২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

যেসব কারণে সুন্দরবনের বাঘ আলাদা

-

ছোটবেলায় বাঘ মামা আর শিয়াল পণ্ডিতের গল্প শোনেনি, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। কিংবা ‘বনের রাজা কে? বাঘ নাকি সিংহ?’- এই ধাঁধাঁর মাঝে পড়েনি, এমন মানুষের সংখ্যাও হাতেগোনা।

সিংহকে বনের রাজা বলা হলেও বাস্তবে সিংহ কিন্তু বনে বাস করে না। পৃথিবীর বেশিভাগ সিংহের বসবাস আফ্রিকার সাহারা মরুভূমির সাভানা অঞ্চলে।

বাঘের বসবাস কিন্তু এশিয়ার মাত্র কয়েকটি দেশের বন-জঙ্গলে। এমনকি বাংলাদেশ ও ভারতের কোল ঘেঁষা সুন্দরবনেও আছে বাঘের আনাগোনা।

প্রাণিবিদরা এই বাঘকে বিড়াল জাতীয় বা ক্যাট গ্রুপের প্রাণী হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এর আভিধানিক নাম ‘প্যান্থেরা টাইগ্রিস’। একসময় পৃথিবীতে বাঘের নয়টি উপ-প্রজাতি ছিল।

কিন্তু আজ থেকে প্রায় ১৫০ বা ২০০ বছর আগে তিনটি প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গেছে এবং পৃথিবীতে এখন টিকে রয়েছে মাত্র ছয়টি উপ-প্রজাতির বাঘ।

তবে আকৃতি এবং সৌন্দর্যে যেসব বাঘ খ্যাতিমান, তার মধ্যে নিঃসন্দেহে সুন্দরবনের বাঘ, অর্থাৎ বেঙ্গল টাইগার অন্যতম। এই বাঘের বৈজ্ঞানিক নাম ‘প্যান্থেরা টাইগ্রিস টাইগ্রিস’।

সুন্দরবনের এই বেঙ্গল টাইগারকে যা দিয়ে চেনে সকলে, সেই ডোরাকাটা বাঘের আরো জ্ঞাতিভাই রয়েছে।

চলুন জেনে নেয়া যাক যে সুন্দরবনের বেঙ্গল টাইগার পৃথিবীর অন্যসব ডোরাকাটা বাঘের থেকে কোথায় আলাদা, আর কিসব বৈশিষ্ট্য দিয়েই-বা তাকে আলাদা করে চেনা যাবে।

দেহ
প্রাণিবিদদের মতে, সুন্দরবনের বাঘ চেনার অন্যতম প্রধান নিয়ামক হলো এদের দেহের আকার।

পৃথিবীতে যেসব বাঘ রয়েছে, তার মাঝে সাইবেরিয়ান বাঘের দেহ সবচেয়ে বড়। আর সবচেয়ে ছোট হলো বেঙ্গল টাইগার। যদিও একসময় মনে করা হতো যে সবচেয়ে ছোট বাঘ হলো সুমাত্রান বাঘ।

বলা হয়ে থাকে, সুন্দরবনের বাঘ বিবর্তনের মাধ্যমে নিজেদের দেহের আকৃতি ছোট করে ম্যানগ্রোভ বনে টিকে থাকার মতো শারীরিক যোগ্যতা অর্জন করেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘পৃথিবীতে বাঘের যত উপ-প্রজাতি রয়েছে, সবগুলোর চাইতে সুন্দরবনের বাঘ ছোট। একসময় অনেকে মনে করতেন, সুমাত্রায় যে বাঘ রয়েছে, সেটি বোধহয় ছোট। কিন্তু সেটির চাইতেও আমাদের সুন্দরবনের বাঘের আকার আরো ছোট।’

এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, সুন্দরবন ছাড়াও ভারত, ভুটান, নেপাল এবং মিয়ানমারেও বেঙ্গল টাইগার পাওয়া যায়। সেগুলোর সাথে সুন্দরবনের বাঘের একমাত্র পার্থক্য হলো দেহের আকার।

এই আকার ছাড়া সুন্দরবনের বেঙ্গল টাইগার ও পৃথিবীর অন্য জায়গার বেঙ্গল টাইগারের মাঝে আর কোনো পার্থক্য নেই বলে জানান এই প্রাণিবিদ।

ওজন
সুন্দরবনের বাঘের দেহের আকার যেমন ছোট, তেমনি এই বনের বাঘের ওজনও কম।

অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম জানান, সুমাত্রান মেয়ে বাঘের ওজন সাধারণত গড়ে ৮৫ থেকে ৯০ কেজি হয়। কিন্তু সুন্দরবনের মেয়ে বাঘের গড় ওজন ৭৫ থেকে ৮০ কেজি।

তবে তিনি তিনি উল্লেখ করেন, সুন্দরবন ছাড়া পৃথিবীর অন্য দেশে যেসব বেঙ্গল টাইগার পাওয়া যায় সেখানকার মেয়ে বাঘের ওজন গড়ে ১৩৫ থেকে ১৪০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে।

আনোয়ারুল ইসলামের ভাষায়, ‘বেঙ্গল টাইগারের ওজন কম। অন্য জায়গার বেঙ্গল টাইগার কিছুটা বড়। একই বাঘ; কিন্তু সুন্দরবনে যেটা রয়েছে, সেটার আকৃতি অন্য জায়গার বেঙ্গল টাইগারের চেয়ে একটু ছোট।’

বিচরণভূমি
বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে বিস্তৃত ১০ হাজার বর্গ কিলোমিটার জুড়ে গড়ে ওঠা সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশের আয়তন ছয় হাজার ১৭ বর্গ কিলোমিটার। অর্থাৎ এর ৬০ শতাংশ রয়েছে বাংলাদেশে।

সুন্দরবন জুড়ে খাল-বিল, নদী, শ্বাসমূল থাকায় বাঘের চলাচলের জন্য তা কিছুটা অসুবিধাজনক। একই সাথে এখানে খাবারের স্বল্পতা রয়েছে। এসব কারণে সেখানে একেকটি বেঙ্গল টাইগারের বিচরণভূমি ১৫ থেকে ২০ বর্গ কিলোমিটার। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আবার এটি ৩০ থেকে ৪০ বর্গ কিলোমিটারও হতে দেখা যায়।

কিন্তু সুন্দরবন বাদে অন্য অঞ্চলের বেঙ্গল টাইগারকে সাধারণত ৬০ থেকে ১০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিচরণ করতে দেখা যায়।

বেঙ্গল টাইগারের বাইরে যেসব বাঘ, তাদের একেকটির বিচরণভূমি একেকরকম। সাইবেরিয়ান বাঘের বিচরণভূমি বেশি, কারণ সাইবেরিয়াতে জায়গার অভাব নেই। সেখানকার একটা বাঘের বিচরণভূমি ৫০০ থেকে এক হাজার বর্গ কিলোমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে।

মাথার আকৃতি
দেহের আকার ও ওজনের মতো বেঙ্গল টাইগারের মাথার আকার ছোট হয়।

ন্যাচার সাফারি ইন্ডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, বেঙ্গল টাইগারের মাথার আকার সর্বোচ্চ ৩৭৬ মিলিমিটার। কিন্তু সাইবেরিয়ান বাঘের ক্ষেত্রে এটি ৪০৬ মিলিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে।

বাঘের খাবার
অন্য অঞ্চলের বাঘ মূলত গরু, মহিষ ও সাম্বার হরিণের মতো বড় প্রাণী খেয়ে টিকে থাকে। কিন্তু সুন্দরবনের বাঘ হরিণ, শূকর ও বানরের মতো ছোট প্রাণী খায়।

অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘সুন্দরবনের যে বাঘ রয়েছে, তার শিকারের আকার কম। অন্য জায়াগার বাঘের খাবার অনেক বড়। কিন্তু আমাদের সুন্দরবনে শুধু চিত্রল হরিণ এবং সামান্য মায়া হরিণ রয়েছে। মায়া হরিণ তো চিত্রল হরিণের চাইতেও ছোট। এ কারণে ওদের সাইজটাও ছোট।’

পায়ের ছাপ
বেঙ্গল টাইগার চিহ্নিত করার আরেকটা উপায় হলো এদের পায়ের ছাপ। কারণ এরা আকারে অপেক্ষাকৃত ছোট হওয়ায় এদের, বিশেষ করে সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গলের পায়ের ছাপও ছোট। এই ছাপ দেখলে বোঝা যায় যে এটা বড় বাঘ, নাকি ছোট বাঘ।

এছাড়া বাঘ বিশেষজ্ঞরা নির্ধারণও করতে পারেন যে ছাপটি ছেলে বাঘের নাকি মেয়ে বাঘের।

গায়ের রঙ
বেঙ্গল টাইগারের গায়ের রঙ হলুদ থেকে হালকা কমলা রঙের হয়। এদের ডোরার রঙ হয় গাঢ় খয়েরি থেকে কালো রঙ্গের। এই বাঘের পেটের রঙ সাদা। আর লেজ হলো কালো কালো আংটিযুক্ত সাদা রঙের।

তবে পৃথিবীতে সাদা বাঘও আছে। তাদের শরীরের ওপর গাঢ় খয়েরি কিংবা উজ্জ্বল গাঢ় রঙের ডোরা থাকে এবং কিছু কিছু অংশ শুধুই সাদা।

মানুষের ফিঙ্গার প্রিন্টের মতোই ইউনিক বাঘের ডোরা
বেঙ্গল টাইগারকে চিহ্নিত করার সবচেয়ে প্রধান উপায় হলো এদের গায়ের ডোরা। পৃথিবীতে যত বাঘ আছে, তাদের একটির ডোরার সাথে অন্যটির ডোরার মিল নেই।

আনোয়ারুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, “কোনো বাঘের ডোরার সাথে কোনো বাঘের ডোরার মিল নেই। বাঘের স্ট্রাইপ দেখে বোঝা যায় যে এটা ‘ক’ বাঘ, এটা ‘খ’ বাঘ, এটা ‘গ’ বাঘ। সারা পৃথিবীতে যত বাঘ আছে, প্রত্যেকের স্ট্রাইপ ভিন্ন। এটা মানুষের ফিঙ্গারপ্রিন্টের মতো।”

ভালো সাঁতারু
বেঙ্গল টাইগার দীর্ঘক্ষণ সাঁতার কাটতে পারে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আবদুল আজিজ বলেন, সুন্দরবনের বাঘ এক কিলোমিটার নদী অনায়াসে পার হতে পারে।

ডিএনএ
বৈজ্ঞানিকভাবে সুন্দরবনের বাঘ চিহ্নিত করার সর্বশেষ ধাপ হলো বাঘের ডিএনএ পরীক্ষা।

অধ্যাপক আজিজ বলেন, ‘অন্য বাঘের চেয়ে সুন্দরবনের বাঘের ডিএনএ-এর সিকোয়েন্সে পার্থক্য আছে। বিভিন্ন অঞ্চলের বাঘের সিকোয়েন্স যখন কম্পিউটারে মেলানো হয়, তখন কিছু পার্থক্য ধরা পড়ে।’

সুন্দরবনের বাঘের যেহেতু অন্য কোথাও যাওয়ার সুযোগ নেই, তাই দীর্ঘ দিন একটা অঞ্চলে থাকার কারণে তাদের ডিএনএ-তে কিছু পরিবর্তন এসেছে।

তিনি বলেন, ‘এদের যেহেতু ফ্রি-মিক্সিংয়ের সুযোগ নেই, তাই দীর্ঘ দিন আইসোলেটেড থাকায় কিছু পার্থক্য তৈরি হয় ডিএনএ-তে।’

কিভাবে চেনা যাবে বাংলাদেশের বাঘ?
বাঘ যেহেতু ভালো সাঁতারু, তাহলে কিভাবে বোঝা যাবে যে সে বাংলাদেশ অংশের বাঘ নাকি অন্য কোথাও হতে এসেছে?

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক আনোয়ারুল হোসেন বলেন, বাঘ ভালো সাঁতার কাটলেও সে প্রয়োজন ছাড়া কখনো সাঁতরে নদী পাড় হবে না।

তিনি বলেন, ‘সুন্দরবনের পশ্চিমাংশে রায়মঙ্গল নদীটা বাংলাদেশ ও ভারতের সুন্দরবনকে আলাদা করেছে। ওই নদীটা বড়। কিন্তু অকারণে সে তিন কিলোমিটার সাঁতার কাটবে না।’

এখন প্রশ্ন হলো, একটা বাঘ কোন কোন পরিস্থিতিতে সাঁতার কাটবে?

- কোনো বাঘ যদি তার টেরিটোরি হারিয়ে ফেলে, তাহলে সে সাঁতার কেটে ওপাড় যেতে পারে।
- একটা পুরুষ বাঘের সাথে তিন থেকে চারটি নারী বাঘ থাকতে দেখা যায়। কোনো বাঘ যখন তার টেরিটোরিতে - সঙ্গী পায় না তখন সে সাঁতরে চলে যায়।
- খাবারের সন্ধানেও বাঘেরা নদী পারাপার করে।

তবে কোনো বাঘ যদি এক পাশ থেকে আরেক পাশে আসে, তাহলে তা জরিপের সময় উঠে আসে।

অধ্যাপক আজিজ জানান, রায়মঙ্গল পার হয়ে ওই পাশে যায় না বা ওই পাড় থেকে আসে না যে, তা না। কিন্তু যদি কোনো বাঘ আসে, তাহলে জরিপের সময় সেটা টের পাওয়া যাবে। স্ট্রাইপ দেখে বোঝা যাবে সে নতুন বাঘ।

তিনি বলেন, ‘রায়মঙ্গলের কাছে হলদিবুনিয়া দ্বীপ বনাঞ্চলের সাথে ভারতের সুন্দরবনের যে পার্থক্য ৭০০ থেকে ৮০০ মিটার। সেখানে একটা ছোট নদী আছে। এই নদীটির প্রস্থ মাত্র ৮০০ মিটার। এই নদী দিয়ে দিয়ে বাঘ নিয়মিত পার হয়। বাঘের কোনো দেশ নেই।’

বাংলাদেশে বাঘের সংখ্যা কত?
বাংলাদেশে সর্বপ্রথম বাঘশুমারি হয় ২০০৪ সালে। সেবার বনবিভাগ ও ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব ন্যাচার (আইইউসিএন) যৌথভাবে সুন্দরবনে বাঘের পায়ের ছাপ গুণে একটি জরিপ করে। ওই জরিপে বাঘের সংখ্যা পাওয়া যায় ৪৪০টি।

কিন্তু পরবর্তীতে বিজ্ঞানীদের কাছে ওই জরিপটি বিজ্ঞানসম্মত না হওয়ায় ২০১৫ সালে সর্বপ্রথম ক্যামেরা ফাঁদ ব্যবহার করে বাঘের ছবি তুলে এবং পায়ের ছাপ গণনা করে বাঘের ওপর জরিপ চালানো হয়। ওই জরিপে দেখা যায়, বাংলাদেশ অংশের সুন্দরবনে বাঘ আছে ১০৬টি।

২০১৮ সালের আরেকটি জরিপে দেখা যায় যে বাঘের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১১৪টি। এটিই পর্যন্ত করা সর্বশেষ জরিপ। ভারতের সুন্দরবনেও প্রায় ১০০ বাঘ রয়েছে।

তবে বর্তমানে সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় আরো একটি জরিপ চলমান রয়েছে।

গত বছর জানুয়ারি মাসে এই জরিপটি শুরু হয়েছিল, যা এ বছর মে মাস নাগাদ শেষ হবে। সেক্ষেত্রে বছরের মাঝামাঝি সময়ে জরিপের চূড়ান্ত ফলাফল হাতে আসবে বলে জানায় বনবিভাগ।

তবে এই জরিপ সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, এ বছর জরিপে বাঘের সংখ্যা বাড়তে পারে।

চলমান বাঘশুমারি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আবু নাসের মোহসিন হোসেন বলেন, ‘খুলনা-সাতক্ষীরায় হয়ে গেছে। এখন চাঁদপুর ও শরণখোলার অংশে ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের কাজ চলছে। আমরা দীর্ঘ দিন ধরে কাজ করছি। আমরা যে তথ্য-উপাত্ত পাচ্ছি, এগুলো বৃদ্ধিকেই ইন্ডিকেট করছে।’

কত সংখ্যক বাড়তে পারে বলে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বন্য প্রাণী কখনোই অপরিকল্পিত কাজ করে না। তাই, কোনো ডিস্টার্বেন্স যদি নাও হয়, তাহলেও বাঘের সংখ্যা ১৬৫ থেকে ২২৫টির ওপরে উঠবে না কখনও।’

বাঘ বৃদ্ধির বিষয়ে অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘আমি শুনেছি, বাচ্চা বেশি পাওয়া যাচ্ছে। যদিও বাচ্চাগুলো গণনায় আসবে না। কারণ বাচ্চা যদি পূর্ণবয়স্ক না হয় কখনও...। তবে সবাই আশান্বিত যে বাঘের সংখ্যা হয়তো বেড়েছে।’

বাঘের সংখ্যা বাড়ার কারণ
এই সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, বাঘের সংখ্যা বাড়ার মূল কারণ হলো মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি।

অধ্যাপক আব্দুল আজিজ বলেন, ‘সমাজে কেউ বাঘ বা হরিণ শিকার করলে তাকে এখন অনেকেই ভালো চোখে দেখে না। এটা একটি কারণ।’

প্রাণিবিদ এবং এই খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, সুন্দরবনের আশপাশে ৭৬টি গ্রাম আছে, সেগুলোর ৮০ শতাংশ গ্রামে এখন ‘ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিম’ আছে।

এছাড়া একটা সময়ে সুন্দরবন মানেই ছিল জলদস্যু ও বনদস্যুদের আখড়া। এখন সেটা আর নেই।

আবু নাসের মোহসিন হোসেন বলেন, ‘২০১৮ সাল থেকে বনদস্যু এবং জলদস্যু নাই হয়ে গেছে। বাঘ ও হরিণ বৃদ্ধির মূল কারণ এটাই। যখন দস্যুরা সুন্দরবনে থাকত, তাদের খাওয়ার একমাত্র জিনিস হলো হরিণের গোশত।’

বাংলাদেশে সর্বপ্রথম হরিণ নিয়ে বেজলাইন জরিপ হয়েছে উল্লেখ করে তিনি জানান, তাতে উঠে এসেছে, বর্তমানে হরিণের সংখ্যা এক লাখ ৪৮ হাজার।

আজিজ বলেন, ‘হরিণের সংখ্যা বাড়লে বাঘ বাড়বে। কারণ হরিণ বাঘের প্রধান খাবার। খাবার থাকলে মানুষের ক্ষেত্রে যেমন হয়, বাঘের ক্ষেত্রেও তাই হবে। কিন্তু প্রাকৃতিকভাবে এটা নিয়মের মাঝে চলে। হরিণ বাড়লে বাঘ বাড়ে। আর বাঘ বাড়লে হরিণ কমবে।’

হরিণ বাড়লে পর্যাপ্ত খাবার পাওয়ায় বাঘ বনের বাইরে কম আসবে বলেও মন্তব্য করেন আজিজ।

বাঘের সংখ্যা বেশি বাড়লে ‘আরেক বিপদ’
তবে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, বনবিভাগ ক্রমান্বয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়ার হরিণ ও বাঘের সংখ্যা ক্রমশ বাড়বে। একই সাথে আগামী ১০ বছরের মাঝে বাঘ এবং হরিণ একটা সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

তাদের মতে, তখন বাঘ-মানুষের সংঘর্ষ বাড়বে। কারণ বনে যদি বাঘের পরিমাণ বেশি হয়ে যায়, তাহলে তারা ওই অনুযায়ী খাবার পাবে না, আর খাবার না পেলে তারা লোকালয়ে প্রবেশ করবে।

এ বিষয়ে আজিজ বলেন, ‘খাবার না পেলে গ্রামে বাঘ-মানুষের সংঘর্ষ বাড়বে। এটা সারা দুনিয়াতে আছে। ক্যান্সারকে যেমন ম্যানেজমেন্টে রাখতে হবে, বাঘ মানুষের সংঘর্ষও তাই। দুনিয়াতে মানুষ বেড়েছে, বনের ওপর চাপ বাড়ছে। বনের আশপাশে মানুষের ঘরবাড়ি আছে। স্বাভাবিকভাবেই এই দ্বন্দ্ব থাকবে। কিন্তু এটাকে সহনশীল রাখাই মূল লক্ষ্য।’

তারপরেও বাঘ কেন গুরুত্বপূর্ণ
প্রায় ২০০ বছর আগে ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া থেকে বাঘের দুটি উপ-প্রজাতি হারিয়ে গিয়েছিল। আরেকটা হারিয়েছিল রাশিয়ার ওই অঞ্চল থেকে।

তখন এই তিন উপ-প্রজাতি হারিয়েছিল কারণ মানুষ তখন বাঘকে হিংস্র মনে করে মেরে ফেলত।

আজিজ বলেন, ‘নিজেদের জীবন নির্বিঘ্ন করতে তারা প্রাণী মারত। তখন ইকোলজি, পরিবেশের প্রয়োজনীয়তা মানুষের ধ্যান-ধারণায় ছিল না। আজকের বালি দ্বীপের সব বাঘ মেরে ফেলা হয়েছিল শুধুমাত্র নিরাপদ বসবাসের জন্য। কিন্তু পরিবেশের ভারসাম্যের জন্য বাঘ প্রয়োজন। ইকোসিস্টেম ফাংশনাল থাকলে সেখান থেকে যে ইন্ডিরেক্ট সার্ভিস, তথা- মাছ, নির্মল বায়ু, মধু, পাই; যদি সিস্টেম ধ্বংস হয়ে যায়, তখন তা পাওয়া যায় না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলামও বলেন, ‘এই পপুলেশন যদি পৃথিবী থেকে হারিয়ে যায়, এটিকে রিপ্লেস করা সম্ভব হবে না। নেপাল, ভুটান, ভারতে যে পপুলেশন রয়েছে, সেখানের একটা জায়গার বাঘ হারিয়ে গেলে রিপ্লেস করা যেতে পারে। সুন্দরবনের বাঘের ফিজিক্যাল ট্রেইটস, বিহেইয়ারাল ট্রেট, জেনেটিক ট্রেট। এটা অন্য বাঘের চেয়ে ইউনিক।’
সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement
চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রির কাছে আচরণবিধি লঙ্ঘন ও উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদানে অধ্যক্ষ এবং চেয়ারম্যান গ্রেফতার আবারো পিএমএল-এনের সভাপতি হচ্ছেন নওয়াজ শরিফ বিষখালী নদী থেকে ২২ ঘণ্টা পর নিখোঁজ জেলের লাশ উদ্ধার ৩ জেলায় বয়ে যাচ্ছে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ ছত্তিশগড়ে ২৯ জন মাওবাদী নিহত হওয়ার পর এলাকায় যে ভয়ের পরিবেশ নেতানিয়াহুকে গাজার কসাই বললেন এরদোগান রাশিয়া ইউক্রেনের ৬৮টি ড্রোন ভূপাতিত করেছে গুচ্ছ পরীক্ষা দিতে এসে জবি কেন্দ্রে অসুস্থ এক শিক্ষার্থী থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান কক্সবাজার সৈকতে নেমে হৃদরোগে পর্যটকের মৃত্যু

সকল