দীর্ঘ ৫৯ বছর পর চালু হলো রাজশাহী মুর্শিদাবাদ নৌপথ
- রাজশাহী ব্যুরো
- ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৯:৫১
দীর্ঘ ৫৯ বছর পর বাংলাদেশ-ভারত নৌ প্রটোকলের আওতায় চালু হয়েছে রাজশাহী-মুর্শিদাবাদ নৌপথ। রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার সুলতানগঞ্জ থেকে মুর্শিদাবাদের মায়া পর্যন্ত নৌপথে আনুষ্ঠানিকভাবে নৌযান চলাচলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয় সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টায়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের ফলে রাজশাহীর সুলতানগঞ্জ ঘাটটি এখন থেকে নদী বন্দরের মর্যাদা পেয়েছে।
উদ্বোধনের পর এ নৌপথে বাংলাদেশ থেকে পণ্যবোঝাই একটি নৌযান ভারতের মায়া নদীবন্দরের উদ্দেশে রওনা দেয়। আর সেখান থেকে একটি পণ্যবোঝাই নৌযান আসে সুলতানগঞ্জে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এই নৌপথটি চালুর মধ্য দিয়ে ভারতের সাথে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের নতুন দুয়ার খুলল। আপাতত শুধু পণ্য আনা-নেয়া শুরু হলেও ভবিষ্যতে ইমিগ্রেশন চালুরও পরিকল্পনা রয়েছে। এখানে ইমিগ্রেশন চালু হলে রাজশাহীর মানুষকে ভারতে যাতায়াত করতে আর চাঁপাই নবাবগঞ্জের সোনা মসজিদ কিংবা অন্যান্য স্থলবন্দর ঘুরতে হবে না। পদ্মা পাড়ি দিয়ে সহজেই ভারতে যাওয়া যাবে।
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী সুলতানগঞ্জ-মায়া নৌপথে পণ্যবাহী নৌযান চলাচলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এ সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা, রাজশাহী সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন এবং রাজশাহীতে নিযুক্ত ভারতের সহকারী হাইকমিশনার মনোজ কুমারসহ রাজশাহীর স্থানীয় এমপিরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রায় ছয় দশক আগে রাজশাহী থেকে নৌপথে ভারতে পণ্য পারাপার করা হতো। প্রতিবেশী দেশ ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলার সাগরদীঘি থানার মায়া এলাকা থেকে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার সুলতানগঞ্জ পর্যন্ত পণ্য আনা-নেয়া হতো নৌপথে। বাংলাদেশ থেকে পাঠানো হতো পাট ও মাছ। আর ভারত থেকে আসতো বিভিন্ন পণ্য। ৫৯ বছর (প্রায় ছয় দশক) পর আবারো চালু হলো এই নৌপথ।
ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, এই নৌপথে দুই দেশের মধ্যে বছরে হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হবে।
সূত্র জানায়, ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের আগে এই নৌপথ দিয়ে বিভিন্ন ধরণের পণ্য আনা-নেয়া হতো। তবে নানা কারণে এতদিন এই নৌপথ ও নদীবন্দর বন্ধ ছিল। অবশেষে ৫৯ বছর পর নৌপথটি আবার চালু হলো। এর মাধ্যমে বছরে হাজার কোটি টাকার বাণিজ্যের সম্ভবাবনা তৈরি হয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা আশা করছেন। শুরুতেই পণ্য আনা-নেয়া শুরু হলেও আগামীতে এই নদীবন্দর নিয়ে আরো অনেক কিছু করার পরিকল্পনা রয়েছে দুই দেশের।
সংশ্লিষ্টরা আরো জানান, এই নৌপথ ব্যবহার করে ভারতের সাথে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য শুরু হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে এই পথে ভারত থেকে সিমেন্ট তৈরির কাঁচামাল, পাথর, মার্বেল, খনিজ বালু ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের খাদ্যসামগ্রী বাংলাদেশে আসবে। আর বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক, মাছ, ইট, পাট ও পাটজাত পণ্য ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের কৃষিপণ্য ভারতে যাবে। এই পথে আমদানি-রফতানিতে দুই দেশেরই সময় ও খরচ কমবে। মাত্র এক ঘণ্টায় এপার থেকে ওপারে যেতে পারবে নৌযান। তাতে উপকৃত হবেন দুই দেশের ব্যবসায়ীরা।
সুলতানগঞ্জ নৌঘাটটি রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়ক থেকে মাত্র এক কিলোমিটার ভেতরে পদ্মা-মহানন্দার মোহনায় অবস্থিত। অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গের মায়া নৌঘাটটি মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর মহকুমা শহরের কাছে ভারতীয় ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের সাথে যুক্ত। সুলতানগঞ্জের এই পয়েন্টে সাধারণত সারা বছরই গভীর পানি থাকে। ফলে সুলতানগঞ্জ-মায়া পথে নৌবাণিজ্যে পরিবহন খরচ কমবে। এছাড়া বিপুলসংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
সূত্র জানায়, এর আগে নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের সভায় সিদ্ধান্ত হয়- বাংলাদেশের রাজশাহীর সুলতানগঞ্জ আর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ধুলিয়ান নৌরুটে বাণিজ্য চালুর। রাজশাহী থেকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান পর্যন্ত ৭৮ কিলোমিটার একটি নৌপথের অনুমোদন থাকলেও পদ্মার নাব্যতা সংকটের কারণে কার্যকর করা হয়নি। ফলে রুটটি সংক্ষিপ্ত করে রাজশাহীর গোদাগাড়ীর সুলতানগঞ্জ থেকে ভারতের মুর্শিদাবাদের মায়া নৌবন্দর পর্যন্ত আড়াআড়িভাবে ২০ কিলোমিটার পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে পণ্য আনা নেয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সুলতানগঞ্জ থেকে মায়া নৌঘাটের নদীপথে দূরত্ব মাত্র ১৭ কিলোমিটার। সুলতানগঞ্জ নৌঘাটটি রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়ক থেকে এক কিলোমিটার দক্ষিণের পদ্মার শাখা নদী মহানন্দার মোহনার কাছাকাছি। সারাবছর সুলতানগঞ্জের এই পয়েন্টে গভীর পানি থাকে।
অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গের ময়া নৌঘাটটি মুর্শিদাবাদ জেলার জঙ্গিপুর মহকুমা শহরের কাছে ভারতীয় ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের সাথে যুক্ত। ফলে সুলতানগঞ্জ-ময়া পথে নৌবাণিজ্য শুরু হওয়ায় পরিবহন খরচ অনেকাংশে কমে যাবে। এতে রাজশাহীর অর্থনীতি গতিশীল হবে এবং ব্যাপক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।
এদিকে সুলতানগঞ্জ নৌবন্দর ও সুলতানগঞ্জ-মায়া নৌপথে নৌযান চলাচলের উদ্বোধন উপলক্ষে এক সূধী সমাবেশের আয়োজন করে বিআইডব্লিউটিএ।
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন রাজশাহী সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা, রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী, রাজশাহী-৩ আসনের এমপি আসাদুজ্জামান আসাদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের এমপি আব্দুল ওদুদ, রাজশাহী-৪ আসনের এমপি আব্দুল কালাম আজাদ।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান কমোডর আরিফ আহমেদ মোস্তফা। স্বাগত বক্তব্য দেন বিআইডব্লিউটিএ’র যুগ্মসচিব সেলিম ফকির।
এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। তাই এই নদীবন্দর চালু করা সম্ভব হলো। এখন থেকে কম খরচে ভারত থেকে পণ্য আমদানি করা যাবে। এতে করে দুই দেশই উপকৃত হবে।
রাজশাহী সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, আমরা আজ অত্যন্ত আনন্দিত। পিছিয়ে পড়া রাজশাহীতে নৌবন্দর চালু হলো। এটির মাধ্যমে রাজশাহীর ব্যবসা বাণিজ্য বাড়বে। আমরা অনেক দিক দিয়ে উপকৃত হবো।
ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা বলেন, প্রতিবেশী দেশকে ভারত সব সময় গুরুত্ব দেয়। ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সব ধরনের যোগাযোগ বৃদ্ধিতে ভারত আন্তরিক। এই নদীবন্দর দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে আরো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন তিনি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা