২১ মে ২০২৪, ০৭ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ১২ জিলকদ ১৪৪৫
`


দৃষ্টিপাত

জামায়াতের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ

-

দীর্ঘ দশ বছরেরও বেশি সময় পর বাংলাদেশের আলোচিত রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী পুলিশ প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে ১০ জুন ঢাকায় বড় একটি সমাবেশ করেছে। এ সমাবেশ ৫ জুন হওয়ার কথা থাকলেও তা অনুষ্ঠিত হয়নি। কারণ ওই দিন পুলিশ প্রশাসন অনুমতি দেয়নি। তখন পুলিশ বলেছিল এদিন অফিস খোলা, বিশ্ব পরিবেশ দিবস, স্কুল-কলেজ খোলা, সংসদ চলে ইত্যাদি ইত্যাদি। পরবর্তীতে জামায়াতের ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ শাখা ১০ জুন সমাবেশের সিদ্ধান্ত নেয় এবং সে অনুযায়ী আবার পুলিশের অনুমতি চায়। পুলিশ অনুমতি দিলো! এর আগে জামায়াতের চারজন আইনজীবী ৫ জুন সমাবেশের জন্য অনুমতি চাইতে গেলে তাদের আটক করে হয়রানি করে পুলিশ। পরে অবশ্য ছেড়ে দেয়।
যা হোক, শেষ পর্যন্ত জামায়াতের ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ শাখা ১০ জুন শান্তিপূর্ণভাবে একটি সফল সমাবেশ করতে সক্ষম হয়েছে। অবশ্য জামায়াতে ইসলামী সবসময় শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করে থাকে। জামায়াতের বিভিন্ন সমাবেশে দলটির বিরুদ্ধবাদীরা বিভিন্ন সময় হামলা আক্রমণ ইত্যাদি করেছে। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরের বর্বর আক্রমণের কথা আমাদের সবার জানা। বড় সমস্যা হচ্ছে- জামায়াতের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রোপাগান্ডা। অনেক মিডিয়া জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডায় লিপ্ত। এসব মিডিয়া সরকার ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। এসব মিডিয়াতে জামায়াতের কল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডের নিউজ করা হয় না। জামায়াত বিপুল লোক সমাগম করে সমাবেশ করলেও সেটা ওই সব মিডিয়া দেখায় না। বিপরীতে বাম বা সরকারদলীয় অল্প লোক একত্রিত হয়ে কোনো প্রোগ্রাম করলে সেটা ব্যাপকভাবে মিডিয়া কভারেজ পায়। দীর্ঘ বছর জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে হাজার রকমের প্রোপাগান্ডা চালানো হয়েছে। এসব প্রোপাগান্ডায় অনেকে বিভ্রান্তও হয়েছেন।

১০ জুনের এ সমাবেশ প্রত্যক্ষ ঘুরে ঘুরে দেখেছি। লাখো লোক নিয়ে এত শান্তিপূর্ণভাবে একটি সমাবেশ হতে পারে তা সরাসরি না দেখলে বোঝা কঠিন। অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে সমাবেশটি চলেছে। এখান থেকে প্রমাণিত সরকার এবং এর বিভিন্ন এজেন্সি এবং তাদের রাজনৈতিক সংগঠন যদি জামায়াতের মিছিল সমাবেশগুলোতে বাধা না দিত; হামলা আক্রমণ না করত তাহলে জামায়াতের প্রতিটি মিছিল সমাবেশ শান্তিপূর্ণ হতো। সমাবেশে জামায়াত নেতাকর্মীরা স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব পালন করেছেন। নিরাপত্তার স্বার্থে তারা সমাবেশে প্রবেশ এবং বের হওয়ার জন্য পৃথক পথ তৈরি করেছেন। সমাবেশে আগত সবার ব্যাগ চেক করেছেন। কেউ যদি কারো গায়ে পড়েছেন বা পায়ে পড়েছেন সাথে সাথে উভয়ে স্যরি বলেছেন। অথচ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন প্রোগ্রামে দেখা যায় দুই এক প্যাকেট বিরিয়ানির জন্য সংঘর্ষে জড়াতে! মারামারি, চেয়ার ছোড়াছুড়ি করতে। কিন্তু জামায়াতে ইসলামীর প্রোগ্রামে সেটি কখনো হতে দেখা যায় না।

১০ বছর পর পুলিশের অনুমতিতে বিশাল সমাবেশ দেখে অবাক হয়েছেন রাজধানীবাসী। তবে বিশাল এ সমাবেশ নিয়ে বেশির ভাগ মিডিয়া যথাযথভাবে প্রচার করেনি। আমরা সারা বছর দেখি সরকারি দলের ছোটখাটো অনেক প্রোগ্রামের ছবি পত্রিকায় বিশাল করে দিতে। টিভিতে লাইভ দেখাতে। সরকারদলীয় বহু প্রোগ্রামে পুলিশ অনুমতি নেয়া হয় না। ক্ষমতাসীনরা যখন-তখন বড় বড় রাস্তাঘাট দখল করে মোটরসাইকেল মহড়া, গানবাজনা নৃত্য ইত্যাদি করেন। অথচ শান্তিকামী জামায়াতের প্রোগ্রাম সরকার বন্ধ করে রেখেছে বিভিন্ন বানোয়াট কথা বলে। জামায়াতে ইসলামী অনেক পুরোনো একটি রাজনৈতিক সংগঠন। দেশে জনসমর্থন রয়েছে। বারবার তারা সংসদে যায় এবং স্থানীয় সরকারের অনেক নির্বাচনে দলটির প্রার্থীরা বিজয়ী হন। দৈনিক মানবজমিন জামায়াতকে বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক শক্তি উল্লেখ করে রিপোর্ট করেছে। বাস্তবে জামায়াতে ইসলামী আরো বড় পরিসরে। সংবিধান নাগরিকদের রাজনীতি করার অধিকার দিয়েছে। অথচ জামায়াতে ইসলামীর সাথে সরকার অত্যন্ত নিষ্ঠুরতা চালিয়েছে। তবু জামায়াতের এই সমাবেশে বক্তারা অত্যন্ত মার্জিত ভাষায় বক্তৃতা করেছেন। যাদের কাছে তারা চরম জুলুমের শিকার সরকারদলীয় সেই সব নেতাকে নিয়ে বিদ্রƒপাত্মক কোনো কথা বলেননি।
বিশাল সমাবেশ এলাকা আল্লাহু আকবার স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠেছিল। প্রাকৃতিক পরিবেশ ছিল অনেক সুন্দর। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ছিল। পাখিরা ওড়াউড়ি করছিল। ড্রোনও উড়ছিল! এই সমাবেশে জামায়াতের শুভাকাক্সক্ষী কেউ কেউ এসেছিলেন। ভাড়া করে কোনো লোক আনা হয়নি। যার যার মতো করে সমাবেশে গিয়েছেন। আলাদাভাবে কোনো ট্রান্সপোর্টের ব্যবস্থা করা হয়নি। জামায়াতের নেতাকর্মীরা রাস্তায় গাড়ি অ্যাম্বুলেন্স চলাচলে সহযোগিতা করেছেন। ইচ্ছে করলে পুরো সময় রাস্তা ব্লক করে রাখতে পারতেন। সমাবেশ শেষে জামায়াতের নেতাকর্মীরা পুলিশ বাহিনীর লোকদের ফুল বিতরণ করেছেন। আমাদের প্রত্যাশা, এখন থেকে দেশের সব রাজনৈতিক দল নিজেদের কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালন করতে পারবে। প্রশাসন সার্বিক সহযোগিতা করবে।


আরো সংবাদ



premium cement