ফুলির ঈদ জামা
- মনিরুল ইসলাম
- ২১ জুন ২০২৪, ০০:৪৭
ইমুদের বাসায় নতুন একজন কাজের মেয়ে এসেছে। বয়স ৯। হ্যাংলা পাতলা শরীর। গায়ের রঙ টুকটুকে ফর্সা। বেশ গোছালো। কাজ ছাড়া কিছু বুঝেই না।
সকাল বেলা ইমু বলল, এই মেয়ে তোমার নাম কী? কাজের মেয়েটি বেণী দুলিয়ে দুলিয়ে বলল, ফুলি। বাহ্! বেশ সুন্দর নাম তো! কে রেখেছে তোমার নাম?
ফুলি হাসি হাসি মুখ করে বলল, আমার মায় রেখেছে।
তোমার মায়ের নাম বুঝি খুব সুন্দর তাই না? হুঁম। আমার মায়ের নাম ফুলবানু।
ইমু অবাক হওয়া গলায় বলল, তোমাদের দু’জনের নাম কত সুন্দর। একজন ফুলি। আরেকজন ফুলবানু। ফুলে ফুলে ফুলের রাজ্য। ফুলি কুটি কুটি করে হাসল। ছেলেমানুষি হাসি। দেখতে এত ভালো লাগে। অপূর্ব।
ইমু বলল, আচ্ছা ফুলি! এবার ঈদের জন্য কী কী কেনাকাটা করলে?
কিছু কিনি নাই আপা।
ওমা! কেন?
ফুলি নিচু মাথায় বলল, ঈদের তো এখন আরো মেলা দিন বাকি। তা ছাড়া আব্বা ঢাকায় কাজ করে। সেখান থেকে জামাকাপড় নিয়ে আসবে। ঢাকায় নাকি কাপড়চোপড় খুব সস্তা। রাস্তাঘাটে ছড়ানো-ছিটানো থাকে। ফুলি কথা শেষ করে নিজের গায়ের জামা দেখিয়ে বলল, এই দেখেন আপা! আমার জামাটা কত সুন্দর। এখনো কী টকটকে রঙ। গত ঈদে আব্বা দিয়েছিল। ইমু দেখল তার জামার পেছন দিয়ে অনেকখানি ছেঁড়া। তবুও সে সান্ত¡নার স্বরে বলল, হ্যাঁ! তোমার জামা অনেক সুন্দর।
ঈদের এক দিন আগে। ফুলি ছাড়া ইমুদের বাসার সবাই শপিংমলে গেছে। ইমুর বাবা বললেন, দেখো তো মা! এই জামাটা তোমার কেমন লাগে। ইমু দেখল। কিছু বলল না। দোকানদার বললেন, স্যার প্যাক করে দেবো? তানভীর সাহেব বললেন হ্যাঁ, প্যাক করে দাও। ইমু বলল, বাবা দাঁড়াও! কেন! তোমার আবার কী হলো? ইমু তার বাবার পছন্দ হওয়া জামাটা দেখিয়ে দোকানদারকে বলল, আঙ্কেল! এই জামাটার দাম কত? দোকানদার বললেন, তিন হাজার ৯৯০ টাকা। আপনাদের জন্য তিন হাজার রাখা যাবে। আমরা কয়েক পার্সেন্ট ডিসকাউন্ট দিচ্ছি।
ইমু বলল, আচ্ছা ঠিক আছে। আপনি এই জামাটা রেখে তিন হাজার টাকার মধ্যে অন্য দু’টি জামা দিন। ইমুর বাবা গলা খেঁকিয়ে বললেন, তুমি দু’টি জামা দিয়ে কী করবে? একটি জামা বেশি দাম দিয়ে নাও! ইমু বলল, না বাবা। কিছু কিছু ঈদে কম দামে জামা পরতে হয়। আর অন্যদেরকে সুযোগ করে দিতে হয়। ইমুর বাবা কিছু বুঝতে পারলেন না। তিনি উদাস গলায় বললেন, মানে! তুমি কী বুঝাতে চাচ্ছ?
ইমু শীতল স্বরে বলল, বাবা! তুমি তো জানো! আমাদের বাসায় একটি কাজের মেয়ে থাকে। নাম ফুলি। আমার বয়সী।
হ্যাঁ, জানি। তো কী হয়েছে?
ইমু বলল, ঈদের আগে ওর কোনো কেনাকাটা হয়নি। তেমন ভালো জামাও নেই। ওর বাবা ঢাকায় থাকে। কখন ওর জন্য জামাকাপড় নিয়ে আসবে এ অপেক্ষায় বসে আছে। আর অপেক্ষা জিনিসটা বাবা অনেক কষ্টের। বেদনার। যখন ফুলি জানতে পারবে তার বাবা আসবে না, তখন কিন্তু ও অনেক কাঁদবে। যে কাঁদাটা হবে নৈঃশব্দের। একার। অন্ধকারের। শুধু নীরব চারদেয়ালের ভেতরেই আটকা পড়ে থাকবে। আমরা কেউ জানব না। পৃথিবীটা বাবা এমনি। কেউ কারো কষ্ট দেখাতে চায় না। বুকের ভেতর আজীবন পুষে রেখে স্বাভাবিক ঘুরে বেড়ায়। ওগুলো খুঁজে নিতে হয় বাবা!
তানভীর সাহেব মেয়ের কথায় কিছু বলতে পারলেন না। তিনি বুকের ভেতর একটি চিনচিনে ব্যথা অনুভব করলেন। তার চোখ দুটো ভিজে উঠল। তিনি ভাবলেন, তার এতটুকু মেয়ে এখন অনেক বড় হয়ে গেছে। মেয়ের মাথায় কত ভালো বুদ্ধি। কত গুণ। এ রকম একজন বুদ্ধিমতী মেয়ের বাবা হয়ে তার বুক ফুলে উঠল। তিনি ভেজা চোখে মেয়ের দিকে তাকিয়ে রইলেন। তারপর দোকানদারকে বললেন, দুটো জামাই প্যাক করে দাও।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা