১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

রাজশাহীতে বাগান থেকে গুটি আম নামানো শুরু

রাজশাহীতে বাগান থেকে গুটি আম নামানো শুরু - ছবি : সংগৃহীত

রাজশাহীতে আম বাগান থেকে গুটি আম নামানো শুরু হয়েছে। জেলা প্রশাসন নির্ধারিত ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার অনুযায়ী বুধবার (১৫ মে) থেকে প্রথম দিন বাগান থেকে নামানো হয়েছে গুটি জাতের আম। পরিপক্ব হওয়া গুটি জাতের এই আম সংগ্রহের মধ্য দিয়েই মৌসুমের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হলো।

এর আগে, অনুষ্ঠিত এক সভায় রাজশাহীতে গাছ থেকে আম নামানোর সময় বেঁধে দেয় জেলা প্রশাসন। অসময়ে আম সংগ্রহ বন্ধ রাখতে গেল কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় এবারো এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বুধবার (১৫ মে) থেকে গুটি জাতের আম নামানো শুরু করেন চাষিরা। রাজশাহী জেলা প্রশাসনের নির্দেশনা মোতাবেক ১৫ মে থেকে আমের মৌসুম চলবে পুরো আগস্ট মাস পর্যন্ত। তবে এবার তীব্র তাপপ্রবাহ ও দীর্ঘস্থায়ী খরার কারণে রাজশাহীতে আমের ফলন প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। তাই অনেকটা সীমিত আকারেই প্রথমদিন আম নামানো শুরু হয়েছে। সব গাছের গুটি আম এখনো ভালোভাবে পরিপক্ব হয়নি। তাই একসাথে সব বাগানে গুটি আম পাড়াও শুরু হয়নি বলে চাষিরা জানিয়েছেন।

নগরীতে ও জেলার বাঘা, চারঘাটসহ বিভিন্ন উপজেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাগানে অল্পসংখ্যক চাষি ও ব্যবসায়ী আম নামিয়েছেন। এখনো অনেক বাগানের গুটি আম পরিপক্ব হতে শুরু করেনি। এই আম পরিপক্ব হতে আরো কিছু দিন সময় লাগবে।

আম ব্যবসায়ী খালিদ হাসান জানান, রাজশাহী জেলা প্রশাসনের বেঁধে দেয়া সময় অনুযায়ী গুটি আম পাড়া শুরু হয়েছে। তবে প্রথম দিন খুব বেশি আম পাড়া হয়নি। কারণ এখনো আম পাকেনি। তাই বাজার জমতে আরো সপ্তাহখানেক সময় লাগবে।

আম ব্যবসায়ীরা জানান, গেল কয়েক বছরের মতো এবারো জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বেঁধে দেয়া সময় অনুযায়ী গুটি জাতের আম পাড়া শুরু হয়েছে। এই আম তারা রাজশাহী শহর এবং পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর হাটে নিয়ে যাবেন। তবে বুধবার সীমিত পরিসরে আম নামানো হয়েছে। আগামী সপ্তাহে পুরোদমে গুটি আম গাছ থেকে নামানো শুরু হবে বলে জানান তারা।

গত ১২ মে রাজশাহী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে আম সংগ্রহ, পরিবহন, বিপণন ও বাজারজাত মনিটরিং সংক্রান্ত সভায় ম্যাংগো ক্যালেন্ডার প্রকাশ করা হয়। সে অনুযায়ী এ বছর গুটি আম নামানো যাবে ১৫ মে থেকে, গোপালভোগ ২৫ মে থেকে, লক্ষ্মীভোগ (লকনা) ও হিমসাগর (ক্ষীরশাপাত) ৩০ মে থেকে পাড়া যাবে। এছাড়া ১০ জুন থেকে ল্যাংড়া ও ব্যানানা আম নামবে।
১৫ জুন আম্রপালি এবং ফজলি, ৫ জুলাই থেকে বারি-৪ আম, ১০ জুলাই থেকে আশ্বিনা, ১৫ জুলাই থেকে গৌড়মতি এবং ২০ আগস্ট থেকে ইলামতি আম পাড়া যাবে। আর নতুন জাতের উদ্ভাবিত কাটিমন ও বারি-১১ আম পরিপক্ব সাপেক্ষে পাড়া যাবে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (উদ্যান) মোছাম্মত সাবিনা বেগম গণমাধ্যমকে জানান, রাজশাহীতে বুধবার গুটি জাতের আম পাড়া শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন জাতের আম পাড়া হবে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রাজশাহী জেলায় আমের সম্ভাব্য উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬০ হাজার ৩১৫ টন। আর আমের আবাদ হয়েছে ১৯ হাজার ৬০২ হেক্টর জমিতে।

জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ গণমাধ্যমকে জানান, বাজারে পরিপক্ব ও নিরাপদ আম নিশ্চিত করতে প্রতি বছরের মত এবারো তারিখ নির্ধারণ করে দেয়া হয়। কৃষক, কৃষি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্ট সবার মতামতের ভিত্তিতেই‘ম্যাংগো ক্যালেন্ডার’ নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে যদি কোনো কৃষক বা ব্যবসায়ী অপরিপক্ব আম নামান তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিষয়টি মনিটরিং করতে রাজশাহীর হাটগুলোতে সার্বক্ষণিক পুলিশ থাকবে। সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সহকারী কমিশনাররাও বিষয়টি দেখভাল করবেন।

তিনি আরো জানান, নির্ধারিত সময়ের আগে যদি কোথাও আম পাকে তাহলে স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে বেধে দেয়া সময়ের মধ্যে আম নাও পরিপক্ব হতে পারে। সে জন্য আমচাষি ও বাগান মালিকদের দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। নিজ বাগানের আম পরিপক্ব হওয়া সাপেক্ষে সেগুলো নামাতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে বেঁধে দেয়া সময়ের অনেক পরে আম নামালেও কোনো সমস্যা নেই।


আরো সংবাদ



premium cement