২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ছাত্রীকে গণধর্ষণ : ৪৮ ঘণ্টা পরেও গ্রেফতার দেখানো হয়নি এএসআই রাহেনুলকে

২ নারী কারাগারে, আরো গ্রেফতার ২
গণধর্ষণের ঘটনায় আটক দুই নারীকে মঙ্গলবার আদালতে আনা হয় - ছবি : নয়া দিগন্ত

রংপুর মেট্রোপলিটন ডিবি পুলিশের এএসআই রাহেনুল ইসলামের নেতৃত্বে নগরীর হারাগাছ থানার ক্যাদারের পুল এলাকায় একটি বাড়িতে দশম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে ডেকে এনে গণধর্ষণের ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া দুই নারীকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে পিবিআই। এছাড়াও এ ঘটনায় আরো দুইজনকে লালমনিরহাট থেকে গ্রেফতার করেছে পিবিআই। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। অন্যদিকে ৪৮ ঘণ্টা পরও মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত মামলার প্রধান অভিযুক্ত মেট্রোপলিটন ডিবি পুলিশের এএসআই রাহেনুল ইসলামকে (৩৫) গ্রেফতার দেখানো হয়নি।

রংপুর আদালতের মেট্রোপলিটন কোর্ট ইন্সপেক্টর নাজমুল কাদের জানিয়েছেন, বেলা ১২টায় চাঞ্চল্যকার ছাত্রী গণধর্ষণের ঘটনায় এই মামলার তদন্ত সংস্থা পিবিআই রোববার গ্রেফতার হওয়া সুমাইয়া পারভীন মেঘলা (২২) ও সম্পা বেগমকে (৩০) আদালতে আনা হয়। বেলা চারটায় তাদেরকে অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক ইয়াসমিন আরা মুক্তার আদালতে তোলা হয়। বিচারক তাদেরকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। ওই দুই নারীর পক্ষে কেউ জামিনের আবেদনও করেননি।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই’র এসআই সাইফুল ইসলাম জানান, ঘটনার অন্যদের গ্রেফতার করতে অভিযানে থাকার কারণে বিকেলে তাদের রিমান্ড চাওয়া হয়নি। আমরা আবেদনে বলেছি রিমান্ড চাওয়া হবে। বুধবার তাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড চাইবো আমরা। তিনি বলেন, মেঘলা স্বামীপরিত্যাক্তা। তার স্বামীর বাড়ি সাহেবগঞ্জে এবং বাবার বাড়ি গুড়াতি পাড়ায়। আর সম্পাও স্বামী পরিত্যাক্তা। তার বাড়ি নগরীর কামারপাড়ায়। নগরীর বিভিন্ন প্রান্তে বাড়ি ভাড়া নিয়ে তারা সেখানে দেহ ব্যবসা করতেন।

এদিকে, আদালত থেকে নেমে যাওয়ার সময় গ্রেফতার মেঘলা জানান, তিনি এই ঘটনার সাথে কোনোভাবেই সম্পৃক্ত নন। সম্পা তাকে জোর করে ফাঁসিয়েছে।

অন্যদিকে যে বাসায় এই গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে সেই ভাড়াটিয়া সম্পা বেগম জানান, ডিবি রাহেনুল ওই ছাত্রীর সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন এবং তার বাসায় নিয়ে এসে তাকে ধর্ষণ করেন। পরে অন্যদের দিয়ে ধর্ষণ করান।

তদন্ত সূত্রগুলো জানিয়েছে, এএসআই রাহেনুলের ব্যাপারে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ তারা নিবিড়ভাবে খতিয়ে দেখছেন। বিশেষ করে হারাগাছ থানায় থাকাকালীন সময়ে থানার শীর্ষ কর্মকর্তার দাপট দেখিয়ে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের অভিযোগও খতিয়ে দেখছে তদন্ত সংস্থা।

এদিকে, চাঞ্চল্যকর এই মামলাটির তদন্তভার পাওয়া পিবিআইয়ের রংপুর জেলা পুলিশ সুপার জাকির হোসেন জানান, এ ঘটনায় সোমবার রাতভর অভিযান চালিয়ে লালমনিরহাটের সদরের মাজপাড়া থেকে থেকে বাবুল হোসেন (৪২) ও আবুল কালাম আজাদ (৪০) নামে দুইজনকে গ্রেফতার করেছি। এনিয়ে মোট চারজনকে গ্রেফতার করা হলো। তাদেরকেব জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদে আমরা অনেক তথ্য পেয়েছি এবং সে আলোকে আরো অভিযুক্তদের ধরতে অভিযান চলছে।

পিবিআইয়ের এসপি জাকির হোসেন জানিয়েছেন, এই মামলার এজহারভুক্ত আসামি রাহেনুল পুলিশ লাইন্সে আটক অবস্থায় আছেন। তিনি যেন পালিয়ে যেতে না পারেন সেজন্য আমরা আরপিএমপিকে চিঠি দিয়েছি। আমরা যাচাই-বাছাই করছি রাহেনুল কিভাবে এ ঘটনার সম্পৃক্ত। সব মিলিয়ে আরপিএমপির কাছ থেকে নিয়ে যেকোনো মুহূর্তে তাকে গ্রেফতার দেখানো হবে।

তবে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) আবু মারুফ হোসেন মঙ্গলবার সকাল ১০টায় জানান, এএসআই রাহেনুলকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে পুলিশে লাইন্সে ক্লোজড করে পুলিশের হেফাজতে রাখা হয়েছে। মামলাটি পিবিআই তদন্ত করছে। তারা চাওয়া মাত্রই আমরা রাহেনুলকে তাদের কাছে হস্তান্তর করবো।

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আব্দুল আলীম মাহমুদ জানিয়েছেন, যেহেতু ঘটনাটিতে মেট্রো ডিবি পুলিশের একজন এএসআই এজাহারভুক্ত আসামি। সেকারণে নিরপেক্ষ এবং সুষ্ঠু তদন্তের জন্যই হারাগাছ থানা থেকে মামলাটি তদন্তের ভার পুলিশ মহাপরিদর্শকের নির্দেশনায় আমরা পিবিআইকে দিয়েছি। এর মাধ্যমে আমরা আমাদের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করেতে চাই।

পুলিশ, মামলা ও পারিবারিক সূত্র জানায়, রোববার সকালে পূর্ব সম্পর্কের সূত্র ধরে রংপুর মেট্রোপলিটন ডিবির এসএসআই রাহেনুল ইসলাম ওরফে রাজু নগরীর হারাগাছা থানাধীন ময়নাকুঠি কচুটারী এলাকার ওই ছাত্রীকে ডেকে নিয়ে এসে ক্যাদারের পুল এলাকার একটি বাড়ির ভাড়াটিয়ার রুমে নিজে ধর্ষণ করার পর আরো কয়েক যুবকদের দিয়ে ধর্ষণ করায়। এ ঘটনায় মুমূর্ষু অবস্থায় ওই ছাত্রীকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

এ ঘটনায় সুমাইয়া পারভীন মেঘলা ও অপর সহযোগী সম্পা বেগমকে ঘটনার দিন গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে মামলাটি পিবিআইয়ে হস্তান্তর হওয়ায় সোমবার সন্ধ্যায় ওই দুই গ্রেফতার নারীকে পিবিআইয়ে হস্তান্তর করে পুলিশ। এছাড়াও সোমবার ঘটনার ২ নম্বর আসামি মেট্রো ডিবি পুলিশের এসএসআই (পূর্বে হারাগাছ থানায় কর্মরত) রাহেনুল ইসলাম রাজুকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করার পর আটক করে পুলিশ লাইনে পুলিশের হেফাজতে রাখা হয়েছে। এছাড়াও সোমবার রাতে পিবিআই অভিযান চালিয়ে আরো দুইজনকে গ্রেফতার করে।


আরো সংবাদ



premium cement