১৭ মে ২০২৪, ০৩ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৮ জিলকদ ১৪৪৫
`


অর্থনৈতিক সঙ্কট উত্তরণে করব্যবস্থার সংস্কার

-

বাংলাদেশের করনীতি স্বাভাবিক নিয়মের বিপরীতমুখী যা বিনিয়োগ ও উৎপাদনশীলতাকে উৎসাহিত করে না। সুতরাং জরুরি সংস্কারের পরামর্শ দিচ্ছেন অনেক অর্থনীতিবিদ। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত গত ৮ ডিসেম্বর ‘বাংলাদেশের কর কাঠামো : একটি মধ্য আয়ের দৃষ্টিভঙ্গি’-বিষয়ক সেমিনারে বক্তারা এ তথ্য দেন। ওই সেমিনার মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কানাডার কনকর্ডিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক সৈয়দ মইনুল আহসান। সেমিনারের প্রধান অতিথি অর্থনীতিবিদ ড. মশিউর রহমান বলেন, ‘হয়তো আমরা এই অর্থে প্রতিকূলভাবে করারোপ করছি যে, এটি আরো বিনিয়োগ, উৎপাদনশীলতাকে উৎসাহিত করে না।’ বাংলাদেশের করনীতি বিপরীতমুখী এবং বিনিয়োগ ও উৎপাদনশীলতাকে উৎসাহিত করে না; জরুরি সংস্কারের পরামর্শ দিয়েছেন অনেক অর্থনীতিবিদ। দেশে প্রতিকূলভাবে করব্যবস্থা কার্যকর রয়েছে, যা বিনিয়োগ এবং উৎপাদনশীলতাকে উৎসাহিত করে না।
অর্থনীতিবিদ এবং প্রাক্তন আমলা ড. মশিউর রহমান আরো উল্লেখ করেন, কর সংগ্রহের ঝামেলা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ এবং কর-জিডিপি অনুপাত বাড়ানোর ক্ষেত্রে একটি বাধা। তার মতে, বিনিয়োগের উপর ট্যাক্স মোটেও বোধগম্য নয়। এনবিআরের প্রাক্তন এই চেয়ারম্যান বলেন, তিনি ব্যবসায়ীদের সাথে পরামর্শ করতেন এবং তারা কর দিতে প্রস্তুত কিন্তু কোনো ঝামেলা হবে না বলে আশ্বাস চেয়েছিলেন। এ ক্ষেত্রে একজন আমেরিকান অর্থনীতিবিদকে উল্লেখ করে সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, সমস্যা যদি প্রশাসনের হয়, তাহলে সংস্কার শুরু করা উচিত প্রশাসন দিয়ে। তিনি মনে করেন, কিছু কর উল্লেখযোগ্যভাবে বিনিয়োগের ক্ষতি করে। বিদেশী বিনিয়োগকারীদের সংগঠন ফরেন চেম্বার বা ফিকি বলেছে, ১ শতাংশ কর বাড়লে ৩ দশমিক ৭ শতাংশ বিদেশী বিনিয়োগ কমে যায়। তাই প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ বা এফডিআইয়ের জন্য অনুকূল কর পরিবেশ তৈরি করা যায়। তাতে বিদেশী বিনিয়োগ যেমন বাড়বে, তেমনি সরকারে কর আদায়ও বাড়বে। বিদেশী করের নতুন সুযোগের ক্ষেত্রগুলোতে ফোকাস করে তিনি বলেছিলেন যে, নগর ভূমি কর ট্যাক্সের একটি প্রতিশ্রুতিশীল উৎস হতে পারে।
শহুরে জমি একটি উল্লেখযোগ্য স্তরে উত্তীর্ণ হয়েছে। অথচ এই উৎস থেকে রাজস্ব আয় তেমনটি হচ্ছে না, বলছেন অর্থনীতিবিদরা। সেমিনার মূল প্রবন্ধকার ইমেরিটাস অধ্যাপক সৈয়দ মইনুল আহসানের মতে বাংলাদেশের কর-জিডিপির বর্তমান বিদ্যমান অনুপাত ৮.০ শতাংশ, যা খুবই কম। ২০২২ সালের আমদানি ডাটার (জিডিপির ২০.৯ শতাংশ) ভিত্তিতে বাংলাদেশের কর/রাজস্ব-জিডিপি ১৫.৫ শতাংশ হওয়া উচিত ছিল, যা বাস্তবের প্রায় দ্বিগুণ। একটি মধ্যম আয়ের অর্থনীতি হতে হলে দেশের কর-জিডিপি অনুপাত ১৫ শতাংশের উপরে হওয়া উচিত, যা ব্যর্থ হওয়ার ফলে বাংলাদেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবার মতো মৌলিক খাতে ব্যয় তলানিতে দাঁড়িয়েছে। বিদ্যমান কম রাজস্বের সাথে, স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় জিডিপির প্রায় ০.৬ শতাংশ, যা প্রধান দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন বলে অর্থনীতির এই অধ্যাপক উল্লেখ করেন। বাংলাদেশের বর্তমান স্বাস্থ্য ব্যয়ের একটি অংশ হিসেবে পকেটের বাইরের (ওওপি) উপাদান, এর ৭৪ শতাংশ যা তুলনামূলকভাবে বেশি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) সুপারিশ করে যে, দেশগুলো কেবল প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাতে জিডিপির অতিরিক্ত ১.০ শতাংশ ব্যয় করে যাতে সর্বজনীন স্বাস্থ্য কভারেজ, ইউএইচসির কাছে গ্রহণযোগ্য। অর্থনীতিবিদদের মতে, মধ্য-আয়কর কাঠামো প্রত্যক্ষ করের ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীলতা, বিশেষ করে ব্যক্তিগত আয়ের ওপর, যা বাংলাদেশে এখন বিপরীত। ভোগের উপর প্রত্যক্ষ প্রগতিশীল কর চালু করে একটি মৌলিক সংস্কারের অনেক সুবিধা রয়েছে। সেই সংস্কারের রসদ একটি শক্তিশালী আর্থিক ব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল। বিআইডিএসের মহাপরিচালক বিনায়ক সেন বলেন, ‘আমরা খুবই কম কর-জিডিপি অনুপাতে স্থবির হয়ে পড়েছি’। দেশের করের সমস্যা সমাধানে অনীহা রাজনৈতিক নাকি অন্য কিছু, তা নিয়েও বিভ্রান্তি রয়েছে।
জিডিপির অনুপাত গত এক দশকে রাজস্ব আয় বাড়েনি যদিও এ সময় জিডিপির অনুপাতে সরকারের ঋণে ব্যাপক উল্লম্ফন ঘটেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৪ সালে দেশে সরকারের ঋণ-জিডিপির অনুপাত ছিল ২৮ দশমিক ৭ শতাংশ। এক দশক পর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২ শতাংশে। আবার এ সময় কমেছে রাজস্ব আয়-জিডিপির অনুপাত। ২০১৪ সালে সরকারের রাজস্ব (কর ও অনুদান) জিডিপি অনুপাত ছিল ৯ দশমিক ১ শতাংশ। এক দশক পর তা নেমেছে ৮ দশমিক ৭ শতাংশে। আর শুধু কর-জিডিপির অনুপাত নেমেছে ৭ দশমিক ৮ শতাংশে।
বাংলাদেশী মুদ্রায় এ ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ১৭ লাখ ৮৬ হাজার কোটি টাকায়। বিপুল এ ঋণের মধ্যে সাত লাখ ১৬ হাজার ১৫৭ কোটি টাকা দেশের অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে নিয়েছে সরকার। আর বিদেশী উৎস থেকে সরকারের ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭১ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন ডলার।
ডলারসহ অর্থনৈতিক সঙ্কট কাটাতে আইএমএফ থেকে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ নিচ্ছে সরকার। তবে ঋণের পুরো অর্থ ছাড় পেতে প্রতি বছরই রাজস্ব আয় বাড়ানোর শর্তারোপ করেছে দাতা সংস্থাটি। এর মধ্যে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি পেয়েছে যেখানে চলতি অর্থবছরের মধ্যেই কর-জিডিপি অনুপাত ৮ দশমিক ৩ শতাংশে উন্নীত করার শর্ত রয়েছে। আর ২০২৫-২৬ অর্থবছরে কর-জিডিপির অনুপাতের লক্ষ্য বেঁধে দেয়া হয়েছে ৯ দশমিক ৫ শতাংশে। আইএমএফের শর্ত পূরণ করতে হলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) বর্তমান আয়ের তুলনায় আগামী তিন বছরে দুই লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকার বাড়তি রাজস্ব আদায় করতে হবে।

বিদ্যমান বাস্তবতায় বাড়তি রাজস্ব আয়ের এ লক্ষ্যপূরণ প্রায় অসম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের ভাষ্যমতে, কর-জিডিপি অনুপাত ১২-১৩ শতাংশে উন্নীত করা গেলে সরকারের বিদ্যমান ঋণ পরিশোধ সম্ভব। সে ক্ষেত্রেও বিদেশী ঋণ পরিশোধের জন্য রেমিট্যান্স ও রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধির ওপর নির্ভর করতে হবে। কিন্তু সরকার এরই মধ্যে মেগা প্রকল্পে আরো বেশি বিদেশী ঋণ নেয়ার জন্য উদ্যোগী হয়েছে। এ অবস্থায় রাজস্ব আয় বাড়িয়েও যথাসময়ে বিদেশী ঋণ পরিশোধ দুঃসাধ্য হয়ে উঠতে পারে।
ইতোমধ্যে নেয়া ঋণ পরিশোধ করা সরকারের জন্য খুবই কষ্টকর হবে বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বিবেচনায় নিলে সরকারের ঋণ-জিডিপি অনুপাত এখনো সীমার মধ্যেই আছে। কিন্তু আমাদের ঋণের বিষয়টি দেখাতে হবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে। দেশের কর-জিডিপি অনুপাত এখনো ৮ শতাংশে সীমাবদ্ধ। বিদ্যমান বাস্তবতায় এটি বাড়ানোও বেশ কঠিন। কর-জিডিপির অনুপাত ১২-১৩ শতাংশ হলে তবেই সরকারের বর্তমান ঋণ পরিশোধ সম্ভব যদিও অদূর ভবিষ্যতে এ ধরনের কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।’ অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক নয় এমন সব প্রকল্পও নেয়া হচ্ছে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে সীমাহীন দুর্নীতি ও অপচয় হচ্ছে।
প্রতি বছরই বিপুল অঙ্কের ঘাটতি রেখে বাজেট ঘোষণা করছে সরকার। এ বাজেট ঘাটতি পূরণ করতেই দেশী-বিদেশী উৎস থেকে ঋণ বাড়াচ্ছে সরকার। সরকারকে এখন আর ঋণ দেয়ার সক্ষমতা নেই দেশের ব্যাংক খাতের। এ জন্য ব্যাংকগুলোর কাছে ট্রেজারি বিল-বন্ড বিক্রি না করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিজেই সরকারকে ঋণের জোগান দিয়ে যাচ্ছে। এ কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরকারের নেয়া ঋণের পরিমাণও অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। গত পাঁচ বছরেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকারের নেয়া ঋণের ৯২৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশাপাশি দেশের ব্যাংক ও আর্থিক খাত, সঞ্চয়পত্রসহ বিভিন্ন উপকরণ ব্যবহার করে জনগণের কাছ থেকে এ ঋণ নিয়েছে সরকার।
রাজস্ব আয়ে ব্যর্থতাই সরকারের ঋণ-জিডিপি অনুপাত বড় হওয়ার প্রধানতম কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, রাজস্ব আহরণে ব্যর্থতার কারণে সরকারের ঘাটতি বাজেটের আকার প্রতিনিয়ত বাড়ছে। ঘাটতি বাজেটের আকার যত বড় হবে সরকারের ঋণও তত বাড়বে। এ মুহূর্তে বাজেটের অন্যতম বড় ব্যয়ের খাত হয়ে উঠেছে ঋণের সুদ পরিশোধ। বিদ্যমান পরিস্থিতি চলতে থাকলে সরকারের ঋণের বোঝা বাড়তেই থাকবে। দিন শেষে জনগণকেই সরকারের এ ঋণ পরিশোধ করতে হবে। রাজস্ব আয়ে সরকারের ব্যর্থতার কারণে প্রতি বছর ঘাটতি বাজেটের পরিমাণ বাড়ছে। বিশ্বের কোনো দেশই এত কম রাজস্ব আয় দিয়ে চলে না। এটি বাড়ানো সম্ভব না হলে অভ্যন্তরীণ ও বিদেশী উৎস থেকে সরকারের ঋণ বাড়বেই।

ফিকির সভাপতি বলেন, কয়েক বছর যাবত একদিকে করপোরেট করহার কমানো হয়েছে, অন্যদিকে কার্যকর করভার ক্ষেত্র বিশেষে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৭ শতাংশ। সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে তা ৫০ শতাংশ। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে তা ৮০ শতাংশ পর্যন্ত। ফলে বিদেশী বিনিয়োগ কমছে। ফিকির সভাপতি বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বর্তমান রাজস্ব-জিডিপি অনুপাত ৮ দশমিক ৭৪ থেকে বাড়িয়ে অন্তত ২০-২২ শতাংশে উন্নীত করতে না পারলে সঙ্কটের কোনো সমাধান হবে না।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগামী দু’-তিন বছরের মধ্যেই বিদেশী ঋণ পরিশোধের চাপ অনেক বেড়ে যাবে। বিশেষ করে চীন, রাশিয়া ও ভারত থেকে নেয়া ঋণের কিস্তি পরিশোধ শুরু হবে। এ অবস্থায় ডলারের সংস্থান না হলে যথাসময়ে ঋণ পরিশোধ করা নিয়ে সরকারকে চাপে পড়তে হবে। কারণ এরই মধ্যে বিদেশী ঋণ পরিশোধ নিয়ে সরকারের ওপর চাপ তৈরি হয়েছে। দেশের স্বার্থেই কর-জিডিপির অনুপাত বাড়ানো দরকার বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। দেশের অর্থনীতির আকার অনেক বড় হয়েছে। মানুষের মাথাপিছু আয় বাড়ছে, জিডিপি প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। কিন্তু সে অনুপাতে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি না পাওয়া অস্বাভাবিক। আইএমএফ কর-জিডিপির অনুপাত বাড়ানোর জন্য তাগিদ দিচ্ছে। রাজস্ব বাড়লে বিদেশী ঋণ পাওয়া আরো সহজ হয়।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) অবশ্য মনে করছে, ঋণ কর্মসূচির আওতায় উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কাঠামোগত সংস্কার করেছে বাংলাদেশ। এর পরও অর্থনীতিতে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে বলে মনে করছে সংস্থাটি। সংস্থাটির পর্যালোচনায় আরো বলা হয়, বাংলাদেশে স্বল্পমেয়াদে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারের জন্য আরো কঠোর মুদ্রানীতি, নিরপেক্ষ আর্থিক নীতি ও বিনিময় হারে আরো বেশি নমনীয়তা প্রয়োজন। সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা রক্ষা, ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দান, অর্থনৈতিক সংস্কারের গতি বৃদ্ধি ও জলবায়ু অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নে বাংলাদেশকে আরো উদ্যোগ নিতে হবে।
লেখক : অর্থনীতিবিদ, গবেষক ও কলামিস্ট
Mizan12bd@yahoo.com


আরো সংবাদ



premium cement