০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`


একটি বই ও সত্যের অপলাপ

-

প্রাচীন সভ্যতার প্রারম্ভ থেকে প্রাকৃতিক রহস্যের ব্যাপারে জ্ঞানহীনতার কারণে মানুষের কল্পনায় দৃঢ়মূল হতে শুরু করে কিছু ভ্রান্ত বিশ্বাসÑ অর্থাৎ মিথ, যার স্থাপক ও পৃষ্ঠপোষকরা ছিলেন সমাজপতি, শাসকবর্গ ও বুদ্ধিজীবী। জ্ঞান-বুদ্ধিতে তাদের পরিবর্তিত কল্পনায় ঘটেছে বিশ্বাসেরও বিবর্তন। ফলে অনেক মিথ্যার হয়েছে বিলুপ্তি। মিথ্যাকে সত্য করলেও যে সুবিধা পাওয়া যায়, সে ধারণা বিশ্বাসের বিবর্তনেই বোধগম্য। সেকালের মিথ্যা ছিল বুদ্ধিজীবীদের অজ্ঞতার বাহন, যা আধুনিক সভ্যতায় হয়ে গেছে শঠ, প্রতারক ও মতলবাজদের ধারণা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলারের প্রপাগান্ডা মন্ত্রী গোয়েবল্স (১৮৯৭-১৯৪৫ খ্রি:) বলতেন, ‘একটা মিথ্যা বারবার আওড়ালে সেটি সত্যে পরিণত হয়।’ অনুরূপ প্রচেষ্টা আজো ইতিহাস নিয়ে চালানো হচ্ছে।
পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলা নিবাসী ও বর্তমানে ভারতীয় নাগরিক ডা: কালিদাস বৈদ্য নিজেকে এবং চিত্তরঞ্জন সুতারকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে (বাংলাদেশ) বিশেষ লবি প্রতিষ্ঠায় ও ‘বাংলাদেশকে স্বাধীন করার অন্যতম প্রতিজ্ঞাকারী, পরিকল্পনাকারী ও সহযোগী সংগঠক’ বলে দাবি করেছেন কলকাতা বইমেলায় ২০০৫ সালে প্রথম প্রকাশিত ‘বাঙ্গালির মুক্তিযুদ্ধের অন্তরালে শেখ মুজিব’ নামক বইটিতে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কিছু সত্য ও এর কিছু অপলাপের মাধ্যমে এই বইটিতে একটি উল্লেখযোগ্য মিথ্যা জানার সুবাদে প্রমাণ দেয়া হচ্ছে। এর ৬১ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে, “১৯৫৮ সালে পাক সামরিক বাহিনী কুখ্যাত সি.ডি বা ‘পষড়ংবফ ফড়ড়ৎ ড়ঢ়বৎধঃরড়হ’ চালাবার নামে হিন্দুদের ওপর চরম অত্যাচার শুরু করে। হিন্দু কোনো নেতাই সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না। কিন্তু প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য চিত্তরঞ্জন সুতার এ জঘন্য অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে পরিষদে তার বক্তব্য রাখেন। তিনি তার বক্তৃতায় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের আওয়ামী লীগ সরকারের কাছেও অত্যাচার বন্ধ করার জন্য আকুল আবেদন জানান। পরিষদে আওয়ামী লীগ সদস্য আবদুল খালেকের মনে দাগ কাটলেও মুখ্যমন্ত্রী আতাউর রহমান খান ও বিশিষ্ট মন্ত্রী মুজিবের মনে কোনো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হয়... উপরন্তু মুখ্যমন্ত্রী আতাউর রহমান তাচ্ছিল্যের সাথে বলেন যে, বিশ্বের দরবারে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সুনাম নষ্ট করার মতলবেই চিত্ত বাবু ওই সব গল্প তৈরি করেছেন।”
এ অভিযোগেরও ২৫ বছর আগে ভারতে প্রকাশিত, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রফেসর মো: গোলাম কবির তার ‘গরহড়ৎরঃু চড়ষরঃরপং রহ ইধহমষধফবংয’ বইয়ের ৬২-৬৩ পৃষ্ঠায় তখনকার সংসদীয় বিবরণী ভিত্তিক বর্ণনায় উল্লেখ করেছেন, ‘সংসদে কংগ্রেস দলীয় নেতা বি. কে দাস সেনা প্রত্যাহার না করলে আওয়ামী লীগ সরকারে তাদের সমর্থন প্রত্যাহারের দেয়া চূড়ান্ত শর্তও আতাউর রহমান খান অগ্রাহ্য করেন। ফলে তারা সমর্থন প্রত্যাহারে সরকারের পতন ঘটায়।’ এমন তথ্য ছাড়াও সেনা অভিযানের মূল কারণটির অনুল্লেখে কালিদাস বাবু ‘সাম্প্রদায়িকতা’র ধুয়া তুলে আসলে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করলেন। প্রাদেশিক সংসদে তখন ৭২ জন সংখ্যালঘু সদস্য থাকায় সরকার গঠন ছিল একান্তই তাদের সমর্থননির্ভর। স্বীকার করতেই হয়, তাদের এই রাজনৈতিক শক্তি সামরিক শাসক জেনারেল আইয়ুব খান খর্ব করে দেয়ায় তারা আরো তৎপর হতে শুরু করেন, যা কালিদাস বৈদ্যের স্বীকৃত কথায় ‘১৯৫১ সাল হতে শুরু হওয়া’ সংগঠিতকরণের মাধ্যমে।
একটি জেলা শহরসহ তিনটি থানা বন্দরে মুদির দোকান তো দূরের কথা, মুসলমানের একটি পান-বিড়ির দোকানও কৈশোরে দেখিনি। তাই বইটির ৩২ পৃষ্ঠায় তার স্বতঃসিদ্ধ সত্যটি যখন হলো, ‘বড় আকারের ব্যবসা বাণিজ্য দূরের কথা, ছোটখাটো ব্যবসাতেও মুসলমানদের খুঁজে পাওয়া যেত না। ব্যবসা বাণিজ্যের সবটাই ছিল হিন্দুদের হাতে’, তখন এটি একটি বড় প্রশ্ন, ১৯৫৪ সালের নির্বাচন পরবর্তীকাল হতে কাদের বেপরোয়া চোরাকারবারে পূর্ব পাকিস্তানে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের তীব্র সঙ্কটে আওয়ামী লীগ সরকারকে সেনা অভিযান চালাতে এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে মুদ্রামান হ্রাস করতে হয়েছিল? ৪৭ বছর পরে সাম্প্রদায়িকতার অভিযোগটি বিশ্বাসযোগ্য করতেই একজন মুসলমান সদস্যের ‘মনে দাগ কাটা’র কথাও লিখতে হলো বলে মনে করা যেতে পারে।
কিছু প্রাসঙ্গিক তথ্য : চোরাকারবারে ভারতীয় অনেক পণ্য পাওয়া যেত আমাদের থানাস্থ বন্দরে, যেখান থেকে প্রায়ই অগুরু ও কান্তা নামক ভারতীয় সেনট কিনতাম। আমাদের নদীর অপর পারে অন্য এক থানার লোক, হিন্দু সম্প্রদায়ের মহাজনের চোরাকারবারিরা মালামাল নৌকায় ভারতে আনা-নেয়া করত। তারা থানাস্থ পুলিশের ভয়ে এ ধরনের মাল বোঝাই নৌকা মাঝে মধ্যে আমাদের এপারে তার নিকটাত্মীয় বাড়ির পাশের খালে রাখা হতো। আমার চেনা ও জানা এই লোক ছিলেন পিরোজপুর জেলার পারেরহাটের চোরাকারবারি রইজ উদ্দিন নাইয়ার সহযোগী। ওই সেনা অভিযানে নদীতে ফেলে দেয়া হয়েছিল অনেক মাল। এমনি ভেজা, একটি ব্যাটারির প্যাকেট অজ্ঞতার বশে কিনেও ফেলে দিতে হয়েছিল। ঝালকাঠির বিশাল রাইস মিল মালিক বিজয়কৃষ্ণ পালের পাচারের পথে বেশ কয়েকটি নৌকা চালসহ ডুবিয়ে দেয়া হয়েছিল বলে জনশ্রুতি ছিল। পরে আইয়ুব খানের সামরিক আদালতে ওই দুইজনসহ তার বিচারের কথা শুনেছি। তবে বিষয়টি আমার তেমন জানা নেই। বিজয় বাবু আগেই পালিয়ে ভারতে চলে যান। চোরাকারবারে সম্পৃক্ত ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়েছিল। মালামাল বহনের সুবাদে এর সাথে সম্পৃক্ত হওয়া কিছু মুসলমানও ছিল অভিযুক্ত । হ

 


আরো সংবাদ



premium cement
গাজীপুরে তুলার গুদামে আগুন স্টপেজের দাবিতে ফরিদপুরে প্রথম দিনই ট্রেনের গতিরোধ সন্দেশখালির ধর্ষণের অভিযোগ সাজানো, বিজেপি নেতার ভিডিওতে তোলপাড় খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় বজ্রপাতে মা-ছেলের মৃত্যু গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড় পূর্ব আফ্রিকায় মানবিক সঙ্কটের অবনতির হুমকি স্বরূপ এ জে মোহাম্মদ আলীর সম্মানে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকাজ বন্ধ ঘোষণা অনির্দিষ্টকালের জন্য সারাদেশে কর্মবিরতিতে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ভিসা অব্যাহতি ও বাণিজ্য সম্প্রসারণ নিয়ে বাংলাদেশ-মিসরের আলোচনা দুই অঞ্চলে ঝড়ের আভাস আ’লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভা আজ রাশিয়ার ড্রোন হামলায় ইউক্রেনের খারকিভ-নিপ্রো অঞ্চলে আহত ৬

সকল