১৮ মে ২০২৪, ০৪ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৯ জিলকদ ১৪৪৫
`


রাজশাহীতে নার্সকে যৌন হয়রানির অভিযোগ চিকিৎসকের বিরুদ্ধে

রাজশাহীতে নার্সকে যৌন হয়রানির অভিযোগ চিকিৎসকের বিরুদ্ধে - প্রতীকী ছবি

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে নার্সকে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

অভিযুক্ত চিকিৎসকের নাম মামুন-অর-রহমান। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যানেসথেসিয়া ডিপ্লোমা করছেন। সেখান থেকেই কোর্স সম্পন্ন করতে এসেছেন রামেক হাসপাতালে।

সূত্র বলছে, এর আগে ডা: মামুন ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে এমবিবিএস শেষ করেন। এরপর চট্টগ্রামের একটি হাসপাতালে যোগ দিয়েছেন। ছুটি নিয়ে এখন অ্যানেসথেসিয়া কোর্স করছেন। রামেক হাসপাতালে এসে তিনি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) দায়িত্বে ছিলেন। সেখানেই যৌন হয়রানির ঘটনাটি ঘটিয়েছেন গত ১৮ ও ১৯ জানুয়ারি। পরদিন তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এরপর গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি।

রামেক হাসপাতালের একটি সূত্র জানায়, ১৮ জানুয়ারি বেলা ১১টার দিকে আইসিইউতে ডা: মামুনের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন সদ্য চাকরিতে যোগ দেয়া একজন নার্স (২৫)। ডা: মামুন তখন হাতের কনুই দিয়ে ওই নার্সের স্পর্শকাতর অঙ্গে আঘাত করেন। সেদিন বিষয়টি টের পেলেও চুপ করে থাকেন ওই নার্স। পরদিন ওই নার্স ডা: মামুনকে এনজি টিউব দিচ্ছিলেন। তখন ডা: মামুন তার হাত ধরেন। ওই নার্স দ্রুত সরে রিসিপশনে গিয়ে বসেন। এসময় পেছন থেকে গিয়ে ডা: মামুন তার পিঠে এবং স্পর্শকাতর অঙ্গে স্পর্শ করেন। ক্রমাগত এমন যৌন হয়রানির শিকার হয়ে ওই নার্স তার এক সহকর্মীকে জানান। এরপর তিনি বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের রামেক হাসপাতাল শাখার সভাপতি শাহাদাতুন নূর লাকি ও সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ খলিলুর রহমানকে জানান।

সেদিনই তারা আইসিইউতে ডা: মামুনের কাছে যান। তারা মামুনের কাছে ঘটনার বিষয়ে জানতে চান। ডা: মামুন তখন তাদের কাছে ‘সরি’ বলেন। তিনি বলেন, ‘সরি’ কথাটি তিনি হাসপাতাল পরিচালকের কাছে গিয়েও বলতে চান। এরপর তারা সবাই হাসপাতাল পরিচালকের কার্যালয়ে যান।

সেখানে নার্সরা ডা: মামুনের এমন আচরণের বিষয়টি হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানীকে জানান। তখন ডা: মামুনও উপস্থিত ছিলেন। তিনি তার দোষ স্বীকার করেন। এসময় তাৎক্ষণিকভাবে ডা: মামুনকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য নির্দেশ দেন হাসপাতাল পরিচালক। একইসাথে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন তিনি।

তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা: হাবিবুল্লা সরকারকে। কমিটিতে একজন নার্সকে রাখা হয়েছে। আর বাকি চারজনই চিকিৎসক। নার্সদের অভিযোগ, তারা এখন ঘটনাটিকে ভিন্নখাতে নেয়ার চেষ্টা করছে। করণীয় ঠিক করতে নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন সোমবার দুপুরে জরুরি সভা করেছে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের রামেক হাসপাতাল শাখার সভাপতি শাহাদাতুন নূর লাকি জানান, ‘এখানেই আমরা চাকরি করি। এখানেই একটা ঘটনা ঘটেছে। কী হচ্ছে সেটা আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। আপাতত এর চেয়ে বেশি আমরা কিছু বলতে চাই না।’

রামেক হাসপাতালের নার্সিং সুপারিনটেনডেন্ট আনোয়ারা খাতুন জানান, ‘এ রকম কথা আমি শুনেছি।’

আইসিইউ’র ইনচার্জ ডা: আবু হেনা মোস্তফা কামাল সাংবাদিকদের জানান, ‘যৌন হয়রানির একটা ঘটনা ঘটেছে বলে আমিও শুনেছি। সেদিন আমি ছুটিতে ছিলাম। তাই সত্য-মিথ্যা বলতে পারব না।’

অভিযুক্ত চিকিৎসক মামুন-অর-রহমান সাংবাদিকদের জানান, ‘একটা সমস্যা হয়েছে। সেটা তো অনেক রকমই হতে পারে। এ বিষয়ে আমি আর কী বলব! স্যারেরা তদন্ত করে দেখছেন। তাদের সাথে কথা বললেই ভালো হয়।’

রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী সাংবাদিকদের জানান, ‘এটা ছোট-খাট একটা ঘটনা। আমি তদন্ত কমিটি করে দিয়েছি। অভিযুক্ত চিকিৎসককে ২০ জানুয়ারিতেই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।’


আরো সংবাদ



premium cement