০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`


বিশ্বের দীর্ঘতম গবেষণা, চলছে ১০০ বছর ধরে পরীক্ষা

বিশ্বের দীর্ঘতম গবেষণা, চলছে ১০০ বছর ধরে পরীক্ষা - ছবি : সংগৃহীত

কোনো বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা কত দিন ধরে চলতে পারে? ১০ বছর, ২০ বছর, ৩০ বছর? কিন্তু পৃথিবীতে এমন এক পরীক্ষা করা হচ্ছে, যা চলছে প্রায় ১০০ বছর ধরে। প্রায় এক শতক ধরে চলা এই পরীক্ষার নাম ‘পিচ ড্রপ এক্সপেরিমেন্ট’। যে পিচ দিয়ে রাস্তা তৈরি হয়, তা দিয়েই এই পরীক্ষা চলছে বলে পরীক্ষাটির এমন নাম দেয়া হয়েছিল।

পিচ ড্রপ পরীক্ষা হলো একটি দীর্ঘমেয়াদী পরীক্ষা, যা বহু বছর ধরে পিচের প্রবাহ পরিমাপ করে।

পিচ একটি উচ্চ ঘনত্বের তরল, যা সাধারণত বিটুমিন কয়লা থেকে তৈরি হয়। এই কয়লাজাত পদার্থ ‘অ্যাসফল্ট’ নামেও পরিচিত। ঘরের তাপমাত্রায়, পিচ খুব মন্থর গতিতে প্রবাহিত হয়।

পিচ ড্রপ পরীক্ষাটি ১৯২৭ সালে শুরু করেন টমাস পার্নেল। অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেনের কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হওয়া এই পরীক্ষা এখনো চলছে।

পার্নেল কিছু পিচকে গলিয়ে তরল করেন। পরে তিনি ওই তরল পিচ একটি মুখবন্ধ ফানেলে ঢেলে দেন। একটি বড় বেলজারের মধ্যে বিকারের ওপর ফানেলটি রেখে দেন তিনি।

১৯৩০ সালে পার্নেল ফানেলটির নিচের সরু অংশ কেটে প্রথম পিচের ফোঁটা তৈরির জন্য অপেক্ষা করেছিলেন। পার্নেলসহ এই পরীক্ষার সাথে যুক্ত বাকিরা দেখেন, ওই তরল পিচ থেকে এক ফোঁটা পিচ তৈরি হতে সময় লাগে সাত থেকে ১৩ বছর।

১৯৬১ সাল থেকে পিচ ড্রপ পরীক্ষার তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন জন মেইনস্টোন। তবে তিনি এখনো পর্যন্ত একবারও পিচের ফোঁটা পড়তে দেখেননি। একবার নাকি তিনি পানি পান করতে পরীক্ষাগারের বাইরে বেরিয়েছিলেন। ওই সময় পিচের ফোঁটা পড়ে যায়। আর তা নিয়ে মেইনস্টোনের আফসোসের অন্ত ছিল না।

১৯৩৮ সালে পিচ ড্রপ পরীক্ষার প্রথম পিচের ফোঁটা তৈরি হয়। এরপর ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৭৯ পর্যন্ত মাত্র পাঁচটি পিচের ফোঁটা তৈরি হয়েছিল।

সপ্তম ফোঁটাটি ১৯৮৮ সালের ৩ জুলাই আনুমানিক পৌনে ৫টার দিকে পাত্রে পড়েছিল। পরীক্ষাটি ব্রিসবেনের ওয়ার্ল্ড এক্সপো ৮৮-তে প্রদর্শন করা হয়েছিল। তবে কেউই ওই পিচের ফোঁটা পড়তে দেখেননি।

পিচ ড্রপ পরীক্ষায় অষ্টম ফোঁটা ২০০০ সালের ২৮ নভেম্বর তৈরি হয়েছিল। নবম ফোঁটাটি ২০১৪ সালের ১৭ এপ্রিলে পড়তে দেখা গিয়েছিল।

গিনেসের বুকেও নাম তুলেছে পিচ ড্রপ পরীক্ষা। গিনেস ওয়ার্ল্ড অনুযায়ী, এটিই ‘বিশ্বের দীর্ঘতম সময় ধরে চলা পরীক্ষা’। মনে করা হয়, ফানেলের ওপর যা পিচ আছে, তাতে অন্তত আরো ১০০ বছর ধরে এই পরীক্ষা চলতে পারে।

পরীক্ষাটি কোনো বিশেষ বায়ুমণ্ডলীয় অবস্থায় করা হয় না। তাই তাপমাত্রার পরিবর্তনের ফলে পিচের ফোঁটা তৈরির কোনো নির্দিষ্ট সময় নেই। তবে সপ্তম ফোঁটা তৈরির পরে পরীক্ষাগারে একটি শীতাতপ যন্ত্র লাগানো হয়েছিল।

গড় তাপমাত্রা কমে যাওয়ার কারণে বর্তমানে পিচের একটি ফোঁটা তৈরি হতে আরো বেশি সময় লাগে। আগে যেখানে আট-নয় বছর সময় লাগত, এখন সেখানে ১২-১৩ বছর সময় লাগে।

বিশ্বের অনেক বিজ্ঞানীই মনে করেন, পিচ ড্রপ পরীক্ষা সময় নষ্ট করা ছাড়া আর কিছু না। ২০০৫ সালের অক্টোবরে পার্নেল এবং মেইনস্টোনকে এই পরীক্ষার জন্য ইগনোবেল পুরস্কার (নোবেল পুরস্কারের ব্যঙ্গ করে দেয়া একটি পুরস্কার) দেয়া হয়।

পার্নেল মারা গেছেন ১৯৪৮ সালে। তাই ইগনোবেল পুরস্কার নিয়েছিলেন মেইনস্টোন।

বর্তমানে পরীক্ষাটি একটি ক্যামেরার সাহায্যে পর্যবেক্ষণ করা হয়। তবে প্রযুক্তিগত সমস্যার জন্য পিচের অষ্টম ফোঁটা তৈরির সময় তা রেকর্ড করা যায়নি।

বর্তমানে পিচ ড্রপ পরীক্ষাটি কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট লুসিয়া ক্যাম্পাসের স্কুল অফ ম্যাথমেটিক্স অ্যান্ড ফিজিক্সের পার্নেল ভবনের দোতলায় প্রদর্শনীর জন্য রাখা রয়েছে।

প্রতিবছর কয়েক লাখ মানুষ ইন্টারনেটে সেই পরীক্ষার লাইভ স্ট্রিম দেখে। সেই পরীক্ষা চাক্ষুষ করতেও পরীক্ষাগারে যায় অনেকে।

হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ২০১৩ সালের ২৩ আগস্ট মারা গেছেন মেইনস্টোনও। বর্তমানে পিচ ড্রপ পরীক্ষার দায়িত্বে রয়েছেন অ্যান্ড্রু হোয়াইট।

তবে শুধু অস্ট্রেলিয়া নয়, আয়ারল্যান্ড এবং স্কটল্যান্ডেও এই একই পরীক্ষা চলছে বহু বছর ধরে। তবে অস্ট্রেলিয়া বাদে বাকি দু’দেশের পরীক্ষার ‘বয়স’ এত বেশি নয়।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা


আরো সংবাদ



premium cement