১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

পার্বত্য চট্টগ্রামে কেএনএফের উত্থান ও করণীয়

-

গত ০২ এপ্রিল বান্দরবানের রুমা ও থানছি উপজেলায় মাত্র ১৬ ঘণ্টার ব্যবধানে তিনটি ব্যাংকে কথিত কেএনএফের (কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট) সফল অপারেশন, অর্থ ও অস্ত্র লুট, ব্যাংক ম্যানেজারকে অপহরণ, দিনের বেলায় থানায় হামলার অপচেষ্টা এবং তৎপরবর্তীতে পার্বত্য এলাকায় সেনাসহ সংশ্লিষ্ট বাহিনীর চলমান যৌথ অভিযান, সেনাপ্রধানের ঘটনাস্থলে উপস্থিতি, সর্বোপরি ন্যূনতম তিনজন মন্ত্রীর (সেতু, পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র) মন্তব্য, প্রভৃতি নিয়ে সারা দেশে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
এর আগে গত ০৭ এপ্রিল/২৩ মাসে রাতে ওই জেলার রোয়াংছড়ি উপজেলা সদর থেকে ১২-১৩ কিলোমিটার দূরে দখামতাং পাড়ার রোয়াংছড়ি-রুমা সড়কে পাহাড়ি উগ্রবাদী সংগঠন ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক) এবং কেএনএফ তথা কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের মধ্যে থেমে থেমে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। পরদিন সেনা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আটজনের লাশ উদ্ধার করেন।
তারও আগে ২২ মার্চ/২৩ বর্ণিত খামথাং পাড়ার পাশের রামথার পাড়ায় কারবারি থংচুল বমকে (৭০) কে বা কারা হত্যা করে ফেলে রেখে গিয়েছিল; যার রহস্য আজো উদঘাটন হয়নি। তারও ৫ দিন আগে ১৭ মার্চ/২৩, ওই জেলাধীন রুমা উপজেলার বগালেক-কেওক্রাডং-ধুপ পানি নির্মাণাধীন সড়ক থেকে একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা সার্জেন্টকে অপহরণ করা হলে, ১৬ দিন পর তিনি মুক্তিপণের বিনিময়ে ছাড়া পান। সর্বোপরি বিগত ১২ মার্চ/২৩ ওই এলাকার পাইক্ষং পাড়া ও রৌনিন পাড়ার মাঝামাঝি কাটা পাহাড় নামক স্থানে কেএনএফ সদস্যরা সেনাবাহিনীর টহল দলের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় নাজিম উদ্দিন নামের সেনাবাহিনীর একজন মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার নিহত ও দুই সেনাসদস্য আহত হন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ে কেএনএফের গোপন আস্তানায়, সমতলের জঙ্গিগোষ্ঠী জামাতুল আনসার ফিল্ হিন্দোল শারক্বিয়ার সদস্যদের প্রশিক্ষণ গ্রহণের সংবাদপ্রাপ্তির প্রেক্ষাপটে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বর্ণিত এলাকার বিভিন্ন স্থানে অভিযান শুরু করলে, ৪০ জন জঙ্গিকে তখন গ্রেফতার করা সম্ভব হয়েছিল। নিরাপত্তাজনিত কারণে কর্তৃপক্ষ বান্দরবান পার্বত্য জেলাধীন উপজেলা রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচিতে পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বারবার।
এসব ঘটনাবলির পটভূমিতে কুকি-চিন সংগঠন সংক্রান্ত সংক্ষিপ্ত কিছু তথ্য নিম্নে বিবৃত হলো :

‘কুকি-চিন’ সংক্রান্ত কিছু তথ্যাদি
বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব সীমান্তে অবস্থিত ভারতের সেভেন সিস্টার নামীয় প্রদেশগুলোর অন্যতম হচ্ছে মিজোরাম; যার অধিবাসীদের বেশির ভাগ মিজো হিসেবে পরিচিত। ওই মিজোরা, যারা কুকি-চিন হিসেবে পরিচিত; তারা বাংলাদেশের বম, লুসাই পাংখোয়া জাতিগোষ্ঠীর বেশির ভাগ মানুষ। তাদের একটি বৃহৎ অংশ, বর্তমানে বাংলাদেশের বান্দরবান পার্বত্য জেলাধীন বান্দরবান সদর, রুমা, রোয়াংছড়ি, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলাধীন বাঘাইছড়ি, বিলাইছড়ি ও বরকল উপজেলায় বসবাস করে। এ ছাড়া একই এলাকাগুলোর সন্নিহিত অন্য দেশ মিয়ানমারভুক্ত চিন প্রদেশ এবং ভারতভুক্ত মিজোরামেও তাদের বসতি রয়েছে। বান্দরবানের কাছাকাছি মিজোরামের একটি জেলার নাম লুঙ্গৎলাই। আর মিয়ানমারের সীন-এর অংশ পালেতওয়া টাউনশিপের মাটুপি, একই অঞ্চলের অংশ। এর কাছে আরাকানের মংডু। অর্থাৎ চার ধরনের প্রশাসনিক পরিচয় নিয়ে, এ অঞ্চলে রয়েছে বহু জাতিসত্তার মানুষ। বহুকাল ধরে এরকম জাতিসত্তাগুলোর মধ্যে নৃতাত্ত্বিক বন্ধন ঘিরে বিবিধ ভাঙাগড়া, সঙ্ঘাত-সংঘর্ষ ছিল এবং আছে। তার মধ্যে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের মিশেলও যুক্ত হয় প্রতিনিয়ত। এর ধারাবাহিকতায় মিজোরামের রাজধানী আইজলে বিগত ফেব্রুয়ারি/২০২৩ থেকে মিজোরা, বাংলাদেশের কুকি-চিনদের ব্যাপারে সমব্যথী হয়ে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করছে। তারা তাদের সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকারকে, বাংলাদেশের কুকি-চিনদের উদারভাবে আশ্রয় দেয়ার জন্য দাবি জানাচ্ছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে।

মিজো জাতীয়তাবাদ
‘মি’ শব্দের অর্থ (মিজো ভাষায়) মানুষ, আর ‘জো’ শব্দের অর্থ হচ্ছে ‘পাহাড়’। অর্থাৎ মিজো শব্দের অর্থ পাহাড়ের মানুষ। ধারণাটি বেশ বড়। এতে অনেক জাতিসত্তা অন্তর্ভুক্ত। আইজলের মিজোদের বক্তব্য হলো, ‘কুকি-চিন’রাও ‘জো’। সুতরাং তারা বিপদে পড়ে যদি মিজোরামে ঢুকে থাকে, তাহলে তাদের তাড়ানো যাবে না। মিজোরামের বর্তমান সরকারও এরকম মনোভাব সমর্থন করে বলে জানা যায়। তবে বিএসএফ তথা সীমান্তরক্ষীরা কেন্দ্রীয় সরকার নিয়ন্ত্রিত বিধায় সীমান্তে অন্য দেশের ‘জো’রা বাধাপ্রাপ্ত হয়। এতে তারা ক্ষুব্ধ। যেহেতু মিয়ানমারের চিন বাংলাদেশের বান্দরবান এবং ভারতের মিজোরাম মিলে জোদের মধ্যে প্রায় সবাই খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী, সে কারণে আইজলে বিক্ষোভকারীদের মধ্যে ধর্মতাত্ত্বিক একটি শক্ত বন্ধনও কাজ করছে। বম, পাংখুয়া, লুসাই জনগোষ্ঠীর সদস্যরা ব্রিটিশ খ্রিষ্টান হিসেবে পরিচিত। প্রায় ১০০ বছর আগেও, তাদের প্রায় সবাই প্রকৃতিপূজারী ছিলেন; যারা পশ্চিমাদের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে, তাদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত চার্চগুলোর বিবিধ কার্যক্রমে বর্তমানে খ্রিষ্টান হয়ে গেছেন। লক্ষণীয় যে, ‘বম’ শব্দের অর্থ হচ্ছ ‘বন্ধন’; যার সামাজিক চেহারা একই রকম অব্যাহত রয়েছে।
জাতিগত পথরেখা
ভারতবর্ষ এবং মিয়ানমারের দখল, ‘মুক্তি’; সব ঘটেছে ব্রিটিশদের হাতে। শত শত বছরের নৃ-তাত্ত্বিক বাস্তবতা এসব কাটাছেঁড়ায় কিছুটা বিভ্রান্ত হলেও, এতে তার পথ হারায়নি। অনেক সময় প্রশাসনিক জটিলতায় ভৌগোলিকভাবে এসব ত্রিমোহনার মানুষকে, আইন-আদালতের নিষেধাজ্ঞা ভেঙে সীমান্ত পেরোতে হয়। এ রকম বিবিধ প্রক্রিয়ার ফল হিসেবে মিজোরামে প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে থিতু হওয়া কিছু চাকমাও সেখানে রয়েছেন। বৌদ্ধ চাকমাদের সাথে, ওই দিকে আবার খ্রিষ্টান মিজোদের সম্পর্কও ভালো নয়। ইয়াং মিজো অ্যাসোসিয়েশনের (ওয়াইএমএ) দাবি হলো, অতীতে চাকমাদের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন যতটা উদার ছিল বাংলাদেশ বা অন্য কোনো দেশ থেকে তথায় অনুপ্রবেশ করা ‘জো’দের বিষয়েও একই রকম উদার হতে হবে।
এতে বোঝা যায়, দক্ষিণ এশিয়ার এ অঞ্চলে একটি ‘জো’ জাতীয়তাবাদ কাজ করছে। এর প্রবল সমর্থন রয়েছে আবার মিয়ানমারের চিন প্রদেশের চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (সিএনএফ) দিক থেকে। সেখানে পালেতওয়া শহরটির ওপর অধিকার নিয়ে চিনদের সাথে রাখাইনদের রয়েছে ব্যাপক বিরোধ। সেখানকার রাখাইনদের সংগঠন ‘আরাকান আর্মির (এএ) নাম চলে এসেছে আবার সাম্প্রতিক কুকি-চিন সমস্যায়। এ কারণে জটিল এক জাতিগত সমীকরণে নতুন করে ঢুকছে এ পুরো অঞ্চল। এমন প্রেক্ষাপটে ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে প্রকাশ্যে বাংলাদেশে কুকি-চিন নামীয় সংগঠনের উৎপাত শুরু।

স্মরণযোগ্য যে, ‘জো’র অর্থ, আর বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসরত পাহাড়িদের আত্মপরিচয় দানের ক্ষেত্রে ‘জুম্মু’ হিসেবে পরিচয় দেয়ায় অন্তর্নিহিত অবস্থা কিন্তু একই সূত্রে গাঁথা। সে প্রেক্ষাপটে সংখ্যায় যত কম হোক, কেএনএফ দুরান্তে থাকা ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর সহানুভূতি ও উৎসাহ পাচ্ছে বা পাবে, এটা যুক্তিসঙ্গত বলে পর্যবেক্ষক মহলের ধারণা।
জানা যায়, কেএনএফ সদস্যরা মিয়ানমারের চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের সদর দফতরে গিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছে এবং এ কুকি-চিন তরুণরা অধিকতর উচ্চমানের প্রশিক্ষণে মিয়ানমারের ‘কাচিন’ পর্যন্ত চলে যায়। কাচিনের বিদ্রোহী সংগঠন ‘কাচিন ইনডিপেনডেন্ট আর্মি (কেআইএ) চায়না কর্তৃক প্রশিক্ষণ ও সহায়তা পেয়ে থাকে বলেও বহুলভাবে বিশ্বাস করা হয়। এ পর্যায়ে সার্বিক ধারণা লাভে বলা যায় যে, চিন ও কুকিরা নৃঃবিজ্ঞানে একই অধ্যায়ে আছে। এশিয়ার এ অঞ্চলে এরা সবাই মিলে মোটেই ছোট কোনো জাতি শক্তি নয়।
প্রাসঙ্গিক পাহাড়ি অঞ্চলটি নিয়ে পাশ্চাত্যের সুদূরপ্রসারী দৃষ্টিভঙ্গী সংক্রান্ত অধিকতর কিছু তথ্য, নিচে তা উপস্থাপন করা হলো :
কুপল্যান্ড প্লান : এ উপমহাদেশ থেকে ব্রিটিশদের বিদায় ঘণ্টা বাজার শেষ মুহূর্তে তাদের শেষ মরণ-কামড় হিসেবে চেষ্টা হয়েছিল ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল আমাদের তিন পার্বত্য জেলাসহ চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের দক্ষিণাংশ এবং মিয়ানমারের সন্নিহিত অঞ্চল তথা ‘চিন’সহ প্রয়োজনীয় অঞ্চল নিয়ে একটি ‘ক্রাউন কালোনি’ গঠনের; যে অঞ্চলটি উপমহাদেশের স্বাধীনতার আলোচনার বাইরে থাকবে। সরাসরি ব্রিটিশ শাসনের অধীনে থেকে যাবে। চল্লিশের দশকের শেষ পর্যায়ে এ নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে বিভিন্ন ফোরামে; ব্রিটিশ মন্ত্রিসভায়, তৎকালীন ভাইসরয়ের দফতরে এবং ব্রিটিশ পার্লামেন্টে। ব্রিটিশ আমলা ‘রিজিনাল্ড কুপল্যান্ড’ ১৯৪৬ সালে প্রথম এ পরিকল্পনা ব্রিটিশ সরকারের কাছে পেশ করে বলে জানা যায়। এজন্য এ পরিকল্পনাকে ‘কুপল্যান্ড প্লান’ নামে অভিহিত করা হয়। তবে তার পেছনে আসল কুশীলব ছিল ‘খ্রিষ্টান চার্চ সম্প্রদায়’।
তাদের সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য ছিল, অঞ্চলটি সরাসরি ব্রিটিশ শাসনের আওতায় রেখে, সেখানে খ্রিষ্টীয়করণের কাজটি নির্বিবাদে ব্রিটিশ আমলে সম্পন্নকরতঃ, সেখানে একটি খ্রিষ্টান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। সময়ের অভাবের আড়ালে, পাক-ভারতের সীমানা চিহ্নিত করার সময় ব্রিটিশ আমলা ‘রেড ক্লিপ’ কর্তৃক পাহাড়ি সীমান্তরেখা নির্ণয়ে অস্পষ্টতা তার ধারাবাহিকতার ফল বলে অনেকে মনে করে। বলা বাহুল্য, তাদের হিসাব-নিকাশ ঠিকই ছিল। এলাকাটিকে আরো ৭৫ বছর ও পরিকল্পনা অনুযায়ী ব্রিটিশ শাসনের আওতায় রাখা গেলে, এতদিনে তাদের সে স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিতে পারত। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের আন্তর্জাতিক সীমানাসহ, মিয়ানমারের সন্নিহিত চিন রাজ্যের অঞ্চলটির আজকের পরিস্থিতির দিকে তাকালে তা সহজে অনুমেয় ।
এক সমীক্ষায় দেখা যায়, ভারতের নাগাল্যান্ডে ১৮৭১ সালে খ্রিষ্টান চার্চের (ব্যাপটিষ্ট) অনুপ্রবেশ ঘটে। ওই সময় সেখানে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা ছিল প্রায় শূন্যের কোটায়। অথচ ওই অঙ্গরাজ্যে সম্প্রতি খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের পরিমাণ, মোট জনসংখ্যার প্রায় ৯০ ভাগে উন্নীত হয়েছে। অন্যদিকে, মিজোরামে খ্রিষ্টান চার্চের অনুঃপ্রবেশ ঘটে ১৮৯৪ সালে, যখন ওই এলাকার মানুষদের অধিকাংশ ছিল প্রকৃতি পূজারী। বর্তমানে ওই রাজ্যে মোট জনসংখ্যার ৯০ শতাংশ খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী। একইভাবে মেঘালয় রাজ্যে খ্রিষ্টান চার্চের (ক্যাথলিক) অনুপ্রবেশ ঘটে ১৯১৩ সালে। ওই সময় প্রায় শূন্যের কোটায় থাকা খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের পরিমাণ ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে মোট জনসংখ্যার ৭৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। মিয়ানমারের চিন প্রদেশের অবস্থাও একই রকম।

বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের অবস্থা একেবারে সঙ্গিন। বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালি ছাড়া আরো অন্তত ৫০টি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের বসবাস। তাদের মধ্যে সংখ্যাগত, আচরণগত, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিকভাবে রয়েছে বিস্তর ফারাক। মোটা দাগে তারা সমতলবাসী ও পাহাড়ি- এ দুই অভিধায় বিভক্ত। পাহাড়িদের প্রধান তিন সম্প্রদায় হচ্ছে- চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা। তাদের পৃথক সত্তা ও নিজস্ব সংস্কৃতি রক্ষা নিশ্চিত করার প্রকাশ্য ব্রত নিয়ে বিদেশী ফান্ড দ্বারা পরিপুষ্ট অনেক এনজিও এখনো তিন পার্বত্য জেলায় সক্রিয় রয়েছে; যাদের বেশির ভাগ আর্ত মানবতার সেবার নামে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীকে ধর্মান্তরিত করার কাজ করছে।
এছাড়া তিন পার্বত্য জেলায় বর্তমানে উল্লেখযোগ্য ১৯৪টি গির্জা উপজাতীয়দের ধর্মান্তরিতকরণে মৌলিক ভূমিকা রাখছে বলে জানা যায়। এর ধারাবাহিকতায় পাহাড়ি যেসব জনগোষ্ঠীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম, তাদের প্রায় শতভাগ বর্তমানে খ্রিষ্টান হয়ে গেছে অনেক আগে; যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে বম, লুসাই, পাংখোয়া, খুমি, স্রো ও খিয়াংসহ অপর মোট ১০টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী; যাদের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে বর্তমান পর্যায়ে কেএনএফ বা অন্য কোনো নামে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে বলে ধারণা পাওয়া যায়। মাঠপর্যায়ে পরিচালিত এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, ইতোমধ্যে বান্দরবান পার্বত্য জেলায় ৬০ হাজার, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় ৪০ হাজার এবং রাঙ্গামাটি জেলায় ২০ হাজার উপজাতি অধিবাসী খ্রিষ্টধর্মে ধর্মান্তরিত হয়ে গেছেন; যাদের অধিকাংশ বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামের সাথে ভারত ও মিয়ানমারের আন্তর্জাতিক সীমান্ত সন্নিহিত এলাকার বাসিন্দা।
এখানে একটি বিষয় প্রণিধানযোগ্য যে, ২০২২ সালের ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে ‘বার্মা অ্যাক্ট’ নামে ৮১৭ বিলিয়ন ডলার ব্যয় অনুমোদনের ঘোষণাসংক্রান্ত যে বিল পাস হয়, তার পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের চার্চগুলোর ধারাবাহিক নিরন্তর ও লাগাতার তদবির ছিল লক্ষ করার মতো। প্রাসঙ্গিক চার্চগুলোর লাগাতার তদবিরের ফলে ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে এ বিল নিয়ে কাজ শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রতিনিধি পরিষদ সদস্যদের একাংশ। তার ফলে সিনেটে পাস হওয়ার আগে এ আইন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিম্নকক্ষে (প্রতিনিধি পরিষদ) পাস হয়। চার্চগুলোর ক্রমাগত ও সার্বিক প্রচেষ্টার প্রেক্ষাপটে, রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে এ বিল পাসের ক্ষেত্রে নিদারুণ ঐকমত্য দেখা গেছে। ২০২৩ সালে সংযুক্ত করা ‘বার্মা অ্যাক্ট’-এর পরবর্তী প্রভাব, এতদঞ্চলের মানুষ সহসা অবলোকন করবে বলে পর্যবেক্ষক মহল মনে করে।
(বাকি অংশ আগামীকাল)
লেখক : নিরাপত্তা গবেষক


আরো সংবাদ



premium cement