বাইডেন আমেরিকাকে বাঁচাতে পারেন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়ে
- জেরেমি মায়ার
- ২৩ মে ২০২৪, ০০:০০
নভেম্বরের নির্বাচন হলো সেই খেলার পুনরাবৃত্তি, যেটি পুরো আমেরিকার মানুষ কামনা করে না। আমাদের ইতিহাসের সবচেয়ে বয়স্ক ও সবচেয়ে অজনপ্রিয় দুই প্রার্থীর মধ্যে হতে যাচ্ছে এ পুরনো খেলা। এটি এভাবে হওয়া উচিত হচ্ছে না।
রিপাবলিকানরা সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে সেঁটে আছেন। ট্রাম্পের মৃত্যু অথবা শারীরিকভাবে অক্ষম না হওয়া পর্যন্ত তিনিই তাদের মনোনীত প্রার্থী। জেলের বাইরে থাকতে হলে তাকে জিতে আসতেই হবে।
তবে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের পক্ষে একটি উপায় আছে। দেশ ও ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মঙ্গলের কথা ভেবে তিনি স্বেচ্ছায় নিজেকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে নিতে পারেন। বাইডেন এই গ্রীষ্মের যেকোনো সময় ঘোষণা করতে পারেন, তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন। তিনি ঠিক সেই একই যুক্তি ব্যবহার করতে পারেন; যে যুক্তি দিয়ে ২০২০ সালে মনোনয়ন পেয়েছিলেন। সে সময় তিনি আন্তরিকভাবে এবং সঠিকভাবে বিশ্বাস করেছিলেন যে, তিনিই একমাত্র ডেমোক্র্যাট প্রার্থী যিনি ট্রাম্পকে হারাতে পারেন। আর এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। এ মুহূর্তে কয়েকজন ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটের মধ্যে বাইডেন হলেন একমাত্র ব্যক্তি যার কারণে ট্রাম্প আবারো নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ পেতে যাচ্ছেন।
প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ রাজ্যগুলোতে নির্বাচনী ফল বাইডেনের জন্য বিরূপ।
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বাইডেনের সাম্প্রতিক ভোটপ্রাপ্তি খুব কুৎসিত দেখাচ্ছে। দোলাচলে থাকা রাজ্যগুলোতে তরুণ, কৃষ্ণাঙ্গ ও হিস্পানিক ভোটারদের ভোট অত্যন্ত গুরুতর। দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনে বাইডেনকে অনেকে খুব বেশি বৃদ্ধ মনে করেন।
ভোটারদের কিছু ধারণা হয়তো পরিবর্তন হতে পারে। তবে তাদের ধারণার চেয়ে বাইডেন অপেক্ষাকৃত বেশি তরুণ অথবা সামর্থ্যবান এমন হওয়ার সম্ভাবনা তো নেই।
বাইডেনের ভোট প্রাপ্তি ভয়ঙ্কর রকমে কম। অবস্থা এমন যে, আমেরিকা আগামী নভেম্বরে ট্রাম্পের বিজয় দেখতে যাচ্ছে।
ডেমোক্র্যাটরা যদি পেনসিলভানিয়ার গভর্নর হোস শাপিরোকে মনোনয়ন দিতেন; তাহলে তিনি ট্রাম্পকে পরাজিত করতে পারতেন যেমনটি ফুটবলে লেব্রন জেমস হারিয়ে দিয়েছেন কেভিন হার্টকে। এ ছাড়াও আরো অনেকে আছেন, যেমন মিশিগানের গভর্নর গ্রিশেন হুইটমার, মিনেসোটার সিনেটর অ্যামি ক্লোবুচার এবং নিউ জার্সির সিনেটর কোরি বুকার। তাদের তারুণ্যদীপ্ত কর্মকুশলতা ও বিনয়ী চরিত্রের পাশে ট্রাম্পকে বৃদ্ধ ও মলিন মনে হবে।
আর ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসও হয়তো মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে গুরুতর হুমকি হয়ে উঠতে পারতেন। কিন্তু তিনি বাইডেনের চেয়েও ভোটে খারাপ করেছেন। সুতরাং বাইডেনের প্রতিনিধি সম্মেলনে হ্যারিসকে উন্মুক্ত প্রাইমারিতে মনোনয়ন দেয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। তারা সেই ঝুঁকি নেয়ার চেয়ে বরং ট্রাম্পকে খুব বাজেভাবে হারাতে চান।
তাহলে ক্ষমতার সব সুবিধা ছেড়ে দেয়ার কী হবে? সত্যি বলতে কি, এ বছর তেমন সুযোগ কিন্তু বেশি নেই।
বাইডেন, বেশির ভাগ মানগত পরিমাপে চমৎকার সফলতার সাথে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু উচ্চ মূল্যস্ফীতি, আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার এবং গাজায় ইসরাইল-হামাস যুদ্ধের জন্য তাকে দোষারোপ করা হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের মতো একটি জটিল সঙ্কটের ক্ষেত্রে একটি নতুন মুখ বরং আরো ভালোভাবে কাজ করতে পারে।
একটি উন্মুক্ত জাতীয় সম্মেলন কী ডেমোক্র্যাটদের জন্য বিশৃঙ্খলাপূর্ণ বিপর্যয় হয়ে দেখা দেবে না?
আসুন ট্রাম্পের দিক থেকে শিখে নিই। ২০১৬ সালের রিপাবলিকান কনভেনশনে যখন ট্রাম্পের সবচেয়ে জোরালো প্রতিদ্বন্দ্বী, টেক্সাসের সিনেটর টেড ক্রুজ, ট্রাম্পকে সমর্থন দিতে অস্বীকার করলেন, যা আধুনিক যুগে আগে কখনো ঘটেনি, তখন ট্রাম্প কিন্তু আতঙ্কিত হননি। তিনি জানতেন, এ ধরনের নাটক দুর্দান্ত আকর্ষণ তৈরি করে। তিনি যথার্থই বুঝেছিলেন।
ডেমোক্র্যাটিক পার্টির উন্মুক্ত কনভেনশনও দুর্দান্ত আকর্ষণ তৈরি করবে
আধুনিক কনভেনশনগুলোতে সবকিছু আগে থেকে ঠিক করা থাকে এবং সচরাচর খুবই বিরক্তির বিষয় হয়ে দাঁড়ায় যা দর্শক টানতে হিমশিম খায়। হ্যারিস, হুইটমার, শাপিরো এবং অন্য প্রতিনিধিদের নিয়ে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির একটি উন্মুক্ত কনভেনশন বিস্ময়কর আকর্ষণীয় ইভেন্ট হয়ে উঠবে। মঞ্চে দুর্দান্ত তুখোড় বক্তৃতা, রাজনীতিবিদ ও তারকা ব্যক্তিত্বদের কাছ থেকে অপ্রত্যাশিতভাবে কারো প্রতি সমর্থনদান, সমাবেশ, সঙ্গীত ও মিছিল ইত্যাদি দেখে জাতি মন্ত্রমুগ্ধ স্তব্ধ হয়ে যাবে।
প্রেসিডেন্ট পদে জনমত গ্রহণের কোনো কার্যকারিতা নেই। ট্রাম্প কি জিতবেন? নাকি বাইডেন? কারো কাছেই তো জাদুকরের ক্রিস্টাল বল নেই।
মি. প্রেসিডেন্ট, আপনি সেসব বয়স্ক মার্কিনিদের একজন যারা স্মরণ করতে পারেন, এ ধরনের কনভেনশনগুলো কেমন আকর্ষণীয় ও প্রভাবশালী ছিল। কিন্তু এখন এসব কনভেনশন পুরোপুরিই অনুমানযোগ্য এবং প্রায় অর্থহীন হয়ে পড়েছে। কেন আপনি রিপাবলিকানদের কাছে একটি চমক সৃষ্টি করবেন না? কনভেনশন থেকে কয়েক দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো একজন পছন্দমতো ব্যক্তিকে বাছাই করে নিতে দিন।
কেন আপনি সেই অনন্য ব্যক্তিত্ব হিসেবে ইতিহাসের পাতায় স্থায়ী আসন করে নেবেন না, যিনি ট্রাম্পকে দুবার হারিয়ে দিয়ে আমাদের প্রজাতন্ত্রকে রক্ষা করেছেন? প্রথমবার আপনি তাকে হারিয়েছেন নির্বাচনে লড়াই করে। এবার আপনি তাকে হারিয়ে দিতে পারেন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়ে।
লেখক : জর্জ ম্যাসন ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের
অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর
ইউএসএটুডে পত্রিকায় গত ২০ মে প্রকাশিত নিবন্ধ
অনুবাদ : মুজতাহিদ ফারুকী
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা