১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

ডিবিপ্রধান হারুনই সেপটিক ট্যাংক তল্লাশি করতে বলেছিলেন

আনোয়ারুল আজিম আনার - ফাইল ছবি

কলকাতার নিউ টাউনের ফ্ল্যাটের সেপটিক ট্যাংক, বর্জ্য যাওয়ার পাইপলাইন থেকে মিলেছে মাংসের টুকরা, চুল। কলকাতার সিআইডির তদন্তকারীদের সন্দেহ, এসব বাংলাদেশের নিহত সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের হতে পারে। বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য মাংসের টুকরা এবং চুলের নমুনা ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হচ্ছে। সিআইডির কাছে সেপটিক ট্যাংকে তল্লাশি চালানোর জন্য অনুরোধ জানিয়েছিলেন বাংলাদেশের গোয়েন্দাপ্রধান হারুন অর রশিদ। এমপি খুনে বাংলাদেশে ধৃত তি জন এবং পশ্চিমবঙ্গে ধৃত জুবেরকে জেরা করে এমনটাই সন্দেহ হয়েছিল হারুনের।

মঙ্গলবার নিউ টাউনের ফ্ল্যাটে বর্জ্য নিষ্কাশনের পাইপ এবং সেপটিক ট্যাংকে নেমে তল্লাশি চালিয়ে মাংসের টুকরা এবং চুল উদ্ধার করা হয়েছে। এই মাংসের টুকরা বাংলাদেশের ঝিনাইদহের এমপি আনোয়ারুল আজীম আনারের কি না, এখন তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। খুনের ‘কিংপিন’ তথা নিহতের বাল্যবন্ধু আখতারুজ্জামানসহ চারজনের বিরুদ্ধে ‘লুকআউট নোটিস’ জারি করেছে সিআইডি। হারুন মঙ্গলবার সকালে জানান, এমপির দেহাংশ না মিললে তদন্ত থামবে না। সিআইডিকে নতুন কিছু জায়গায় তল্লাশি চালানোরও অনুরোধ করেছিলেন তিনি।

কলকাতায় এসে ঝিনাইদহের এমপি খুনের তদন্ত করছেন বাংলাদেশের গোয়েন্দাপ্রধান। তদন্ত সূত্রে মঙ্গলবার নিউ টাউনের একটি শপিং মলে গিয়েছিলেন তিনি। হারুন আশাবাদী, আনোয়ারুলের দেহাংশ মিলবেই। সিআইডি খোঁজ চালাচ্ছে। পাশাপাশি, তিনি সিআইডিকে নিউ টাউনের ঘটনাস্থলের পাশে যে হ্রদ রয়েছে, সেখানেও তল্লাশি চালানোর অনুরোধ করেন। এই ঘটনায় বাংলাদেশে ধৃত তিনজনকে জেরা করা হয়েছে। তাদের থেকে যে তথ্য মিলেছে, তার সাথে এখানে এসে তদন্ত সূত্রে যা জানতে পারছেন, তা মিলে যাচ্ছে। হারুন জানান, তিনজন জেরায় জানিয়েছেন, কোন ঘরে তারা গিয়েছিলেন। কোথায় খুন করা হয়েছে এমপিকে।

খুনের তদন্তে কলকাতায় এসে রোববার নিউ টাউনের সেই ফ্ল্যাটে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের গোয়েন্দাপ্রধান, যেখানে হারুনকে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ। সাথে ছিল তার নেতৃত্বাধীন তদন্তকারীদের একটি দল। পশ্চিমবঙ্গের সিআইডি কর্মকর্তারাও ছিলেন। জিহাদকেও প্রায় চার ঘণ্টা জেরা করেন হারুন। তিনি দাবি করেন, ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পনা করে খুন করা হয়েছে আজিমকে।

সিআইডি জেনেছে, বাল্যবন্ধু আখতারুজ্জামান শাহিনের সাথে সোনার ব্যবসা করতেন আজিম। ব্যবসায়িক লেনদেনের কয়েক কোটি টাকা না পাওয়া নিয়ে আজিমের ওপরে শাহিনের ক্ষোভ ছিল বলে তদন্তকারীদের একাংশের অভিমত। মনে করা হচ্ছে, প্রতিহিংসার কারণেই নিখুঁত ছক কষে কলকাতায় ডেকে এমপিকে ‘খুনের’ পরিকল্পনা করেন শাহিন।

তবে এখনও বহু ধোঁয়াশা রয়েছে দু’দেশের তদন্তকারীদের মনে। এমপির লাশের কোনো টুকরা বা সেই টুকরা করার কাজে ব্যবহৃত ছুরি-কাঁচির সন্ধান মেলেনি। এই খুনে বাংলাদেশ থেকে তিনজন এবং কলকাতা থেকে একজন গ্রেফতার হলেও আরো চার জন অভিযুক্ত শাহিন, সিয়াম, ফয়সাল এবং মুস্তাফিজুর এখনো অধরা। তাদের খোঁজ পেতে ইন্টারপোলের সাহায্য নিতে পারে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য গোয়েন্দা পুলিশ। তদন্তকারীদের ধারণা, শাহিন আমেরিকায় এবং সিয়াম নেপালে পালিয়েছেন। বাকি দু’জন বাংলাদেশে থাকতে পারেন।

বাংলাদেশের গোয়েন্দাপ্রধান দাবি করেন, সে দেশে আজিমকে খুন করার জন্য দু’বার পরিকল্পনা করেও তা রূপায়ণ করতে পারেননি কুচক্রীরা। এর পরেই তারা আনোয়ারুলকে কলকাতায় ডেকে নিয়ে গিয়ে খুনের চক্রান্ত করেন। হারুনের দাবি, এমপিকে দিনদুয়েক আটকে রেখে মুক্তিপণ আদায়ের পরিকল্পনাও ছিল। কিন্তু বেশি পরিমাণে চেতনানাশক প্রয়োগের ফলে তিনি ‘অর্ধমৃত’ হয়ে পড়েন। তখন তাকে মেরে ফেলা হয়। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের তদন্তকারীরা যদিও বলছেন, চেতনানাশক বা ক্লোরোফর্ম প্রয়োগের বিষয়টি বাংলাদেশ পুলিশ তাদের আগে বলেনি।

‘ভাড়াটে খুনি’ শিমুল ভুঁইয়াকে খুনের জন্য শাহিন নিয়োগ করেন বলে তদন্তে উঠে এসেছে। এই শিমুলই আমানুল্লাহ আমান নামে জাল পাসপোর্ট নিয়ে কলকাতায় এসে ঘাঁটি গেড়েছিলেন। শিমুলের আবার বহুমাত্রিক পরিচয়। তিনি মাওবাদী রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। সেখান থেকে কালক্রমে ‘খুলনার ত্রাস’ এবং ‘ভাড়াটে খুনি’-এ পরিণত হন বলে পুলিশের দাবি। শিমুল বাংলাদেশে একাধিক খুনের মামলায় অভিযুক্ত। তবে ১০ বছরেরও বেশি সময় তার সন্ধান ছিল না। ২০১৯ নাগাদ নিজের নাম বদলে তিনি আমানুল্লাহ নামে পাসপোর্ট তৈরি করেন। গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, শিমুলের এক আত্মীয় বাংলাদেশে ‘প্রভাবশালী’ সরকারি অফিসার। সরকারি যোগসাজশ কাজে লাগিয়েই তিনি ওই ভুয়া পাসপোর্ট তৈরি করান বলে তদন্তকারীদের সন্দেহ। ওই পাসপোর্ট নিয়েই এমপি খুনের দু’সপ্তাহ আগে এ রাজ্যে ঢোকেন শিমুল ওরফে আমানুল্লাহ। খুনের পরে ১৫ মে তিনি বাংলাদেশে ফিরে যান। পরে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের তদন্তকারীদের তথ্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশ পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। তখনই বোঝা যায় আমানুল্লাহ এবং শিমুল আদতে একই ব্যক্তি।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা


আরো সংবাদ



premium cement