সাংবাদিক-সাহিত্যিক সানাউল্লাহ নূরী

আজ ১৫ জুন। প্রখ্যাত সাংবাদিক ও সাহিত্যিক সানাউল্লাহ নূরীর ২০তম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০০১ সালের এই দিনে তিনি ইন্তেকাল করেন। তার জন্ম ১৯২৮ সালের ২৮ মে লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চর ফলকন গ্রামে। শিক্ষাজীবনে বাড়ির কাছের অ্যাংলো-অ্যারাবিক মাদরাসা থেকে ষষ্ঠ শ্রেণীতে বৃত্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে উচ্চতর নিউ স্কিম মাদরাসায় ভর্তি হন। নেত্রকোনা শহরের আঞ্জুমান হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হয়ে ঢাকার জগন্নাথ কলেজে ভর্তি হন। ভাষা আন্দোলন ও তমদ্দুন মজলিসের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় লেখাপড়ায় ছেদ পড়ে। পরে বিএ পাস করেন। সানাউল্লাহ নূরী ছাত্রজীবন থেকেই সাহিত্য ও সাংবাদিকতার সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি ছিলেন নিরলস, দক্ষ ও নির্ভীক কলমসৈনিক। চল্লিশের দশক থেকে শুরু করে আমৃত্যু সাহিত্য ও সাংবাদিকতার জগতে কাজ করেছেন। তার লিখিত গ্রন্থগুলো দেশের সুধী মহলে সাড়া জাগিয়েছিল। অষ্টম শ্রেণীতে পড়ার সময়েই ওয়ার্ডসওয়ার্থের ‘লুসি গ্রে’ এবং কিটসের ‘ফায়ারিং সং’ কবিতা অনুবাদ করেন। দশম শ্রেণীর ছাত্রাবস্থায় আন্ধার মানিকের রাজকন্যা উপন্যাস লিখেন।
১৯৪৭ সালের ডিসেম্বরে অর্ধসাপ্তাহিক ‘ইনসান’ পত্রিকার যুগ্ম সম্পাদক হওয়ার মাধ্যমে সাংবাদিকতার জগতে পা রাখেন তিনি। ১৯৪৮ সালে দৈনিক আজাদের বার্তা বিভাগে যোগ দেন। বিভিন্ন সময় তমদ্দুন মজলিসের মুখপত্র সাপ্তাহিক সৈনিক, মওলানা ভাসানী প্রতিষ্ঠিত সাপ্তাহিক ইত্তেফাক এবং দৈনিক মিল্লাত, মাহে নও, মাসিক সওগাত ও দৈনিক নাজাতে কাজ করেন। ১৯৫৫ সালে তিনি সিলভার বার্ড নামে মার্কিন প্রকাশনা সংস্থার ঢাকা শাখার পাঠ্যপুস্তক বিভাগের খণ্ডকালীন সম্পাদক নিযুক্ত হন। ১৯৫৭ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত মার্কিন প্রতিষ্ঠান ফ্রাঙ্কলিন পাবলিকেশনের ঢাকা শাখার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৪ সালে দৈনিক পাকিস্তানের জন্মলগ্নে এর সহকারী সম্পাদক পদে যোগ দেন। ১৯৭৯ পর্যন্ত এ পদে ছিলেন। ১৯৭৯ থেকে ১৯৮৬ সাল দৈনিক দেশ পত্রিকার সম্পাদক, ১৯৮৭ থেকে ১৯৯৪ দৈনিক জনতার সম্পাদক এবং ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত দৈনিক দিনকালের সম্পাদক ছিলেন।
১৯৮৮ সালে ‘বাংলাদেশ কাউন্সিল অব এডিটরস’ গঠন করেন তিনি। জাতীয় শিশু-কিশোর সংগঠন ফুলকুঁড়ি আসরের সভাপতি ছিলেন ১৯৭৭ থেকে আমৃত্যু। ৬০টির মতো দেশ ভ্রমণ করেছেন। ১৯৮২ সালে সাহিত্য ও সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে অনন্য অবদানের জন্য তাকে একুশে পদক দেয়া হয়।
- সঙ্কলিত