১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

অসম চুক্তি দেশের সার্বভৌমত্ব ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য হুমকি : গণঅধিকার পরিষদ

- ছবি : সংগৃহীত

অসম চুক্তি দেশের সার্বভৌমত্ব ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য হুমকি এমন মন্তব্য করেছে গণঅধিকার পরিষদ।

বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর ও অন্যায্য চুক্তির প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলনে করেছে দলটি।

দলের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো: রাশেদ খান। প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে এবং ভারতের সাথে ভারসাম্যহীন ও অন্যায্য চুক্তির প্রতিবাদে সমাপনী বক্তব্য রাখেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর।

লিখিত বক্তব্য বলা হয়েছে, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরে ভারতের নরেন্দ্র মোদি সরকারের সাথে ১০টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। এর মধ্যে ২টি চুক্তি, ৫টি সমঝোতা স্মারক ও ৩টি চুক্তি নবায়নের বিষয় রয়েছে। জনগণের সম্মতি ছাড়া দেশ বিরোধী এই চুক্তি প্রত্যাখ্যান করছে গণঅধিকার পরিষদ। এই চুক্তির মাধ্যমে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যতবার ভারত সফরে গেছেন, প্রতিবারই ভারতকে দিয়ে এসেছেন, আর নিজে ফিরেছেন খালি হাতে। যে কথা তিনি নিজেই বলেছেন, ভারতকে যা দিয়েছি, ভারত আজীবন মনে রাখবে। কিন্তু তিনি বাংলাদেশের মনে রাখার মত কিছু আনতে পারেননি। ১৯৭৬ সালে নেপাল ও ১৯৮৪ সালে ভুটানের সাথে বাংলাদেশ ট্রানজিট চুক্তি করেও ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহারের অনুমতি না পাওয়ায় চুক্তি কার্যকর করা সম্ভবপর হয়নি। অথচ বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে নৌ ও সড়ক পথে অনেক আগে থেকেই ট্রানজিট সুবিধা নিয়ে আসছে ভারত, এখন আবার যুক্ত হচ্ছে রেলপথ।

আওয়ামী নতজানু সরকার তিস্তাসহ অভিন্ন নদীগুলোর পানি বণ্টনের চুক্তি, সীমান্তে হত্যা বন্ধ ইত্যাদি বিষয়ে চুক্তি করতে বার বার ব্যর্থ হয়েছে এবং ০৮, ১৪, ১৮ ও ২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে একতরফাভাবে ভারতের সহযোগিতা পাওয়ার পুরস্কারস্বরূপ দেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করে ভারত যা যা চায়, সবকিছু উজাড় করে দিয়ে এসেছেন।

কানেকটিভিটির নামে বাংলাদেশের বুকের ওপর দিয়ে ভারতের একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত রেল যোগাযোগ, ডাক ও টেলিযোগাযোগের সমঝোতা, কৌশলগত ও অপারেশনাল খাতে সামরিক শিক্ষা সংক্রান্ত সহযোগিতা, ওষুধ সংক্রান্ত সমঝোতা, বাংলাদেশের জলসীমায় ভারতের অবাধ বিচরণ এবং ভারতের ইনস্পেস ও বাংলাদেশের ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমঝোতা, রেলমন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমঝোতা, সমুদ্র বিষয়ক গবেষণায় দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা ইত্যাদি সমঝোতাগুলো ব্যাপকভাবে বাংলাদেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করেছে।

ভারতকে সকল সুবিধা প্রদানের বিনিময়ে কিছু অর্জন করতে না পারা ডামি সরকারের ব্যর্থ ও নতজানু পররাষ্ট্র নীতির বহিঃপ্রকাশ।

গতকাল প্রধানমন্ত্রীর প্রেস ব্রিফিংয়েও তিনি সুস্পষ্টভাবে বলতে পারেনি যে, তিনি ভারত সফরে কি কি অর্জন করেছেন। বরং এক মাসে ২ বার ভারতে যেতে পেরে গর্ব প্রকাশ এবং গতানুগতিক বক্তব্য প্রদানের মাধ্যমে তিনি চুক্তি ও সমঝোতার বিষয়বস্তু এড়িয়ে গেছেন। এছাড়া অযাচিতভাবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রসঙ্গ এনে মূল আলোচনা থেকে জনগণের দৃশ্য ভিন্নখাতে নেয়ার চেষ্টা করেছেন।

এছাড়া চীন কর্তৃক তিস্তা মহাপরিকল্পনার প্রস্তাব গ্রহণ না করে ভারতের মাধ্যমেই তিনি তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়ন করাতে চান বলে জানিয়েছেন। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি, গঙ্গার পানিবণ্টনের চুক্তির নবায়ন ও তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়নে পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও নরেন্দ্র মোদি সরকার বাংলাদেশের সাথে চোর পুলিশ খেলা খেলছে। একজন আরেকজনের ওপর দায় দিয়ে বাংলাদেশের স্বার্থ হরণ ও কালক্ষেপণ করছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমরা কি চারিদিকে দরজা বন্ধ করে বসে থাকবো? ইউরোপের দিকে তাকান, সেখানে কোনো বর্ডারই নেই।' প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য অশনিসঙ্কেত। তাহলে কি বাংলাদেশ ভবিষ্যতে সিকিম হতে যাচ্ছে? আর ইউরোপের এক দেশ আরেকদেশকে যেভাবে সম্মান ও মর্যাদা দেয়। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে কি সেই সম্পর্ক আছে? যেখানে ভারত সীমান্তে বাংলাদেশের নাগরিককে পাখির মতো গুলি করে হত্যা করে, প্রায়ই বিজেপির নেতারা বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গা দখলের হুমকি দেয়, বাংলাদেশের রাজনীতিতে এবং সরকার বিভিন্ন সেক্টর ও প্রতিষ্ঠানে নিয়োগে হস্তক্ষেপ করে। এটা কি ইউরোপের একদেশ আরেক দেশের সাথে করে?

আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, ভারতের সাথে সরকার গোলামির সম্পর্ক তৈরি করেছে। মোদি সরকার আওয়ামী লীগকে একতরফাভাবে সহযোগিতা করে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সত্তা ধ্বংস করার মাধ্যমে গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠিয়েছে। বাংলাদেশের জনগণ ভারতের সাথে কোনো অন্যায্য ও অসাম্য চুক্তি, সমঝোতা মানবে না। ভারত আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র তাদের সাথে আমাদের প্রকৃত বন্ধুত্ব ও মর্যাদার সম্পর্ক থাকবে, যেখানে কেউ কারো স্বার্থ বিকিয়ে না দিয়ে জনগণের স্বার্থকেই প্রাধান্য দেয়া হবে। কিন্তু নতজানু আওয়ামী সরকারের গণতান্ত্রিক ভিত্তি না থাকায় ভারত নির্ভরশীলতা বেড়েছে। এবং ভারতের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে ক্ষমতায় থাকা এখন আওয়ামী লীগের মূল লক্ষ্যে পরিণত হয়েছে।

আমরা অনতিবিলম্বে বাংলাদেশের বুকের ওপর দিয়ে ভারতের ব্যবস্থাপনায় ভারতের ট্রেন চলাচলের চুক্তি বাতিল চাই।

আরো বলা হয়, মিয়ানমারের জাতিগোষ্ঠীর সাথে সেনাবাহিনীর যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন পর্যন্ত পানিসীমায় নির্বিচারে গুলি বর্ষণের ঘটনা ঘটছে। এর ফলে সেন্টমার্টিনের সাথে বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডের যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। কিন্তু সরকার কূটনীতিক তৎপরতার মাধ্যমে বাংলাদেশের ভিতরে গুলিবর্ষণ বন্ধ করতে পারছে না
বরং ক্ষীণকণ্ঠে বলছে, আমরা কোনো যুদ্ধে জড়াবো না। এমনকি বাংলাদেশে অবস্থানরত ১৩-১৪ লাখ রোহিঙ্গাকে মায়ানমারে নিরাপদ প্রত্যাবাসন করতেও ব্যর্থ হয়েছে সরকার। ভারতের সাথে সরকারের স্বামী-স্ত্রী সম্পর্ক দাবি করলেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনেও ভারতকে নিজেদের পক্ষে আনতে ব্যর্থ হচ্ছে ডামি সরকার।

এই অবৈধ কর্তৃত্ববাদী সরকারের দ্বারা কোনভাবেই দেশের স্বার্থরক্ষা করা সম্ভবপর নয়। কূটনৈতিক সম্পর্কের বৃদ্ধির মাধ্যমে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা থাকা জরুরি। আমরা দেশের জনগণকে এই ভারতীয় তাবেদার সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে গণআন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানাই। জনগণের জাগরণই পারে মাফিয়াতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠিয়ে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মানের পথ সুগম করতে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদের সদস্য শাকিল উজ্জামান, শহিদুল ইসলাম ফাহিম, আব্দুজ জাহের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান খান, আনিসুর রহমান মুন্না, বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রাসেল, যুব অধিকার পরিষদের সভাপতি মনজুর মোর্শেদ মামুনসহ প্রমুখ।

প্রেস বিজ্ঞপ্তি


আরো সংবাদ



premium cement
বিস্ফোরণে আফগান শরণার্থীবিষয়ক মন্ত্রী নিহত জাতি ঐক্যবদ্ধ থাকলে ষড়যন্ত্রকারীরা অবশ্যই ব্যর্থ হবে : আমিরে জামায়াত অবসরে গেলেন আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ জিয়াউল করিম জাতিসঙ্ঘের আরো জোরদার সহযোগিতার আহ্বান ঢাকার আওয়ামী লীগ একটি পাপিষ্ঠ দলের নাম : মাসুদ সাঈদী বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হামলা : কুলাউড়ায় আ’লীগ নেতা আজাদ গ্রেফতার খুনকে অপমৃত্যু হিসেবে রেকর্ড করলেই ওসি দায়ী : ডিএমপি কমিশনার সিরিয়াকে বশে রাখতে দামেস্কের কাছে নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করতে চায় ইসরাইল ভারতের সাথে বিদ্যুৎ নিয়ে চুক্তিগুলো বাতিল সহজ নয় : রিজওয়ানা হাসান গৌরনদীতে মাদককারবারির কারাদণ্ড ভারতের আগরতলা অভিমুখে লংমার্চ, ভৈরবে বিএনপির পথসভা

সকল