আলোকিত মানুষের সন্ধানে
- অধ্যাপক ডা: শাহ মো: বুলবুল ইসলাম
- ০৮ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০৫
আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। চিন্তার,গবেষণা করার কৌশল শিখিয়েছেন। দিয়েছেন গবেষণামূলক উপাত্ত দিয়ে মানব সভ্যতা উন্নত ও অগ্রণী করার স্বাধীনতা, কল্যাণ ও অকল্যাণের ক্ষমতা। কল্যাণ ও অকল্যাণ সাধনের ইচ্ছা, প্রেক্ষিত- স্বাধীনতা দিয়েছেন মানুষকে পরীক্ষা করতে। মানুষ তার মানবীয় গুণাবলি চর্চা ও বাস্তবতার মাধ্যমে সুন্দর সুখী কল্যাণমুখী সমাজ তৈরি করে কি না; নাকি তার গবেষণালব্ধ জ্ঞান সভ্যতা বিধ্বংসী, সামাজিক অস্থিরতা, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির কাজে ব্যবহার করে। আত্মলব্ধ জ্ঞানের ভিত্তিতে আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি ও ধ্বংস সাধনের স্বাধীনতা দিয়েছেন। মহান আল্লাহ এটি ভালো করে জানতেন যে, মানুষ রিপুর তাড়নায় সুযোগ পেলে পৃথিবীতে ফ্যাসাদ সৃষ্টি করবে, সমাজকে বিশৃঙ্খলার দিকে ঠেলে দেবে, মারামারি-হানাহানি ও খুনোখুনি করবে- তবু তিনি মানুষকে স্বাধীনতা দিয়েছেন। একই সাথে তিনি মানুষকে সতর্ক করে দিয়েছেন- আত্মবিধ্বংসী কার্যকলাপের পরিণাম সম্পর্কে। পাশাপাশি আলোময় এক সঠিক ও সফল পথের সন্ধান দিয়েছেন। এ পথে চলার নির্দেশনা দিয়েছেন। জীবনে সফলতা এবং ব্যর্থতার পরিণাম ও কল্যাণ সম্পর্কে মানুষকে জানিয়েছেন। জীবনে সফলতা অর্জনের বৈশিষ্টগুলো আরো শাণিত করতে বুদ্ধিদীপ্ত প্রাণবন্ত ও কার্যকরী করার কৌশলও জানিয়েছেন। মানুষ যেন একদিকে নিজেকে আলোকিত করতে পারে; অপরদিকে সমাজকেও গঠন ও কল্যাণমুখী করতে পারে এ জন্যে বার বার তাগাদা দিয়েছেন। পার্থিব এবং পারলৌকিক জীবনে পথভ্রষ্টদের পরিণাম সম্পর্কে বার বার সতর্ক করেছেন, যারা আলোর জীবনের অভিযাত্রী হবে তাদের সফলতার কথাও বলেছেন।
আল্লাহ সফল জীবনের মৌলিক বৈশিষ্ট্যগুলো আরো পরিশীলিত করার ব্যবস্থা করেছেন তাঁর সৃষ্টিজগতের ব্যবস্থাপনায়। রমজানের রোজা তেমনি এক অনুপম ব্যবস্থাপনা। রমজান একদিকে ব্যক্তিকে যেমন প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে লড়াই করতে শেখায়, অপরদিকে জীবনাচারের পরিবর্তনের ধারায় ব্যক্তি ও সমাজকেও সমৃদ্ধ করে। রিপুর বিরুদ্ধে লড়াই করে নিজেকে ঈমানের আলোয় উদ্ভাসিত করে। অঢেল লাভালাভের চিন্তা ঝেড়ে ফেলে তখন একজন ব্যবসায়ী হয়ে ওঠেন আদর্শ ব্যবসায়ী। তখন পণ্যে ভেজাল দেয়ার, ওজনে কম দেয়ার চিন্তা মাথায় আসে না। বাজার থেকে প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি উধাও করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির চিন্তাও থাকে না; বরং নিজেকে আদর্শ ব্যবসায়ী হিসেবে উপস্থাপন করে। তেমনি একজন সরকারি কিংবা বেসরকারি কর্মকর্তা উৎকোচ গ্রহণের চিন্তা থেকে সরে আসেন। মিথ্যা বলার অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেন। চেষ্টা করেন আলোময় জীবন ধারায় ফিরে আসতে। একজন শিল্পপতি রোজার শিক্ষায় অনুপ্রাণিত হয়ে তার অধীনস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ইনসাফভিত্তিক ব্যবস্থাপনার প্রচলন করেন। একজন বিচারক অনুরাগ বিরাগ লোভ লালসা ভীতির উর্ধ্বে উঠে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় চেষ্টা করেন, তখন ‘বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে’ কাঁদে না। বরং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। এমননিভাবে সমাজপতিরাও যখন ন্যায় নিষ্ঠা, সুখী-সমৃদ্ধ সমাজ গঠনে অনুপ্রাণিত হওয়ার প্রভাবে কল্যাণমুখী রাষ্ট্রে রূপান্তরিত হয় রাষ্ট্রের ব্যবস্থাপনা।
উপরে যে বিষয়গুলোর কথা উল্লেখ করা হলো তা কি নিতান্ত কল্পনা? এটা কিভাবে সম্ভব? কিভাবে সম্ভব হিং¯্র হায়েনার চরিত্রে রূপান্তরিত মানুষের মন ও মনন পরিবর্তীত করে মানবিক গুণাবলি সমৃদ্ধ মানুষে পরিণত করতে? এ প্রশ্নগুলো যে কারো মনে জাগা স্বাভাবিক! এর বিপরীতে আদর্শ ব্যক্তি ও সমাজের কথা, কল্যাণধর্মী রাষ্ট্রের কথা কী ভাবা যায়? এ থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে আল্লাহ রোজার বিধান দিয়েছেন। রোজার মাধ্যমে মানুষ বিনীত হবে, বিনয়ী হবে, নম্র স্বভাবের হবে। সততা আমানতদারি ও ইনসাফ এবং জবাবদিহির উপলব্ধি তৈরি করে রোজা। সহানুভূতি, সহযোগিতা এবং সহমর্মিতার মনোভাব তৈরি করা রোজার অন্যতম লক্ষ্য। মিথ্যাচার দূর করে ব্যক্তিকে সত্যাশ্রয়ী হওয়ার তাগিদ দেয় রমজান। দান অনুদান উদার মনমানসিকতা তৈরি করে রমজান। মোট কথা আচার ব্যবহার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে বাস্তবতার নিরিখে একজন আদর্শ এবং কল্যাণমুখী চরিত্র গঠন করার ক্ষেত্রে রোজা এবং রমজান পালন করে মুখ্য ভূমিকা। এ ধরনের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন চরিত্র হচ্ছে আলোকিত চরিত্র। এহেন চরিত্রের ব্যক্তিরা নিজেরা যেমন কল্যাণ ও সৃষ্টিশীলতার অভিসারী; তেমনি একই সাথে সমাজ ও প্রতিষ্ঠানকে আলোকিত করেন কল্যাণের পথে। সমাজের কল্যাণে এ ধরনের ব্যক্তি গঠন রোজার মুখ্য উদ্দেশ্য। যেন মানবসমাজ কল্যাণ, সহযোগিতা, সহমর্মিতা-সুবিচার এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।
লেখক : চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ
[email protected]
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা