০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`


সিদ্ধান্ত মানছেন না এমপিরা

বেলকুচিতে নিজ প্রতিষ্ঠানের স্টাফকে চেয়ারম্যান প্রার্থী করলেন এমপি

- ছবি : নয়া দিগন্ত

এবার ষষ্ঠ উপজেলা নির্বাচনে এমপির কোনো আত্মীয় কিংবা ঘনিষ্টতা রয়েছে এমন কাউকে প্রার্থী না করার জন্য আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ রয়েছে। কিন্তু দেশের বিভিন্ন এলাকার এমপিরা পরিবারের সদস্যকে প্রার্থী করে আলোচনা-সমালোচনায় পড়েছেন।

সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলা পরিষদে নির্বাচন ঘিরে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে। নির্বাচনী প্রচার শুরু হওয়ার আগেই এই ইস্যুতে স্থানীয় রাজনীতিতে দ্বিধা-বিভক্তি তৈরি হয়েছে। এর নেপথ্যের মূল কারণ, একজন প্রার্থীর পক্ষে স্থানীয় এমপির সরাসরি হস্তক্ষেপে। বেলকুচি উপজেলায় এমপির ব্যসায়িক প্রতিষ্ঠানের স্টাফ চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়ার ইস্যুতে সেখানে সুষ্ঠু ভোট হওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী ও অন্যপ্রার্থীরা। নির্বাচনী আচরণ বিধিমালায় এমপি কোনো প্রার্থীর পক্ষে দৃশ্যমান হয়ে কাজ না করার বিধি-নিষেধ রয়েছে।

সাধারণ ভোটার ও প্রতিপক্ষ প্রার্থীরা বলছেন, এবারের নির্বাচনে ভিন্ন কৌশলের কারণে সমালোচনার মুখে পড়েছেন সিরাজগঞ্জ-৫ (বেলকুচি-চৌহালী) আসনের সংসদ সদস্য ও বেলকুচি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মমিন মন্ডল। নির্বাচনী আচরণ বিধিমালায় এমপি কোনো প্রার্থীর পক্ষে দৃশ্যমান হয়ে কাজ না করার বিধি-নিষেধ রয়েছে। এ সত্ত্বেও ইসির আইনকে অমান্য করে ভোটারদের পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে নানা-ধরণের হুমকি-ধমকি ও ভয়-ভীতি প্রদর্শন করছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি ইসিতেও জানানো হয়েছে।

নির্বাচনী এলাকার ভোটার ও সাধারণ মানুষের সাথে আলাপে জানা যায়, সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে লড়তে প্রার্থী হয়েছেন ইঞ্জিনিয়ার আমিনুল ইসলাম। এই ব্যক্তি বর্তমান এমপি মমিন মন্ডলের আস্থাভাজন ও তার মালিকানাধিন মন্ডল গ্রুপের পোষাক শিল্পের জেনারেল ম্যানেজার (অপারেশন) পদে কর্মরত। এলাকায় গুঞ্জন রয়েছে, নিজ আধিপত্য ধরে রাখতে অধীনস্থ কর্মকর্তাকে প্রার্থী করেছেন এমপি নিজেই। নিজ পরিবারের সদস্যদের প্রার্থী করলে কেন্দ্রের ও নেত্রীর বিরাগভাজন হতে পারেন। তাই কৌশলী পথ হিসেবে অনুগত ব্যক্তিকে প্রার্থী করেছেন। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার দলীয় নেতাকর্মীদের সমালোচনার মুখে এমপি আবদুল মমিন মন্ডল নিজেই।

এদিকে, সুষ্ঠু পরিবেশে ভোট অনুষ্ঠানের জন্য প্রতিপক্ষ প্রার্থীরা প্রতিকার চেয়ে সোমবার আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটি বরাবর মৌখিক অভিযোগ জানানোর পর লিখিত অভিযোগ জানবে। উপজেলা আওয়ামী লীগের ও স্থানীয় ত্যাগী নেতারা এ কথা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।

উপজেলা আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানায়, আব্দুল মমিন মন্ডল এমপি নিজের পক্ষের নেতা-কর্মীদের ইতোমধ্যেই আমিনুল ইসলামের পক্ষে নামতে নির্দেশনা দিয়েছেন। সে মোতাবেক এমপির ব্যক্তিগত সহকারীসহ সমর্থিত নেতা-কর্মীরা আমিনুল ইসলামের পক্ষে কাজ শুরু করেছেন। এ নিয়ে নির্বাচনের লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড বজায় থাকছে না বলেও প্রতিপক্ষের অন্যান্য প্রার্থীদের অভিযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশানুর বিশ্বাস জানান, প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা, সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশ উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না এমপিরা। তাদের ঘনিষ্ঠজন ও আত্মীয়দের নির্বাচনী মাঠ থেকে সরে দাড়াতে হবে। এই নির্দেশনার সম্পূর্ণ বিপরীতে চলছে বেলকুচি। এমপি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কারো সাথে পরামর্শ না করে নিজের কোম্পানির একজন চাকুরিজীবিকে প্রার্থী করেছেন। তার পক্ষে কাজ করতে নেতা-কর্মীদের চাপ প্রয়োগ করছেন।

তিনি বলেন, বেলকুচির কোনো আওয়ামী লীগ নেতা বা কর্মীর উপর ভরসা নেই মমিন মন্ডলের। যার প্রমাণ আওয়ামী লীগের শত শত নেতা থাকতে তাদের পরিবর্তে নিজের বেতনভুক্ত ব্যক্তিকে উপজেলা চেয়ারম্যান করার অপচেষ্টা। তিনি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার তোয়াক্কা করছে না। মৌখিকভাবে বিষয়টি আওয়ামী লীগের ঊর্ধ্বতন নেতাদের জানানো হয়েছে। লিখিত অভিযোগও দেয়া হবে।

আওয়ামী লীগের সিরাজগঞ্জ এনায়েতপুর থানা ইউনিটের অর্থ সম্পাদক ও বেলকুচি উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থী বদিউজ্জামান ফকির বলেন, এবার নির্বাচনে জামায়াত ও বিএনপির বলা যায় কোনো প্রার্থী নেই। সব প্রার্থীই দলীয়। তাই এমপির কারো পক্ষে না থেকে নিরপেক্ষ অবস্থানে থাকবেন এমনটাই প্রত্যাশা করেছিলাম। কিন্তু নির্বাচনী প্রচারের আগেই দেখছি, প্রতিপক্ষ একজন প্রার্থীর পক্ষে সরাসরি নেমে পড়েছেন। এটা দুঃখজনক। আমি নিজ দল আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব ও নির্বাচন কমিশনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। কারণ সুষ্ঠু ভোটের জন্য এমপির নিরপেক্ষ থাকা জরুরী।

অপর প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার আমিনুল ইসলামের ব্যক্তিগত নম্বরে ফোন করলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। আর এমপি আবদুল মমিন মন্ডলের সাথে যোগাযোগের জন্য দেয়া নম্বরে ফোন করলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।


আরো সংবাদ



premium cement