১৯ মে ২০২৪, ০৫ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলকদ ১৪৪৫
`


এক ক্লাব থেকে টাকা নিয়ে অন্য ক্লাবে

পেশাদার লিগে অপেশাদারিত্ব-এক
-

২০০৭ সালে দেশে প্রথমবারের মতো চালু হয় পেশাদার লিগ। প্রথমে তা ‘বি’ লিগ নামে পরিচিত হলেও এখন তা বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল)। এই লিগের আগে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ থাকাকালীন সময়ে প্রতি দলবদলের সময়ই ফুটবলারদের নিয়ে চলত টানা হেঁচড়া। একজন ফুটবলার এক ক্লাব থেকে টাকা নিয়ে সে ক্লাবে যোগ না দিয়ে অন্য ক্লাবে যোগ দেয়া, নির্দিষ্ট ফুটবলারকে দলে টানতে আগেভাগেই লোক পাঠিয়ে তাকে আটকে রাখা, অস্ত্র নিয়ে হুমকি, এতেও সমাধানের উপায় বের না হলে কমিশনে দলবদল করানোর মতো ঘটনা ঘটেছে বহুবার। কমিশনে দলবদলের ক্ষেত্রে ওই ফুটবলারকে মাহনগরী ফুটবল লিগ কমিটি অফিসে আনা হতো না। লিগ কমিটির লোকজন ওই ফুটবলার যে ক্লাবে খেলতে ইচ্ছুক সে ক্লাবের নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে খেলোয়াড়টির দলবদল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতেন। পেশাদার লিগ চালু হওয়ার ক্ষেত্রে এই কমিশন দিয়ে দলবদল প্রক্রিয়া বন্ধ হয়েছে। অস্ত্র নিয়ে হুমকি, ফুটবলারদের তুলে আনার চেষ্টা তো ২০১৬ সালের দলবদলের সময়ই হয়েছে। তবে ফুটবলারদের এক ক্লাব থেকে টাকা নিয়ে সে ক্লাবে না গিয়ে অন্য ক্লাবে যোগ দেয়ার কাজটা চালিয়েই যাচ্ছেন।
এবারের দলবদলেও ১৫ ফুটবলারের বিপক্ষে এক ক্লাব থেকে টাকা নিয়ে অন্য ক্লাবে চলে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে ১২ ফুটবলার তাদের টাকা ফেরত দিয়ে মুক্তি পেলেও তিন ফুটবলারের বিষয় হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছে। খেলোয়াড়দের এই এক ক্লাব থেকে টাকা নিয়ে সে ক্লাবে না খেলাটা কোনোভাবেই পেশাদারিত্বের মধ্যে পড়ে না। এই নিয়ে প্রতিবারই বাফুফের প্লেয়ার স্ট্যাটাস কমিটিকে সভা ডাকতে হয়। ক্লাব এবং ফুটবলারকে ডেকে তাদের মুখোমুখি করে এই সমাধান করা হয়; কিন্তু কোনোভাবেই থামছে না এই অপেশাদারিত্ব।
এবারের দলবদলের সময় আরামবাগ ক্রীড়া সঙ্ঘ থেকে টাকা অগ্রিম টাকা নিয়েও সে ক্লাবে খেলেননি গোলরক্ষক মাজহারুল ইসলাম হিমেল, নাসিরুল ইসলাম, মাহাবুবুর রহমান সুফিল, আতিকুজ্জামান, মানিক মিয়া, আরাফাত হোসেন, কিরন, জুয়েল, জালাল মিয়া, শাহরিয়ার বাপ্পী, জাহিদ হোসেন ও আরিফুর রহমান। এদের মধ্যে আরিফুর রহমান ১০ লাখ টাকা এবং জাহিদ হোসেন পাঁচ লাখ টাকা অগ্রিম নেন। পরে এদের কেউই খেলেননি আরামাবগে। হিমেল, আতিক গেছেন মোহামেডানে। জাহিদ শেখ জামালে এবং আরিফের ঠিকানা সাইফ স্পোর্টিং। সুফিল ফিরে গেছেন বসুন্ধরা কিংসে। বাকিরা বিভিন্ন ক্লাবে। অবশ্য ক্যাসিনো কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে আরামবাগের অবস্থা নাজুক না হলে এই ফুটবলাররা থেকেই যেতেন।
আরামাবাগ ক্লাবে না হয় ক্যাসিনো ইস্যু; কিন্তু শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র থেকে না নিয়েও কেন সে ক্লাবে না খেলে ঢাকা আবাহনীতে নাম লেখালেন ডিফেন্ডার রায়হান হাসান, মিডফিল্ডার দুই সোহেল রানা? সড়ক দুর্ঘটনায় স্ত্রী ও ছেলে হারানো সোহেল রানা গত বছর গত মৌসুমে শেখ রাসেলেই ছিলেন। আর রায়হান ও এবারের এএফসি কাপে দর্শকের ভোটে দ্বিতীয় সেরা গোল করা সোহেল রানা গতবারের মতো এবারো ঢাকা আবাহনীতে। এদের না পেয়ে ক্ষুব্ধ শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র প্রথমে ঢাকা জজ কোর্টে যায়। কোর্ট অবশ্য তাদেরকে আবাহনীর পক্ষে খেলার পক্ষেই রায় দেয়। বাফুফের প্লেয়ার স্ট্যাটাস কমিটিও আমলে নেয়নি শেখ রাসেলের অভিযোগ। ফলে ১৮ ডিসেম্বর এবারের ফেডারেশন কাপের উদ্বোধনী ম্যাচে এই তিন ফুটবলার আবাহনীর হয়ে ম্যাচও খেলেন পুলিশের বিপক্ষে। অবশ্য ওই দিনই শেখ রাসেল ম্যাচটি শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ আগে হাই কোর্ট থেকে এই তিন ফুটবলারের আবাহনীর হয়ে খেলার বিপক্ষে স্থগিতাদেশ নিয়ে আসে। তিন ফুটবলারের বক্তব্য, তারা চেক নিয়েছে কিন্তু ক্যাশ হয়নি। অন্যদিকে শেখ রাসেলের বক্তব্য, ফুটবলাররা চেক নিয়েছে এবং তা ক্যাশও করেছে।
উল্লেখ্য, দলবদলের সময় পেশাদার লিগ কমিটি কর্তৃক প্রেরিত ফরমে স্বাক্ষর করার আগ পর্যন্ত অন্য কোনো লেনদেন কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। সাধারণত ক্লাবগুলো এই ক্ষেত্রে ভাউচারে স্বাক্ষর নিয়ে টাকা দেয় ফুটবলারদের। যে কারণে তা আর গ্রহণযোগ্য হয় না প্লেয়ার স্ট্যাটাস কমিটির কাছে।


আরো সংবাদ



premium cement