আমি কখনই বেকার থাকিনি : লাবু
- রফিকুল হায়দার ফরহাদ
- ০৫ মে ২০২৪, ০০:০৫
বাংলাদেশের প্রিমিয়ার ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন দলের কোচকে নিয়ে যত মাতামাতি ঠিক এর উল্টোটা জুনিয়র ডিভিশনের ক্ষেত্রে। হাল আমলের সিনিয়র ডিভিশন ফুটবলেও তাই। কয়জনই বা খবর রাখেন এই সব লিগের চ্যাম্পিয়ন কোচদের। তেমনই এক কোচ ইমতিয়াজ খান লাবু। ১৯৮৮ সাল থেকে কোচিং করা এই সাবেক ফুটবলারের হাত ধরেই এবারের এজিবি বসুন্ধরা বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগের শিরোপা জয় করা ইয়ংমেন্স ক্লাব ফকিরেরপুলের। এটি তার ক্যারিয়ারে দশম শিরোপা। এই পর্যন্ত ১৯-২০টি দলকে কখনো চ্যাম্পিয়ন কখনো রানার্সআপ করে ওপরের ডিভিশনে তুলেছি। বিপিএলে এখন বিদেশী কোচদেই দাপট। দেশী বেশ কয়েকজন নামীদামি কোচ ক্লাব হীন। তবে সিনিয়র ও জুনিয়র ডিভিশনে দুই-একজন বিদেশী কোচ মাঝে মধ্যে কাজ করলেও স্থানীয়দেরই আধিক্য। এর মধ্যে এই লাবুর কদরটা বেশি। ৬৪ বছরের এই কোচ জানান, অনেক সময়ই অনেক কোচ ক্লাব পান না। তবে আমি কখনই বেকার থাকিনি। একসাথে একাধিকবার একই লিগের দুই ক্লাবেরও কোচ ছিলাম।
খেলোয়াড়ি জীবনে মিডফিল্ডে খেলতেন লাবু। তার দেয়া তথ্য, আমাদের সময় ৪-২-৪ ফরমেশনে খেলানো হতো। এতে দুই মিডফিল্ডারের ওপর মাঠে দকলটা বেশি যেত। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ শুরু হওয়ার আগে ছিল ঢাকা সিনিয়র ডিভিশন লিগ। সেই লিগে তিনি খেলেছেন আরামবাগ, দিলকুশা, ইস্টএন্ড এবং ওয়ারীতে। তা ১৯৭৭ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত। চট্টগ্রাম লিগের খেলেছেন প্রতিষ্ঠিত ক্লাবগুলোতে।
এ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি ক্লাবকে পাইওনিয়ার, তৃতীয় বিভাগ, দ্বিতীয় বিভাগ ও সিনিয়র ডিভিশন ও বিসিএলে চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ করিয়েছেন। এর মধ্যে তার সবচেয়ে স্মরণীয় সাফল্য যাত্রাবাড়ী ক্রীড়া চক্রকে ২০০২-০৩ সালে দ্বিতীয় বিভাগ থেকে সিনিয়র ডিভিশনে তোলাটা। বিসিএলে এটি তার দ্বিতীয় শিরোপা। ২০১৫-১৬ সিজনে ইয়ংমেন্স বিসিএল চ্যাম্পিয়ন হলেও লাবু সেই দলের হেড কোচ ছিলেন না। সাবেক কোচ বর্তমান বাফুফে সদস্য মহিদুল রহমান মিরাজের অধীনে সহকারী কোচ ছিলেন।
১৯৮৮ সালে খেলোয়াড়ি জীবনে থাকার সময়ই তৃতীয় বিভাগের দল মাতুয়াইল যুব সঙ্ঘের কোচ হওয়া দিয়ে তার শুরু। ডেমরা এলাকার সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান মোল্লাই তাকে এই দলের কোচ হতে অনুরোধ করেন। দল সেবার দ্বিতীয় বিভাগে উঠতে না পারলেও বেশ দারুণ খেলেছিল। যা আজো ভুলতে পারছেন না লাবু। সেই থেকেই এখন পর্যন্ত ফুটবলার তৈরির কাজ করে যাচ্ছেন লাবু। জাতীয় দলের সাত-আটজন ফুটবলার তার হাত ধরেই ঢাকার ফুটবলে এসেছেন। পরে হয়েছেন প্রতিষ্ঠিত। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য, ডিফেন্ডার ইয়াসিন খান, সুশান্ত ত্রিপুরা, মিডফিল্ডার বিপলু আহমেদ। বাকিদের নাম মনে করতে পারলেন না। তবে নিজে কখনই জাতীয় দলে খেলতে পারেননি। লাবুর দেয়া তথ্য, ‘১৯৮৩-৮৪ সালে দুইবার জাতীয় দলের ক্যাম্পে ডাক পেয়েছিলাম। তা ৪০ জনের প্রাথমিক ক্যাম্পে। এরপর আর এগোনো হয়নি। তিন দিন পরই বাদ পড়ে যেতাম। তাই মনেও নেই কোনো টুর্নামেন্টের জন্য আমাকে বাংলাদেশ দলের প্রাথমিক তালিকায় ডাকা হয়েছিল।’
এবারের বিসিএলে ইয়ংমেন্সের শুরুটা মোটেই ভালো ছিল না। প্রথম পাঁচ ম্যাচ শেষে ছিল রেলিগেশন শঙ্কায়। অথচ ফিরতি পর্বে দারুণ খেলেই সেরার মর্যাদা পাওয়া। লাবু জানান, কপাল খারাপ ছিল বলেই আমরা প্রথম দিকে ভালো করতে পারিনি। মাঠে কিন্তু আমরাই সেরা ছিলাম। তবে পণ ছিল ফিরতি পর্বে ঘুরে দাঁড়াবই। সে কাজই সম্ভব হয়েছে ফুটবলারদের কমিটমেন্টের কারণে।
সিনিয়র ডিভিশন দুইবারের রানার্সআপ যাত্রাবাড়ী ক্রীড়া চক্রেরও হেড কোচ হিসেবে ডাগ আউটে দাঁড়ান তিনি। কোচিং ক্যারিয়ারে পূর্বাচল পরিষদকে দুইবার চ্যাম্পিয়ন করিয়েছেন তৃতীয় বিভাগ ও দ্বিতীয় বিভাগ লিগে। এখনকার বিপিএলের ক্লাব শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রকে পাইওনিয়ার ও তৃতীয় বিভাগে শিরোপা পাইয়ে দেন। যাত্রাবাড়ী ক্রীড়া চক্রকে দ্বিতীয় বিভাগে চ্যাম্পিয়ন করিয়েছেন। দ্বিতীয় বিভাগে বাসাবো তরুণ সঙ্ঘও তার হাত ধরে ট্রফি উৎসব করেছিল। শহীদ জিয়া ক্লাবের পাইওনিয়ার এবং দিপালী যুব সঙ্ঘের তৃতীয় বিভাগ ও দ্বিতীয় বিভাগের শিরোপার নেপথ্য নায়ক লাবু। এ ছাড়া জাবিদ আহসান সোহেল ক্রীড়া চক্রকে তৃতীয় বিভাগ থেকে তৃতীয় করে দ্বিতীয় বিভাগে তুলেছেন।
এই লাবুর কদরটা এতই বেশি যে, তাকে একই লিগে একাধিকবার দুই ক্লাব কোচিংয়ের দায়িত্ব দিয়েছিল। লাবু জানান, ‘আমি নিতে চাইতাম না। কিন্তু ক্লাবগুলোই আমার পিছু ছাড়ত না।’ এভাবেই তৃতীয় বিভাগে টঙ্গী ক্রীড়া চক্র ও দি মুসলিম ইনস্টিটিউট, দ্বিতীয় বিভাগে ইস্টএন্ড ও বাসাবো তরুণ সঙ্ঘ, সিনিয়র ডিভিশনে পূর্বাচল পরিষদ ও যাত্রাবাড়ী ক্রীড়া চক্র, একই ডিভিশনে যাত্রাবাড়ী ক্রীড়া চক্র ও বাসাবো ক্রীড়া চক্রের একই বছরে কোচ ছিলেন। তার দেয়া তথ্য, তখন এভাবে কোচিং করাতে কোনো বাধাই ছিল না। এখন অবশ্য আর করা যায় না। তবে আমি যখন একই বছর একই লিগে দুই দলের কোচ থাকতাম তখন ওই দুই দলের পারস্পরিক ম্যাচের দিন মাঠে থাকতাম না।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা