১৬ জুন ২০২৪
`

ছেলে এমপি, বাবা উপজেলা চেয়ারম্যান মা জেলা পরিষদ সদস্য

ছেলে এমপি, বাবা উপজেলা চেয়ারম্যান মা জেলা পরিষদ সদস্য - ছবি : নয়া দিগন্ত

বগুড়ার আদমদীঘিতে ছেলে সংসদ সদস্য, বাবা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবং মা জেলা পরিষদের নারী সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা চলছে।

অনেকে এই পরিবারকে পাওয়ারফুল ফ্যামিলি নাম দিয়েছেন। এমন ঘটনা শুধু বগুড়া জেলা নয় সারাদেশের মধ্যে অদ্বিতীয় বলে অনেকে বলছে।

এই তিন ব্যক্তি হলেন বগুড়া-৩ (আদমদিঘি-দুপচাঁচিয়া) আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ও আদমদিঘি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক খান মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ আল মেহেদি বাঁধন, তার বাবা আদমদিঘি উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সিরাজুল ইসলাম খান রাজু পুনঃ নির্বাচিত উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবং মা মঞ্জুয়ারা খাতুন বগুড়া জেলা পরিষদের মহিলা সদস্য।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সিরাজুল ইসলাম খান রাজু স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে তৎকালীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ নেতা ও জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব এ বি এম শাজাহানের হাাত ধরে জাসদে যোগ দেন। পরবর্তীতে তিনি এ বি এম শাজাহানের নেতৃত্বে ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেন এবং দলটির আদমদীঘি উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক হন।

পরে তিনি ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিলের মাধ্যমে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। তিনি ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এর আগে তিনি আদমদীঘি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি ২০১২ সালে দলটির আদমদীঘি উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক হন।

২০১৭ সালে অনুষ্ঠিত জেলা পরিষদ নির্বাচন বিএনপিসহ বিরোধীদল বর্জন করায় সিরাজুল ইসলাম খান রাজুর স্ত্রী মঞ্জুয়ারা খাতুন মহিলা সদস্য পদে নির্বাচিত হন। একইভাবে বিএনপি ও জামায়াত ২০১৯ সালে উপজেলা নির্বাচন বর্জন করলে সিরাজুল ইসলাম খান আবারো চেয়ারম্যান হন।

২০২০ সালে তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হন এবং সেই কমিটিতে যুব ও ক্রীড়া সম্পাদকের পদে মনোনয়ন দেন ছেলে খান মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ আল মেহেদি বাধনকে। ওই একই বছর তিনি তার স্ত্রী মঞ্জুয়ারা খাতুনকে উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি করেন।

এরপর ২০২২ সালে অনুষ্ঠিত জেলা পরিষদ নির্বাচনে মঞ্জুয়ারা খাতুন দ্বিতীয় দফায় জেলা পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০২৩ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য পদে প্রার্থী হতে উপজেলা চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেন।

পরে বগুড়া-৩ (আদমদীঘি ও দুপচাঁচিয়া উপজেলা) আসনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলেও জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয়া হয় আসনটি। তাই তিনি নিজে মনোনয়নপত্র দাখিল করলেও ‘স্বতন্ত্র’ হিসেবে ছেলে বাধনকেও প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়ে দেন। পরে প্রার্থীতা প্রত্যাহারে বাধ্য হয়ে রাজু তার ছেলেকে বিজয়ী করেন।

সর্বশেষ ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত আদমদিঘি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে রাজু বিপুল ভোটে আবারো চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এভাবে একই বাড়িতে বাবা মা ও ছেলে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক শক্তিধর হওয়ায় ওই বাড়িকে অনেকে পাওয়ার হাউজ হিসেবে অভিহিত করছেন।

এদিকে বগুড়া-১ আসনের সংসদ সদস্য সাহাদারা মান্নান, তার ছেলে সাখাওয়াত হোসেন সজল ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে অনুষ্ঠিত সারিয়াকান্দি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান এবং এমপির ছোট ভাই অ্যাডভোকেট মিনহাদুজ্জামান লীটন সোনাতলা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। সেখানে এমপির ছেলে ও ভাই উপজেলা চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকে দলের ভেতরে ও বাইরে নানা রকম আলোচনা সমালোচনা রয়েছে।

এমন ঘটনাকে সুশীল সমাজ দেখছেন ভিন্নভাবে। সুশাসনের জন্য প্রচারভিযান (সুপ্র) বগুড়া জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কে জি এম ফারুক বলেছেন, ক্ষমতাসীন দল যদি তাদের নীতি পরিবর্তন না করে এবং নির্বাচন কমিশন যদি বিএনপি’র মতো বৃহত্তম একটি রাজনৈতিক দলকে ভোটে আনতে না পারে তাহলে আগামীতে কোনো নির্বাচনেই জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটবে না। সেক্ষেত্রে অনেকেই সিরাজুল ইসলাম খান রাজুর মতো এক বাড়িতে সব ক্ষমতা ধরে রাখার চেষ্টা করবেন যা গণতন্ত্রের জন্য সুখকর নয়।


আরো সংবাদ



premium cement