১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

সঠিক পরিমাপের গুরুত্ব অপরিসীম

সঠিক পরিমাপের গুরুত্ব অপরিসীম - ফাইল ছবি

আজ সোমবার বিশ্ব মেট্রোলজি দিবস ২০২৪। ১৮৭৫ সালের ২০ মে ফ্রান্সের প্যারিসে পরিমাপ সম্পর্কিত ‘মিটার কনভেনশন’ স্বাক্ষরিত হয়। দিনটি স্মরণীয় করে রাখতে এবং দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সঠিক ওজন ও পরিমাপের গুরুত্বের বিষয়ে জনসচেতনতা গড়ে তোলার জন্য প্রতি বছর বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৮০টিরও বেশি দেশে একযোগে এ দিবস পালিত হয়।

নিরাপদ ও সুষম খাদ্য সুস্থ মানবদেহের জন্য অপরিহার্য। যা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতে এবং পণ্য ও সেবার মান বজায় রাখতে সঠিক ওজন ও পরিমাপের গুরুত্ব অপরিসীম। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে পরিমাপ বিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সঠিক পরিমাপ ছাড়া টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়।

মেট্রোলজি হলো পরিমাপের বৈজ্ঞানিক অধ্যয়ন। এটি ইউনিটগুলোর একটি সাধারণ বোঝাপড়া প্রতিষ্ঠা করে, যা মানুষের ক্রিয়াকলাপকে সংযুক্ত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। আধুনিক পরিমাপবিদ্যার শিকড় রয়েছে ফরাসি বিপ্লবের রাজনৈতিক অনুপ্রেরণায় ফ্রান্সে মাপের একক মানসম্মত করার জন্য যখন প্রাকৃতিক উৎস থেকে নেয়া একটি দৈর্ঘ্যরে মান প্রস্তাব করা হয়েছিল। এটি ১৭৯৫ সালে দশমিক-ভিত্তিক মেট্রিক সিস্টেম তৈরির দিকে পরিচালিত করে, অন্যান্য ধরনের পরিমাপের জন্য মানগুলোর একটি সেট প্রতিষ্ঠা করে। ১৭৯৫ থেকে ১৮৭৫ সালের মধ্যে অন্যান্য বেশ কয়েকটি দেশ মেট্রিক পদ্ধতি গ্রহণ করে; দেশগুলোর মধ্যে সামঞ্জস্য নিশ্চিত করার জন্য, ইন্টারন্যাশনাল ব্যুরো অব ওয়েট অ্যান্ড মেজারস (বিআইপিএম) কনভেনশন প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬০ সালে ওজন ও পরিমাপ সংক্রান্ত ১১তম সাধারণ সম্মেলনের (CGPM) একটি রেজ্যুলিউশনের ফলে এটি ইন্টারন্যাশনাল সিস্টেম অব ইউনিটসে (SI) বিকশিত হয়েছে।

পণ্য ও সেবার মান প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন এবং ব্যবসায়-বাণিজ্যের সব ক্ষেত্রে সঠিক পরিমাপ সময়েরই দাবি। ভোক্তা সাধারণের প্রাপ্য যথাযথভাবে নিশ্চিতে ডিজিটাল প্রযুক্তির পরিমাপে গুরুত্ব দেয়া বাঞ্ছনীয়। তাই ওজন ও পরিমাপ বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে প্রতি বছর ২০ মে বিশ্বব্যাপী এ দিবসটি পালন করা হয়।
মেট্রোলজিকে তিনটি সাবফিল্ডে ভাগ করা যায় : বৈজ্ঞানিক মেট্রোলজি, অ্যাপ্লাইড মেট্রোলজি এবং লিগ্যাল মেট্রোলজি। ভোক্তাদের সুরক্ষা এবং ন্যায্য বাণিজ্যের জন্য সুপ্রতিষ্ঠিত পরিমাপ এবং পরিমাপ যন্ত্রের নিয়ন্ত্রক প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কিত আইনি পরিমাপবিদ্যা হলো এর মূল কথা।

পরিশেষে বলতে চাই, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে কায়িক পরিশ্রমের পরিবর্তে ডিজিটাল প্রযুক্তির স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার বাড়ছে। এরই ধারাবাহিকতায় শিল্পকারখানায় উৎপাদিত পণ্যের সঠিক পরিমাপে এসেছে ডিজিটাল প্রযুক্তি। এর মাধ্যমে ব্যবসায়-বাণিজ্যে পণ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে বাজার ও ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছানো এবং অনুমোদন প্রক্রিয়ার ধাপ কমিয়ে দ্রুত সেবাদান সম্ভব হচ্ছে। ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে শিল্প কারখানায় উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে দেশীয় পণ্যের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে।

মানুষের প্রাত্যহিক জীবনে প্রতিটি ক্ষেত্রে সঠিক পরিমাপের গুরুত্ব অপরিসীম। কোনো পণ্যই মানসম্মত হবে না যদি তার প্রতিটি উপাদান সঠিক না হয়। আর বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন প্রকার পণ্য বা সেবা এক দেশ থেকে অন্য দেশে বা বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে লেনদেন বা বিপণন হচ্ছে। এটি সম্ভব হচ্ছে একমাত্র পরিমাপের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক পদ্ধতির প্রচলন এবং এ পদ্ধতির প্রতি মানুষের আস্থা, নির্ভরযোগ্যতা ও বিশ্বাসযোগ্যতার কারণে। বাংলাদেশ ১৯৭৪ সালে আন্তর্জাতিক মান সংস্থা (আইএসও) এবং ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ কোডেক্স অ্যালিমেন্টারিয়াস কমিশনের সদস্যপদ লাভ করে। আইএসও ও কোডেক্স এর সদস্যপদ এবং পরবর্তীতে বিআইপিএম ও বিআইএমএলের সদস্যভুক্ত হওয়ার পর থেকে আন্তর্জাতিক মান ও পরিমাপ সংস্থা প্রণীত মান অনুযায়ী দেশের জাতীয় মান সংস্থা (এনএসবি) হিসেবে বিএসটিআই বাংলাদেশের বিভিন্ন পণ্যের মান নির্ধারণ এবং সঠিক ওজন ও পরিমাপ নিশ্চিতকরণে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। আর বর্তমান সরকার ২০১৮ সালে ওজন ও পরিমাপ মানদণ্ড আইন এবং ২০২১ সালে পণ্য মোড়কজাতকরণ বিধিমালা প্রণয়ন করেছে। আর বিএসটিআইয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ভোক্তার স্বার্থ রক্ষায় দেশব্যাপী বিভিন্ন স্তরের অংশীজনের সহায়তায় ভ্রাম্যমাণ আদালত ও বিশেষ অভিযান পরিচালনাসহ জনস্বার্থ-বিরোধী কাজ নিরসনে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। জনগণের ন্যায্য অধিকার সমুন্নত রাখা এবং সুষ্ঠু ব্যবসায়বান্ধব পরিবেশ তৈরির ক্ষেত্রে বিএসটিআইয়ের পদক্ষেপসমূহ সর্বমহলে প্রশংসিত হচ্ছে।

এবারের মেট্রোলজি দিবসের গৃহীত কর্মসূচি ক্রেতা-ভোক্তা, উৎপাদক, আমদানিকারক, গবেষক ও বিএসটিআইয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে আরো সক্রিয় হতে উৎসাহ জোগাবে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় পরিমাপসহ সব ক্ষেত্রে ডিজিটাল পদ্ধতি বাস্তবায়িত হবে এবং উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার স্বপ্ন ধরাছোঁয়ার মধ্যে চলে আসার সম্ভাবনা তৈরি হবে।

লেখক : কলামিস্ট, প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি


আরো সংবাদ



premium cement