব্যাট করে ১৯.৩ ওভারে মাত্র ১০৬ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। এরপর ১৯.২ ওভারে মাত্র ৮৫ রানে নেপালকে অলআউট করে দিয়ে শান্তর আস্থার প্রতিদান দেন বাংলাদেশের বোলাররা। তানজিম হাসান সাকিব ৪টি ও মোস্তাফিজ ৩টি করে উইকেট নেন। দলের বোলারদের দারুণ পারফরম্যান্সে সুপার এইটের টিকিট পায় টাইগাররা।
জয়ের হিসেবে মিলানোর কারণ প্রথমত, তারুণ্য নির্ভরতা। বাংলাদেশ ক্রিকেট দল এবার তারুণ্য নির্ভর এক দল। যেখানে যেমন রয়েছে তানজিদ তামিম ও তৌহিদ হৃদয়দের মতো ব্যাটাররা, তেমন রয়েছে রিশাদ হোসেন ও তানজিম সাকিবদের মতো প্রতিভাবান বোলাররা। আর এই তরুণদের ওপর নির্ভর করেই এবারের বিশ্বকাপে সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ।
দ্বিতীয়ত, অভিজ্ঞতার কাণ্ডারি সাকিব ও মাহমুদুল্লাহ। বাংলাদেশ ক্রিকেটের দুই রতœ সাকিব আল হাসান ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। দীর্ঘ সময় ধরে ব্যাটে-বলে পারফর্ম করে বাংলাদেশ দলকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। আর এই দুই রতেœর প্রভাব রয়েছে এবারের বিশ্বকাপেও। টপ অর্ডারদের ব্যর্থতার পর প্রতিনিয়ত ব্যাট হাতে এক দিকে যেমন হাল ধরছেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, ঠিক তেমনি অলরাউন্ডিং পারফরম্যান্সের দলকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন সাকিব।
তৃতীয়ত, ভারসাম্যপূর্ণ ক্রিকেট। বাংলাদেশ দল টি-২০তে বরাবরই নড়বড়ে অবস্থানে ছিল। এবারের বিশ্বকাপে তারুণ্যনির্ভর বাংলাদেশকে নতুনভাবে দেখা হচেছ। যেখানে বোলারদের নৈপুণ্যতা ছিল প্রশংসনীয়। যদিও ব্যাটিংয়ে এখনো স্বস্তি ফেরেনি। তারুণ্যনির্ভর বাংলাদেশ স্বপ্ন দেখাচ্ছে লাখো কোটি ভক্ত-সমর্থকদের।
সুপার এইটেও পারফরম্যান্সের ধারা বাংলাদেশ অব্যাহত রাখবে বলে বিশ্বাস শান্তর। ‘আমাদের সবই আছে। গত দুই-তিন বছরে কঠোর পরিশ্রম করেছে পেসাররা। এই ফরম্যাটে বোলিং অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি তারা ফর্ম ধরে রাখবে। আর ব্যাটাররা তাদের ফর্মে ফেরার জন্য কাজ করছে। বোলারদের ওপর ভরসা কমিয়ে ব্যাটারদের নিজ ধারায় ফিরতে হবে। তাহলেই মিলতে পারে সুপার এইটে সাকসেস।’
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা