১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

বাঘায় আ’লীগের ২ গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ, আহত ৫০

বাঘায় আ’লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ, আহত ৫০ - ছবি : নয়া দিগন্ত

দীর্ঘদিনের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও আধিপত্য বিস্তারের জের ধরে রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টার ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয়পক্ষের অন্তত ৫০ জন নেতা-কর্মী ও পথচারী আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। পুলিশ প্রথমে লাঠিচার্জ ও পরে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

শনিবার (২২ জুন) সকাল সাড়ে ১০টার উপজেলা পরিষদের সামনে এ ঘটনা ঘটে। উপজেলা সদরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। তবে যেকোনো সময় উভয়পক্ষের মধ্যে আবারো বড় ধরণের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে কয়েকজনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন বাঘা পৌরসভার মেয়র ও রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আক্কাছ আলী, বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুল, উপজেলার আড়ানী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম, উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শফিউর রহমান শফি, আব্দুল খালেক, জার্মান আলী ও পথচারীসহ উভয়পক্ষের অন্তত ৫০ জন।

এর মধ্যে গুরুতর আহত উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুল ও আড়ানী ইউনিয়নের রফিকুল ইসলামকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া ১৮-১৯ জনকে বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। ১০-১২ জন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। বাকিরা অন্যান্য স্থানে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। আর পুলিশের ছোড়া টিয়ারশেলে উজ্জ্বল নামে এক পথচারী আহত হন। সংঘর্ষকালে উভয়পক্ষ ইটপাটকেল ও হালকা দেশীয় অস্ত্র ব্যবহার করে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।

উপজেলা আ’লীগের বর্তমান কমিটির নেতৃত্বে যারা রয়েছেন তাদের বেশির ভাগই স্থানীয় এমপি শাহরিয়ার আলমের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। তাদের নেতৃত্বে রয়েছেন স্থানীয় আ’লীগের একটি অংশ। আর আ’লীগের আরেকটি অংশের নেতা-কর্মীরা রয়েছেন বাঘা পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আক্কাছ আলী এবং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আ’লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লায়েব উদ্দিন লাভলুর নেতৃত্বে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা পরিষদের সামনের সড়কে শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বাঘা পৌরসভার মেয়র আক্কাছ আলীর দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে উপজেলা আ’লীগের ব্যানারে মানববন্ধন ডাকা হয়। অপর দিকে সাব রেজিস্ট্রি অফিসের কতিপয় ব্যক্তি দলিল লেখক সমিতির নামে ক্রেতা-বিক্রেতার কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের প্রতিবাদে একই সময়ে বাঘা উপজেলার সচেতন নাগরিকের ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ আহবান করা হয়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলা পরিষদের সামনের সড়কে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলামের নেতৃত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য চলছিল। সেখানে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ওয়াহেদ সাদিক কবিরের সঞ্চালনায় পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস সরকার বক্তব্য দিচ্ছিলেন। এ সময় ওই কর্মসূচির পাশ দিয়ে বাঘা উপজেলা সচেতন নাগরিকের ব্যানারে পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আক্কাছ আলী এবং পাকুড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মেরাজুল ইসলাম মেরাজের নেতৃত্বে একটি বিক্ষোভ মিছিল যাচ্ছিল। এ সময় উপজেলা পরিষদের সামনের সড়কে উভয় পক্ষ মুখোমুখি হলে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন তারা। পৌনে এক ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ চলে। পুলিশ প্রথমে লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়। পরে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। সংঘর্ষ চলাকালে উভয়পক্ষের অন্তত ৫০ জন নেতা-কর্মী ও পথচারী আহত হন। সংঘর্ষকালে বাঘা বাজারসহ আশপাশের দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া কিছু সময়ের জন্য ওই রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ ছিল।

এর আগে গত ১৯ জুন বাঘায় সাব রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল লেখক সমিতির নামে নানা অনিয়ম দুর্নীতির প্রতিবাদে মানববন্ধনে অনুষ্ঠিত হয়। সেই মানববন্ধনে উপস্থিত হয়ে একাত্মতা প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আ’লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লায়েব উদ্দিন লাভলু, বাঘা পৌরসভার মেয়র ও জেলা আ’লীগের সদস্য আক্কাছ আলী ও পাকুড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেরাজুল ইসলাম মেরাজ।

তবে এ কর্মসূচির পর থেকেই এখানে উভয়পক্ষের তরফে শক্তি প্রদর্শনের মহড়া চালানোর অঘোষিত প্রচারণা চলছিল বলে স্থানীয় একটি সূত্র জানিয়েছে। এরই মধ্যে শনিবার সকালে বিবদমান দুটি পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নেয় ও সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।

আড়ানী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, আমি মানববন্ধন কর্মসূচিতে যোগ দিতে বাঘা পৌরসভা এলাকার কাছে পৌঁছলে আমার ওপর হামলা এবং মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ওয়াহেদ সাদিক কবির গণমাধ্যমকে বলেন, প্রশাসনকে জানিয়েই উপজেলা পরিষদের সামনে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করছিলাম। এ সময় আরেকটি মিছিল থেকে আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালানো হয়। এতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ অনেক নেতা-কর্মী আহত হন।

উপজেলার পাকুড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান মিরাজুল ইসলাম মেরাজ গণমাধ্যমকে জানান, বাঘা সাব রেজিস্ট্রি অফিসে কতিপয় ব্যক্তি দলিল লেখক সমিতির নামে ক্রেতা-বিক্রেতাদের কাছে জোরপূর্বক অতিরিক্ত টাকা আদায় করেন। এরই প্রতিবাদে বাঘা উপজেলার সচেতন নাগরিকের ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করা হয়। বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে যাওয়ার পথে কোনো ধরণের উসকানি ছাড়াই তারা আমাদের ওপর হামলা করে। এতে অনেকে আহত হন।

বাঘা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম জানান, পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এ ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তরিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement