২১ মে ২০২৪, ০৭ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ১২ জিলকদ ১৪৪৫
`


অভিষেকে গোল করাই অভ্যাস রাহুলের

-


বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে ফেরাটা সুখকর হলো না ব্রাদার্স ইউনিয়নের। বিপিএল চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংসের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেই ২-৫ গোলে হার। ২২ ডিসেম্বর গোপীবাগের দলটির এই দুই গোলের একটি করেছেন উজবেকিস্তানের বর্ষীয়ান মিডফিল্ডার ওতাবেক। অপর গোল টিনএজ ফুটবলার রাব্বী হোসেন রাহুলের। অনূর্ধ্ব-১৯ জাতীয় দলে খেলা রাহুল এই গোলের মাধ্যমে অনন্য নজির স্থাপন করেছেন। আর তা বিপিএলের অভিষেক ম্যাচেই গোল আদায়। শিল্ডিংয়ে জাতীয় দলের ডিফেন্ডার বিশ্বনাথকে ছিটকে ফেলে এরপর বাম পায়ের শটে বোকা বানান গোলরক্ষক মেহেদী হাসান শ্রাবণকে। ধেয়ে আসা ফিনল্যান্ড প্রবাসী জাতীয় দলের অপর ডিফেন্ডার তারিক কাজীও কিছু করার সুযোগ পাননি। যশোরের বেনাপোলের সন্তান রাহুলের অভিষেক ম্যাচে গোল করাটা রীতিমতো অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এ নিয়ে তিনবার তিন প্রতিযোগিতায় ডেব্যু ম্যাচে গোল করলেন এই উইংগার।

জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার সাব্বির আহমেদ পলাশের হাত ধরেই ফুটবলে আসা রাহুলের। আগে কাঁচাবাজারের কর্মচারী ছিলেন। দিনে পেতেন ৫০ টাকা। এক বেলা কাজ করে অন্য বেলা ফুটবল খেলতেন তিনি। পরে কোচ পলাশের পরামর্শেই কাঁচাবাজারের কাজ ছাড়েন মূলত লেফট উইংয়ে খেলা এ ফুটবলার। এরপর গত বছর জাতীয় স্কুল ফুটবলে সেরা ফুটবলার হয়ে ব্যাপক পরিচিত পান উঠতি এ ফুটবলার। সেই আসরেই নিজের প্রথম ম্যাচে জোড়া গোল তার। ২০২০ সালে অনূর্ধ্ব-১৪ অ্যাকাডেমি কাপে এফসি ইউনাইটেড ফেনী হয়ে খেলেন তিনি। সেই আসরেও প্রথম ম্যাচে গোল তার।

রাহুলের দেয়া তথ্য, ‘২০২০ সালে অ্যাকাডেমি কাপে আমার প্রথম ম্যাচ ছিল এফসি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিপক্ষে। ৭০ মিনিটের সেই ম্যাচে ৬৮ মিনিটে গোল খেয়ে পিছিয়ে পড়ি আমরা। এরপর ৭০ মিনিটে আমি ফ্রি-কিকে গোল করি, যা স্কোর লাইন ১-১ করে দেয়। ২০২২ সালেও জাতীয় স্কুল ফুটবলে হবিগঞ্জের স্কুলের বিপক্ষে দুইবার বল জালে পাঠিয়েছি। সেটিও ছিল আমার প্রথম ম্যাচ। খেলেছিলাম বেনাপোল মাধ্যমিক স্কুলের হয়ে।’
জাতীয় স্কুল ফুটবল থেকে তৃতীয় বিভাগ লিগে বিক্রমপুর কিংসে যোগ দেন। এরপর বসুন্ধরা কিংসের সাথে তিন বছরের চুক্তিতে আবদ্ধ হন। বাংলাদেশ সেরা ক্লাবই তাকে লোনে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে (বিসিএল) ওয়ারীর হয়ে খেলার জন্য পাঠায়। বিসিএলে গতবার পাঁচ গোল করেন তিনি। সাথে চারটি অ্যাসিস্ট। তৃতীয় বিভাগে বিক্রমপুর কিংসের হয়ে একটি গোল আছে তার। এবার সেই লোনেই বসুন্ধরা কিংস থেকে ব্রাদার্সে যোগ দেয়া। আরো এক বছর বসুন্ধরা কিংসের সাথে চুক্তি আছে। বিপিএলের টানা চারবারের চ্যাম্পিয়ন দলটি যাতে তার সাথে চুক্তির মেয়াদ বাড়ায় সে পণ করেই নামেন বসুন্ধরা কিংসের বিপক্ষে গোল করার। রাহুল জানালেন, ‘আমার লক্ষ্যই ছিল বসুন্ধরার বিপক্ষে গোল করা।

সাথে ঢাকা আবাহনী ও মোহামেডানের মতো বড় দলের বিপক্ষে গোল পেতে চাই। মোট কথা সব বড় দলের বিপক্ষেই গোল করাই টার্গেট। এতে করে ভবিষ্যতে ভালো করার সুযোগ থাকে।’ যোগ করেন, আমি যখন ব্রাদার্সের জার্সি গায়ে খেলতে নামি বসুন্ধরার বিপক্ষে তখন পূর্ণ আত্মবিশ্বাস ছিল গোল পাবোই। এরপর আল্লাহ তায়ালা সেই সুযোগ করে দিয়েছেন। আসলে বাংলাদেশের ফুটবলে অভিষেকে গোল করার ঘটনা কমই আছে।
অ্যাকাডেমি কাপে সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন। দলও হয়েছিল চ্যাম্পিয়ন। জাতীয় স্কুল ফুটবলেও সেরা খেলোয়াড়। তবে দল ফাইনালে হেরে যাওয়ায় রানার্সআপেই সন্তুষ্ট। এবারের লিগে রাহুলের লক্ষ্য সেরা উদীয়মান ফুটবলার এবং স্থানীয়দের মধ্যে সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়া।

এই বয়সেই ফ্রি-কিক স্পেশালিস্ট হয়ে গেছেন। সাথে পেনাল্টি শট নেয়ার ক্ষেত্রেও। ফ্রি-কিকে তার অনেকগুলো গোল। তৃতীয় বিভাগে রাহুলের একমাত্র গোলটি ফ্রি-কিকে। স্কুল ফুটবলেও এই সেট পিসে গোল। অ্যাকাডেমি কাপের ফাইনালেও এই সেট পিসে মাঝ মাঠ থেকে নেয়া শটে গোল।
বেনাপোলের আলহাজ নুরুল ইসলাম ফুটবল অ্যাকাডেমিতে ফুটবলে হাতেখড়ি তার। তবে ইচ্ছে ছিল ক্রিকেটার হওয়ার। ছিলেন পেস বোলিং অলরাউন্ডার। কিন্তু ব্যয়বহুল এই খেলার খরচ জোগানের সামর্থ্য না থাকায় ফুটবলে আসা। এরপর এলাকায় খেলা ফুটবল দেখেই কোচ পলাশ তাকে পছন্দ করেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement