১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

ফাহাদের নর্ম আমার উৎসাহ বাড়িয়ে দিয়েছে

মিনহাজ উদ্দিন সাগর -

পাঁচ গ্র্যান্ডমাস্টারের পর দেশের চার আন্তর্জাতিক মাস্টার। এর একজন জিল্লুর রহমান চম্পক এখন যুক্তরাষ্ট্র্র প্রবাসী। অপর তিনজন- আবু সুফিয়ান শাকিল , মিনহাজ উদ্দিন সাগর ও ফাহাদ রহমান। তিনজনই খেলে যাচ্ছেন। তাদের মধ্যে টানা ব্যর্থতার পর অবশেষে প্রথম জিএম নর্ম পেয়েছেন ফাহাদ রহমান। শাকিল এখন খেলার পাশাপাশি সাংগঠনিক সাইডে সম্পৃক্ত। ফলে তার জিএম নর্ম ( গ্র্যান্ডমাস্টার নর্ম) পাওয়ার চান্স কম। শেষ ভরসা এখন মিনহাজ সাগর। তার পক্ষে কি পাওয়া সম্ভব জিএম নর্ম। ২০১১ সালে আন্তর্জাতিক মাস্টার হওয়া সাগর এখন পর্যন্ত এই নর্ম অর্জন করতে পারেননি। সেখানে ফাহাদ ২০১৯ সালে আইএম হয়ে এখন গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়ার জন্য আরো দুই জিএম নর্মের অপেক্ষায়। অবশ্য ২০ বছর বয়সী ফাহাদের এই অর্জন নতুন করে উৎসাহ বাড়িয়ে দিয়েছে সাগরের। ফলে নৌবাহিনীর এই দাবাড়–ও এখন নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়ার।
বাংলাদেশের প্রথম গ্র্যান্ডমাস্টার নিয়াজ মোর্শেদ। এরপর একে একে জিয়াউর রহমান, রিফাত বিন সাত্তার, এনামুল হোসেন রাজীব, আবদুল্লাহ আল রাকিব গ্র্যান্ডমাস্টার হন। এরপর আর পাওয়া যায়নি দেশের ষষ্ঠ জিএমকে।
চার আন্তর্জাতিক মাস্টারের মধ্যে প্রথমে জিএম হওয়ার সম্ভাবনা দেখান সাগর। কিন্তু তার পক্ষে সেই নর্ম এখনো পাওয়া সম্ভব হয়নি। এর মধ্যে এগিয়ে যেতে থাকেন ফাহাদ। গত কয়েক বছর দফায় দফায় জিএম নর্ম মিস করার পর অবশেষে এবার ভিয়েতনামের টুর্নামেন্টে ধরা দেয় প্রথম নর্ম।
গত ১৩ বছরেও কেন কোনো জিএম নর্ম পেলেন না সাগর। এই না পাওয়ার জন্য বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশন কর্তৃক গ্র্যান্ডমাস্টার (জিএম) টুর্নামেন্ট করতে না পারাটাকেই সামনে আনেন তিনি। সাগরের মতে, এক সময় দেশে জিএম টুর্নামেন্ট হতো। ইউনাইটেড ইনস্যুরেন্স জিএম টুর্নামেন্ট ছাড়া আরো জিএম টুর্নামেন্ট হতো। তবে ২০১২/১৩ সালের পর মধ্যে আর জিএম টুর্নামেন্ট করা হয়নি দেশে। এরপর নিয়াজ ভাইয়ের (নিয়াজ মোর্শেদ) উদ্যোগে জিএম টুর্নামেন্ট হয়েছে। কিন্তু যখন আমার পিক ফর্ম ছিল, রেটিং ছিল সাড়ে ২৪ শত তখন আমি কোনো জিএম টুর্নামেন্টই খেলতে পারিনি। এটা ছিল আমার জন্য চরম হতাশার এবং দুর্ভাগ্যের।’ তার মতে খেলতে পারলেই সুযোগ আসবে। যেমন ধরুন ফাহাদ গত কয়েক বছর ধরে অনেকগুলো জিএম টুর্নামেন্ট খেলতে পেরেছে বলেই আল্লাহর রহমতে জিএম নর্ম করতে পেরেছে। আমারও সেই পিক ফর্মে থাকা অবস্থায় এমন টুর্নামেন্ট খেলা দরকার ছিল।
সাগর যোগ করেন, আমাদের দেখা গেল দুই-তিন বছরের মধ্যে একটি জিএম টুর্নামেন্ট করা হলো। সেখানে একেবারে সর্বোচ্চ চেষ্টা দেয়া হয় জিএম নর্মের জন্য। এরপর দেখা গেল হলো না। আসলে একটি টুর্নামেন্ট খেলেই তো আর নর্ম জুটবে না। নর্ম পেতে হলে ধারাবাহিকভাবে খেলতে হবে। যেমন ফাহাদ সেই সুযোগ পেয়েছে।
মাঝে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা মহামারীও পিছিয়ে দেয়া সাগরকে। জানালেন, ‘করোনার সময়তো আরো বড় ধাক্কা লাগে আমার ক্যারিয়ারে। খেলাই বন্ধ- এটাও আমার নর্ম পাওয়ার ক্ষেত্রে বড় বাধা ছিল।’
তবে সাগরের সবচেয়ে বড় কষ্ট ২০১৭ সালে স্পেন সফরে যেতে না পারাটা। জানান, আমি শেখ নাসির ভাই, শাকিল ভাই , পরাগ, খন্দকার আমিনুল ইসলামসহ পাঁচজন ভিসার জন্য আবেদন করেছিলাম। কিন্তু নাসির ছাড়া কেউই ভিসা পায়নি। নাসির সেই সফরে গিয়ে একটি আইএম নর্ম করে। আমি রাজীর ভাইয়ের অধীনে ট্রেনিং করেছিলাম স্পেন সফরের জন্য। লক্ষ্য ছিল সেখানে চার-পাঁচটি টুর্নামেন্ট খেলে নর্ম অর্জন করার। এ জন্য জোনাল দাবা সহ কয়েকটি টুর্নামেন্টে অংশ নেইনি। অথচ ভিসাই হয়নি।
দুইবার জিএম নর্মের খুব কাছে গিয়েও হতাশ হতে হয়েছে সাগরকে। একটি ছিল ২০১৩ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল আইনে। অপরটি দেশে। প্রথমটিতে আধা পয়েন্টের জন্য। অপরটিতে এক পয়েন্টের ঘাটতি ছিল। সাগর জানান, প্রথম টুর্নামেন্টে আমি জানতাম না যে আধা পয়েন্ট লাগবে নর্মের জন্য। তা না হলে আমি ড্র করতে পারতাম। ছিলাম ড্রয়ের পজিশনেই। এরপর জিততে গিয়ে হেরে বসি।
এখন সাগেরের রেটিং ২২৩৪। ২৩০০ রেটিং না হওয়ায় তার পক্ষে খেলা সম্ভব হচ্চে না বিভিন্ন জিএম টুর্নামেন্টে। ফলে এখন রেটিং বৃদ্ধির চেষ্টা করছেন তিনি। ‘নতুন নতুন কিছু টেকনিক প্রয়োগ করছি। এতে আমি কামব্যাক করছি।’ বলেন তিনি। তবে নর্মের জন্য তিনি ইউরোপে বিভিন্ন টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ এবং দেশে রেটিং টুর্নামেন্ট জিএম টুর্নামেন্ট চান। বললেন, ‘এক বিদেশী দাবাড়– ৫০ বছর বয়সে জিমএম নর্ম পূরণ করেছেন। সুতরাং আমি এখনো আশাবাদী নর্মের ব্যাপারে। আর ফাহাদের নর্ম আমাকে আরো উৎসাহিত করছে।’ ২০১১ এবং ২০১৫ সালের জাতীয় দাবায় চ্যাম্পিয়ন সাগর ২০১২ সালে সর্বশেষ জাতীয় দলে খেলেন। লম্বা সময় পর বিদেশে গিয়ে গত বছর নেপালের টুর্নামেন্টে হন রানার্সআপ তিনি।


আরো সংবাদ



premium cement