২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রংপুরে সাংবাদিক বাঁধনের স্ত্রীর স্ট্যাটাস নিয়ে তোলপাড়

বাঁধনের স্ত্রীর স্ট্যাটাস - ছবি : সংগৃহীত

রংপুরের নির্যাতিত সাংবাদিক রাফাত হোসেন বাঁধনের স্ত্রীর দুটি ফেসবুক স্ট্যাটাস নিয়ে সর্বত্র আলোচনা চলছে। 

বাঁধনের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত ৮ আগস্ট রংপুর মহানগরীর তিন নং চেকপোস্ট এলাকায় নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বাকিতে ক্রয়কৃত পণ্যের পাওনা টাকা চাইতে গিয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর ফজলে এলাহী ফুল ও তার সহযোগীদের সশস্ত্র হামলায় বাংলা টিভির প্রতিনিধি রাফাত হোসেন বাঁধন গুরুতর আহত হওয়ার পরেও উল্টো কাউন্সিলের মামলায় তাকে কারাগারে যেতে হয়।

সে বিষয়ে বাঁধনের স্ত্রীর দেয়া মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের কাছে দেয়া খোলা চিঠি ও বিবাহবার্ষিকী নিয়ে দুটি ফেসুবক স্ট্যাটাসে চলছে সর্বত্র তোলপাড়। ওই স্ট্যাটাসের সাথে সেদিনের ঘটনার সিসিটিভির ফুটেজসহ বিভিন্ন ডকুমেন্টও পোস্ট করেছেন তিনি।

বাঁধনের স্ত্রী ইয়াসমিন রাফাত বন্যা বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটায় নিজেদের কিছু ছবি দিয়ে একটি পোস্ট করেন। যাতে দেখা যায়, ১৪ আগস্ট ছিল বাঁধন-বন্যার ষষ্ঠ বিবাহবার্ষিকী। পোস্টটি এরকম- আজ আমাদের ষষ্ঠ বিবাহবার্ষিকী প্রতিবছরের ন্যায় বারোটা এক মিনিটে আমার স্বামী আমাকে উইশ করে এবং ফ্যামিলিসহ কেক কাটে কিন্তু আজ আর সে আমার পাশে নাই উইশ করার কেউ নেই, অনেক কষ্ট লাগছে, খুব একা মনে হচ্ছে। সে বলেছিল আমাকে এবার জামদানি শাড়ি পরাবে, সে কিন্তু জামদানি আর পড়া হলো। কখনো ভাবিনি এই দিনটা ওকে ছাড়া কাটাব। এটা কি আমার প্রাপ্য ছিল? এই বিশেষ দিনে সে আমার পাশে নেই।

এই পোস্টটি নেট দুনিয়ার ভাইরাল হয়ে সকল মহলে তোলপাড় তুলেছে। হাজার মানুষ শেয়ার করে কমেন্ট করে সমবেদনার পাশাপাশি সাংবাদিক বাঁধনের মুক্তি ও হামলাকারী সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের দাবি জানান।

অন্যদিকে ওই পোস্টের কিছুক্ষণ আগে আরো একটি পোস্ট দেন বাঁধনের স্ত্রী ইয়াসমিন। এতে তিনি রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সেদিনের ঘটনার সিসিটিভির ফুটেজ এবং কাউন্সিলর ফুলুর কাছে পাওনা টাকার স্টিল চিত্রসহ বিভিন্ন ডকুমেন্ট উপস্থাপন করে তার স্বামী কারাগারে থাকার দায় কার বলে প্রশ্ন তুলেছেন।

স্ট্যাটাসটি হুবুহু তুলে ধরা হলো-
মাননীয় রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মহোদয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছি।।।
আমি বাংলা টিভির রংপুর প্রতিনিধি রাফাত হোসেন বাঁধনের স্ত্রী ইয়াসমিন আক্তার বন্যা বলছি। আমার শ্বশুর সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা আফজাল হোসেনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বাধন ট্রেডার্স থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকার বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী বিভিন্ন সময়ে বাকিতে ক্রয় করেন রংপুর সিটি কর্পোরেশনের ১৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফজলে এলাহী ফুলু। বিভিন্ন সময়ে আমার শ্বশুর তার কাছে টাকা চাইতে গেলে তিনি টালবাহনা করেন। গত ৮ আগস্ট আমার শ্বশুর বাকি টাকা চাইতে গেলে তার ওপর দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় কাউন্সিলর ফুলু ও তারপুত্র শাওন, সজল, আকিফুলসহ একদল সন্ত্রাসী। বিষয়টি জানতে পেরে আমার স্বামী বাঁধন অফিস থেকে দ্রুত আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে আসলে কাউন্সিলর ফুলু, আকিফুল, শাওন, সজলসহ অন্যান্যরা আমার স্বামীকে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথায় আঘাত করে। গুরুতর আহত অবস্থায় পুলিশের উপস্থিতিতে তাকে তার সহকর্মীরা রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান। আমার স্বামী এবং শশুরের ওপর হামলার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ আমি আপনার কাছে এই আইডির মাধ্যমে নিবেদন করলাম। যারা আমার স্বামীকে মারলেন সেই কাউন্সিলর ফুলুর মিথ্যা মামলাটি কিভাবে তদন্ত ছাড়াই পুলিশ রেকর্ড করলো, এটি একজন নারী হিসেবে আমার কোনোভাবেই বোধগম্য নয়। মামলার নথির সাথে কাউন্সিলর ফুলু তার সন্ত্রাসী বাহিনীর কয়েকজনের মাথায় মুরগির রক্ত দিয়ে ছবি সংযুক্ত করে দিল। সেই মিথ্যা মামলায় আমার স্বামী এখন অন্ধকার কারাগারে। অথচ আজ আমাদের বিবাহ বার্ষিকী কত কিছু করব পরিকল্পনা করে রেখেছিলাম। তা আর হলো না।

মাননীয় পুলিশ কমিশনার মহোদয়,
আমি আপনার কাছে বিনয়ের সাথে জানতে চাই। একটি মিথ্যে মামলায় যদি আমার স্বামী অন্ধকার কারাগারে থাকে। তাহলে কি কারণে এখনও হামলাকারী কাউন্সিলর ফুলু এবং তার অন্যান্য সহযোগীরা বুক উঁচিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আপনি দয়া করে এই সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজটি কি একটু দেখার সময় পাবেন।

আমি রংপুরের সকল সাংবাদিক, সুধীমহল, নগরবাসী, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ সারা দেশবাসীর কাছে এই দাবি জানাচ্ছি, যে কাউন্সিলর ফুলু চেক জালিয়াতি মামলার ওয়ারেন্ট ভুক্ত আসামী। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে তিনি এই ভয়াবহ চেক জালিয়াতির মামলাটির তথ্য গোপন করে অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং আমার স্বামী বাঁধনের মামলার প্রধান আসামি। তিনি কি আইনের ঊর্ধ্বে। তিনি এখনও প্রকাশ্যে অফিস করছেন। ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আমাদের কে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছেন।

মাননীয় পুলিশ কমিশনার মহোদয়ের কাছে বিনয়ের সাথে জানতে চাই, যদি একটি নির্লজ্জ মিথ্যা মামলায় আমার স্বামী বাঁধন তার আড়াই বছরের শিশু সন্তানকে রেখে অন্ধকার কারাগারে রাতযাপন করে, এই দায়কার?

-ইতি
ইয়াসমিন রাফাত বন্যা

এই স্ট্যাটাসটিও নেট দুনিয়ায় হয়েছে ভাইরাল। বিভিন্ন গণমাধ্যম এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সবগুলোতেই হামলাকারী কাউন্সিলর ফুল, তার পুত্র শাওন ও সজল এবং আকিফুলসহ অন্যদের গ্রেফতারে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের দৃশ্যমান অবস্থান জানতে চেয়েছেন।

উল্লেখ্য, হামলার ঘটনার পর সাংবাদিক বাঁধন বাদি হয়ে কাউন্সিলর ফুলসহ হামলাকারীদের নামে একটি মামলা করেন। এই মামলার এক দিন পর কোনো ধরনের তদন্ত ছাড়াই পুলিশ কাউন্সিলর ফুলুর দায়েরকৃত একটি সাজানো ও মিথ্যা মামলা থানায় রেকর্ড করেন। এ ঘটনায় সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের কনফিডেন্স সেভিং অ্যান্ড ক্রেডিট নামের একটি সমবায়ের রেজিস্ট্রেশনভুক্ত সমবায়ী বৃহৎ প্রতিষ্ঠানে দুর্বৃত্তরা হামলা ও লুটপাট করে। এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি একটি মামলা দিলেও চার দিনেও তা রেকর্ড করেনি পুলিশ।

ঘটনার পরের দিন ৯ আগস্ট রংপুরে কর্মরত সাংবাদিক সমাজ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে আসামি গ্রেফতারের দাবি জানালেও এখনো কাউকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ। এ নিয়ে রংপুরে কর্মরত সাংবাদিক, সাংবাদিক সংগঠন, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী সংগঠন ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানানো অব্যাহত রেখেছেন।


আরো সংবাদ



premium cement
ঈশ্বরদীতে মৌসুমের সর্বোচ্চ ৪২.৪ ডিগ্রি তাপমাত্রার রেকর্ড ‘মুক্ত সাংবাদিকতা চরম সঙ্কটে’ ‘রাফা হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরাইলি সেনারা’ ৪৬তম বিএসএস প্রিলি পরীক্ষা : শুরুতেই স্বপ্নভঙ্গ ৮১ শিক্ষার্থীর মরুর উষ্ণতায় ক্ষতির মুখে কৃষি ছেলেদের কারণে বিপাকে মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির দুই বিভাগে বৃষ্টি হতে পারে ফ্রান্স, ব্রাজিল ও প্যারাগুয়ে সফরে যাচ্ছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ড সফরকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে মাইলফলক বললেন প্রধানমন্ত্রী লালমনিরহাটে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশী যুবক নিহত এখনো শেষ হয়নি বিতর্কিত আউটের রেশ, ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ মুশফিকের

সকল