চড়ুই পাখি ও বুড়িমা
- সাঈদুর রহমান লিটন
- ১৭ মে ২০২৪, ০০:০৫
বাড়িতে একটি ছোট টিনের ঘর। সেই ঘরে এক বিধবা মহিলা বাস করেন। এই জগতে কেউ নেই তার। ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করেন। সেই টিনের ঘরে ছিল একজোড়া চড়ুই পাখি। এই চড়ুই পাখি ছাড়া তার ইহজগতে কেউ ছিল না। এই বাড়িতে চড়ুই দু’টির খাবার বলতে কিছুই ছিল না। কারণ এই বুড়িমার সংসারে মাঠঘাট থেকে কোনো ফসল আসত না। তাই বুড়িমা একটি মাচানের পর পাটের বস্তা বিছিয়ে রেখে তার উপর ভিক্ষার চাল ডাল ছিটিয়ে রাখতেন। চড়ুই পাখি দুটো খুব মজা করে খেতো। বুড়িমা তাদের খাওয়া দেখতেন আর খুব আনন্দ পেতেন। চড়ুই পাখির খুনসুটি, চড়ুই পাখির খেলাধুলা, চড়ুই পাখির ধুলোময়লায় গড়াগড়ি খাওয়া দেখে একা একাই হাসতেন। মনে মনে খুব মজা পেতেন। ভিক্ষা করতে গ্রামে গেলে বুড়িমার চড়ুই পাখি দুটোর কথা মনে পড়ত। যখন খুব বেশি মনে পড়ত আর ভিক্ষা না করে বাড়ি ফিরে আসতেন। পাখি দু’টি দেখে মন ভরে যেত। আবার নতুন করে চাল ডাল ছড়িয়ে দিতেন।
ওরাও মনের আনন্দে লাফিয়ে লাফিয়ে খেয়ে নিতো।
মজার ব্যাপার হলো- পাখি দু’টি সন্ধ্যা হলেও তাদের বাসায় যেত না। বুড়িমার ঘরের মধ্যে দৌড়ঝাঁপ করত। বুড়িমা মাঝেমধ্যে জীবনের সুখ দুখের গান গাইতেন পাখি দুটো নীরবে কান পেতে শুনতো। মনের দুঃখে একা একা গল্প করতেন পাখি দু’টিও শুনতো। ট্যাও ট্যাও করে গল্পে সাড়া দিত। বুড়িমা যখন ঘুমিয়ে যেতেন তখন চড়ুই দু’টিও তাদের বাসায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়তো। এ বছর প্রচুর গরম পড়েছে। কোথাও পানি নেই। গরমের তাপদাহে সব কিছু যেন পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে। খালি পায়ে পথেঘাটে হাঁটার উপায় নেই।
মানুষের তৃষ্ণায় বুক ফেটে যায় যায় অবস্থা। অনেকে জায়গায় হিট স্ট্রোকে মারা যাওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। তাই বুড়িমা চড়ুই পাখির জন্য একটি পাত্রে কিছু পানি রেখে যান। যাতে করে ওরা তৃষ্ণা পেলে পানি খেতে পারে। কয়েক দিন আগে প্রচুর তাপমাত্রা বেড়েছে। পশুপাখি, মানুষজন ছায়ার মধ্যেও হাঁপিয়ে উঠছে। বুড়িমা ভিক্ষা করছে গ্রামে গ্রামে। বুড়িমার অবস্থাও প্রায় কাহিল। তখন হঠাৎ মনে পড়ল তিনি তো পাখিদের জন্য পানি দিয়ে আসেননি। অসম্ভব গরম। ভর রৌদ্র। তার মধ্যে বুড়িমা ছুটলেন বাড়ির পানে। বুড়িমা বিকেল হলে ঠাণ্ডার মধ্যে ধীরে ধীরে বাড়িতে ফেরেন। এই রোদ তাকে পুড়িয়ে ছাড়ছে। তবু ও তাড়াতাড়ি যেতে হবে কোথাও পানি নেই। পাখি দুটোর বাঁচার কথা না। তাই যথাসম্ভব জোরে জোরে হেঁটে বাড়ি এলেন।
বুড়িমাকে দেখে চড়ুই দুটো আনন্দে উড়ে উড়ে বুড়িমার কাছে আসতে লাগলো। বুড়ি মা দেরি না করে পাত্রে ঠাণ্ডা পানি ঢেলে দিলেন। চড়ুই দুটো মনের আনন্দে লাফিয়ে লাফিয়ে পানি পান করতে লাগলো। বুড়িমার ভাঁজপড়া ঠোঁটে চাঁদের আলোর মতো এক ফালি হাসির রেখা ফুটে উঠল।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা