মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীর বিক্রম এক সফল সামরিক, রাজনৈতিক নেতা
- কর্নেল মোহাম্মদ আবদুল হক, পিএসসি (অব:)
- ০৪ নভেম্বর ২০২১, ১৯:৩২, আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০২১, ১৯:৩৩
দেশের সঙ্কটকালে জাতি যখন দিশেহারা ও বিভাজিত, তখন প্রয়োজন হয় সৎ, যোগ্য, দেশপ্রেমিক, বলিষ্ঠ ও নেতৃত্বের গুণাবলিসম্পন্ন নেতার। যাদের দূরদৃষ্টি ও নিঃস্বার্থ দৃষ্টিভঙ্গি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে, দেখায় আলোকিত পথের দিশা। যাদের নির্দেশের অপেক্ষায় বসে থাকে লাখো কোটি জনতা। যেমনটি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মওলানা ভাসানী, জিয়াউর রহমান প্রমুখ। আমাদের দেশে এখন কি সে উচ্চতর নেতার অভাব আছে?
অসংখ্য বীর পুরুষের দেশ আমাদের বাংলাদেশ। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পেছনে যেমন ছিলেন আমাদের পূর্বসূরি শেরেবাংলা, নাজিম উদ্দিন, সোহরাওয়ার্দী, ভাসানী থেকে শুরু করে শেখ মুজিব পর্যন্ত অনেক যোগ্য নেতা; একইভাবে ১৯৭১ সালে দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনেও ছিলেন বঙ্গবন্ধু, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, কর্নেল ওসমানী হতে শুরু করে অনেক যোগ্য নেতা।
স্বাধীনতা আন্দোলন যখন স্বাধীনতা যুদ্ধে পর্যবসিত হলো, সে সময়েও মহান আল্লাহ এ জাতিকে বঞ্চিত করেননি যোগ্য নেতৃত্ব থেকে। বঙ্গবন্ধু যখন অনুপস্থিত, হাজার মাইল দূরে পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী, রাজনৈতিক নেতারা যখন পালিয়ে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গে কলকাতায় আশ্রয় নিয়েছেন; দেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষ যখন একেবারে অসহায় অবস্থায়; তখনও নেতৃত্বশূন্য এ জাতিকে মহান আল্লাহ তাঁর অপার দয়া থেকে বঞ্চিত করেননি। তিনি পাকিস্তান সামরিক বাহিনীতে চাকরিরত অসাধারণ মেধাবী, দুঃসাহসী, নির্ভীক, চৌকস বাঙালি সামরিক নেতাদের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণার সৎসাহস সঞ্চার করলেন তাদের প্রাণে। তারা পক্ষত্যাগ করে রণহুঙ্কারে নেমে পড়লেন হানাদারদের বিরুদ্ধে। ভুলে গেলেন নিজ পরিবার, প্রাণপ্রিয় সন্তান, মা-বাবা, আত্মীয়স্বজনকে।
এরাই ছিলেন দেশ ও জনগণের ভয়ঙ্কর দুঃসময়ের পরীক্ষিত নেতা ও দেশের কাণ্ডারি। মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক বঙ্গবীর জেনারেল মুহাম্মদ আতাউল গনি ওসমানীর নেতৃত্বে লে. কর্নেল আব্দুর রব, মেজর জিয়াউর রহমান, মেজর সফিউল্লাহ, মেজর খালেদ মোশাররফ, মেজর জলিল, মেজর তাহের, মেজর মীর শওকত আলী, মেজর ওসমান, স্কোয়াড্রন লিডার মোহাম্মদ খাদেমুল বাশার ও আরো অনেক মেজর, ক্যাপ্টেন, লেফটেনেন্ট ও জেসিও, এনসিও, সৈনিকরা।
এ দুঃসাহসী বীরদের অন্যতম হলেন মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীর বিক্রম। যিনি নির্ভীক, দুর্ধর্ষ, সৌম্য-শক্তি-ক্ষিপ্রতার মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত, দেশপ্রেমের ঐতিহ্যে লালিত তার মন-প্রাণ। যিনি দেশের দুঃসময়ে জীবনের মায়া ত্যাগ করে অসংখ্য শত্রুবেষ্টিত অবস্থায় বিদ্রোহ করে বসলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ঐতিহ্যবাহী ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের প্রথম ব্যাটালিয়ান সিনিয়র টাইগার্সকে নিয়ে। দলের অনেকেই শহীদ হলেন; কিন্তু দেশের স্বাধীনতার জন্য নিজের ইউনিটকে নিয়ে এগিয়ে গেলেন সম্মুখযুদ্ধের আরো কঠিন অঙ্গনে। মেজর হাফিজ এমনই একজন ব্যক্তিত্ব যিনি তার বর্ণাঢ্য জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অত্যন্ত সফলতার পরিচয় দিয়েছেন।
শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের তৎকালীন বৃহত্তর বরিশালের মহকুমা শহর ভোলার লালমোহনে ১৯৪৪ সালের ২৯ অক্টোবর বাবা ডা: আজহার উদ্দিন আহমদ ও মা করিমুন্নেছার গৃহ আলোকিত করে জন্মগ্রহণ করেন হাফিজ উদ্দিন আহমদ। তার বাবা ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী ব্যক্তিত্ব; যিনি কয়েকটি বিষয়ে লেটারমার্কসহ ১৯৩৩ সালে ম্যাট্রিক ও ১৯৩৫ সালে আইএসসি প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। পঞ্চাশের দশকে তিনি ছিলেন বরিশালের হাতেগোনা ১০জন চিকিৎসকের একজন। পরে তিনি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন এবং ১৯৬২, ৬৫ ও ৭০ সালে তিনি ভোলা আসনে তিন-তিনবার সংসদ সদস্য হিসেবে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন।
পিতার কঠিন শাসনের ভেতরেও শৈশব হতেই হাফিজ ছিলেন ডানপিঠে এবং খেলাধুলাই ছিল তার নেশা ও পেশা। কিন্তু অত্যন্ত মেধাবী হওয়ার কারণে অল্প সময় পড়াশোনা করেই ক্লাসের প্রথম পাঁচ-ছয়জনের মধ্যে থাকতেন। ছিলেন শিক্ষকদের প্রিয় ছাত্র। এমনই খেলাপাগল ছিলেন যে, পরীক্ষার হলে প্রশ্নের উত্তর জানা সত্তে¡ও না লিখে খাতা জমা দিয়ে চলে আসতেন খেলার মাঠে সময় মতো উপস্থিত খাকার জন্য। তিনি ১৯৫৯ সালে ম্যাট্রিক ও ১৯৬১ সালে আইএ পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে তিনি নেমে পড়েন খেলাধুলা ও অ্যাথলেটিকসে; এতে চ্যাম্পিয়ন ছিলেন বরাবরই। দু’টোতেই জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন এবং এর মধ্যেই ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়ে ১৯৬৪ সালে বিএ (অনার্স) এবং ১৯৬৫ সালে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর সহপাঠীদের অনুরোধে ভর্তি হন এলএলবিতে। যদিও খেলাধুলাই ছিল তার ধ্যানজ্ঞান। বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় ঢাকা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সম্মিলিত বিশ্ববিদ্যালয় দলের অধিনায়কত্ব করেন তিনি। তার সহপাঠীদের মধ্যে ছিলেন আব্দুল জলিল, কে এম শামশুল হুদা ও এন্তাজ আলী, যারা জাতীয় রাজনীতিক হিসেবে সুপরিচিত। পাকিস্তান জাতীয় ফুটবল দলের খেলোয়ার হিসেবে বিভিন্ন দেশ সফর করেন। ১৯৮০ সালে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারে ভূষিত হন। তিনি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি এবং এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের নির্বাচিত সহসভাপতি ছিলেন। ফিফার আপিল ও ডিসিপ্লিনারি কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।
সামরিক জীবন: বাবার ইচ্ছার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএর পাঠ শেষে ১৯৬৮ সালের মার্চ মাসে তিনি যোগ দেন পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমিতে শিক্ষা কোরের ক্যাডেট হিসেবে। কিন্তু মহান আল্লাহর পরিকল্পনা ছিল ভিন্ন। তিনি দেশের ভবিষ্যৎ স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন সিপাহসালার হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন হাফিজ আহমেদকে। তাই তার দূরদর্শী প্লাটুন কমান্ডার মেজর ভাট্টির প্রচেষ্টায় তাকে শিক্ষা কোর থেকে ফাইটিং কোরে ১৬তম ওয়ার কোর্সের ক্যাডেট হিসেবে স্থানান্তরিত করেন। মেধাবী ক্যাডেট হিসেবে অল্প সময়েই তিনি সুনজরে আসেন তার প্রশিক্ষকদের। অত্যন্ত মেধাবী হাফিজ সকল বিষয়ে সর্বোচ্চ কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে ২০০ ক্যাডেটের মধ্যে ১৬তম ওয়ার কোর্সের বিএসইউও নির্বাচিত হন; যা একজন জেন্টলম্যান ক্যাডেটের জীবনের সর্বোচ্চ সাফল্য।
মেজর জিয়াউর রহমানও সে সময়ে ছিলেন একজন সুপরিচিত পেশাদার প্লাটুন কমান্ডার। তারই নির্দেশে হাফিজ আহমদ পদাতিক বাহিনীর প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে যোগদানের চয়েস (পছন্দ) দেন। দীর্ঘ আট মাস কঠোর প্রশিক্ষণ শেষে ১৯৬৮ সালের ৩০ নভেম্বর কমিশন লাভ করেন। অতঃপর ১০ ডিসেম্বর ১৯৬৮ তারিখে যশোর সেনানিবাসে ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের প্রথম ব্যাটালিয়ন সিনিয়র টাইগার্সে যোগদান করেন লেফটেন্যান্ট হাফিজ উদ্দিন আহমদ। অল্প দিনেই তিনি একজন রেজিমেন্টাল অফিসার হিসেবে সবার প্রিয় ভাজনে পরিণত হন। শুধু প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট নয়, হাফিজ উদ্দিন আহমদ কয়েক মাসের মধ্যেই পরিচিত হয়ে উঠলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর চৌকস একজন অফিসার হিসেবে। জাতীয় দলের খেলোয়ার হয়ে তিনি বহু দেশে পাকিস্তানের জন্য অভূতপূর্ব সুনাম-সুখ্যাতি অর্জন করেন। দুই বছরের মাথায় তিনি সারা পাকিস্তানে সুপরিচিত এক জাতীয় ব্যক্তিত্বে পরিণত হন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অসাধারণ অবদান: এরপর আসে ১৯৭১ সাল। সিনিয়র টাইগার্স অত্যন্ত প্রথিতযশা ঐতিহ্যবাহী একটি ইউনিট। ২৫ মার্চ কালো রাতের হত্যাযজ্ঞ সম্পর্কে এ ইউনিটের অফিসার ও সৈনিকরা জানতে পারেনি; তখন তারা সেনানিবাসের বাইরে প্রশিক্ষণে ছিলেন। কিন্তু ৩০ মার্চ সাড়ে ৩০০ সৈনিক নিয়ে তিনি সেনানিবাসে ফিরে এসে ভিন্ন পরিস্থিতি দেখতে পান। নতুন অধিনায়ক লে. কর্নেল রেজাউল জলিল বাঙালি হওয়াতে তার ও অন্য বাঙালি অফিসার ও সৈনিকদের উপর আস্থা না রাখতে পেরে ব্রিগেড কমান্ডার নিজে এসে ইউনিটকে নিরস্ত্র করেন। নিরস্ত্র বাঙালি সৈনিকদের উপর অন্য পাঞ্জাবি ইউনিট যখন আক্রমণ করে, তখন সুবেদার আব্দুল মজিদের নেতৃত্বে গর্জে ওঠে বাঙালি সদস্যরা। সুবেদার মজিদের অনুরোধে ক্যাপ্টেন হাফিজ যখন বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। তার নেতৃত্বে প্রতিরোধ যুদ্ধ করে সেনানিবাস থেকে বেরিয়ে আসেন ৯ জন জেসিও ও ২০০ সৈনিক এবং বাকিদের অনেকে শাহাদাত বরণ করেন ও আটক হন হানাদার বাহিনীর হাতে।
মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়ার পর ক্যাপ্টেন হাফিজ ৬০০ জনকে রিক্রুট করেন প্রথম ইস্ট বেঙ্গলে। জেড ফোর্সের কমান্ডার লে. কর্নেল জিয়াউর রহমানের অধীনে তিনি এ ইউনিটের নেতৃত্ব দেন বেনাপোল, কামালপুর, গৌরীপুর, ধলই বিওপি, কানাইঘাট, এমসি কলেজের যুদ্ধ ও অন্যান্য যুদ্ধে পর্যুদস্ত করেন হানাদার বাহিনীকে। দুঃসাহসিকতা ও বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর বিক্রম উপাধিতে ভূষিত করে।
রাজনীতিতে যোগদান: সেনাবাহিনী থেকে অবসরের পর তিনি যোগ দেন জাতীয় রাজনীতিতে। ১৯৮৬ সালের তৃতীয় ও ১৯৮৮ সালের চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি জাতীয় পার্টির মনোনয়নে ভোলা-৩ (লালমোহন-তজুমদ্দিন) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একই আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে বিএনপিতে যোগ দিয়ে ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬ সালের ষষ্ঠ, জুন ১৯৯৬ সালের সপ্তম ও ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং দুইবার মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মেজর হাফিজ ছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের অত্যন্ত স্নেহভাজন। খালেদা জিয়ার দ্বিতীয় মন্ত্রিসভায় তিনি পানিসম্পদ মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানেও তিনি বিএনপির সহসভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন ।
পারিবারিক জীবন: তিনি দুই ছেলে ও এক মেয়ের জনক। স্ত্রী দিলারা হাফিজ মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক।
মেজর হাফিজ একজন বিজ্ঞ লেখকও। তার লেখা ‘গণতন্ত্র রিমান্ডে’, ‘রক্তে ভেজা একাত্তর’, ‘সৈনিক জীবন-গৌরবের একাত্তর রক্তাক্ত পঁচাত্তর’ ও ‘গৌরবাঙ্গনে’ দেশের রাজনৈতিক সাহিত্যে উল্লেখযোগ্য। মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীর বিক্রম এমন একজন যোগ্য সামরিক ও রাজনৈতিক নেতা যিনি সততা, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা, দেশপ্রেমের উজ্জ্বল উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন কৈশোর থেকে অদ্যাবধি; তাই জাতির সবার জন্য তিনি হতে পারেন অনুসরণীয়।
লেখক : একজন সামরিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক, ইতিহাসবিদ
hoque2515@gmail.com
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা