১৭ জুন ২০২৪
`

আমাদের জাতীয় কবি

-

যে কবির লেখা পড়ে শিশুমনের কল্পনার জগৎ হয়ে ওঠে আরো উচ্ছ্বসিত আরো কল্পনাপ্রবণ, জাগরিত হয় সুপ্ত ইচ্ছেশক্তি তিনি হলেন আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম।
কাজী নজরুল ইসলাম ১৮৯৯ সালের ২৪ মে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন। ছোটবেলায় তিনি লেটো গানের দলে যোগ দেন। ধূমকেতুর মতো বাংলা সাহিত্যে আবির্ভূত হয়েছিলেন তিনি। গল্প উপন্যাস নাটক কবিতা ইসলামী সঙ্গীত শ্যামা সঙ্গীত ও গানের মতো লিখেছেন শিশুতোষ ছড়াও। বাংলা শিশুসাহিত্যকে এগিয়ে নিতে যারা অবদান রেখেছেন তাদের মধ্যে কাজী নজরুল ইসলাম অন্যতম। শিশুসাহিত্যের মাধ্যমে তিনি জয় করেছেন শিশুদের মন।
শিশুমনের সে ভাষায় নিজেকে মিলিয়ে কবি লিখেছেন-
থাকব নাকো বদ্ধ ঘরে
দেখব এবার জগৎটাকে
কেমন করে ঘুরছে মানুষ
যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে।
দেশ হতে দেশ দেশান্তরে
ছুটছে তারা কেমন করে
কিসের নেশায় কেমন করে
মরছে যে বীর লাখে লাখে
কিসের নেশায় করছে তারা
বরণ মরণ যন্ত্রণাকে।
শিশুমনের অদম্য ইচ্ছেকে কবি তার লেখায় তুলে ধরেছেন। একই সাথে জ্ঞানার্জনের জন্য উদ্বুদ্ধ করেছেন শিশুদেরকে। শৈশবেই বিশ্ব জানার বিস্ময়কর জাগরণ এনেছেন লেখাটিতে। কবির মনের সে কল্পনাশক্তি এতটাই প্রখর ছিল যে, সেদিনের সে কল্পনা আজ বাস্তবেই দেখা যাচ্ছে। আমরা কম্পিউটার বা মোবাইলে গুগলের মাধ্যমে বিশ্ব দেখছি। মানুষ দেশ থেকে দেশান্তরে ঘুরছে যুগান্তরের ঘূর্ণপাকে।
কল্পনাপ্রবণ শিশুমনের ভাবকে কবি তার আরেকটি লেখায় ফুটিয়ে তুলেছেন এভাবে-
আমি হবো সকাল বেলার পাখি
সবার আগে কুসুব বাগে
উঠব আমি ডাকি।
সূয্যিমামা জাগার আগে
উঠবো আমি জেগে
হয়নি সকাল ঘুমো এখন
মা বলবেন রেগে।
বলবো আমি, আলসে মেয়ে
ঘুমিয়ে তুমি থাকো
হয়নি সকাল তাই বলে কি
সকাল হবে নাকো।
কবিতার মাঝে শিশুমনের ভাব প্রকাশের সাথে সাথে শিক্ষণীয় বিষয়ও তিনি তুলে ধরেছেন তার লেখায়। সূর্য ওঠার আগে ঘুম থেকে উঠা স্বাস্থ্যের জন্য উপকার। পাখির কিচিরমিচির ডাকে সকালের ঘুম ভাঙে। লেখার মাঝে তিনি সেই পাখির আগেই শিশুদের ঘুম ভাঙার উৎসাহ জাগিয়েছেন। ভোরের নির্মল বাতাসে শরীরের জড়তা কেটে যায়। ভোরে ওঠা অভ্যাসে শিশু হবে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী।
তিনি লিখেছেন ঝিঙেফুল-
ঝিঙেফুল! ঝিঙেফুল!
সবুজ পাতার দেশে ফিরোজিয়া
ঝিঙেফুল-ঝিঙেফুল।
গুল্ম পর্ণ
লতিকার কর্ণে
ঢলঢল স্বর্ণে
ঝলমল দোলে দুল-ঝিঙেফুল।
পাতার দেশের পাখি বাঁধা হিয়া বোঁটাতে
গান তব শুনি সাঁঝে তব ফুটে ওঠাতে।
পউষের বেলা শেষ
পরি জাফরানি বেশ
মরা মাচানের দেশ
করে তোল মশগুল-ঝিঙেফুল।
ঝিঙে এবং ঝিঙেফুল যা অতি সাধারণ বিষয়। এটি একটি বনজ লতানো গাছ আর ঝিঙে একটি সবজি তরকারি। ঝিঙেফুলে মানুষ তেমন দৃষ্টি দেয় না। কিন্তু কবির তীক্ষè চোখে তা ধরা পড়েছে সৌন্দর্যের রূপে। তাই তিনি বনজ ফুলের শোভাকে শিশুদের চোখে আকর্ষণীয় করে তুলেছেন তার লেখার মাধ্যমে। সাধারণ আমরা যা কল্পনাও করতে পারি না।
শিশুদের মনের গভীরতা উপলব্ধি করতে পারলেই এমন লেখা তৈরি করা যায়।
কাঠবিড়ালির মতো একটি সাধারণ প্রাণীকে কবি তার লেখনীর মধ্যে তুলে এনেছেন শিশুদের জন্য।
কাঠবেড়ালি! কাঠবেড়ালি! পেয়ারা তুমি খাও?
গুড়-মুড়ি খাও? দুধ-ভাত খাও? বাতাবি-নেবু? লাউ?
বেড়াল-বাচ্চা? কুকুর-ছানা? তাও-
ডাইনি তুমি হোঁৎকা পেটুক,
খাও একা পাও যেথায় যেটুক!
বাতাবি-নেবু সকলগুলো
একলা খেলে ডুবিয়ে নুলো!
তবে যে ভারি ল্যাজ উঁচিয়ে পুটুস পাটুস চাও?
ছোঁচা তুমি! তোমার সঙ্গে আড়ি আমার! যাও!
এ ছাড়াও , ‘মা’, ‘খাঁদু-দাদু’, ‘খোকার বুদ্ধি’, ‘খোকার গল্প বলা’, ‘চিঠি’, ‘লিচু চোর’, ‘ঠ্যাংফুলী ও পিলে-পটকা’, ‘হোঁদল-কুঁৎকুতের বিজ্ঞাপন’, ‘প্রভাতী’ ইত্যাদি ছোটদের জন্য লেখা তাঁর উল্লেখযোগ্য কবিতা।


আরো সংবাদ



premium cement