১৮ মে ২০২৪, ০৪ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৯ জিলকদ ১৪৪৫
`


দেশকে বিশ্বকাপ স্বর্ণ দিতে চান উশুকারা

-

আন্তর্জাতিক উশু ইনভাইটেশনাল টুর্নামেন্টে দু’টি সিলভার ও চারটি ব্রোঞ্জ জয় করে বাংলাদেশের উশু খেলোয়াড়রা। মজার ব্যাপার হলো সাতজন প্রতিযোগী অংশ নিয়ে ছয়জনই পদক জিতে। তারা হলেন-৮৫ কেজিতে সুকান্ত রায়-৪৮ কেজিতে নয়ন শেখ-৬০ কেজিতে মিলন আলী-৫২ কেজিতে ইভা ইয়াসমিন দিশা-৫৬ কেজিতে শিখা খাতুন ও -৭৫ কেজিতে কচি রানী মণ্ডল। অংশ নেয়া আজিজুল হাকিম ছিলেন পদক বঞ্চিত। টিম অফিসিয়াল হিসেবে ছিলেন আবুল কালাম আজাদ এবং আনোয়ারুল রাসেল ছিলেন প্রশিক্ষক। ৩৬টি দেশের মধ্যে ১৫তম স্থান লাভ করে লাল-সবুজের উশু সৈনিকেরা। শুধু কি তাই! এ পদক জিতে বাংলাদেশ সুযোগ পায় ১০তম সানদা ওয়ার্ল্ড কাপ চ্যাম্পিয়নশিপে খেলার। যা হবে চলতি বছর ১১-২২ নভেম্বর অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে।
উশুর দু’টি ইভেন্ট। সানদা ও তাউলু। তাউলু ওয়ার্ল্ড কাপ হবে জাপানে। অর্থাভাবে ও স্পন্সরের অভাবে বাংলাদেশ সেিিটতে অংশ নেয়নি। গতকাল পদকজয়ীদের ফুলেল সংবর্ধনার পাশাপাশি ক্রেস্ট ও নগদ অর্থ দেয়া হয়। খেলোয়াড়দের ১০০ ডলার ও দুই কর্মকর্তাকে ২০০ ডলার। এ নিয়ে কারো কারো ক্ষোভও ছিল। পৃথিবীর সব জায়গায় সাধারণত খেলোয়াড়দেরই বেশি দেয়া হয়। এখানে উল্টো কেন ? সাধারণ সম্পাদক দুলাল হোসেন ভুল স্বীকার করে বলেন, ‘সবাইকে সমান দেয়ার চেষ্টা করব।’
২০১০ সালে সাউথ এশিয়ান গেমসে দু’টি স্বর্ণ দু’টি রুপা, ২০১৬ সালে সাঊথ এশিয়ান গেমসে পাঁচটি ব্রোঞ্জ, ২০১৯ সালে ইন্টারন্যাশনাল স্পোর্টস কাউন্সিল গেমসে ৮ স্বর্ণ, এক রুপা, ২০১৯ সালে ১৩তম সাউথ এশিয়ান গেমসে তিন সিলভার ১০ ব্রোঞ্জ, ২০২১ সালে এশিয়ান ট্রাডিশনাল উশু কম্পিটিশনে দুই সিলভার ১১ ব্রোঞ্জ, একই বছর আইডিব্লিউইউএফ উশু তাউলু কম্পিটিশনে দুই স্বর্ণ ৯ সিলভার ২৩ ব্রোঞ্জ, ২০২৩ সালে ১১তম এশিয়ান জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপে ৫ ব্রোঞ্জ পেয়ে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করে উশু খেলোয়াড়রা। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উশুর মোট প্রাপ্তি ১২ স্বর্ণ ১৭ সিলভার ও ৬০ ব্রোঞ্জপদক।
ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক দুলাল হোসেন জানান, ‘আমাদের যথেষ্ট প্রতিভা আছে। প্রয়োগের জন্য যেসব সুযোগ-সুবিধা দরকার। আমরা সেটি পাচ্ছি না। চীন আমাদের প্রশিক্ষক দিচ্ছে; কিন্তু আমরা কোথায় প্রাকটিস করব, সে ভেনুও অনিশ্চিত। নভেম্বরে হবে বিশ্বকাপ। পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা পেলে দেশকে স্বর্ণ উপহার দিতে পারবে উশু। আমন্ত্রিতরা শুধু আশাই দিয়ে যান, পাশে কেউ দাঁড়ান না। উশুর ভালো বন্ধু বলতে একমাত্র সাংবাদিকরাই।’
কচি রানী মণ্ডল ২০১২ সালে কুস্তি খেলতে গিয়ে ঘাড়ে ব্যথা পাওয়ায় খেলা থেকে দুরে থাকতে বলেছেন ডাক্তার। তিনি মানেননি জানালেন, ‘ডাক্তারের যেটা ভালো মনে করেছেন সেটি বলেছেন। আমি যেটা ভালো মনে করেছি তাই করেছি। কাবাডি খেলেছি। ২০১৩ সালে সন্তান হওয়ার পর উশুতে নাম লিখাই। আমার বাবা নেই। শ্বশুরের প্রেরণায় খেলাধুলা চালিয়ে যাচ্ছি। যত দিন পারফর্ম করব তত দিন খেলার ইচ্ছে।’
সিলভার পাওয়া সুকান্ত রায় বলেন, ‘মাত্র সাত দিনের ট্রেনিং। নিজস্ব ভেনু নেই। স্পন্সর পেলে, দীর্ঘমেয়াদে প্রশিক্ষণ পেলে অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারব।’ পুরস্কার নিয়ে তার ভাষ্য, ‘যাদের বিরুদ্ধে আমরা লড়েছি ইরান, ভারত, নেপাল তারা সরকার থেকে অনেক বেশি সাহায্য সহযোগিতা পায়। তবে আমাদের ফোকাস ওয়ার্ল্ড কাপে। আমাদের প্রয়োজন সঠিক পরিচর্যা এবং অনুশীলন।’
ব্রোঞ্জপদক পাওয়া শিখা এক সন্তানের জননী। স্বামি জিয়াও উশুর কোচ। কক্সবাজারে একটি অ্যাকাডেমিতে স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই কোচ। শিখা কয়েকবারের জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হলেও প্রথমবারের মতো পেলেন আন্তর্জাতিক পদক। জানালেন, ‘ভালো এবং উন্নত প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই। উশুকে খাটো করে দেখার কোনো অপশন নেই। আন্তর্জাতিক পদক বিবেচনায় সবার চেয়ে আমরা বরং এগিয়ে থাকবো। সুতরাং সরকার ও স্পন্সরের দিকে তাকিয়ে ছিলাম, আছি এবং থাকব।’ বাংলাদেশ উশু ফেডারেশনের অন্যতম সহযোগী ঢাকাস্থ চায়না দূতাবাস। খেলার সরঞ্জামাদি দিয়ে তারা উশু ফেডারেশনকে সহায়তা করেছে। এবার কোচ দিয়েও তারা সহায়তা করবে বলে জানিয়েছেন ফেডারেশনের সভাপতি আবদুস সোবহান গোলাপ, ‘বিশ্বকাপের প্রস্তুতির জন্য চায়না থেকে দুইজন কোচ আসবে। চায়না দূতাবাসের মাধ্যমে আমরা এই সহায়তা পাচ্ছি।’


আরো সংবাদ



premium cement