১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

জিপিএ-৫ পেয়েও বিষাদে ভুগছে শারমিন!

শারমিন আক্তার মনির - নয়া দিগন্ত

বাবা মানসিক প্রতিবন্ধী, আর মা থেকেও নেই। বয়োবৃদ্ধ দাদী আর অভাবী চাচার সংসারে বেড়ে ওঠা। নিজের টিউশনির টাকা পড়াশোনায় যোগান দিয়ে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এবার এসএসসি-২০২৪ পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়ায় খুশি হয়েছেন শারমিন আক্তার মনির পরিবারসহ স্কুলের শিক্ষক ও প্রতিবেশীরা। কিন্তু আগামী দিনের উচ্চশিক্ষার খরচের চিন্তায় সেই আনন্দ বিষাদে পরিণত হচ্ছে শারমিন আক্তার মনির।

শারমিন আক্তার মনি ডিমলা উপজেলার ডালিয়া এলাকার মো: বদরুল ইসলামের মেয়ে। স্থানীয় গয়াবাড়ী স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে বিজ্ঞান শাখায় ২০২৪ সালের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে কৃতিত্ব অর্জন করেছে সে। বর্তমানে শারমিন তার চাচা উপজেলার শঠিবাড়ী বাজার মাংসহাটি-সংলগ্ন নাজমুল ইসলামের বাড়িতে আশ্রিত।

অদম্য মেধাবী শারমিন আক্তার মনির বাবা মানসিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় পাঁচ বছর আগে স্বামী-সন্তানকে ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন তার মা মোছা. ময়না বেগম। বুদ্ধি প্রতিবন্ধী বদরুলের নিজের বসতবাড়ি না থাকায় চাচার বাড়িতে দারিদ্র্যের কষাঘাতে বেড়ে ওঠে শারমিন। ছোট পানের দোকান আর বড় সংসারে বয়সের ভারে নুয়ে পড়া শয্যাশায়ী মা আর সন্তানের খরচ বহন করতে যখন হিমশিম খাচ্ছেন নাজমুল আলম, তখন শারমিনের উচ্চশিক্ষা যেনো অনেকটাই অধরা।

শারমিন আক্তার মনি দৈনিক নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘বাবা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে পড়াশোনার পাশাপাশি প্রাইভেট পড়িয়ে সেই টাকা স্কুলের খরচ ও যৎসামান্য দাদির খরচে যোগান দেয়ার চেষ্টা করতাম। আমার দাদি ও চাচা অর্থকষ্টের মধ্যেও আমাকে পড়াশোনার খরচ দেয়ার চেষ্টা করতো। টাকার অভাবে কি কলেজে ভর্তি হতে পারব না? আমার স্বপ্ন কি স্বপ্নই থেকে যাবে? গরিব হয়ে জন্মেছি বলেই হয়তো টাকার অভাবে লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাবে! আজ পর্যন্ত প্রাইভেট বা কোচিং কাকে বলে আমি জানি না। সহপাঠী ও বড় ভাই-বোনদের বই আর হাতে লেখা নোট ছিল আমার একমাত্র ভরসা।’

অনেকটাই আবেগপ্রবণ হয়ে শারমিন জানায়, ‘বাবা মানসিক প্রতিবন্ধী। মা থেকেও নেই। ছোট চাচা আর দাদি লেখাপড়ার খরচ চালিয়েছে। এছাড়া সরকারের দেয়া বিনামূল্যের বই পড়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে গেলেও উচ্চশিক্ষা লাভে অর্থের যোগান কোথা থেকে আসবে? কিভাবে আসবে? তাহলে আমি কি ডাক্তার হতে পারব না?’

শারমিনের চাচা নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘সাতজনের সংসারে ছোট পানের দোকানের আয় দিয়ে সংসার চালানো দায় হয়ে পড়েছে। কিন্তু ভাতিজির কলেজে পড়ালেখার খরচ কোথায় পাব? দ্রব্যমূল্যের এই বাজারে কোনোরকম বেঁচে আছি, খেয়ে না খেয়ে। আমারও ছেলে-সন্তান আছে তারাও লেখাপড়া করে।’

শারমিনের প্রতিবেশী সোহেল জানান, মেধাবী ছাত্রী হওয়ায় বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা অনেক সহযোগিতা করেছেন। সেজন্য এসএসসিতে ভালো ফলাফলও করেছে। কিন্তু ভালো কলেজে ভর্তি করতে ও কলেজের পড়ালেখা চালাতে অনেক টাকার প্রয়োজন। এত টাকা জোগাড় করা তার পরিবারের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না।

গয়াবাড়ী স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘দারিদ্র্য কখনো মেধাকে দমিয়ে রাখতে পারে না। যার উদাহরণ আমাদের মেধাবী ছাত্রী শারমিন আক্তার মনি। সে আমাদের কলেজে ভর্তি হলে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।’

স্থানীয়রা জানায়, দরিদ্র পরিবারের শারমিন আক্তার মনি এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে ভালো রেজাল্ট করায় তারা গর্বিত। প্রশাসনসহ সমাজের বিত্তবানরা নজর দিলে তার সুযোগ হবে ভালো কলেজে পড়াশোনা করার।


আরো সংবাদ



premium cement