২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

কবিতা

-

তমিজ উদ্দীন লোদী
জীবনের রং

আমরা দেখছিলাম আগ্নেয় জ্বালামুখ
আর লাল হতে হতে কালো হয়ে যাওয়া পোড়ামাটি

স্পর্শের মহিমায় একদা ছুঁয়েছিলাম যে দোঁআশ
তার ভেতর থেকে উপ্ত হয়ে উঠেছিল যে বীজ
তা বনসাই হয়নি, হয়ে উঠেছিল মহীরুহ

অথচ এখন চারপাশে ঢেউখেলানো পাথর
শ্যাওলা লেগে থাকা গা থেকে ছিটকে আসছে গন্ধ
তার ভেতর থেকে উঁকি দিচ্ছে পাথুরে মুখ
পায়ের কাছে নেমে আসছে লাভা¯্রােত

আমরা দৌড়াচ্ছি প্রাণপণে
পেছনে জ্বালামুখ, পেছনে লাভা¯্রােত
পুড়ে যাওয়া কালোমাটি

আমাদের স্পর্শাতীত পাথরপ্রতিম বৃক্ষের গা থেকে
ছড়িয়ে পড়ছে আগুন
তার পাতায়, শাখায়, ত্বকে শুকিয়ে যাচ্ছে ক্লোরোফিল

ক্রমাগত লেলিহানের ভেতর শুধু গুঁড়িটি বেঁচে আছে
নীরব আর্তনাদের ভেতর আমরা তবু দেখতে পাচ্ছিলাম
জীবনের রং।

 

সোলায়মান আহসান
বিভ্রম

কী হবে তোমার সাথে ঘর
এতদিন পাশাপাশি তবু যেন পর
আঁখি তবু ছলছল কাঁচের দেয়াল
প্রতিদিন কাটে বেলা বড়ই বেহাল।

কী হবে অভিনয়ে সুখ আঁকা মুখ
এতদিন কাছাকাছি আমি দুর্মুখ
আড়ালে আড়ালে থাকি আপনার মুখ ঢাকি
ভালো আছি উচ্চারণে পাছে দিই নিজে ফাঁকি।

কী হবে সাজিয়ে ঘর দামি আসবাবে
মন যদি উরু উরু শোকে-সন্তাপে
মুখে মুখে ভালো থাকা পোশাকে নিপাট
হৃদয়ের ঘরে তালাক বন্ধ কপাট।

কী হবে আমার সাথে ঘর ঘর খেলা
এতদিন পাশাপাশি কাটে মাঝ বেলা
দিনের সূর্য যায় দিনান্তে পাটে
রাত্রি চাদর ঢাকে রাজপরিপাটে।

কাছাকাছি করি বাস তবু উপবাস
দেহের খোরাক বাকি বুকে হাহুতাশ
কী হবে যাপন করে মিছে মহাকাল
তার চেয়ে দৃশ্যপট হোকপয়মাল
রবে না দুঃখ কিছ ুপরাজয় নেয় পিছু
হারানোর বেদনারা দেয় নাতো কিছু!
কী হবে...

 

সায়ীদ আবু বকর
প্রেমকথা

অত জোরে নয়, ফিসফিস করে তুমি বলো,
বটের পাতার মতো ফিরফির করে আর
বুনো বাতাসের মতো ঝিরঝির করে বলো।

ফুলের গন্ধের মতো মৌ মৌ করে তুমি বলো,
গাঙের পানির মতো কলকল করে আর
একপশলা বৃষ্টির মতো ঝরঝর করে বলো।

প্রিয়তমা; শুধু ছন্দ, শুধু সুর, শুধু ঘ্রাণ
ছড়িয়ে পড়ুক তোমার প্রতিটি উচ্চারণে।

 

সৌহার্দ সিরাজ
সোহাগীর মন

এত কথা মনে রাখি, মনে থাকে
তুমি সামনে এলে ভুলে যাই
উচিত সমুচিত হারিয়ে ফেলি

এইগুলো কী, তুমি যা ফেলে দাও!
বাকি যা রেখে দাও বুকের ভেতর
আমার জন্য
সূর্যের আলো চাঁদের আলো এক রেখায়
কী যেন বলাবলি করে!

কথারা নদীতে ভেসে গেছে
তোমার তো আজ নদীই নেই
ভরা জল জঙ্গলে সোহাগীর মন ভেসে যায়

 

আসাদ কাজল
স্বপ্নদাসী

বহুদিনের ইচ্ছে কিছু স্বপ্ন কিনবো
অথচ স্বপ্নের হাট কোথায় আমি জানি না।
অতঃপর না জেনে তোমার কাছে আসি
তুমি বলো, স্বপ্ন কোথায় থেকে আনবো?
সস্তব্ধতায় স্বপ্ন কিনবো-তা আমি মানি না
স্বপ্ন দেখে দেখে-আমি আজ স্বপ্নদাসী।

বহু দিনের ইচ্ছে কিছু স্বপ্ন কিনবো
স্বপ্ন যা যা বলে, তা আমি মানবো
অতঃপর হাটের সন্ধান তা পেলাম
অর্থ দিয়ে স্বপ্ন কিনে বাড়িতে গেলাম।
স্বপ্ন দিয়ে স্বপ্নবাড়ি বিকশিত হলো
স্বপ্নের ছোঁয়ায় মন সমুদ্র কী পেলো?

আজ আমি স্বপ্ন কিনে কিনে স্বপ্নে বাঁধা
স্বপ্নের ভিতর আমি আছি-নেই রাঁধা।


মুহাম্মদ ইসমাঈল
ঈদ সমাগত

আমি ফিলিস্তিন থেকে বলছি
আমার চারপাশে ধ্বংসস্তূপ
খোলা আকাশের নিচে আছি
আমাদের এখানে-
রোজা আছে ইফতারি নেই,
তারাবি আছে সাহরি নেই।
আমাদের উনুনে হাড়ি চলে না।
দেখি কোথাও কোনো ঘাস পাই কি না
অন্তত চিবিয়ে রসটুকু তো পাবো।

এ তো! আমাদের মাতৃভূমি ফিরে পাওয়ার লড়াই।
আমাদের আল আকসা ফিরে পাওয়ার লড়াই।
আমাদের লড়াই চলবে, যতদিন না স্বাধীন হবো

ঈদ সমাগত
আমাদের এখানে ঈদ নেই।

 

নূর মোহাম্মদ
চিরন্তন শান্তির জন্য

সাগরের বুক থেকে মুঠ করে পানি তুলে দেখি
আঙুলের সূক্ষ্ম ফাঁক দিয়ে দ্রুত ঝরে যায় জল
এ তো- আমাদের চলমান অতি কমায়ু জীবন!
হাজার চেষ্টা করেও ভবে তেমনি থাকা যায় না

অতীতে সেই দীর্ঘায়ু যারা জীবনে পেয়েছিলেন
তাদেরও এখন আর অস্তিত্বের দেহ-প্রাণ নেই!

কাল মহাকালের বুকের মায়াময় কোলও যেন
এক উপসাগরের স্বচ্ছ নীল পানির সমান
যা কখনো শেষ হয় নি হবার নয়-দেখাও যায় না
সাত সাগরের পানি! সে তো পরকালীন জীবন

মন থেকে অনায়াসে এই ভাবে কথা চলে এলো
হে নূর! তুমিও একদিন চলে যেতে বাধ্য হবে
কাজেই এমন শ্রেষ্ঠ কিছু ভালোবেসে ভাবো-করো
যেখানেই থাকো দেখবে- তোমার আত্মাও শান্তি পাবে।

 


মনসুর আজিজ
প্রকৃতির খোঁয়ার

দুহাতে ক্রমাগত সরিয়ে নিচ্ছি ইটের স্থাপনা
ঠিক যেমন করে কচুরিপানা সরিয়ে নেই পুকুরে
কাটা রড আর কংক্রিট যেন বেথুনের থোকা
ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায় হাতের তালু
জামের রসের মতো চুঁইয়ে পড়ে রক্ত,
খানাখন্দে ভরা গলিত লাশের মতো শহরের অলিগলি
কাতচিৎ হতে হতে কোনোমতে উঠে যাই নগরের মেইন রোডে
মেট্রোরেল যেন বিদেশিনী,
একঝলক বায়োস্কোপ দেখেই নেমে যাওয়া
মহাসড়ক কুমারী মেয়ের গালের মতো চকচকে।

ফেলে আসা স্মৃতির মতো শহর রেখে আসি পেছনে
ক্রমেই শিল্পীর ক্যানভাসে জেগে ওঠে বৃক্ষ, তরুলতা, সবুজ ফসলের ভূমি
কোথাওবা বৃদ্ধ মানুষের কুচকানো তামাটে শরীরের মতো ফাটা জমিন
জলহীন নদীর তলপেটে গবাদি পশুর বিচরণভূমি
তারপর আঁকাবাঁকা চিরচেনা গাঁয়ের পথ
আমার সবুজ বাংলা যেন প্রকৃতির খোঁয়াড়
ছায়াদার বৃক্ষের ফাঁকে ফাঁকে রোদের লুকোচুরি খেলা।
উঠোন যেন ঝরাপাতার জলসাঘর
কোকিলের কুহুতানে ভেঙে যায় দুপুরের ভাতঘুম
টিটিপাখি কাঠকোকড়া শালিক আর বউকথাকও পাখির মিলিত কোরাস জানায় বৈশাখের আগমনী বার্তা।
আমি তখন প্রকৃতির সন্তান হয়ে যাই
মুগ্ধ হয়ে ফুটে রই ফসলের আইলে নামহীন ঘাসফুলের মতো।

 

মুজতাহিদ ফারুকী
কষ্টের পোকা তুমি বাছো

তুমি খুব নরোম নরোম করে কষ্টের পোকা
বের করে আনো সূক্ষ্ম মোলায়েম বোলে
ছুড়ে দাও খালিপেট পাখিদের মুখে
পোষা পাখি বিশ্বাসী, ঘুরে ফিরে তোমাকেই পড়ে
ঘাড়ে বসে, আকাশ চেনে না
দাঁড়ে ঝুলে শিস মারে নিমগ্ন আবেশে।

পাখি তো মুখিয়ে থাকে, রাজভোগ হবে ওক্ত হলে
উইয়ের শিশুর মতো সাদা, তুলতুলে জন্মান্ধ বধির
চনমনে চঞ্চুর নিচে ঘাড় গুঁজে
পড়ে থাকে কষ্টের দানা, জঠরের তৃপ্তি হবে বলে।


আরো সংবাদ



premium cement