১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
রাজধানীতে ভূমিকম্প ঝুঁকি : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ শীর্ষক সেমিনার

‘ভূমিকম্প থেকে রক্ষা পেতে পরিকল্পিত নগরায়ন ও সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন’

রাজধানীতে ভূমিকম্প ঝুঁকি : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ শীর্ষক সেমিনার - সংগৃহীত

মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাবেক ভিসি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবদুর রব বলেছেন, ভূমিকম্প থেকে রক্ষা পেতে পরিকল্পিত নগরায়ন সৃষ্টি করতে হবে। রাজধানী ঢাকায় অনেক বড় বড় অবকাঠামো তৈরি হচ্ছে, কিন্তু যখন বড় মাত্রার ভূমিকম্প হবে, তখন হয়তো অনেক হিসাব নিকাশ পরিবর্তন হয়ে যাবে। অনেক সরকারি স্থাপনা, স্কুল, হাসপাতাল এসব প্রতিষ্ঠানও ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে আছে। কিছু কিছু জায়গায় তো ভূমিকম্প ছাড়াই ভবন ধসে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় ভূমিকম্পসহ বড় বড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেতে সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোর তদারকির পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে সচেতনতা সৃষ্টি ও প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে। সমন্বিত উদ্যোগই পারে সকল দুর্ঘটনা থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করতে।

বুধবার (১২ জুন) বিকেলে গ্রিনপিস সোসাইটি বাংলাদেশের উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাবের আকরাম খাঁ হলে ভূমিকম্প ঝুঁকি : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ শীর্ষক এক সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

গ্রিনপিস সোসাইটি বাংলাদেশের সদস্য সচিব মুহাম্মদ হাফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও পুরকৌশল বিভাগের সাবেক ডীন প্রফেসর ড. জাহাঙ্গীর আলম ।

আলোচক হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স-এর সাবেক পরিচালক মেজর এ কে এম শাকিল নেওয়াজ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সাব্বির মোস্তফা খান, প্রকৌশলী শেখ আল আমিন, শ্রমিক নেতা আব্দুস সালাম, পরিবেশ সাংবাদিক মোহাম্মদ আনোয়ারুল হক, কেফায়েত শাকিলসহ বিভিন্ন বুদ্ধিজীবী ও পেশাজীবী নেতারা।

আবদুর রব বলেন,‘ভূমিকম্প ঝুঁকির মাত্রা বিবেচনায় বাংলাদেশকে তিনটি জোনে ভাগ করা হয়েছে। আর দেশের রাজধানী ঢাকা ভূমিকম্প পরবর্তী উচ্চ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এর মূল কারণ অপরিকল্পিত নগরায়ণ। ঢাকার ভবনের যে কোয়ালিটি, সেটি অনেক ক্ষেত্রেই দুর্বল। অনেক এলাকায়ই অল্প কিছু মাটি ভরাট করে অনেক বড় বড় ইমারত হচ্ছে। পর্যাপ্ত খালি জায়গা নেই, গ্যাস ও বিদ্যুতের ঝুঁকিপূর্ণ সংযোগ অনেক বড় দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। এজন্য সময় ও সুযোগ থাকতেই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাকে শক্তিশালী করতে হবে। ঢাকার জনগণকে বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। পর্যাপ্ত উপকরণ ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’

প্রবন্ধ উপস্থাপক প্রফেসর ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ঢাকায় যদি সাত মাত্রার ভূমিকম্পও আঘাত হানে, আমাদের যে প্রস্তুতি, ভবনের স্ট্রাকচার, ঘনবসতি তাতে অনেক বড় বিপর্যয় হতে পারে। আমাদের এত বছরে যত উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে তা আবার ফিরিয়ে আনা অনেক সময়-সাপেক্ষ ব্যাপার হবে। নরম কাঁদা না হয় লুস বালি দ্বারা বেষ্টিত পুরো বাংলাদেশ। আমাদের কংক্রিট কার্যকারিতা খুবই খারাপ। রানা প্লাজার দুর্ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে আমাদের দূর্বলতা গুলো দেখিয়ে দিয়েছে। সুতরাং আমাদের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে ব্যাপকভাবে গবেষণা করতে হবে।

মেজর এ কে এম শাকিল নেওয়াজ বলেন, ভূতাত্ত্বিক কাঠামো অনুযায়ী বাংলাদেশে তিনটি টেকটনিক প্লেটের সংযোগ স্থলে অবস্থিত৷ উত্তরে তিব্বত প্লেট, পূর্বে বার্মা সাব-প্লেট এবং পশ্চিমে ইন্ডিয়া প্লেট৷ এগুলোর বিস্তৃতি সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার৷ এই জোনে বড় বড় ভূমিকম্প হয়েছে। আবার শতবর্ষে বড় ভূমিকম্প ফিরে আসে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভূমিকম্প নিয়ে কোনো গবেষণা হয় না এটা খুবই দুঃখজনক। সবখানেই কমিউনিটি লেভেলের রেসকিউ সিস্টেম প্রস্তুত করতে হবে।

অধ্যাপক ড. সাব্বির মোস্তফা খান বলেন, ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবেলায় পর্যাপ্ত উন্মুক্ত জায়গা দরকার। ঢাকার অবকাঠামো যেমন দুর্বল তেমনি মানুষের জনসচেতনতা কম। সেজন্য যদি একটা বড় মাত্রার ভূমিকম্প হলে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা বেশি হবে। সবমিলিয়ে মানুষের সামগ্রিক প্রচেষ্টা ও সচেতনতাবোধই পারে ক্ষতির পরিমাণ কমাতে।

প্রকৌশলী শেখ আল আমিন বলেন, উন্নত দেশগুলোতে দুর্ঘটনা পরবর্তী উদ্ধার কাজের প্রায় ৮০ শতাংশ কমিউনিটি লেবেলে হয়ে থাকে আর বাকি ২০ শতাংশ দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা গুলো পরিচালনা করে। আমাদের দেশে সেক্ষেত্রে কমিউনিটি বেইজ কোনো প্রশিক্ষণ কার্যক্রম নেই। আবার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগগুলোতে যারা চেয়ারে বসে আছেন তাদেরও রাজনৈতিক নিয়োগ হওয়ায় এ ব্যাপারে পর্যাপ্ত জ্ঞান ও প্রশিক্ষণ নেই। এজন্য দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কমিউনিটি বেইজ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালু ও দফতর গুলোতে পেশাদার ব্যক্তিদের নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।

প্রেস বিজ্ঞপ্তি


আরো সংবাদ



premium cement